1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

অনুগল্প — বুবী পাগলী : রঞ্জিত মল্লিক

বুবী পাগলী
রঞ্জিত মল্লিক




                 "........ ....যা.....
          ........রাঙ্গামাটির............
                 .......মানাইছে না.......
                  ......ইক্কেবারে......"

             "ফাইলগুলো সই করেছেন?"
              "হ্যাঁ,......"
               "স্যার, মেয়ের অঙ্গনওয়াড়ী কর্মীর চাকরিটা একটু দেখবেন......।"
                "হমম্....!"
              "আপনার সাথে সিডিপিও সাহেবের তো ভালোই চেনা জানা। দুজনে একই বাসাতে থাকেন। আপনি  যাবার আগেই যদি শ্রেয়শীর একটা গতি হয়.........."
              "বললাম তো দেখব....."

           পঞ্চায়েত কর্মী আফজলের সাথে কথা শেষ করেই চায়ের কাপে চুমুক দিল। আর কটা দিন। তারপর নতুন বছর গড়ালেই সোভাকে  চলে যেতে হবে শাল পলাশের দেশে। পিছনে পড়ে থাকবে বহু স্মৃতি, টুকরো ঘটনা। আর পার্থেনিয়ামের  জঙ্গলের আড়ালে  লুকিয়ে থাকা ছোট্ট ফুলের বাগানটা।

           পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট অফিসার থেকে প্রোমোশন পেয়ে জয়েন্ট বিডিও হয়ে যাচ্ছে বাগমুণ্ডি ব্লকে।

                ট্রেনে আসতেই লাইনের ধারে পার্থেনিয়ামের আড়ালে কচি চন্দ্রমল্লিকাগুলো উত্তুরে বাতাসে দুলে উঠল। পাশেই  বুবী পাগলীর ঝুপড়ি। বহুদিন ধরে ওখানেই থাকছে। চিকিৎসা চলছে।  এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।

              রেললাইন সম্প্রসারণে সব মুছে যাবে। ঝুপড়িও। এখানে আসার পর থেকেই বুবীদি,  তার ছোট্ট বাগানের সাথে নিবিড় সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। মনটা তাই যাবার সময় ভীষণই খারাপ।

                     ●●●

               আজ স্টেশনে নামতেই....

                "সৌভাগ্য, নে ধর পুলি, পায়েস..."
                 "হঠাৎ?"
                 "বুবীদি সবার জন্যে এনেছেন। পরিত্যক্ত  টিকিট কাউন্টারটা  সারিয়ে উনার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সেই আনন্দে....."
"বাহ! ভাল খবর! আর সাধের বাগানটা?"
"এই সিজিনে ফুলের গাছগুলো থেকে যাবে। সামনের মরসুমে সাহেবের কোয়ার্টারের বাগানেই ওরা আশ্রয় নেবে।"
"বেশ....."
"বাগানটা দেখাশোনা, সাহেবের টুকিটাকি কাজের জন্যে বুবীদি এখন থেকেই......।

           সৌভাগ্য দেখল,পায়েসের   মধ্যে  ঢিবির মত উঁচু  হয়ে জমে আছে দুটো পুলি। ঠিক যেন অতি ক্ষুদ্র  বাগমুণ্ডি পাহাড়।

             বুবীদির  ছলছল চোখের তারায়  সৌভাগ্য বাগমুণ্ডি ব্লকের মেঠো জ্যামিতিটা আস্বাদন করতে পারছে পায়েস আর পুলিতে মজে। বুবীর দু চোখের  নোনাপানিতে চন্দ্রমল্লিকাগুলো একটু একটু করে সতেজ হচ্ছে।

            সৌভাগ্যের চোখেও পৌষের নিষ্পাপ শিশির। তার দু'ফোঁটা পুলি, পায়েসের পাত্রে পড়ে স্বাদ আরো বাড়িয়ে তুলল। দূরে বাগমুণ্ডি পাহাড়টাও যেন হাসছে।

            ".......মানাইছে না রে.....
            ........ইক্কেবারে...... ইক্কেবারে মানাই.....
               ....... লাল পাহা.....ঙ্গা....যা..."

             সৌভাগ্য ঝাপসা নয়নে দেখছে বুবীদি পরম আদরে ফুলের গাছগুলোকে  আদর করছে। 

               বুবীদির প্রতি প্রেম দু চোখের অতি ক্ষীণ নোনা কংসাবতীর জোয়ারে একটু একটু করে ধুয়ে মুছে পবিত্র হচ্ছে।

                জোয়ারের সূক্ষ্ম, টুকরো টুকরো স্রোত একটু একটু করে ফুল গাছগুলোর গোঁড়াতেও যেন সঞ্চারিত হল।

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন