নদীর বিদ্রোহ
–– মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
{tocify} $title={গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন}
দশম শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – নদীর বিদ্রোহ : বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ] : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
১. স্ত্রীকে লেখা নদেরচাঁদের চিঠির পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল—
[ক] দু পৃষ্ঠা [খ] তিন পৃষ্ঠা
[গ] চার পৃষ্ঠা [ঘ] পাঁচ পৃষ্ঠা
উত্তর >> [ঘ] পাঁচ পৃষ্ঠা
২. নদেরচাঁদ প্রতিদিন কোথায় বসে নদীকে দেখে ?
[ক] নৌকোতে বসে [খ] ব্রিজের ওপর বসে
[গ] ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসে [ঘ] নদীর তীরে বসে।
উত্তর >> [গ] ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসে
৩. নদেরচাঁদের মৃত্যু হয়েছিল—
[ক] বাসের ধাক্কায় [খ] লরির ধাক্কায়
[গ] ট্রামের ধাক্কায [ঘ] ট্রেনের ধাক্কায়
উত্তর >> [ঘ] ট্রেনের ধাক্কায়
৪. নদের চাঁদ স্টেশন মাস্টারি করেছিল—
[ক] চার বছর [খ] তিন বছর
[গ] দশ বছর [ঘ] পাঁচ বছর
উত্তর >> [খ] তিন বছর
৫. কোন্ আকস্মিক আঘাত নদের চাঁদের চেতনাকে দিশাহারা করে দিয়েছিল ?
[ক] প্রবল বৃষ্টির ঝাপটা [খ] ব্রিজ ভাঙার শব্দ
[গ] ট্রেন চলে যাওয়ার শব্দ [ঘ] বাতাসের প্রবল শব্দ
উত্তর >> [খ] ব্রিজ ভাঙার শব্দ
৬. “কিন্তু শৈশবে, কৈশােরে আর প্রথম যৌবনে বড়াে ছােটোর হিসেব আর কে করে ?”—উক্তিটি যার সম্বন্ধে করা হয়েছে——
[ক] নদের চাঁদের দেশের নদীটির সম্বন্ধে
[খ] নদের চাঁদ সম্বন্ধে
[গ] নদের চাঁদের সহকারীর সম্বন্ধে
[ঘ] যেখানে নদের চাঁদ কাজ করত সেখানকার নদীটির সম্বন্ধে
উত্তর >> [গ] নদের চাঁদের সহকারীর সম্বন্ধে
৭. নদের চাঁদের বয়স—
[ক] ত্রিশ বছর [খ] পঁচিশ বছর
[গ] পঁয়ত্রিশ বছর [ঘ] কুড়ি বছর
উত্তর >> [ক] ত্রিশ বছর
৮. “…এতকাল নদের চাঁদ গর্ব অনুভব করিয়াছে”—কীসের জন্য এই গর্ব অনুভব ?
[ক] নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য
[খ] নিজের পেশার জন্য
[গ] শৈশবের ক্ষীণস্রোতা নদীটির জন্য
[ঘ] নদীর প্রতি তার ভালােবাসার জন্য
উত্তর >> [ক] নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য
৯. “নদের চাঁদ____________ডাকিয়া বলিল।” (শূন্যস্থান পূরণ করাে)
[ক] বন্ধুকে [খ] নতুন সহকারীকে
[গ] পুরাতন ভৃত্যকে [ঘ] পুরাতন সহকারীকে
উত্তর >> [খ] নতুন সহকারীকে
১০. দেশের সেই ক্ষীণ স্রোতা নির্জীব নদীটি—
[ক] আত্মীয়ার মতােই তার মমতা পেয়েছিল
[খ] অনাত্মীয়ার মতােই তার দুর্ব্যবহার পেয়েছিল
[গ] সকলের আদর পেয়েছিল
[ঘ] সকলের অনাদর পেয়েছিল
উত্তর >> [ক] আত্মীয়ার মতােই তার মমতা পেয়েছিল
দশম শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – নদীর বিদ্রোহ : অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
১. নদেরচাঁদের দেশের নদীটি কীরকম ছিল ?
উত্তর >> নদেরচাঁদের দেশের নদীটি ছিল ক্ষীণস্রোতা ও নির্জীব।
২. জলপ্রবাহকে দেখে সেদিন নদেরচাঁদের জীবন্ত মনে হয়েছিল কেন ?
উত্তর >> নদীর উন্মত্ততার জন্যই নদীর জলপ্রবাহকে দেখে নদেরর্চাদের জীবন্ত মনে হয়েছিল।
৩. কীভাবে নদেরচাঁদের মৃত্যু হয়েছিল?
উত্তর >> অন্ধকারে অন্যমনস্কভাবে রেললাইন ধরে স্টেশনের দিকে যাওয়ার সময় ৭ নম্বর ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ধাক্কায় নদেরচাঁদের মৃত্যু হয়েছিল।
৪. নদেরচাঁদ কেন ভয় পেয়েছিল ?
উত্তর >> প্রবল বর্ষায় নদীর অবস্থা ভয়ংকর ছিল, নদী যেন রােষে, ক্ষোভে, উন্মত্ত ছিল। নদেরচাঁদ নদী থেকে এক হাত উঁচুতেই বসেছিল। তাই বর্ষার জলে ফুলেফেঁপে ওঠা নদী যে কোনাে মুহূর্তে বিপদ ঘটাতে পারে বলেই নদেরচাঁদ ভয় পেয়েছিল।
৫. কোথায় বসে নদেরচাঁদ প্রতিদিন নদীকে দেখে?
উত্তর >> নদেরচাঁদ ব্রিজের মাঝামাঝি ইট, সুরকি আর সিমেন্ট দিয়ে গাঁথা ধারকস্তম্ভের শেষপ্রান্তে বসে প্রতিদিন নদীকে দেখত।
৬. স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচিত হওয়া নদী আর নদের চাঁদের দেশের নদীর মধ্যে তফাৎ কী ছিল ?
উত্তর >> স্টেশন মাস্টারি করতে এসে পরিচিত হওয়া নদীটি ছিল প্রশস্ত, গভীর ও জলে। পরিপূর্ণ আর নদের চাদের দেশের নদীটি ছিল ক্ষীণস্রোতা ও নির্জীব।
দশম শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – নদীর বিদ্রোহ : সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩]
১. “নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে”—কে কীভাবে নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পারল ?
নদের চাঁদের অনুভব : পাঁচদিন টানা বৃষ্টির পর নদীর কাছে গিয়ে নদের চাঁদ দেখল নদীর পঙ্কিল জলস্রোত ফুলে ফেঁপে উদ্যম গতিতে ছুটে চলেছে। নদী যেন উন্মত্ত। নদীর জলস্রোত ব্রিজ ও বাঁধের কাছাকাছি এসেছে যে কোনাে মুহূর্তে ভেঙে দিতে চায় সব বাধাকে। নদের চাদের মনে হল নদী যেন মুক্তি পেতে চাইছে, ফিরে পেতে চাইছে তার স্বাভাবিক গতি। তাই তার এই ভয়াল বিদ্রোহ।
২. “নদীর ধারে তার জন্ম হইয়াছে”—কার কথা বলা হয়েছে? একথা বলার কারণ কী ?
উত্তর >> নদের চাঁদ ; মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে নদের চাঁদের কথা বলা হয়েছে।
একথা বলা কারণ : নদী কেন্দ্রিক জীবনে যারা অভ্যস্ত তাদের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক বারােমাস। নদের চাদ নদীকে না দেখে থাকতে পারে না। সে নিজেও তা বােঝে, তবু নিজেকে সংযত করতে পারে না। নদীর প্রতি তার ভালােবাসার কারণ আছে। নদীর ধারে তার জন্ম হয়েছে। নদীর ধারেই সে শৈশব, বাল্য, কৈশাের। কাটিয়েছে। তাই নদীর প্রতি ভালােবাসা তার অদম্য।
৩. নদেরাদ নদীর সঙ্গে যে খেলায় মেতে উঠেছিল সেই খেলাটি কেমন ছিল ?
নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের খেলা : এক বর্ষার দিনে নদীর কাছে গিয়ে নদেরাদ দেখল নদীর জল সেতুর ধারে স্তম্ভে বাধা পেয়ে এক ফেনিল আবর্ত রচনা করেছে। সে পকেট থেকে অনেকদিন আগের পত্নীকে লেখা একটা চিঠি বার করে নদীর স্রোতে ছুড়ে ফেলল। চোখের পলকে সেই চিঠি অদৃশ্য হয়ে গেল। চিঠির এক একটি পাতা ছিড়ে দুমড়ে মুচড়ে সে নদীর মধ্যে ফেলতে লাগল। এইভাবে নদের চাদ এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠেছিল।
৪. “চিঠি পকেটেই ছিল”—কোন চিঠির কথা বলা হয়েছে ? সেই চিঠির কী পরিণতি হয়েছিল ?
নদেরচাঁদের বিরহপূর্ণ চিঠি : নদেরচাঁদ গ্রাম থেকে বহু দূরে কর্মক্ষেত্রে বাস করত গৃহে বসবাসরত পত্নীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ সবসময় হত না। তাই চিঠিই ছিল একমাত্র ভরসা। বিশেষত বর্ষা ঋতুর আবেগপূর্ণ আবহাওয়া নদেরচাঁদকে বিরহে উতলা করে তুলেছিল। তাই পাঁচদিনের বর্ষণের সুরে সুর মিলিয়ে সে একটি বিরহপূর্ণ চিঠি লিখেছিল। এখানে সেই চিঠির কথা বলা হয়েছে। নদের চাদ। আবেগপ্রবণ চিঠিতে লিখেছিল, ভয়ংকরী নদীর সঙ্গে খেলা করার তাগিদে সেই চিঠি ছিড়ে ছিড়ে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিল।
দশম শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – নদীর বিদ্রোহ : রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫]
১. নদীর বিদ্রোহ গল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নদীর যে রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন তা বর্ণনা করাে।
ভূমিকা : ‘নদীর বিদ্রোহ’ নামাঙ্কিত গল্পে নদের চাঁদের সঙ্গে নদীর সুগভীর সম্পর্ক রচিত হয়েছে। আলােচ্য গল্পে দু'টি নদীর কথা আছে। একটি হল নদের চাঁদের গ্রামের নদী, আর একটি হল তার কর্মস্থানে নদীটি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন ৩০ বছর বয়সেও নদেরর্চাদের নদীর প্রতি গভীর হৃদয়ের সমাজ তার কোথাও ঘাটতি পড়েনি। সে নিজেও জানে নদীর জন্য অদ্ভুত এক পাগলামাে রয়েছে তার।
নদীর রূপ : নদেরচাঁদ রেল লাইন ধরে এক মাইল দূরে নদীর ওপরকার সেতুর ওপর দিয়ে হাঁটতে থাকে। টানা পাঁচদিন বৃষ্টির পর আজ নদীকে দেখার সুযােগ। হয়েছে। আর সেই জন্য নদের চাঁদের আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। পাঁচদিনের আকাশভাটা বৃষ্টির পর নদী যেন এক অপরুপ রুপ ধারণ করেছে। দুদিকে মাঠঘাট জলে ডুবে গিয়েছে। আর নদেরচাঁদ নদীর বর্ষণপুঞ্জ মূর্তি কল্পনা করে আনন্দে মাতােয়ারা হয়েছে। পাঁচদিন আগেও বর্ষার জলে পরিপুষ্ট নদীর সেই নদী ক্ষেপে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর মুষলধারায় আরম্ভ হলে নদেরচাদ বসে বসে ভিজতে থাকে। নদী থেকে একটা ভীষণ মধুর ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। নদীর রূপ দেখে নদের চাঁদ ভয় পেয়ে যায়। তার মনে হয় রাগে ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে এই নদী। তার রাগের কারণ হল তার গতিপথে অসংখ্য বাঁধ ও সেতু বসিয়ে চলার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। ফলে নদীর ভবিষ্যত দেখতে পায় নদেরাদ। তার মনে হয় এই নদী একদিন ক্ষীণস্রোতা নদীতে পরিণত হবে। এভাবে নদী হারিয়ে যাবে।
২. নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে-নদীর বিদ্রোহের কারণ কী ছিল ? সে কীভাবে তা বুঝিতে পারিয়াছে ?
বিদ্রোহের কারণ : ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্প অনুসারে আজন্ম নদীর ধারে বেড়ে ওঠা নদেরাদ নদীর প্রতিটি আচরণের তাৎপর্য জানত। বর্ষার জলে উপচে পড়া নদীকে সে ক্ষিপ্ত, বিক্ষুব্ধ বলে জানত। মানুষের তৈরি বাঁধ ও সেতু নদীকে বন্দি করে ফেলেছিল। বর্ষার আগমনে সেই নদী নিজের রুপ পাল্টে ফেলে। নদেরচাঁদ তার। সংবেদনশীল অন্তর্জগৎকে উপলব্ধি করেছিল নদীর বিক্ষোভের ভাষায়। যুগ যুগ ধরে মানুষের প্রযুক্তির কাজে অবদমিত প্রকৃতি নদীর মাধ্যমে প্রতিশােধ নিতে চাইছে। তাই শীর্ণকায়া নদী পরিণত হয়েছে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের অবিচার একদিন মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। এই সমস্ত উপলব্ধি করে। নদেরচাঁদ বুঝেছিল নদীর বিদ্রোহের কারণ।
নদের চাঁদ একজন সংবেদনশীল, শিল্পী মনের মানুষ। নদী । সম্পর্কে তার কৌতূহল আকর্ষণ পাগলামির পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন নদীর সান্নিধ্য কাটানাের কারণে নদীর প্রতিটি পরিবর্তনের তাৎপর্য তার জানা ছিল। নদী বর্ষার জলে তার রূপ পরিবর্তন করলে সে প্রথম অবাক হলেও পরবর্তীকালে এক সিদ্ধান্তে উপনীত হন। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে উন্নত মানুষ নিজের শক্তির পরিচয় দিতে গিয়ে প্রকৃতির বুকে সৃষ্টি করেছে তার নিজের কৃতিত্ব। নদীকে বাগে আনতে তার বুকে বাঁধ দিয়েছে, সেতু তৈরি করেছে। এ অন্যায়ের প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। নদীর গর্জনে। কারণ সে সেতু ও বাঁধ ভেঙে ফেলতে চায়। প্রকৃতির এ আচরণ নদেরচাঁদ উপলদ্ধি করেছে।