চৌরাস্তার জ্যোৎস্না
বিদ্যুৎ ভৌমিক
আমিটা অন্য আমিতে বরাবরই এভাবেই আড়াল হয়ে ছিল ! অযত্নে ললিত মন ; মনের মধ্যে নাবালক হৃদয় পয়মন্ত স্বপ্নের প্রার্থনায় ছায়ার মধ্যে শূন্যতা আঁকি ,---- কোথাকার স্মৃতি গুলো সতত এভাবেই নির্ঘুম ; ভীষণ নির্জন !
তবু চোখ থেকে কবেই উড়ে গেছে অভিমান ; চৌকাঠে রক্তের চিহ্ন নিয়ে বহুকাল শুয়ে ছিল আমার প্রতিটা জন্মের ছায়া ,---- প্রাচীন দর্পণে ভূত সেজে ঝাপসা দেখা দিয়েছিল অন্য কোনো অতীত ! এটা সেই এক বারই হয়েছিল .......
সেই একদিন মাঝরাস্তায় পথ আগলে কত কালের নাম ধরে কেউ একজন ডেকে ছিল ; তাকে এভাবেই ভাসিয়েছি চোখের জলস্রোতে !
চৌকাঠে সটান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিমূর্ত কিছু প্রেত মধ্যরাতে নিজমূর্তি ধারণ করে মুখ ও মুখোশের চারপাশে লেপে দিয়ে ছিল রসাতলে যাবার কটুগন্ধ !
তবুও শেষটুকু দেখবো বলে সন্দীপনের কাছে শিখে নিয়ে ছিলাম মৃত্যু বরণের গোপন বিদ্যা ,----
হাতের চেটোতে ভাগ্যের দোহাই লেখা ছিল ; ছিল কতকিছু ! সবটাই বিবর্ণ , নিরাভরণ ..... তবুও রাত দশটার ভেতর বিষ মেশানো সময় দয়াপ্রার্থীর মত অন্তর্গত দুঃখে ও জ্বালায় অশরীর আমিটাকে সদর দরজা অব্দি এগিয়ে দিয়ে লুকিয়ে ছিল অবলীলায় ! হৃদয় রোগ না হলে দীর্ঘশ্বাস এত জটিল হত . !
কাছে - দূরের আকাশ থেকে প্রাণহীন অস্থিরতা অনন্ত বিস্তৃত ;
প্রতিজন্মের প্রেম গুলো শ্মশান যাত্রীদের তালিকায় না থাকলেও মৃত্যুর মত সহজ নিঃশব্দে কাঙালের চেহারা নিয়ে বলে উঠে ছিল হে প্রেমীক তুমি আর একবার বেঁচে ওঠো !
স্বাভাবিক ভাবে কোথাও কিছু পুড়ে ওঠার গন্ধ নাকে এলে আমি মৃত্যুর পরও স্তব্ধ হয়ে যাই !
দিনাবসানে নির্ঘুম জাগরণে রাস্তা পার করছিল শোক - তাপ গুলো ৷ অর্ধেক সুখ নিয়ে সেজে উঠেছিল চৌরাস্তার জ্যোৎস্না ; সে নগ্ন ও সুচারু অথচ অনাহারে অনেকটাই অনাত্মীয়ের মত এলোমেলো ! ওখানে রাত পোহায় পুরাতন স্মৃতির ভেতর ; হয়তো ফুল - তারা - আকাশের চাঁদ দেখে দেখে ,-----
একদিন এখানে অনেকেই আর্শির পেছন থেকে দেখছিল আমায় ! আমার পায়ের কাছে কোনো এক বিরল প্রজাতির আত্মার ছায়া খুঁটে খাচ্ছিল অপয়া ঈশ্বর ,---- তাই দেখে আমার ব্যর্থ বিশ্বাস অফুরান আবেগে হেসে উঠেছিল পারিপার্শিক অন্ধকার মেশা বাতাসে !
কেউ একজন আদিখ্যেতার মলম মাখিয়ে দিতে এসে ছায়া ছায়া অশরীর বর্ণবাহার বিছিয়ে দিয়েছিল আমার ঘুমহীন নির্ঘুমে !
সেই চৌরাস্তা যেন অপার্থিব পথ ; নিঃশব্দ অসুখের ভেতর নিভৃত প্রহরী ৷ সেখানে আকাশ ভাঙা দুঃস্বপ্নরা এভাবেই আমাকে স্তব্ধ অসহায় করে রেখেছিল ব্যক্তিগত আনন্দ পেতে ,----- কতবার কতভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে নীরব প্রতীক্ষায় অপেক্ষা করি সেই নিষ্ঠুর অতীতের প্রেম একবার যদি ফিরে আসে !
চুন খসা দেওয়ালের বিছানা ছেড়ে ঝুলন্ত ক্যালেন্ডারে কতবার খুঁজেছি আমার মৃত্যুর ভবিষ্যৎ ! কেউ একজন মধ্যরাতে বৃষ্টির ভেতর সিঁড়ির নিচে নগ্ন দাঁড়িয়ে বহুক্ষণ আমাকে দেখছিল ,---- ওকে স্পর্শ করতেই আঙুলে অকস্মাৎ ছেঁকা লেগেছিল ! এরপর মৃদু কান্নার শব্দে অসতর্কে চোখ ঘুরছিল চারপাশে জুড়ে ; এর অনেক্ষণ এভাবেই কেটে গিয়েছে সময় ! কখনযে আমার মৃত্যু হয়েছে অজানা অদ্ভূত সময়ে ; টেরই পাইনি !!