1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

বাংলা অনার্স , সেমিস্টার - ২ ইউনিট : ৩ — প্রশ্নোত্তর








বাংলা অনার্স 
সেমিস্টার - ২
ইউনিট : ৩



১ । উচ্চারণ প্রকৃতি অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনির  বর্গীকরণ  করো ।


স্বরধ্বনির বৈচিত্র্য নির্ভর করে দুটি বিষয়ের উপরে 
 ১) স্বরধ্বনি উচারণের কাল পরিমাপ এবং
 ২) স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ুর কাল-পরিমাপের উপরে। প্রথমটির উপর নির্ভর করে যে শ্রেণীবিভাগ করা হয় তাকে পরিমাপগত বা মাত্রাগত শ্রেণীবভাগ বলে। আর দ্বিতীয়টির উপর নির্ভর করে যে শ্রেণিবিভাগ করা হওয়া তাকে বলা হয় গুণগত বা প্রকৃতিগত শ্রেণীবিভাগ ।
স্বরধ্বনি (সংজ্ঞা):  যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু মুখবিবরে কোন বাধা না পেয়ে উচ্চারিত হয় তাকে স্বরধ্বনি বলে।

Cardinal Vowel:  A Cardinal vowel is a fixed and unchanging reference – point, established within the total range of vowel quality, to which any other vowel sound can be directly related.
  [william jones] Cardinal Vowel এর সংখ্যা আটটি – [ i, e, ε, a, 𝑎, ɔ, o, u ] এগুলো বাড়েও না কমেও না।
কার্ডিনাল ভাওয়েল স্বাভাবিক ভাষার স্বরধ্বনি নয়।
কার্ডিনাল ভাওয়েলের উচ্চারণ স্থান সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। কার্ডিনাল ভাওয়েলের মানদণ্ডে আমরা বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনির শ্রেণীবিভাগ ও বর্গীকরণ করে থাকি।
মৌলিক স্বরধ্বনিঃ  বিভিন্ন ভাষায় স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বার অবস্থান চিহ্নিত করার জন্যে মুখের ভিতরের শূন্যস্থানে ভাষা – বিজ্ঞানীরা যে-সব কাল্পনিক মাপকাঠি নির্ণয় করেছেন তাদের পরিমাপ নির্দেশক বিন্দু থেকে উচ্চারিত স্বরধ্বনিগুলোকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলা হয়।
আর এক ভাবে বলা যায় –  যে স্বরধ্বনি বিশ্লেষণ করলে সেই স্বরধ্বনি ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনি পাওয়া যায় না তাকে বলে মৌলিক স্বরধ্বনি।
মৌলিক স্বরগুলো হলো – ই, এ, অ্যা, আ, আ, অ, ও, উ।
মৌলিক স্বরধ্বনির মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে বিভিন্ন ভাষার স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিহ্বার অবস্থান এবং ওষ্ঠের আকৃতি যেমন নির্দেশ করা যায়, তেমনি মৌলিক স্বরধ্বনির সঙ্গে তুলনায় বিভিন্ন ভাষার স্বরধ্বনির শ্রেণীবিভাগ বা বর্গীকরণ করা যায়। একটা রেখা চিত্রের সাহায্যে দেখিয়ে বাংলা স্বরধ্বনিগুলোকে বসিয়ে তাদের উচ্চারণ স্থান চিহ্নিত করা হলো এবং বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনি ও বাংলা স্বরধ্বনির শ্রেণীবিভাগ করা হলো।
মুখগহ্বরে মৌলিক স্বরধ্বনিররূপ মাপকাঠি
মৌলিক স্বরধ্বনির চিত্রে বাংলা স্বরধ্বনি
সম্মুখ স্বরধ্বনিঃ   যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা সামনের দিকে অর্থাৎ ওষ্ঠের দিকে এগিয়ে আসে সেই স্বরধ্বনিকে সম্মুখ স্বরধ্বনি বলা হয়। যেমন – ই, এ, অ্যা [ i, e, ε ]।

পশ্চাৎ স্বরধ্বনিঃ   যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পিছন দিকে অর্থাৎ গলার দিকে গুটিয়ে যায় তাকে পশ্চাৎ স্বরধ্বনি বলে। যেমন – প্রাথমিক মৌলিক স্বরধ্বনি [ ɔ, o, u  ] বাংলা [ অ, ও, উ ]
কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনিঃ  সম্মুখ স্বর ও পশ্চাৎ স্বরের মাঝামাঝি অবস্থানে জিভকে রেখে যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করা হয় তাকে কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি বলে। যেমন – বাংলা [ আ ]।
কুঞ্চিত স্বরধ্বনিঃ  যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে গিয়ে জিভ গোলাকার বা কুঞ্চিত হয় তাকে কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলে। যেমন – উ, ও, অ [ u, o, ɔ ]
স্বরক্ষেত্রঃ   যে জায়গা থেকে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে বলে স্বরক্ষেত্র। স্বরক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে আবার স্বরধ্বনিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।
১) উচ্চ স্বরধবনিঃ  যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা স্বরধ্বনির এলাকার মধ্যেই সর্ব্বোচ্চ অবস্থানে বা তার কাছাকাছি অবস্থানে থাকে তাকে উচ্চ স্বরধ্বনি বলে। যেমন – ই, উ [ i, u ]।
২) নিম্ন স্বরধ্বনিঃ  জিভকে নিচে নামিয়ে কোন স্বরধ্বনি যদি কোন স্বরধ্বনি উচ্চারণ করা হয়, তবে সেটা হবে নিম্ন স্বরধ্বনি। যেমন – আ [ a ] ।
৩) উচ্চমধ্য বা মধ্যোচ্চঃ   উচ্চ স্বরধ্বনির উচ্চারণ-স্থান থেকে নিচে মুখের ভিতরে যে শূন্যস্থান  থাকে তার সর্বোচ্চ বিন্দু থেকে প্রায় একও তৃতীয়াংশ ছেড়ে জিভকে নিচে নামিয়ে এনে যদি আমরা কোন স্বরধ্বনি উচ্চারণ করি তবে সেটাই হবে উচ্চ-মধ্য বা মধ্যোচ্চ স্বরধ্বনি। যেমন – এ, ও [ e, o ] ।
৪) নিম্ন মধ্য বা মধ্যনিম্নঃ   উচ্চ স্বরধ্বনির উচ্চারণ থান থেকে নিচে মুখের ভিতরে যে শূন্যস্থান থাকে তার মধ্যে নিচে থেকে প্রায় এক তৃতীয়াংশ ছেড়ে আমরা জিভকে যদি উপড়ে তুলে ধরে কোন স্বরধ্বনি উচ্চারণ করি তবে তাকে বলা হবে নিম্ন – মধ্য বা মধ্য নিম্ন স্বরধ্বনি। যেমন – অ্যা, অ [ ε, ɔ  ] ।
মুখবিবরের ভিতরের শূন্যস্থানের পরিমাপ অনুসারে স্বরধ্বনিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) সংবৃতঃ  যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ স্বরধ্বনির এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে থাকে এবং জিভ ও নিচের চোয়াল যতদূর সম্ভব মুখের ছাদের দিকে এগিয়ে থাকায় মুখের ভিতরের শূন্যস্থান প্রায় ভরে থাকে তাকে সংবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন – ই, উ [ i, u ] ।
খ) বিবৃতঃ  জিভকে একদম নিচে নামিয়ে স্বাভাবিকতা বজায় রেখে নিচের চোয়ালকে মুখের ছাদ থেকে যতদূর সম্ভব ডুরে সরিয়ে আনলে মুখের ভিতরের শূন্যস্থান একদম ফাঁকা থাকে, এই অবস্থায় যে, স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে। সব নিম্ন স্বরধ্বনি হলো বিবৃত স্বরধ্বনি। যেমন – আ [ 𝑎 ] ।
গ) অর্ধসংবৃতঃ   সংবৃত স্বরধ্বনির অবস্থান থেকে বিবৃত স্বরধ্বনির অবস্থান পর্যন্ত যে শূন্যস্থান , জিভ ও নিচের চোয়ালের দ্বারা যদি তার দুই – তৃতীয়াংশ ভরে থাকে তবে সেই অবস্থায় উচ্চারিত স্বরধ্বনিকে অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি বলে। উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। যেমন – এ, অ [ e, ɔ ] ।
ঘ) অর্ধবিবৃতঃ   সংবৃত স্বরধ্বনির অবস্থান থেকে বিবৃত স্বরধ্বনির অবস্থান পর্যন্ত যে শূন্যস্থান, নিচের থেকে তার মাত্র এক – তৃতীয়াংশ যদি জিভ ও নিচের চোয়ালের দ্বারা ভরে থাকে আর উপর থেকে দুই – তৃতীয়াংশ ফাঁকা থাকে তবে সেই অবস্থায় উচ্চারিত স্বরধ্বনিকে অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি বলে। সব নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি হলো অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি। যেমন – অ্যা, অ [ε, ɔ ] ।
ওষ্ঠের আকৃতি অনুসারে স্বরধ্বনিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১) ওষ্ঠকে দুদিকে [ কানের দিকে ] প্রসারিত করে আমরা যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করি তাকে প্রসারিত স্বরধ্বনি বলে। যেমন – ই, এ, অ্যা [ i, e, ε ] ।
২) ওষ্ঠ যদি দুদিকে প্রসারিত না করে ফুঁ দেয়ার মতো গোল করে কুঞ্চিত আকার ধারন করে তবে সেই অবস্থায় যে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলে। যেমন – অ, উ, ও [ ɔ, u, o ] ।
[ 𝑎 ] পশ্চাৎ স্বর হওয়া সত্ত্বেও এটি উচ্চারণের সময় ওষ্ঠ কুঞ্চিত হয় না। এই জন্যে একে অকুঞ্চিত পশ্চাৎ স্বর বলা হয়।
কোন কোন স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ওষ্ঠ কুপ্রসারিতও হয় না, কুঞ্চিত হয় না, স্বাভাবিক থাকে। এইরকম স্বরধ্বনিকে স্বাভাবিক বা মধ্যস্থ স্বরধ্বনি বলা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি এই ধরণের স্বরধ্বনি। যেমন – আ ।
এই শ্রেণীবিভাগগুলো ছাড়াও শ্বাস বায়ুর গতিপথ অনুসারে স্বরধ্বনিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১) মৌখিকঃ  স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু মুখ দিয়ে যাতায়াত করলে স্বরধ্বনি মৌখিক হয়।
২) অনুনাসিকঃ   শ্বাসবায়ু একই সঙ্গে নাক ও মুখ দিয়ে যাতায়াত করলে স্বরধ্বনি অনুনাসিক হয়।
বাংলায় মৌখিক স্বরধ্বনিকে অনুনাসিক করে দিলে অর্থই পাল্টে যায়। যেমন – বাধা – বাঁধা। ‘আ’ ধ্বনিকে অনুনাসিক করার ফলে অর্থ পৃথক হলো। বাংলায় যতগুলো মৌখিক স্বরধ্বনি আছে ততগুলোই অনুনাসিক স্বরধ্বনি আছে।

সহায়ক গ্রন্থ:  ডঃ রামেশ্বর শ :  সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা।







 

২। ধ্বনি পরিবর্তন কাকে বলে ?  উদাহরণসহ ধ্বনি - পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করো। 

ধ্বনি পরিবর্তন:   কােন ভাষার শব্দ   বহুজনের  ব্যবহার হতে হতে কখনো  সেই শব্দের   ধ্বনিসমূহে নির্দিষ্ট ক্রম রক্ষা হয় না অথবা এর কােন  কােন   ধ্বনির  লোপ বা এতে ধ্বনির   আগমন ঘটে কিন্তু আগের অর্থ বোঝায়।  শব্দের   ধ্বনিসমূহের   এরূপ পরিবর্তনকে     ধ্বনি পরিবর্তন বলে ।অন্যভাবে বললে দ্রুত উচ্চারণের ফলে অথবা ভাষার  উপর  আঞ্চলিক  প্রভাবের  কারণে ধ্বনির উচ্চারণ-পার্থক্যকে ধ্বনি পরিবর্তন  বলে ।
 যেমন–  স্কুল> ইস্কুল , পিশাচ > পিচাশ

বাংলা প্রাণবন্ত চলমান ভাষা । বহু বছরের ধীর ও ধারাবাহিক বিবর্তনে বাংলা ভাষার বর্ণ ও সংযুক্ত বর্ণের মূল ধ্বনির নানা পরিবর্তন ঘটেছে । ধ্বনির পরিবর্তনশীলতা বাংলা ভাষাকে আরো আন্তরিক ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে । 

শ্রেণীবিভাগ—
(১) ধ্বনির আগম বা ধ্বন্যাগম  (২) ধ্বনির লোপ বা ধ্বন্যালোপ 
 (৩) ধ্বনির স্থানান্তর               (৪) ধ্বনির রূপান্তর ।

(১) ধ্বনির আগম বা ধ্বন্যাগম -
 উচ্চারণকে সহজ ও সরল করবার জন্য বা উচ্চারণের অক্ষমতার জন্য যখন কোন শব্দের আদিতে, মধ্যে ও অন্তে নতুন কোনো ধ্বনির আগমন ঘটে, তখন সেই জাতীয় ধ্বনি পরিবর্তনকে ধ্বন্যাগম বলে । এই ধ্বন্যাগম দুই প্রকারের যথা (i) স্বরাগম ও (ii) ব্যঞ্জনাগম ।

(i) স্বরাগম:- শব্দের প্রথমে, মধ্যে ও অন্তে যখন কোনো স্বরবর্ণের আগমন ঘটে তখন তাকে স্বরাগম বলে । স্বরাগম তিন প্রকারের—
(ক) আদি স্বরাগম :-  যেমন স্পর্ধা > আস্পর্ধা, স্টেশন > ইস্টিশন, স্টেট > এস্টেট । অর্থাৎ শব্দের প্রথমে আ, ই, এ ধ্বনির আগমন ঘটেছে ।
(খ) মধ্য স্বরাগম :-  শ্লোক > শোলোক,  রত্ন > রতন, প্রীতি > পিরীতি -এখানে শব্দের মধ্যে ও, অ , ই ধ্বনিগুলির আগমন ঘটেছে ।
(গ) অন্ত স্বরাগম :-  বেঞ্চ > বেঞ্চি, সত্য > সত্যি,  ল্যাম্প > ল্যাম্পো প্রভৃতি -এখানে ই, ও অ স্বরধ্বনি গুলো শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ।
(ii) ব্যঞ্জনাগম :-  শব্দ মধ্যে যখন ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটে তখন সেই প্রক্রিয়াকে বলে ব্যঞ্জনাগম । ব্যঞ্জনাগম ও তিন প্রকার — (ক) আদি, (খ) মধ্য ও (গ) অন্ত ব্যঞ্জনাগম ।
(ক) আদি ব্যঞ্জনাগম :- উজু > রুজু , ওঝা > রোজা , এখানে শব্দের আদিতে 'র' এর আগমন ঘটেছে ।
(খ) মধ্য ব্যঞ্জনাগম :- অম্ল > অম্বল, বানর > বান্দর, পোড়ামুখী > পোড়ারমুখী প্রভৃতি । এখানে ব, দ, র ব্যঞ্জনধ্বনিগুলি শব্দের মধ্যে এসেছে ।
(গ) অন্ত ব্যঞ্জনাগম :-  সীমা > সীমানা , ধনু > ধনুক, নানা > নানান - শব্দের শেষে 'না', 'ক', 'ন' বর্ণের আগমন ঘটে শব্দগুলিকে সরলীকরণ করা হয়েছে ।

(২) ধ্বন্যালোপ :- 
ধ্বনির আগমন ঘটিয়ে যেমন ধ্বনির পরিবর্তন ঘটেছে তেমনি শব্দের আদি, মধ্য ও অন্তে ধ্বনির লোপ ঘটিয়ে শব্দের কাঠিন্য ভেঙে দেওয়া হয়েছে । যুগ্মশব্দ বা বড় বড় শব্দগুলিকে সরলীকরণ করে ছোট করা হয়েছে ।
  • ধ্বনিলোপ দুই প্রকারের যথা — (i) স্বরলোপ ও (ii) ব্যঞ্জনলোপ । 
  • স্বরলোপ আবার তিন প্রকারের যথা — (ক) আদি স্বরলোপ , (খ) মধ্য স্বরলোপ ও (গ) অন্ত স্বরলোপ ।
(ক) আদি স্বরলোপ :-  যেমন অলাবু > লাউ, অভ্যন্তর > ভিতর, উদ্ধার > ধার । এখানে প্রথম ধ্বনিগুলো লোপ পেয়েছে ।
(খ) মধ্য স্বরলোপ :-  যেমন গামোছা > গামছা, ভগিনী > ভগ্নী , জানালা > জানলা । এইসব শব্দের মধ্যস্থিত স্বরধ্বনি গুলির লোপ হয়েছে ।
(গ) অন্ত্য স্বরলোপ :- যেমন আশা > আশ, জলপানি > জলপান, কালি > কাল, ফাঁসি > ফাঁস প্রভৃতি শব্দের অন্ত্যস্থিত স্বরধ্বনিগুলি লোপ পেয়েছে ।
(৩) ধ্বনির স্থানান্তর :- শব্দমধ্যস্থ একাধিক স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনি বিভিন্নভাবে স্থান পরিবর্তন করে যখন তখন তাকে বলা হয় ধ্বনির স্থানান্তর । এই স্থানান্তর প্রধানত দুই প্রকার যথা— (ক) অপিনিহিতি ও (খ) ধ্বনি বিপর্যয় বা বিপর্যাস ।
(ক) অপিনিহিতি :- শব্দ মধ্যস্থ ব্যঞ্জনধ্বনির পর যদি ই-কার বা উ-কার থাকে, তবে সেই ই-কার বা উ-কার ঐ ব্যঞ্জনধ্বনির আগে উচ্চারিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে অপিনিহিতি বলে । যেমন —আজি > আইজ, কালি > কাইল, সাধু > সাউধ, আশু >  আউস প্রভৃতি (আ + জ + ই  > আ + ই + জ ) । এছাড়া য-ফলা যুক্ত শব্দ বা 'ক্ষ', 'জ্ঞ' থাকলেও ই-কার আগে উচ্চারিত হয় । বাক্য > বাইক্য, লক্ষ্ > লইক্ষ কন্যা > কিইন্যা প্রভৃতি । অপিনিহিতি বাংলার বঙালী উপভাষায় প্রচলিত বৈশিষ্ট্য । এই বঙালী উপভাষা বাংলাদেশে প্রচলিত হয় বেশি ।

(খ) ধ্বনি বিপর্যয় বা বিপর্যাস :- উচ্চারণের সময় অসাবধানতাবশত বা অক্ষমতার কারণে শব্দ মধ্যস্থ সংযুক্ত বা পাশাপাশি দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির স্থান পরিবর্তন করার ঘটনাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে । যেমন বাক্স > বাস্ক, পিশাচ > পিচাস, বাতাসা > বাসাতা, তলোয়ার > তরোয়াল, দহ > হ্রদ, রিকশা > রিশকা প্রভৃতি ।

(৪) ধ্বনির রূপান্তর:- শব্দ মধ্যস্থ একটি স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনি রূপান্তরিত হয়ে যথাক্রমে অন্য কোনো স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনিতে রূপান্তরিত হয় তখন তাকে ধ্বনির রূপান্তর বলে । রূপান্তর তিন প্রকার যথা—(ক) স্বর সংগতি , (খ) অভিশ্রুতি ও (গ) সমীভবন বা ব্যঞ্জন সংগতি ।

(ক) স্বরসংগতি :- শব্দের মধ্যে পাশাপাশি বা প্রায় কাছাকাছি অবস্থিত দুটি পৃথক স্বরধ্বনির মধ্যে যদি একটি অন্যটির প্রভাবে বা দুটিই পরস্পরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে একই রকম স্বরধ্বনিতে বা প্রায় একই রকম ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয় তবে সেই প্রক্রিয়াকে স্বরসংগতি বলে । স্বরসংগতি তিন রকমের, যথা — (i) প্রগত স্বরসংগতি , (ii) পরাগত স্বরসংগতি ও (iii) অন্যোন্য বা পারস্পরিক স্বরসংগতি ।

(খ) অভিশ্রুতি :- অভিশ্রুতি হল অপিনিহিতির পরবর্তী ধাপ । পশ্চিমবঙ্গের চলিত বাংলা ভাষায় এর প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি । অপিনিহিতি, স্বরসংগতি ও স্বরলোপ জনিত অনেকগুলি পরিবর্তনের পরিণাম হল অভিশ্রুতি । অর্থাৎ অপিনিহিতি সৃষ্ট কোনো শব্দ যখন ধ্বনিলোপ, স্বরসংগতি প্রভৃতি একাধিক ধ্বনি পরিবর্তন প্রক্রিয়ার ফলে মান্য চলিত ভাষায় ব্যবহারের উপযোগী সংক্ষিপ্ত রূপ লাভ করে, তখন সেই সম্মিলিত ধ্বনি পরিবর্তন কে বলে অভিশ্রুতি । যেমন— রাখিয়া > রাইখিয়া (অপিনিহিতি), রাইখিয়া > রাইখিয়ে (স্বরসংগতি). রাইখিয়ে > রেখে (অভিশ্রুতি) । পটুয়া > পউটা > পোটো, কন্যা > কইন্যা > কনে , বেদিয়া > বাইদ্যা > বেদে , কলিকাতা > কইলকাতা > কোলকাতা প্রভৃতি ।

(গ) সমীভবন বা সমীকরণ বা ব্যঞ্জন সংগতি:-  শব্দমধ্যস্থ্য বা পাশাপাশি অবস্থিত দুটি পৃথক পৃথক ব্যঞ্জন উচ্চারণের সময়ে যখন একে অন্যের প্রভাবে বা উভয়ে উভয়ের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে দুটি একই ব্যঞ্জনে বা প্রায় সমব্যঞ্জনে পরিণত হয় তখন সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় সমীভবন বা ব্যঞ্জন সংগতি । ব্যঞ্জন সংগতি ও তিন প্রকারের, যথা—(i) প্রগত ব্যঞ্জনসংগতি, (ii) পরাগত ব্যঞ্জনসংগতি ও (iii) অন্যোন্য সমীভবন ।

  • জয়দেব বিশ্বাস, বাংলা (এম.এ)



Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন