1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

বহুরূপী গল্পের আলোচনা,সাজেশন ও সমস্ত প্রশ্নোত্তর

বহুরূপী 
সুবোধ ঘোষ


লেখক পরিচিতি:

সুবোধ ঘোষ (জন্ম: ১৯০৯ - মৃত্যু: ১০ মার্চ, ১৯৮০) বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। বিহারের হাজারিবাগে ১৯০৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আদি নিবাস বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে। তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০। প্রথম গল্প 'অযান্ত্রিক'। এছাড়া বিখ্যাত গল্পগুলি হল- 'ফসিল','থির বিজুরি', ’সুন্দরম্’  ‘জতুগৃহ’ ‘পরশুরামের কুঠার ‘ ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস- তিলাঞ্জলি (১৯৪৪), গঙ্গোত্রী (১৯৪৭), ত্রিযামা (১৯৫০), শতকিয়া (১৯৫৮) ইত্যাদি। 

উৎস : গল্প সমগ্র, তৃতীয় খণ্ড। 

বিষয়-সংক্ষেপ  :

বহুরূপী শব্দের অর্থ বহুরুপ ধারণ করে যে এই গল্পে মূল চরিত্র হরিদা একজন বহুরূপী ।অত্যন্ত গরিব হরিদার ধরাবাঁধা কাজ পছন্দ ছিল না ।তাই বহুরূপী সেজে মাঝে ঘুরে বেড়াতো এবং কিছু পয়সা রোজগার হতো ।কখনো পাগল কখনো বা পুলিশ কখনো বাউল কখনো কাপালিক এমনকি বাইজির রূপক সে ধারণ করেছে। এরকমভাবেই জগদীশ বাবুর কাছে একদিন বিরাগী সেজে হাজির হন হরিদা। বিরাগী সন্ন্যাসীর সাজ পোশাক দেখে জগদীশবাবু এমনকি তার বন্ধুরাও তাকে চিনতে পারেনি। হরিদা বহুরূপী চরিত্রটির সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে যেত যে তাকে বহুরূপী বলে কেউ বুঝতে পারত না । বিরাগি সন্ন্যাসীর সাজেও বিরাগী চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছিলেন হরিদা। তাই জগদীশবাবু তাকে তীর্থ ভ্রমণের জন্য অনেক টাকা দিতে চাইলেও তা সহজেই ফিরিয়ে দেয়।

১। বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর:

১. বাইজির ছদ্মবেশে হরিদার রোজগার হয় —                [মাধ্যমিক - ২০১৭]
 (ক) আট টাকা দশ আনা        (খ) আট টাকা আট আনা 
 (গ) দশ টাকা চার আনা          (ঘ) দশ টাকা দশ আনা ।
উত্তর:    (ক) আট টাকা দশ আনা     

২. সপ্তাহে হরিদা বহুরূপী সেজে বাইরে যান —                  [মাধ্যমিক - ২০১৮]
(ক) পাঁচদিন        (খ) চারদিন                     
(গ) একদিন         (ঘ) দুদিন ।
  উত্তর   (গ) একদিন    

৩. 'ওই চোখ কী হরিদার চোখ হতে পারে ?' — কে বলেছিল ?
     (ক) ভবতোষ       (খ) অনাদি       
     (গ) লেখক           (ঘ) অনন্ত ।
উত্তর: (ক) ভবতোষ 

৪. 'এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন ।' — কত দিন ?
     (ক) চারদিন        (খ) তিনদিন       
     (গ) সাতদিন        (ঘ) পাঁচদিন ।
উত্তর  :    (গ) সাতদিন 

৫. 'খুব হয়েছে হরি, এই বার সরে পড়ো । অন্যদিকে যাও ।' — একথা কে বলেছে ?
    (ক) ভবতোষ         (খ) অনাদি       
    (গ) কাশীনাথ         (ঘ) জনৈক বাসযাত্রী ।
  উত্তর:  (গ) কাশীনাথ        

৬. বিরাগী মতে 'পরম সুখ' হল —
(ক) সংসার ত্যাগ না করা  
(খ) ঈশ্বর সাধনা করা   
(গ) সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারা    
(ঘ) পরমাত্মার দর্শন লাভ ।
উত্তর  :  (গ) সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারা       

৭. বিরাগীরূপী হরিদার গায়ে ছিল কেবলমাত্র একটি —
 (ক) জামা        (খ) পাঞ্জাবি      
 (গ) শাল          (ঘ) উত্তরীয় ।
  উত্তর  :    (ঘ) উত্তরীয় ।

৮. 'এই ছোট্ট ঘরটাই হরিদার জীবনের ঘর' — হরিদার ঘরটা কোথায় ছিল ?
(ক) শহরের সবচেয়ে অভিজাত অঞ্চলে
(খ) শহরের একপ্রান্তে গ্রাম ঘেরা অঞ্চলে
(গ) শহরের সবচেয়ে সরু গলির ভিতরে
(ঘ) শহরের একেবারে মাঝখানে ।
উত্তর :     (গ) শহরের সবচেয়ে সরু গলির ভিতরে

৯. জগদীশবাবু 'জোর করে সন্ন্যাসীর ঝোলার ভেতরে ফেলে দিলেন'—
(ক) দশ টাকার  নোট        (খ) একশো টাকার  নোট
(গ) পঞ্চাশ টাকার  নোট    (ঘ) পাঁচশো টাকার  নোট ।
 উত্তর  : (খ) একশো টাকার  নোট      

১০. 'আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো ?' — বক্তা কাকে এ কথা বললেন ?
(ক) হরিদাকে           (খ) জগদীশবাবুকে        
(গ) দয়ালবাবুকে      (ঘ) স্কুলের মাস্টারমশাইকে ।
  উত্তর:  (খ) জগদীশবাবুকে 

১১. 'সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস ।' — দুর্লভ জিনিসটি কী ?
(ক) সন্ন্যাসীর আশীর্বাদ        (খ) সন্ন্যাসীর সান্নিধ্য    
(গ) সন্ন্যাসীর পদধূলি           (ঘ) সন্ন্যাসীর উপদেশ ।
উত্তর: (গ) সন্ন্যাসীর পদধূলি       

১২. 'হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে । আর, সেটাই যে হরিদার ____ ।' — শূন্যস্থানে হবে — 
(ক) জীবনের পেশা       (খ) তার উদার স্বভাব       
(গ) তার শখ                 (ঘ) পরোপকারের নেশা ।
উত্তর:      (ক) জীবনের পেশা      


১. সন্ন্যসী সারাবছর কি খান––– একটি হরীতকী
২.সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিষ' _____ কোনটি-   
উঃ>> সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো
৩.জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর কাঠের খড়মে লাগিয়েছিলেন_____
উঃ>> সোনার বোল
৪.জগদীশবাবু সন্ন্যাসিকে বিদায়বেলায় দিয়েছিলেন_____
 উঃ>> ১০০ টাকা
৫.হরিদার ছোট্ট ঘরে সন্ধ্যাবেলায় আড্ডা দিত______
উঃ>> চারজন
৬.খুব হয়েছে হরি এইবার সরে পরো - বক্তা ––––
উঃ>> বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ
৭.হরিদার ছোট্ট ঘরটি ছিল––– 
উঃ>>  শহরের সবচেয়ে সরু গলির ভিতরে।
৮.হরিদার জীবনের পেশা ছিল–––
উঃ>> বহুরূপী সাজা
৯.বাইজির ছদ্মবেশে হরিদার রোজগার হয়েছিল–––
উঃ>> আট টাকা দশ আনা
১০.পুলিশ সেজে হরিদা স্কুলের কতজন ছাত্রকে ধরেছিলেন–––
উঃ>> চারজন
১১.নকল পুলিশ হরিদাকে মাস্টারমশাই কত টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন–––
উঃ>> আট আনা
১২.জগদীশবাবুর কত টাকার সম্পত্তি আছে বলে কাহিনীতে বলা আছে ?–––
উঃ>> ১১ লক্ষ
১৩.বহুরূপী হরিদাকে জগদীশবাবু কত টাকার প্রনামি দেন ?––
উঃ>> একশো এক
১৪.বিরাগী সেবার জন্য জগদীশবাবুর কাছ থেকে প্রথমে কী চেয়েছিলেন––
উঃ >> ঠাণ্ডা জল
১৫.হরিদার এই ভুলকে ক্ষমা করবেন না –––
উঃ>> অদৃষ্ট

২। অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর  :

১. জগদীশবাবু তীর্থভ্রমণের জন্য কত টাকা বিরাগীকে দিতে চেয়েছিলেন ?       [মাধ্যমিক-২০১৭]
উঃ>> জগদীশবাবু তীর্থভ্রমণের জন্য বিরাগীকে একশো এক টাকা দিতে চেয়েছিলেন ।
২."হরিদার জীবন এইরকম বহুরূপের খেলা দেখিয়েই একরকম চলে যাচ্ছে ।" — কী রকম খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে ? [মাধ্যমিক-২০১৮]
উঃ>> বিচিত্র ছদ্মবেশে বহুরূপী সেজে খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে ।
৩. "সপ্তাহে বড়োজোর একটা দিন বহুরূপী সেজে পথে বের হন হরিদা" — 'বহুরূপী' কাকে বলে ?      [মাধ্যমিক-২০১৯]
উঃ>> 'বহুরুপী' হল একধরনের লোকশিল্পী যারা বিবিধ বেশে সজ্জিত হয়ে নানা রূপ ধারণ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জন করে ।
৪. “মাঝে মাঝে সত্যিই উপােস করেন হরিদা।”—হরিদা মাঝে মাঝে উপােস করেন কেন?
উত্তর>> হরিদার জীবনের একমাত্র পেশা বহুরূপী সেজে রােজগার করা। যৎসামান্য রােজগারে এক সপ্তাহের ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণ করা সম্ভব হয় না। তাই হরিদাকে মাঝে মাঝেই সত্যিই উপােস করে দিন অতিবাহিত করতে হয়।
৫. “কী অদ্ভুত কথা বলেন হরিদা!”—হরিদার কোন্ কথাকে অদ্ভুত মনে হয়েছিল?
উত্তর>> হরিদা জানিয়েছিলেন যে, শত হােক একজন বিরাগী সন্ন্যাসী সেজে টাকা-ফাকা করলে তার ঢং নষ্ট হয়ে যায়। তার এই কথাকে গল্প লেখকের অদ্ভুত মনে হয়েছিল।
৬. নইলে আমি শান্তি পাব না”—কী পেলে বা শান্তি পাবেন?
উত্তর>> বক্তা জগদীশবাবুর একান্ত ইচ্ছা যে বিরাগী তাকে কিছু উপদেশ দিয়ে প্রস্থান করলে তিনি শান্তি পাবেন।
৭. “এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী হরিদা।”—“বহুরূপী’ গল্পে হরিদার বহুরূপী সাজার কয়েকটি উল্লেখ করাে।
উত্তর>> কথাসাহিত্যিক সুবােধ ঘােষ রচিত ‘বহুরূপী' গল্পে হরিদার বহুরূপী সাজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলি হল—উন্মাদ পাগল, রুপসি বাইজি, বাউল, কাপালিক, পুলিশ, বুড়াে কাবুলিওয়ালা, ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব, সন্ন্যাসী বিরাগী প্রভৃতি।
৮. “জটাজুটধারী কোনাে সন্ন্যাসী নয়”।-উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে সন্ন্যাসী বলার কারণ কী?
উত্তর>> আগন্তুককে সন্ন্যাসী না বলার কারণ হল, তার হাতে সন্ন্যাসীদের ব্যবহৃত কমলু ও চিমটে ছিল না। তার সঙ্গে বসার জন্যে মৃগচর্মের আসনও ছিল না। তিনি। গৈরিক সাজে সজ্জিত ছিলেন না, তাছাড়া জটাজুটের পরিবর্তে তার মাথায় ছিল স্বাভাবিক শুভ্র চুল।
৯. “জগদীশবাবুর দুই বিস্মিত চোখ অপলক হয়ে গেল”—কী দেখে জগদীশবাবুর এমন অবস্থা হয়েছিল?
উত্তর>> জগদীশবাবু সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে যখন দেখেছিলেন আদুড় গায়ে সাদা উত্তরীয় পরে এক বিরাগী সামনে দাঁড়িয়ে তখন তিনি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রইলেন।
১০. “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।”—হরিদার কোন্ ভুল অদৃষ্ট কখনাে ক্ষমা করবে না?
উত্তর>> শিল্প মর্যাদার স্বার্থে বহুরূপী হরিদা জগদীশবাবুর দিতে চাওয়া অর্থ প্রত্যাখান করে ভুল করেছিলেন বলে লেখক মনে করেছেন। সেই ভুলই অদৃষ্ট কখনাে ক্ষমা করবে না বলে লেখকের মনে হয়েছিল।
১১. “পরম সুখ কাকে বলে জানেন?”—বক্তা স্বয়ং ‘পরম সুখ’ বলতে কী বােঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর>> কথাসাহিত্যিক সুবােধ ঘােষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে বা বিরাগী স্বয়ং সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়াকেই ‘পরম সুখ’ বলে বােঝাতে চেয়েছেন।
১২. “বাঃ এ তাে বেশ মজার ব্যাপার!”—কোন্ ঘটনাকে মজার ব্যাপার বলা হয়েছে?
উত্তর>> একদিকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণকারী আগন্তুক সন্ন্যাসী হিমালয়বাসী সর্বত্যাগী। অন্যদিকে কাঠের খড়মে সােনার বােল লাগানাে দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি পা বাড়িয়ে দিলেন জগদীশবাবুর দিকে—এমন পরস্পর বিরােধী ঘটনাকে উদ্ধৃতাংশের বক্তা হরিদা একে মজার ব্যাপার বলে উল্লেখ করেছেন।

৩। ব্যাখ্যামূলক  প্রশ্নোত্তর : মান-৩

১  হরিদা পুলিশ সেজে কোথায় দাঁড়িয়েছিলেন ?  তিনি কীভাবে মাস্টারমশাই কে বোকা বানিয়েছিলেন ?      [মাধ্যমিক-২০১৭]  

  • সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত 'বহুরূপী' গল্পের মুখ্য চরিত্র, বহুরূপী হরিদা পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে দাঁড়িয়েছিলেন ।

  •• হরিদা পুলিশ সেজে স্কুলের চারজন ছাত্রকে আটক করেছিলেন যারা লিচুবাগানে অনধিকার প্রবেশ করেছিল । ছেলেগুলো ভয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে । অবশেষে বিদ্যালয়ের মাস্টারমশাই পুলিশবেশী হরিদার স্বরূপ না বুঝতে পেরে তাকে অনুরোধ করেন ছেলেদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য এবং আট আনা উপঢৌকন দিয়ে ছাত্রদের মুক্ত করেন । এইভাবেই হরিদা তার সুনিপুণ সাজসজ্জা ও অভিনয় কৌশলের মাধ্যমে মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়ে ছিলেন ।

২। ঠিক দুপুরবেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠল আতঙ্কের হল্লাটির পরিচয় দাও?

আতঙ্কের হল্লা : সুবােধ ঘােষের বহুরূপী গল্পে হরিদা মাঝে মাঝে বহুরূপী সাজতেন। এক দুপুরবেলা বাসস্ট্যান্ডের কাছের এক পাগলকে দেখা গিয়েছিল কটকটে লাল চোখে সেই পাগলের মুখ থেকে লালা ঝরছিল। তার কোমরে ছেড়া কম্বল। আর গলায় টিনের কৌটোর মালা জরানাে। পাগলটি থান ইট নিয়ে বাসে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। তাকে দেখে যাত্রীরা চেচিয়ে উঠেছিল। কেউ কেউ দু-একটা পয়সা তার সামনে ফেলে দিচ্ছিল। কেউ চিনতে না পারলেও কাশীনাথ চিনতে পেরেছিল। পাগলটি আসলে হরিদা। হরিদা পাগল সেজে সবাইকে ভয় দেখাচ্ছিল। আসলে বহুরূপী ছদ্মবেশ সেজে।

৩. জগদীশবাবুর যে সন্ন্যাসী এসেছিলেন—তার বর্ণনা দাও।

 সন্ন্যাসীর বর্ণনা : জগদীশবাবুর বাড়িতে সাতদিন ধরে এক সন্ন্যাসী ছিলেন। খুব উঁচু দলের এই সন্ন্যাসী থাকতেন হিমালয়ের গুহাতে। তিনি সারা বছরে শুধুমাত্র একটি হরিতকি খান। এছাড়া তিনি আর কিছু খেতেন না। অনেকে মনে করত সন্ন্যাসীর বয়স ছিল হাজার বছরের বেশি তার পায়ের ধুলাে ছিল অত্যন্ত দুর্লভ জিনিস। একমাত্র জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলাে পেয়েছিলেন।

৪. হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে—নাটকীয় বৈচিত্র্য কী?

নাটকীয় বৈচিত্র্য : গরীব হরিদা নিজের ছােটো করে দিন কাটাত। কোনােদিন খাবার জুটত। কোনােদিন জুটত না। প্রতিদিনের এই একঘেয়ে জীবনে হরিদার একট নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল। হরিদা মাঝে মাঝে বহুরুপী সেজে রােজগার করত। সকাল অথবা সন্ধ্যায় বিচিত্র ছদ্মবেশে রাস্তায় বেরিয়ে পরত। যারা চিনতে পারত তাদের মধ্যে কেউ দুই-একটা পয়সা দিত—কেউ বা বিরক্ত হত। বহুরুপী সেজে রাস্তায় বের হওয়া ছিল হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য।

৪। রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর  : মান-৫

১. জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করো ।       [মাধ্যমিক-২০১৭]

 >> সুবোধ ঘোষ রচিত 'বহুরূপী' গল্পে জগদীশবাবু একটি পার্শ্বচরিত্র । তিনি শিক্ষিত, মার্জিত ও ভদ্র, সৌম্য-শান্ত চেহারার অধিকারী, ধনী হলেও কৃপণ । তাঁর জীবনের দুর্বলতা হল অন্ধ ভক্তি । সুখ-শান্তির আশায় সাধু সন্ন্যাসী দেখলেই তাঁদের তিনি তুষ্ট করার চেষ্টা করতেন । সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই বহুরূপী হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে প্রবেশ করেছিল ।

     হরিদা শুধুমাত্র পেশাগত জীবনে বহুরুপী নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনও নাটকীয় বৈচিত্রে ভরা । তাই জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদারকে আমরা দেখতে পাই । এক স্নিগ্ধ-শান্ত জ্যোৎস্নালোকিত উজ্জ্বল সন্ধ্যায় জগদীশবাবু বারান্দায় চেয়ারে বসেছিলেন । হঠাৎ বারান্দার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । তাঁর চোখের পাতা পড়ছিল না । কারণ সিঁড়ির কাছে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি জটাধারী, হাতে কমণ্ডলু, চিমটে, মৃগচর্মের আসনসহ গৈরিক বসন পরিহিত কোন সন্ন্যাসী নন, তিনি একজন বিরাগী, যার আদুড় গা এবং তার উপর একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় । পরনে ছোট বহরের থান, মাথার সাদা চুল বাতাসে উড়ছে, ধুলোমাখা হাত-পা, কাঁধে ঝোলা, ঝোলার মধ্যে বই বলতে গীতা । তাঁকে দেখে জগদীশবাবুর মনে হয়েছিল তিনি যেন জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে এসেছেন । তাঁর শীর্ণ শরীর দেখে মনে হচ্ছিল যেন অশরীরী এবং তার চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল উদাত্ত শান্ত এক দৃষ্টি । বলাবাহুল্য তিনি আর কেউ নয়, সন্ন্যাসীবেশী হরিদা । হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছদ্মবেশে খেলা দেখাতে গিয়ে অভাবী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর দেওয়া সমস্ত সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেন । কথক ও তাঁর বন্ধুরা যখন অভাবী হরিদা প্রণামী না নেওয়ার জন্য হরিদাকে কাঠগোড়ায় তুলেছেন, হরিদা তখন শিল্প ও শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নির্লিপ্তভাবে বলেছেন, 

          — "তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয় ।"

 

২.  "অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না ।" — হরিদা কী ভুল করেছিলেন ? অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম কী ?  [মাধ্যমিক-২০১৯]

>> 'বহুরূপী' গল্পে হরিদা অর্থ উপার্জনের জন্য বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন । হরিদার বেশভূষা, কথাবার্তায় জগদীশবাবু মুগ্ধ হয়ে 'বিরাগী'কে আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ জানান এবং বিদায়ের সময়ে একশো টাকা প্রনামী দিতে চান । কিন্তু হরিদা উদাসীনভাবে সে টাকা প্রত্যাখ্যান করে চলে যান । যাওয়ার সময় বলে যান— "আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনিই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি ।" সন্ন্যাসী চরিত্রের সঙ্গে তিনি এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে চরিত্রের 'ঢং নষ্ট হবে' বলে হরিদা টাকা নেননি । বিস্মিত গল্পকথক এটাকেই হরিদার 'ভুল' বলেছেন ।

      অভাবী হরিদার ভাগ্য হরিদাকে সঙ্গ দিতে চেয়েছিল । কিন্তু ব্যক্তিগত সততা ও আদর্শবোধের কারণে হরিদা ভাগ্যের সহায়তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন । যা নিশ্চিত করে দিয়েছে যে অভাব কখনও হরিদাকে ছেড়ে যাবে না । তার ভাতের হাঁড়িতে মাঝে মধ্যে শুধু জলই ফুটবে, তাতে চালের জোগান থাকবে না । কথকের মনে হয়েছে অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুলকে ক্ষমা করবে না ।



৩. বহুরূপী গল্প অবলম্বনে হরিদার চরিত্রের বর্ণনা দাও।

ভূমিকা : সাহিত্যিক সুবােধ ঘােষের নামাঙ্কিত ছােটো গল্পের প্রধান তথা কেন্দ্রিয় চরিত্র বহুরূপী হরি তাকে ও তার শিল্পী সত্তার সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যগুলিকে অবলম্বন করে সমগ্র কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। চরিত্রটি একটি একমুখী কাহিনি। বিশ্বের উত্থানপতন যা ঘটলেও চরিত্রটির মধ্যে বৈচিত্র্য অবশ্যই আছে।

সাধারণ পরিচয় : খুবই দরিদ্র ছিলেন হরিদা। শহরের সবথেকে সরু একটা ছােটো ঘরে তিনি থাকতেন। দারিদ্র দূর করার জন্য মাঝে মাঝে তাকে বহুরূপী সাজাতে হত।

স্বাধীনতা বােধ : হরিদা অন্যের অধীনে কাজ করতে চান না। কারণ তার মধ্যে অদ্ভুত এক স্বাতন্ত্র্যবােধ ছিল। আর এই স্বাধীনচেতা স্বভাবের জন্য ঘড়ি মিলিয়ে কাজ তিনি করেননি।

মিশুকে স্বভাবের মানুষ : তিনি লােকজনের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন। তাই তার ঘরে পাড়ার ছেলেরা আড্ডায় বসত।

আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ : হরিদার মনের মধ্যে এক আধ্যাত্মিক জগৎ ছিল। তাই সন্ন্যাসীর বার্তা জানতে পেরে তিনি বলেন- “থাকলে একবার গিয়ে পায়ের ধুলাে নিতে পারতাম”।

কৌতুক প্রিয়তা : হরিদার মধ্যে এক সাধারণ কৌতুকময়তা ছিল। তাই বহুরূপীর ছদ্মবেশে তিনি মানুষকে এমনভাবে তৃপ্তি দিতেন যা সাধারণভাবে স্বাধিকার পরিচয় বহন করত।

নিপুণ শিল্পী : নিজের বহুরূপী পেশায় তিনি নিপুণ শিল্পী। তাই অনেকে চিনতে পারত না। তার বহুরুপী পেশাকে অনেকে আসল ভেবেছে।

মূল্যায়ন : বহুরূপীর জীবনের মূল চাহিদা হল মনরঞ্জনের চাহিদা। প্রতারণার দ্বারা অর্থ উপার্জন নয়। মানুষকে আনন্দ দান করা আর একমাত্র প্রাসঙ্গিক বিষয়। তাই যে হাসি মূলত বলতে পারে- মানুষ তাে নয় এই বহুরূপী জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে ।


Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন