1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

চাঁদা : নন্দিতা পাল—শারদ ১৪২৮

ন ন্দি তা  পা ল
চাঁদা


কাকু বাড়িতে আছেন?


এই ভাদ্র মাসের শেষের দিক থেকে বুদ্ধদেব বাবু এই ডাক শুনলেই কি রকম একটু গুটিয়ে যান। তার গিন্নিকে ডেকে বললেন, ‘ওগো তুমি সামলাও’। গিন্নিমা একবার কড়া চোখে কর্তার দিকে তাকিয়ে যে কাজ করছিলেন তাতেই যেন আবার ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। আর বুদ্ধদেব বাবু এক্কেবারে ভিতরের ঘরে বিছানায় গায়ে চাদর দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরলেন। বেশ কবার বাইরের দরজায় ডাকাডাকিতে গিন্নিমা বেড়িয়ে এলেন।


কি ব্যাপার, কেন এত জোরে ডাকছ? জানোই তো কাকুর শরীর টা ভালো নেই।


কিন্তু সকালেই তো কাকুকে দেখলাম পাঠা কাঁটার দোকানে, ছেলেটি বলতেই আর একজন এগিয়ে এসে বলল,  


কাকিমা আপনি ভালো আছেন তো? এবারের পুজোটা নিয়ে একটু কথা বলার জন্য এসেছিলাম। গত দুবছর তো খালি ঘট পুজো হল। এবার একটু অন্যরকম করে করার ইচ্ছে আর কি, পাশের পাড়ার ক্লাব দেখুন না কি রকম বাইরের থেকে কারিগর এনে কত ডেকোরেশন করবে শুনছি।


সে ভালো কথা কর। কিন্তু কাকু গতবার যা দিয়েছিল তাই দেবে। এক পয়সাও বাড়াতে পারব না এবার। এই বলে গিন্নিমা ভেতরে চলে গেলেন।


একটু গুনগুন উঠল ঐ দলের মধ্যে, দু একজন বাইরে সিঁড়ি তে বসে পড়েছিল। সারা বছর এই ছেলে গুলোকে কোথাও পাওয়া যায় না। রাতের বেলা বাইক নিয়ে হু হা রাস্তা দিয়ে যেতে দেখা যায় অথবা ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে গুলতানি মারতে। বুদ্ধদেব বাবু কান খাড়া করে শুনছেন আর প্রহর গুনছেন যেন কখন এরা যাবে। অপূর্বের ট্রেন লেট করে আসছে, যে কোন সময়ে ছেলে বাড়ি চলে আসবে।


ভাবতে ভাবতেই বুদ্ধদেব বাবুর ছেলে অপূর্ব বাড়ি ঢুকল। অপূর্ব চাকরি সুত্রে অন্য শহরে থাকে। পাড়ার দল অপুকে ঘিরে ধরল। অপুও দাঁড়িয়ে মন দিয়ে শুনছিল ওদের কথা। ততক্ষণে গিন্নিমার ডাক,


অপু, এতদুর থেকে এসেছিস, ভেতরে আয় বাবা। আহা কতদিন তোকে দেখিনি।   


অপু ছেলেদের সাথে কিছু কথা বলে ঘরে ঢুকে যেতেই একজন বলে উঠল,


কাকিমা, পরে আসব তাহলে। কাকুর শরীর টা ঠিক হয়ে যাক।


তাই এসো। তবে মনে রেখো যা বললাম, তার বেশি কিছু পাবে না।


তা কি করে হয় কাকিমা, দাদার কাছে রিসিট টা দিয়েছি, একটু দেখে নেবেন। আপনারা সাথে না থাকলে পাড়ার নাম উজ্জ্বল হবে কি করে। এবারে আমরা দশটা পরিবার যারা করোনায় আপনজন হারিয়েছে তাদের সাহায্যর কথা ভেবেছি।


ঠিক আছে ঠিক আছে, এখন এসো বাপু। আমার অনেক কাজ পরে আছে।


অপু ঘরে ঢুকে হাত পা ধুয়ে সোজা আসতেই বুদ্ধদেব বাবু ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। বৌমা অন্তস্বত্তা তাই অপু নিয়ে আসেনি ওকে এবারে। গিন্নিমা অপুর জন্য খাবারের জল নিয়ে এসে ছেলেকে পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন,


কি রে অপু তুই নাকি রিসিট নিয়েছিস ঐ ছেলেগুলোর থেকে। কেন নিয়েছিস? আমি তো বললাম তোর বাবার শরীর ভালো নেই। আর আগের বার যা দিয়েছি তাই দেব। এক পয়সাও বেশি দেব না। তুই যে কি করিস!


কি করব মা, ওরা তো বলল কত কিছু করার প্ল্যান করেছে, করোনা আক্রান্ত দশটা পরিবারের সাহায্য করবে,


থাক অনেক হয়েছে। ও সব আমার জানা আছে। মনে নেই সেই সে বার আমরা ওদের ডিমান্ড দিতে পারিনি বলে বাবাকে একদিন রাস্তায় কত হেনস্থা করেছিল। বাবা রাতে ঘুমাতে পারত না, বাইরে যেতে চাইত না কতদিন। মনে আছে তোর?


হ্যাঁ মা, সে তো অনেক আগের কথা, আমি তখন স্কুলে। আর বাবাকে ক্লাবের ছেলেরাই যে হেনস্থা করেছিল তার তো কোন প্রমান পাওনি তোমরা। তবে হ্যাঁ, ঘটনাটা সত্যি দুঃখের, আর আমি তো দেখেছি সে দিনগুলো।


সেই থেকে তোর বাবা পুজো এলে যেন গুটিয়ে থাকে। মানসিক যন্ত্রণা হয়ে গিয়েছে একদম।


কিন্তু মা তুমি দেখো এখন তো ক্লাবের ছেলেরা এসে ডেকে কথা বলে সব বুঝিয়ে বলছে যদি হেল্প করতে পারো। না পারলে করবে না।  ওদের বুঝিয়ে বললেই হবে।


দ্যাখ অপু রিসিটে কত লিখেছে দ্যাখ তো? অপু রিসিট টা দেখাতেই গিন্নিমা,


ওরে বাবা, এ তো আগের বছরের ডাবল! আমি বলেছিলাম কিছু একটা বাহানা নিয়ে আসবে ওরা। হল তো সত্যি আমার কথা।


বুদ্ধদেব বাবু ততক্ষণে পায়চারি করছে ঘর বার। কি হবে এবার, কি ভাবে সামলাব?


অপু বাবা মাকে বোঝানর চেষ্টা করে তেমন কিছু করতে পারেনি। যাবার আগে মায়ের হাতে রিসিটের টাকা অঙ্কটা দিয়ে ফিরে যায় নিজের কাজের শহরে।


দ্বিতীয় ভাগ


মহালয়ার দু চারদিন আগে হঠাৎ গিন্নিমার খুব জ্বর, বুদ্ধ দেব বাবু কোনোরকমে সেবা করে চলেছেন। কাজের লোকেরা কেউ ঢোকেনি কাজে। গিন্নিমার সেদিন সকাল থেকেই বুকে চাপ চাপ, একদম ঝিমিয়ে গিয়েছে। ডাক্তার বাবু বলেছেন হাসপাতালে দিয়ে দিতে, একদম দেরি না করতে। অপুকে এ সব জানায় নি বুদ্ধদেব বাবু, নিজেই ভেবেছেন নিয়ে যাবেন গিন্নিকে হাসপাতালে। কারণ অপুর অপুর বৌয়ের কিছু সমস্যা ধরা পড়েছে তাই নার্সিং হোমে ভর্তি। স্নান খাওয়া করেই বুদ্ধদেব বাবু গিন্নিকে নিয়ে বেড়িয়ে পরবেন ভাবলেন। চেনা ড্রাইভারকে ফোন করে রাখলেন। কিন্তু ছ্যাক করে উঠল স্নানের সময় গায়ে জল পড়তেই। বুঝলেন গায়ে বেশ জ্বর। তাড়াতাড়ি ওষুধ খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে বেরোবেন ভেবে শুয়েছেন বুদ্ধদেব বাবু। যখন জ্ঞান হল, তাকিয়ে দেখেন হাসপাতালে বেডে, হাতে স্যালাইন চলছে। নিঝুম চারিপাশ। হঠাৎ শুনতে পেলেন,


বাবা, শরীর কেমন লাগছে?


অপু তুই কখন এলি?  কখন আমাকে এখানে নিয়ে এলি বাবা? তোর মা কোথায়?


মা ও এই হাসপাতালে, মেয়েদের ওয়ার্ডে আছে। অক্সিজেন চলছে, এমনি ভালো আছে।  


আমি কিছু টের পাইনি বাবা তুই কখন আমাদের নিয়ে এলি, মাথাটা বোধহয় ঘুরে গিয়েছিল।


হ্যাঁ বাবা গতকাল দুপুরে তুমি আর মা দুজনেই বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলে দুই ঘরে। মায়ের


...

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন