বি.এ : বাংলা অনার্স
সেমিস্টার : ২
ইউনিট : ৪
WBSU
১ । শব্দার্থ-পরিবর্তন কাকে বলে ? শব্দার্থ-পরিবর্তনের কারণগুলি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
শব্দার্থ-পরিবর্তন : ভাষায় অনেক শব্দই চিরকাল একই অর্থে ব্যবহৃত হয় না , অর্থের পরিবর্তন হয়ে যায়। এইভাবে, ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের আদি অর্থ কালক্রমে নানা ভাবে বিবর্তিত হয়ে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে উপনীত হবার প্রক্রিয়াকে বলে শব্দার্থ পরিবর্তন।
শব্দার্থ-পরিবর্তনের কারণ :
অর্থবােধক ধ্বনিসমষ্টিকে বলা হয় 'শব্দ'। অতএব অর্থ বােঝানাের জন্যই শব্দের সৃষ্টি, কিন্তু এমন কোন শব্দ খুঁজে পাওয়া মুস্কিল, চিরকাল যার একটিমাত্র অর্থই প্রচলিত রয়েছে। দেশকালপাত্রের প্রেক্ষাপটে, শব্দের অর্থ নানাভাবে পরিবর্তিত হয়—এই সহজ সত্যটি আর স্বীকৃতির অপেক্ষা রাখে না—‘পা’ ধাতুর সঙ্গে বিভিন্ন প্রত্যয় যােগে নিষ্পন্ন হাতে পারে তিনটি শব্দ 'পতি, পাতা, পিতা'—এই তিনটি শব্দেরই মূল অর্থ 'যিনি পালন করেন অথচ তিনটি শব্দের ব্যবহারিক অর্থে কত পার্থক্য।
শব্দের অর্থ কেন পরিবর্তিত হয়, এককথায় তার কোন উত্তর দেওয়া যায় না। নানা কারণেই শব্দার্থের পরিবর্তন ঘটে থাকে। এই কারণের সংখ্যা নির্ণয় করা অসম্ভব হলেও স্থূল এবং প্রধান কারণগুলিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা সম্ভবপর। বিভিন্ন ভাষাবিজ্ঞানী শব্দার্থ-পরিবর্তনের কারণগুলিকে বিশ্লেষণ করে তাদের তিনটি প্রধান শ্রেণীতে বিন্যস্ত করেছেন
(ক) ভিন্ন পারিবেশিক কারণ,
(খ) মনােবিষয়ক কারণ, এবং
(গ) আলঙ্কারিক কারণ।
ভিন্ন পারিবেশিক কারণ: কোন শব্দ যে অঞ্চলে যে অর্থে সৃষ্টি হয়েছিল, পরিবেশ পরিবর্তনে তার অর্থের পরিবর্তন হতে পারে—তাই শব্দের এ জাতীয় অর্থ পরিবর্তনকে পারিবেশিক কারণ-জাত অর্থ পরিবর্তন বলে মনে করা হয়।
স্থান কালের পরিবর্তনে শব্দার্থের পরিবর্তন ঘটে। ফারসীতে 'দরিয়া' শব্দের অর্থ 'নদী'; ‘মুর্গ’ অর্থ—যে কোন পাখি; কিন্তু বাঙলায় এ দুটি শব্দের অর্থ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে 'সমুদ্র' ও 'কুক্কুট'।
কালের পরিবর্তনেও শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হতে পারে—‘উষ্ট্র’ একসময় 'আরণ্য বৃষ' (Bison) বােঝাত, তা এখন 'উট' (Camel)।
ধর্ম-সমাজ-রাষ্ট্র জাতি প্রভৃতির কালানুক্রমিক পরিবর্তনেও শব্দের প্রচলিত অর্থ ভিন্ন রূপ ধারণ করে। 'Mother' ও 'Sister' শব্দ দুটি এখন পারিবারিক গণ্ডী ছাড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা লাভ করেছে। আবার 'বুর্জোয়া, জোতদার, অসুর' প্রভৃতি শব্দ মূলতঃ উক্তৃষ্ট, অর্থে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে হীন অর্থে ব্যবহৃত হয়।
একটি শব্দের একাধিক রূপ ভিন্ন অর্থে প্রযুক্ত হতে পারে।- 'ভােজ' ও 'ভােজন', 'সৌভাগ্য' ও 'সােহাগ' মূলতঃ একার্থক হলেও ব্যবহারিক অর্থে তাদের পার্থক্য রয়েছে; 'বিবাহ, পরিণয়, পাণিগ্রহণ' প্রভৃতি শব্দে যে বলপ্রয়ােগের ভাব ছিল তা এখন অন্তর্হিত।
পাত্র ও বস্তুর পরিবর্তনেও শব্দের অর্থান্তর ঘটে-'Penna' বা পালকের তৈরি লেখনী ছিল pen, এখন Steel-এরও pen হয়।
মনােবিষয়ক কারণঃ শব্দার্থ-পরিবর্তনে মনস্তত্বের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপর দুটি কারণের সঙ্গেও অনেক সময় এটি জড়িত থাকে।
নানাবিধ মানসিক সংস্কারের জন্য আমরা অশুভ-কুরুচিকর কিংবা ভীতিজনক শব্দ পরিহার করে ভিন্ন শব্দ দ্বারা ঐ বিষয়টি প্রকাশ করতে চেষ্টা করি।—‘চাউল বাড়ন্ত', 'শাখা শীতলানাে' শব্দ দিয়ে আমরা অশুভ ভাবকে এড়িয়ে যাই; 'বাথরুম পাওয়া' বা 'ঘাটে যাওয়া' শব্দের সাহায্যে কুরুচিকর শব্দ পরিহার করি এবং 'বসন্তে'র বদলে 'মায়ের দয়া', 'সাপে'র পরিবর্তে 'লতা' ব্যবহার করে ভয়ের কারণটি বাদ দিতে চেষ্টা করি।
হীন কাজকে শােভনতা দানের উদ্দেশ্যেও আমরা মহৎ অর্থযুক্ত শব্দ ব্যবহার করে থাকি-রান্না করার পুরুষকে 'মহারাজ/ঠাকুর' বলি, কাজের মেয়েকে কন্যার মর্যাদা দিয়ে বলি 'ঝি'। এখন ‘ঝি’ বল্লেও তারা অসন্তুষ্ট হয় বলে তাদের বলি 'কাজের লােক' কিংবা 'মাসি'।
শব্দপ্রয়ােগে অসতর্কতা বা অজ্ঞতার জন্যও শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয়। 'পাষণ্ড’ শব্দের মূল অর্থ ছিল, 'বৌদ্ধ সন্ন্যাসী', কিন্তু অজ্ঞতাহেতু এখন 'নিষ্ঠুর' অর্থে ব্যবহৃত হয়। বক্তার ইচ্ছানুসারেও শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয়, যথা- 'বারুণী’ শব্দের অর্থ 'মদ্য', মধুসূদন বরুণপত্নী 'বরুণানী'-স্থলে 'বারুণী' শব্দ ব্যবহার করেছেন।
শব্দকে সংক্ষিপ্ত করার ফলেও অর্থ-পরিবর্তন ঘটে।- 'ক্ষৌরকর্ম' থেকে সংক্ষেপে ‘কামানাে’, ‘দণ্ডবৎ প্রমাণ’ ‘দণ্ডবৎ’, 'বাইসাইকেল' থেকে 'বাইক'।
সাদৃশ্য শব্দার্থ-পরিবর্তনে এক বিরাট ভূমিকা গ্রহণ করে। দেশের মধ্যে 'মাথা'র স্থানই সর্বোচ্চ এবং মাথাই শ্রেষ্ঠ—এই বিবেচনায় যাবতীয় শ্রেষ্ঠত্ব বােঝাতেই 'মাথা' শব্দ প্রযুক্ত হয়।- 'দইয়ের মাথা, গায়ের মাথা, মাথা খাওয়া, মাথা ধরা, তেমাথা' প্রভৃতি।
আলঙ্কারিক কারণ: মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি—অলঙ্কার দিয়ে কথা বলা। এই অলঙ্কার-আরােপের ফলে বাক্যের সৌন্দর্যই শুধু বৃদ্ধি পায় না, শব্দার্থেরও যথেষ্ট পরিবর্তন সাধিত হয়।
রূপকাদি অলঙ্কার ব্যবহারের ফলে শব্দের অর্থ এমনভাবে পরিবর্তিত হতে পারে যে মৌলিক অর্থের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক না-ও থাকতে পারে। গােরুর চোখের মতাে আকৃতি ছিল বাতায়নের, তাই নাম ছিল 'গবাক্ষ'—কিন্তু এখন এর আকৃতি চৌকো। 'বীণাবাদনে দক্ষ' বলেই 'প্রবীণ', কিন্তু এই 'বীণার' সঙ্গে ‘প্রবীণতা’র কোন সম্পর্ক নেই।
উপমা-উৎপ্রেক্ষা-আদি অলঙ্কার বাক্যে এমনভাবে লুকিয়ে থাকে যে বােঝবার উপায় নেই, ফলে পরিবর্তিত অর্থের সঙ্গে এর সম্পর্কও বােঝা যায় না।- 'বেলাভূমিকে অতিক্রান্ত' অর্থে 'উদ্বেল', কিন্তু আমাদের হৃদয়ও উদ্বেল হয়।
ব্যষ্টির স্থলে সমষ্টি এবং সমষ্টির স্থলে ব্যকষ্টির প্রয়ােগেও অর্থ-পরিবর্তন ঘটে।- 'লাল পানি' মানে আর লাল রঙের যে কোন পানীয় নয়, একটি বিশেষ পানীয় অর্থাাৎ 'মদ্য'। আবার 'ভাত-কাপড়' বলতে শুধু ভাত আর কাপড়ই বােঝায় না, যাবতীয় ভরণপােষণের ব্যবস্থাই বােঝায়।
নম্রতা প্রদর্শনের জন্যেও শব্দার্থের পরিবর্তন ঘটে।- দেবতার জন্য খাদ্য 'ভােগ', নিজের বাড়ি 'গরীবখানা'।
বক্রোক্তির সাহায্যে দূষণীয় শব্দে ছদ্মবেশ পরিয়ে তার অর্থ পরিবর্তন করা হয়।- 'হাতটান', 'শ্বশুরবাড়ি' (জেলখানা), বা ‘শ্রীঘর’ বাস।
২। শব্দভাণ্ডার কাকে বলে ? দেশি এবং বিদেশি শব্দগুলির পরিচয় দিয়ে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ দাও।
শরীরতত্ত্ববিদ যেমন অণুবীক্ষণ যোগে প্রত্যেক কোষকে পরীক্ষা করেন,সেই রূপ যুক্তির অণুবীক্ষণ যোগে প্রত্যেক শব্দকে পরীক্ষা করিতে হইবে । কোনো শব্দকে অবহেলা করা চলিবে না । -রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী (শব্দকথা)
শব্দভাণ্ডার : বাংলা ভাষার অভিধানে যেসব শব্দ আছে অথবা যেসব শব্দ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে, মুখে ব্যবহার করে বা লিখে মনের ভাব প্রকাশ করে সেসব সঞ্চিত শব্দই শব্দভাণ্ডার নামে পরিচিত। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যত উন্নত সেই ভাষা তত সমৃদ্ধ। বাংলা শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে আমাদের উত্তরাধিকার থেকে পাওয়া শব্দ। যেগুলো অনেকটা পুরোনো শব্দ।
ভাষা ভাবের বাহন । ভাষার প্রধান উপাদান হল শব্দ। ভাষার শব্দশক্তির উপর ভাষার সমৃদ্ধি নির্ভর করে । যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যত বেশি উন্নত,সেই ভাষা তত উন্নত। ভাষার প্রকাশ ক্ষমতা নির্ভর করে শব্দ সম্পদের উপর। বাংলা পৃথিবীর উন্নত ভাষাগুলির অন্যতম । তিনটি উপায়ে বাংলা ভাষা তার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে ।
- উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া শব্দের সাহায্যে
- অন্য ভাষা থেকে গৃহীত শব্দঋণের সাহায্যে
- নতুন শব্দ সৃষ্টির সাহায্যে
প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে এক বিশেষস্তরে এসে নব্যভারতীয় আর্যভাষার অন্যতম বাংলা বাংলা ভাষার উদ্ভব হয় । ফলে প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার ( বৈদিক সংস্কৃত ) অনেক শব্দ কখনো সরাসরি ,কখনো কিছুটা পরিবর্তিত আবার কখনো বা কিছুটা বিকৃত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে । বিভিন্ন অনার্য গোষ্ঠীর ভাষা যেমন বাংলা ভাষায় স্থান পেয়েছে ,তেমনি অন্যান্য বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার শব্দও বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারে স্থান পেয়েছে । পারস্পরিক আদান-প্রদানের মধ্যমে যেমন বিভিন্ন দেশিয় ভাষার শব্দ এসেছে তেমনি বিভিন্ন বিদেশি শব্দ এসেছে। তাই বাংলা শব্দভাণ্ডারের শব্দগুলিকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি –
(ক) মৌলিক শব্দ বা নিজস্ব শব্দ
(খ) আগন্তুক বা কৃতঋণ শব্দ
(গ) নবগঠিত শব্দ
(ক) মৌলিক শব্দ- প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা (বৈদিক সংস্কৃত) থেকে আগত শব্দগুলিকে মৌলিক শব্দবলে। মৌলিক শব্দ তিন প্রকার – (১) তৎসম শব্দ (২) অর্ধতৎসম শব্দ (৩) তদ্ভব শব্দ
(১) তৎসম শব্দ – ‘তৎসম’ একটি সমাসবদ্ধ শব্দ । তৎ = তার , সম= সমান অর্থাৎ সংস্কৃতের সমান ।
যে সমস্ত শব্দ সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে অপরিবর্তিত ও অবিকৃতভাবে বাংলা ভাষায় এসেছে তাদের তৎসম শব্দ বলে ।
যেমন- আকাশ,নদী,লতা,সূর্য,চন্দ্র,নক্ষত্র,বৃক্ষ,কৃষ্ণ,মুনি,অন্ন,রাত্রি,মিত্র,বিদ্বান,হস্তী,অশ্ব,পন্ডিত,সুন্দর,শিক্ষক ইত্যাদি .বাংলায় প্রচলিত তৎসম শব্দের সংখ্যা অনেক । প্রায় সব ভাষাতাত্বিক একমত বাংলা ভাষায় প্রচলিত ৪৫ শতাংশ শব্দই তৎসম শব্দ ।
তৎসম শব্দ আবার দুভাগে বিভক্ত- সিদ্ধ তৎসম ও অসিদ্ধ তৎসম । যে সব কেবল বৈদিক ও সংস্কৃত সাহিত্যে মেলে এবং যা ব্যাকরণসম্মত,সে গুলি সিদ্ধ তৎসম । যেমন- ভূমি, মুনি,সূর্য,চন্দ্র,কৃষ্ণ,নর ইত্যাদি । যে সমস্ত শব্দ প্রাচীনকালে শুধুমাত্র মৌখিক সংস্কৃতে বা কথ্য সংস্কৃতে পাওয়া যায়,ব্যাকরণসিদ্ধ হয়নি তা অসিদ্ধ তৎসম । যেমন- ঘর,চল,কৃষাণ ইত্যাদি ।
তৎসম শব্দ চেনার কৌশল জানতে এখানে ক্লিক করুন
(২) অর্ধ তৎসম বা ভগ্ন তৎসম শব্দ - যে সমস্ত শব্দ সংস্কৃত থেকে আসার সময় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে না এসে সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে এবং কিছুটা বিকৃতি লাভ করেছে তাদের অর্ধ তৎসম শব্দ বলে । আসলে এই সমস্ত শব্দগুলি বিকৃত তৎসম শব্দ । এদের ভগ্ন তৎসম শব্দও বলে । যেমন- বৈষ্ণব>বোষ্টম , শ্রী> ছিরি , গৃহিণী>গিন্নি ,নিমন্ত্রণ>নেমন্তন্ন,শ্রাদ্ধ>ছেরাদ্দ,জ্যোৎস্না>জোছনা,পুরোহিত>পুরুত,প্রণাম>পেন্নাম,কৃষ্ণ>কেষ্ট ইত্যাদি । অর্ধ তৎসম শব্দের ব্যবহার চলিত ও মৌখিক ভাষায় ।
(৩) তদ্ভব শব্দ - তৎ = তার, ভব=জাত বা উৎপন্ন অর্থাৎ তার (সংস্কৃত ) থেকে জাত বা উৎপন্ন । যে সমস্ত শব্দ সংস্কৃত থেকে প্রাকৃতের মাধ্যমে নিয়মানুযায়ী পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে তাদের তদ্ভব শব্দ বলে । তদ্ভব শব্দকে প্রাকৃতজ শব্দও বলে । বাংলা শব্দ ভাণ্ডারের অধিকাংশ শব্দই প্রাকৃতে পাওয়া যায় । তদ্ভব শব্দগুলিই বাংলা ভাষার নিজস্ব সম্পদ । যেমন- কৃষ্ণ>কণ্হ্>কানু , ধর্ম>ধম্ম>ধাম , সন্ধ্যা>সন্ঝা>সাঁঝ,কার্য>কজ্জ>কাজ ,হস্ত>হত্থ>হাত ইত্যাদি ।
(খ) আগন্তুক শব্দ বা কৃতঋণ শব্দ – সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রিক, বাণিজ্যিক, ঔপনিবেশিক বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন জাতি ও ভাষার সাথে বাঙালির সংস্পর্শ ঘটেছে । ফলে পারস্পরিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে সেই সমস্ত ভাষার শব্দসমূহ বাংলা ভাষায় এসেছে । এই সমস্ত শব্দকে আগন্তুক বা কৃতঋণ শব্দ বলে । এককথায় অন্য ভাষা থেকে আগত শব্দগুলিকে কৃতঋণ শব্দ বলে । কৃতঋণ শব্দগুলিকে আমরা দেশি ,প্রাদেশিক ও বিদেশি এই তিন ভাগে ভাগ করতে পারি ।
১) দেশি শব্দ- আর্য জাতির আগমনের পূর্বেই ভারতের অধিবাসীদের একটা বিরাট অংশ ভারতে এসেছিল । এদের মধ্যে দ্রাবিড়,অস্ট্রিক বা নিষাদ গোষ্ঠীর ভাষা থেকে আগত শব্দগুলিকে দেশি শব্দ বলে । এককথায় বিভিন্ন অনার্য জাতির ভাষা থেকে আগত শব্দ গুলিই দেশি শব্দ । যেমন- ঝাঁটা ,ঝুড়ি, কুলা,ডাগর,মুড়ি ,চিংড়ি,খোকা,ডিম,ডাহা, পাঁঠা , তেঁতুল, ইত্যাদি ।
দেশি শব্দ সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
২) প্রাদেশিক শব্দ – বাংলার বিভিন্ন প্রতিবেশী রাজ্যের ভাষা থেকে বিভিন্ন প্রাদেশিক শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে । এদের প্রাদেশিক শব্দ বলে ।
- হিন্দি – খানা, পানি, ঠিকানা, মিঠাই, ফালতু, ঝান্ডা, দোসরা, ভেঁপু ইত্যাদি ।
- গুজরাটি – হরতাল, খাদি, গর্বা, তকলি ইত্যাদি ।
- মারাঠি – চৌথ,বর্গী ,পেশোয়া,পাতিল ইত্যাদি ।
- পাঞ্জাবি – শিখ,চাহিদা ইত্যাদি ।
- তামিল – মলয়, ঘোড়া, খুকি, চুরুট, ভিটা ইত্যাদি ।
(৩) বিদেশি শব্দ –বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিদেশির জাতির আগমন ঘটেছে । সেই সমস্ত জাতির ভাষা থেকে বিভিন্ন শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে, এই শব্দগুলিকে বিদেশি শব্দ বলে । যেমন-
- আরবি - নামাজ, ইমাম, কোরান, মৌলবি, আদায়, আজব, আইন, আমানত, কায়দা, দলিল, নবাব, মুনাফা
- ফারসি – আমির, উকিল, গজল, গোলাপ, নালিশ, মজুর, সিপাই , মালিক, হাজার, মেথর, কামাই ইত্যাদি ।
- তুর্কি – চাকু, চিঠি, বোচকা, কাঞ্চি, বিবি , কুলি, বাবুর্চি,বেগম ইত্যাদি ।
- ফরাসি – কার্তুজ, কুপন, রেস্তোরা, কাফে, বুর্জোয়া, আঁতাত, রেনেসাঁ , মেনু ইত্যাদি ।
- পর্তুগীজ – আলকাতরা, আলমারি , আনারস , আলপিন , আচার, পাউরুটি ইত্যাদি
- চিনা – চা, চিনি, চামচ, লিচু, লুচি ইত্যাদি ।
- বর্মী – লুঙ্গি , ঘুগনি ইত্যাদি ।
- ওলন্দাজ- ইস্কাবন,তুরুপ,হরতন,রুইতন,ইস্ক্রুপ ইত্যাদি ।
- জাপানি – রিক্শা,হাসনুহানা,টাইফুন ,হারিকেন ইত্যাদি ।
- রাশিয়ান – স্পুটনিক,বলশেভিক,ভদকা ইত্যাদি ।
- ইংরেজি – প্রচুর ইংরেজি শব্দ বাংলা ভাষায় প্রচলিত আছে । স্কুল , চেয়ার, টেবিল , বেঞ্চ, সিনেমা ।
এছাড়াও আরও বহু বিদেশি ভাষার শব্দ বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের সম্পদ হয়ে উঠেছে ।
(গ) নবগঠিত শব্দ – এক শ্রেণির শব্দের সঙ্গে আর এক শ্রেণির শব্দ,প্রত্যয়,উপসর্গের মিশ্রণে যে নতূন শব্দ সৃষ্টি হয়,তাকে নবগঠিত শব্দ বলে । এই শ্রেণির শব্দকে মিশ্রশব্দ বা সংকর শব্দও বলে । যেমন-
- তৎসম+বাংলা – পিতাঠাকুর, শ্বেতপাথর,মায়াকান্না,কাজকর্ম ।
- তৎসম + বিদেশি – হেড পন্ডিত , নৌবহর , পর্দাপ্রথা কাগজপত্র ।
- বিদেশি+বিদেশি – উকিল-ব্যারিস্টার,টাইম-টেবিল,হেড-মাস্টার,মেমসাহেব ।
- তৎসম + বাংলা প্রত্যয় – ভাবুক,দেশি, লক্ষ্মী , বারমেসে ।
- তৎসম + বিদেশি প্রত্যয় – দাতাগিরি , ধূপদানি , প্রমাণসই ।
- বিদেশি শব্দ + তৎসম প্রত্যয় – খ্রীস্টীয় , হিন্দুত্ব ।
- বিদেশি শব্দ + বাংলা প্রত্যয় – গোলাপী, মাস্টারি , মোগলাই ,শহুরে ।
- বিদেশি শব্দ + বিদেশি প্রত্যয় – ডাক্তারখানা, সমঝদার, সরাইখানা ।
অনূদিত শব্দ – কিছু বিদেশি শব্দ কৃতঋণ শব্দ হিসাবে সরাসরি বাংলা ভাষায় না এসে অনুবাদের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় এসেছে , তাদের অনূদিত শব্দ বলে । যেমন- বাতিঘর (Light house), নলজাতক(Test tube baby), উড়ালপুল (Flyover) , স্বর্ণযুগ (Golden Age) ।
Coochbehar Panchanan Varma University 3rd sem er jonno vdo banale upokrito hotam. 🙏
উত্তরমুছুন