ব দ রু দ্দো জা শে খু
হায়াত
এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট। টরন্টো থেকে লন্ডন ফ্রাঙ্কফুর্ট হ'য়ে দিল্লী।
অজন্তা বাহিওয়ালের বাবা গুরগাঁওয়ের পৈতৃক বাড়িতে দেহত্যাগ করেছে। সকাল ৯টার সময় সে এস-টি-ডি কলে খবর পেয়েছে। বাবাকে শেষ দেখার জন্য তাকে গুরগাঁওয়ে যেতেই হবে। তাই সে মরিয়া হ'য়ে সকাল থেকে সবার আগের এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে টিকিট পাওয়ার জন্য হন্যে হ'য়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ওই ফ্লাইটে কোনো সীট খালি নাই। সে কেঁদে কেটে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সীর কাছে দরবার করলো। তার অবস্থা বুঝালো। তারপরের সরাসরি দিল্লী ফ্লাইট দু' দিন পরে। তাতে যেতে গেলে অনেক দেরী হ'য়ে যাবে। সে তার বাবাকে দেখতে পাবে না। আরো অনেক ফ্লাইট আছে, ঘুরে যাবে, সেগুলোরও একই অবস্থা। সে টরন্টোতে একটা বহুজাতিক সংস্থাতে বড়ো দায়িত্বে আছে। সে চেষ্টার ত্রুটি করতে ছাড়লো না।
সে সরাসরি এয়ারপোর্টে লাগেজ নিয়ে চ'লে এলো আর রিসেপশনে তার জরুরী প্রয়োজন বুঝিয়ে, সেদিনের এয়ার ইন্ডিয়ার টরন্টো নিউ দিল্লী ফ্লাইটে একটা টিকিট পাওয়ার চেষ্টা করলো।
কিন্তু শিকে ছিঁড়লো না। রিসেপশন থেকে তাকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললো , যদি কেউ নির্ধারিত সময়ে টার্ন-আপ না করে, তাহলে তার কেসটা সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করা হবে।
কিন্তু না ! রাত ৭৹০০ টার সময় পার হ'য়ে গেলে রিসেপশন জানালো, সরি ম্যাম ,, সবাই টার্ন-আপ করেছে। আর কোনো আশা নাই। আপনি অন্য ফ্লাইটের চেষ্টা করুন।
যখন প্লেন ছেড়ে গেলো, সে লাউঞ্জে কান্নায় ভেঙে পড়লো। পাশে একজন সাদা জোব্বা পরা দেবদূতের মতো লোক ব'সেছিল, সে তার কান্না দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। কাছে এসে জানতে চাইলো, তার এমন কান্নার কারণ কি?
সমব্যথী লোকটাকে পেয়ে অজন্তা কাঁদতে কাঁদতে তাকে ঘটনাটা বললো।
দেবদূতের মতো লোকটি বললো, হতাশ হবেন না,মা। একটা দুয়ার বন্ধ হলেও আল্লাহ্ শত শত দুয়ার খুলে রেখেছেন। যা হয়েছে তা হয়তো আপনার ভালোর জন্যই হয়েছে। ওপরওয়ালার উপর বিশ্বাস রাখুন। সে লাউঞ্জে বসেই থাকলো।
মাঝরাতের পরে আচমকা ঘোষণা হলো, টরন্টো থেকে নিউ দিল্লীগামী বোয়িং এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি মাঝ আটলান্টিক মহাসাগরের উপর
প্রচন্ড বিস্ফোরণে ভেঙে পড়েছে এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে,সব যাত্রী ও বিমানকর্মীরা মারা গেছেন।
অজন্তা কি ভুল শুনছে ? না, তার মাথা খারাপ হ'য়ে গেছে ! সে আবারো ঘোষণাটি মন দিয়ে শুনলো আর একটা ভয়াল বৈদ্যুতিক শিহরণ তার গোটা শরীরে খেলে গেলো ! নিয়তির নেহাৎ বদান্যতায়
সে জানেপ্রাণে বেঁচে গেছে ! কিছুক্ষণ আগেও যে বিমানটিতে একটা সীট পাওয়ার জন্য সে এতো ঝুলোঝুলি করছিলো তা যেন হঠাৎ আতঙ্ক আর
সীমাহীন আনন্দে বদল হ'য়ে গেলো। সে চেঁচিয়ে উঠলো, ও ভগবান ! তোমার অশেষ কৃপায় আমি
বেঁচে গেছি ! বেঁচে আছি !
দেবদূতের মতো লোকটি প্রশ্ন করলো, এই বিমানটাতেই আপনার যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো ,না ?
অজন্তা পাগলের মতো তাকে জড়িয়ে ধ'রে বললো, বাবা, আপনার কথায় ফ'লে গেলো ! আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন ! শুকরিয়া ! কে কাকে শুকরিয়া জানাবে ? দেবদূত লোকটি বললো, মা,
উপরওয়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।হায়াত মউতের মালিক আল্লাহ্। আপনার হায়াত বেড়ে গেছে। অজন্তা ধপাস ক'রে ব'সে প'ড়ে ভাবতে লাগলো,সে এখনও বেঁচে আছে ! তার আরো দরজা খোলা আছে !
দেবদূত লোকটি বললো, মা, আজ আপনি বাড়ি ফিরে যান। মন সুস্থ হলে যাবেন।লোকটি বোর্ডিং পাসের দিকে এগিয়ে চললো