1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

প্রবন্ধ-কবিতা —ডায়োনেসিয়ান/ এপোলোনিয়ান / দেবাশিস লাহা

 কবিতা —ডায়োনেসিয়ান/ এপোলোনিয়ান 
দেবাশিস লাহা 




মাঝেমধ্যেই একটি খেদোক্তি শোনা যায়, যা কখনও কখনও দীর্ঘশ্বাসের বারান্দা হয়ে ওঠে --কবিতার বই বিক্রি হয়না, পাঠক কবিতা পড়েননা। বলাই বাহুল্য এটিও বিভ্রান্তিকর পর্যবেক্ষণ।  কিঞ্চিৎ গভীরে গেলেই বিষয়টি অনুধাবন করা সম্ভব। যে কোনো শিল্প কর্মের মতই কবিতারও মূলত দুটি শ্রেণি -- ডায়োনিসিয়ান / ডায়োনিজিয়াক ( Dionysian / Dionysiac)  এবং  এপোলোনিয়ান ( apollonian)  প্রথমটি গ্রিক দেবতা ( সুরা/ মদের দেবতা) ডায়োনিসাস থেকে প্রাপ্ত, যা  স্বতস্ফূর্ত আবেগকে চিহ্নিত করে ( relating to the sensual, spontaneous and emotional aspect of human nature) দ্বিতীয়টি এসেছে রোম্যান দেবতা এপোলো ( Apollo) থেকে, যা  যুক্তিবোধ, শৃঙখলা, সংযমকে চিহ্নিত করে ( relating to rational, ordered and self- disciplined aspects human nature)। বলাই বাহুল্য প্রথমটিই সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করে। কেন?  যুক্তি এবং আবেগের মিশ্রণ হলেও মানুষ যেভাবে আবেগ তাড়িত হয়, সেই মাত্রায় যুক্তির অনুশীলন করেনা। আবেগ সহজাত।  যত ভুল, ত্রুটি, পথভ্রষ্ট হওয়ার ভয়, সর্বনাশের হাতছানি থাকুক না কেন মানুষ বিপুল বেগে তার দিকে ধাবিত হয়, আলোড়িত হয়, আন্দোলিত হয়। যে কারণে মানুষ মদ খায় বা নেশা করে।মদাসক্তকে প্রশ্ন করুন, সে কেন মদ খায়!  যুক্তিসঙ্গত উত্তর পাবেন কি?  এই কারণেই ডায়োনেসিয়ান শব্দটির সাহায্যে শিল্প সাহিত্যের ক্ষেত্রে "আবেগতাড়িত " মননকে বোঝানো হয়। আপনি নিশ্চয় গান শোনেন। আজ্ঞে হ্যাঁ ডায়োনেসিয়ান বৈশিষ্ট্যটিই গানকে এত জনপ্রিয়/ আকর্ষণীয় করে তোলে। অবশিষ্ট শিল্প মাধ্যম তার কাছে ( তুলনামূলকভাবে)  বার বার পরাজিত হয়। এপোলোনিয়ান মানে মগজ, যুক্তিবোধ যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধরা দেয় না। ভাবতে হয়, বিশ্লেষণ করতে হয়, যা কতিপয় মানুষই পারেন। এই কারণেই টেলিভিশন, মিডিয়ায়, সে চলচ্চিত্রই বলুন অথবা সংবাদ পরিবেশন, ডায়োনেসিয়ানের ওভার ডোজ! মননশীল প্রবন্ধ যতজন পড়েন, আবেগ রঞ্জিত গল্প, উপন্যাস, কবিতা সেই তুলনায় অনেক বেশি মানুষ পড়েন। এই প্রবণতাকে নিকৃষ্ট, অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ভাবতেই পারেন। বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারেননা। বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক, চিন্তাবিদ ফ্রিডরিখ নিতজে তো ডায়োনেসিয়ানের জয়গান গেয়েছেন, কাম্য বলেছেন। কী বুঝলেন?  বামের কামাল!  অর্থাৎ মগজের বাঁ দিক!  প্রিফন্টাল কর্টেক্স ( prefrontal cortex, যা যুক্তিসঙ্গত চিন্তনের মাধ্যম)  বেচারা অযতনে অবহেলায় শুকিয়ে মরে!  


এবার আসি, ডায়োনেসিয়ান কবিতার ধরণ ধারণে!  কেমন হবে সেই কবিতা! ডিকশন, কন্টেন্ট! প্রকাশভঙ্গী,  বিষয়? ওই যে গানের মত!  যত সহজ সরল ভাষায় আপনি লিখতে পারবেন, ততটাই advantage!  তবে চাইলেই পারবেন এমন নয়!  যতই নিকৃষ্ট মনে করুন, ডায়োনিসিয়ান কবিতা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জন্মায়। তাই পাঠকও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেন, নিজের মুখ দেখতে পান। রোম্যান্টিক আন্দোলনের পথিকৃৎ উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের ভাষায় -- language used by common man!  ( Lyrical Ballads ( 1798)!  নিজেকে কখনও প্রশ্ন করেছেন, আপনি যেভাবে, যে ভঙ্গিমায়, যে শব্দচয়নে দৈনন্দিন কথাবার্তা চালান, সেই ডিকশনে কবিতা লেখেন না কেন? কলম হাতে নিলেই বিমূর্ততার অভিষেক! ফল যা হওয়ার তাই হয়! আপনার ডিকশন, শব্দচয়ন,  প্রকাশ উপলব্ধি করতে চাইলে এপোলোনিয়ান পাঠক হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকেনা। উঁহু, আমি কিন্তু একবারও বলিনি, আপনাকে সহজ সরল ভাষায় লিখতেই হবে! সে চাইলেও আপনি পারবেন না। কৃত্রিম, আরোপিত মনে হবে। ওয়ার্ডসওয়ার্থ যেমন এলিয়ট হয়ে উঠতে পারেননা, এলিয়টও তেমন ওয়ার্ডসওয়ার্থ হয়ে ওঠার কথা কল্পনাও করেননা!  এক্ষেত্রে সময়, আবহ, ব্যক্তিত্ব, লালন,মনন ইত্যাদির ভূমিকা অনস্বীকার্য।  আমি শুধু বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি। মিথটিকে কিঞ্চিৎ কাটাছেঁড়া।  এ তো গেল ডিকশনের ব্যাপার। আর কন্টেন্ট?  বিষয়?  একটি শব্দই এক্ষেত্রে ব্যবহার করব -- প্রেম, প্রেম, প্রেম এবং প্রেম!  মানব প্রেম নয়, ব্যক্তিপ্রেমই মোদ্দা কথায় নরনারীর প্রেমই জনপ্রিয়তম কবিতাগুলির "কমন" বিষয়। মনে মনে আউড়ে নিন না!  কী বললেন?  (কোন কবিতা টিকবে, কোন কবিতা টিকবে না?  সেবিষয়ে পরে কখনও আলোচনা করব৷) এই আলোচনাটি নিছক পর্যবেক্ষণের ফসল নয়, অভিজ্ঞতারও। আমার দুটি কবিতার বই জায়গা রাখিস এবং পলাশবালিকা কী হারে বিক্রি হয়েছিল ( এই মুহূর্তে নিঃশেষিত। আবার ছাপানোর কথা ভাবছি।) অনেক পাঠকই জানেন৷ এখনও এই দুটি বইয়ের খোঁজ করেন৷ কারণ কী?  ওই যে ডায়োনেসিয়ান!  এবং অবশ্যই language used by common man! কিন্তু সাম্প্রতিক কবিতার বই, আমি শবর বলছি, সেই পাঠকদের একেবারেই আকৃষ্ট করেনি! আজ্ঞে হ্যাঁ, দু একটি কবিতা বাদ দিয়ে এটি আপাদমস্তক এপোলোনিয়ান!

--

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন