1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি শীলা বিশ্বাস

blogger collapse images

কবি পরিচিতি:

শীলা বিশ্বাসের জন্ম ১৯৭২ সালে, সাঁতরাগাছি, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। লেখালেখির প্রথম প্রকাশ স্কুল ম্যাগাজিন “মালঞ্চ” পত্রিকায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হয় শূন্য দশকে। লেখার বিষয় মূলত কবিতা, অন্যান্য প্রচেষ্টা গল্প, প্রবন্ধ, শ্রুতি নাটক। নিয়মিত লেখালেখি  করেন বানিজ্যিক ,অবানিজ্যিক সাময়িক পত্রপত্রিকা ও  বিভিন্ন ই-ম্যাগাজিনে ।

বাস করেন দমদম, কলকাতায়। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি দায়িত্বশীল পদে কর্মরতা ( আয়কর বিভাগ, কলকাতা)। 

সম্পাদিত পত্রিকা : ‘এবং সইকথা’ওয়েবজিন, (ত্রৈমাসিক )। 

 প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : 

হেমিংটনের জন্য - (পরিবেশক নীলাঞ্জনা প্রকাশনী) প্রকাশ রথযাত্রা ২০১৪,

 অন্তর্গত স্বর - (ক্রান্তিক প্রকাশনা)  প্রকাশ  বইমেলা ২০১৫,

নেবুলা মেঘের মান্দাসে- (কলিকাতা লেটারপ্রেস ) প্রকাশ বইমেলা ২০১৮,

নির্বাচিত শূন্য (সুতরাং প্রকাশনা ) প্রকাশ বইমেলা’২০২০। 


সম্মাননা ও পুরস্কার : 

কালী কিঙ্কর মিত্র স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ – ’নেবুলা মেঘের মান্দাসে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য (ঋতুযান  সাহিত্য পত্রিকা),

 সুকুমার রায় শিশু সাহিত্য সম্মাননা ২০১৬ ( বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জ ছড়া উৎসব পরিচালন পর্ষদ ), 

পাঠকের বিচারে সেরা ১৫ সম্মান  (নবাঙ্কুর সাহিত্য পত্রিকা) ২০১৫।


শীলা বিশ্বাস-এর দশটি কবিতা প্রকাশ করা হল:

 {tocify} $title={সূচীপত্র}


 Sahitya Chetona App


 স্বপ্নের প্রস্তাবনায়  


অনিবার্য ভরে উঠলে রন্ধনশালা

বিরহপথে প্রেমের স্থাপত্য গার্নিশিং করি 


চোখের অববাহিকায় আলগোছে রেখে দিই

আত্মহত্যাপ্রিয় সুখ আর আদুরে এক ফর্মার শরীর


স্বপ্নের প্রস্তাবনায় শুয়ে থাকে লুটোপুটি রাত ও রতিজল  



সৌন্দর্য


ড্রিল মেশিনে সিমেন্ট খসালেই দেওয়ালে পেরেক পোঁতা যায় না

একটি কাঠের টুকরোকেও বিদীর্ণ হতে হয় 


টাঙিয়ে রেখেছো সুদৃশ্য সুতোর কারুকাজ

জেগে উঠছে শস্য ভূমি

ঢাকা পড়ে গেছে কাপড়ের শরীরে সূচের ক্ষত


প্রভু , সৌন্দর্যের গভীরে এত বেদনা লুকিয়ে রাখো !




উপশম


অক্ষনাভি ঘিরে ঘুরপাক খাওয়া আলোভুক হৃদয়খানিজুড়ে

আজরখপুরের বালিকার হাওয়ায় ওড়া ইন্ডিগো ঘাগরা 

টুপ ছন্দের সনেটে নাচে শ্রাবণের মায়াহরিণ মেঘ

বিরহীর নীল দিগন্তে লিপিবদ্ধ হয় অবগাহন পদাবলী

উটের গ্রীবার উপশম হতে চেয়েছে যে সাহারা

তাকে তুমি শীতলতা দিও, জল দিও প্রখর রোদে

লুকিয়ে রাখা ক্ষতগুলো পাহাড় ফুঁড়ে গাছ হতে চায়

তাকে আজীবন তৃষ্ণার্ত রেখেছিলে ভ্রান্ত ছলাকলায়

পরিক্রমণ সেরে তরুণ নাবিক ফিরে এল ঘরে

খোলসে খোলসে ঝরিয়ে ফেলেছে  তাপ ও তাড়স

দাউ নেভা জল দাও আরও জল চাই আনন্দ সেচনে

খুলে যাক প্রেমের অনন্ত সড়ক পারিজাত বাগানের



মায়া সভ্যতার অ্যালগরিদম


পাথর ঘষে শুভ্রতা  আনছো। পায়ের ছাপে ফুটে উঠছে প্রবেশ দ্বার। একফালি সবুজ দ্বীপ, প্রমোদ উদ্যান। আউস আমন বোরোদের কৃষিকথা। মাজরাহীন কীটনাশকহীন ফলনকথা। জোস্নাভুক এক পাখি সোনালি ঠোঁট মেলে তোমাকে কলস্বনা নির্ঝরণীর দিকে আলো দেখাবে। পাথরে পাথর ঘষে মুছে দিচ্ছো রক্ত কালিমা। গড়িয়ে যাচ্ছে কাদামাটি। মজলিশের ফোয়ারা। হাত-পা কাটাদের ক্রন্দন। কশেরুকা ফাঁকটুকুর মধ্যবর্তী মরীচ-কেশরগন্ধী  লুপ্তিপথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে সভ্যতা। হাওয়া কলের ঘূর্ণনে জেগে উঠবে এক নতুন দেশ। পাথরে পাথর ঘষে এঁকে দাও মায়া সভ্যতার অ্যালগরিদম ।




স্পর্শহরিণ

              

রাত হলেই অজস্র সাদা পাতা এসে ভিড় করে স্বপ্নের করিডোরে

দেরাজে জমে থাকা ধুলো জানে কান্না কতটা লবন আর কতটা হ্রদ

ছেঁড়া আলোর রোদে পড়ে নিও সে দিলরুবা দিলের করুণ দাহপত্র


নবাবী নিশিরাতের বিরহী রাই পান্ডুলিপির আয়োজন করে নিরালায়

ঘুমভাঙা চাঁদফসিলের বাহুতে বিষ ও বিবর্তনের নীল উল্কি আঁকা

ফুটিফাটা চাতক মেঘ নিরালা জললিপি খোঁজে জিভের কোরকে


শব্দেরও পৃষ্ঠটান ও মায়া আছে যা তোমাকে কখনও অতল দেখাবে না 

আয়ত চোখের স্পর্শহরিণগুলি শৌখিন অলিন্দ জুড়ে যখন উজাগর 

পলাতকা অক্ষর তখন জন্মপ্রবাহের প্রতীক হয়ে উড়ে যায় দিগন্ত রেখায়



দিব্যপথ


গীতবিতানের পাতা খুলে আনন্দধ্বনিগুলিতে কান পাতি। চঞ্চল বিন্দুগুলি গানের স্থিরতায়। পিউপার চলনে বুঝে নিই দিব্যপথ। মহাযানের রশিতে টান পড়লে ভাবি তুমি এলে। বীর্যবীজতলায় রেটিনার সূক্ষ্ম জালিকা বিছানো। সর্পিল লতানো মুগ্ধতার পাশে জ্বেলে রাখা নীল চোখ। আঙুলের ৬৪ কলায় কীভাবে তোমাকে প্রোথিত করি সখা? বাঁকে-বাঁকে সাজানো আইল্যান্ড থেকে সবুজ চুরি যায়। চিতচোর অলক্ষ্যে হাসে।



আত্মরতির ঝুমুর


নিজেদের মতো ছেড়ে দিলে তারা উদ্দাম ও অবাধ্য। চৌকাঠে লজ্জা রেখে রঙ-রূপ বদলায় সহজেই। তন্ত্রীর টানে শিরায় শিরায় শঙ্খ লেগে সানাই। লালায় সঁতে করে নেওয়া ঠোঁটে জ্বলে মেহন কোষ। দ্রিমিদ্রিমি জল ভরা মেঘের আঙুলে আত্মরতির ঝুমুর। পোশাকের নীচে ঢাকা সে আমার নেকুপুসু শরীরবোধ। মোষের শিঙা ফুকে ডাক দিয়ে যাই মিলনের। গুহামানব লেখে হিয়ারোগ্লিফিক এ শরীর দেওয়ালে। তীর ধনুক হাতে ছুটে যায় প্রত্নঅক্ষর। এসো সঙ্গম ফসিল হই জীবাশ্ম প্রান্তরের।     



অন্ধকারের শিস্


ঘিলু ফেটে যখন বেরিয়ে আসে মন খারাপ আর চাপ চাপ অন্ধকার

ক্রমশ চুঁইয়ে নামে রস-কস-রক্ত...

বুলবুলি বেরিয়ে মস্তক খালি হওয়াতক অপেক্ষা করি

জুম করি বন্ধ খাঁচার ছায়াছবি

গভীরতাবিহীন তর্ক একটা সম্ভাবনাকে মিশিয়ে দেয় মাটিতে

হেরে যাই, চুপ থেকে প্রতিবার নিস্পৃহ হওয়ার ভান করি

আসলে টুকরো করি নিজেকে তারপর নদীর চরে নিজেকে পুঁতে ফিরে আসি

পরের বার গিয়ে নতুন একটা গাছ দেখি, ডালের পাখি হাওয়ায় দোলে । শিস্ দেয়...

প্রতিবার অন্ধকার আমাকে আলোর পাঠ দেয়



পদকর্তা


বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ সত্বেও তার কবিতা পড়া হয়। নোয়ার নৌকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেসব পান্ডুলিপি। নারকোটিক আইনে ফেলতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ রাষ্ট্রের যারা পতি আপনাদের বলছি কবিতার জন্ম মানুষের নাভিতে। রাষ্ট্রের পদকর্তা ও সাহিত্যের পদকর্তা কার স্থান উপরে জানতে চেয়ে লজ্জা দেবেন না। মাননীয়, দোঁহার দোহাই আপনি দূরে থাকুন। পরীক্ষা প্রার্থনীয় নয়। জেনে রাখুন  অ্যান্টি-ভ্যাকসিন চালু করেও কবীর ও লোরকা নির্মূল করা যায় না। আমাদের সময় শুরু এখন থেকে। আপনি শুনতে পাচ্ছেন তো?



অসুর- রিয়াল


আমি অযাচিত ভ্রুণ, মাংস ও গর্ভ, জন্মপসারিণী। আমি কাটা জিভ,আমিই চিৎকার বিক্ষত পাপড়ির। আমি জবরদস্তি চিতা, না পোড়া নাভি, নদীতে না ভাসানো ভস্ম। আমি সেই বিপরীত বর্ণ যার স্বপ্নহীন বাস্তব ছাড়া কিছু নেই। আমি চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য। ফসলি জমির আমি ধান-যব-বাজরা ।  আমি শক্তি ও সভ্যতা। আমি হাঁ মুখে ধরে আছি সহস্র বছর ধরে ধর্ষকামীর তলপেটের লোভাতুর ক্ষিধে। কখনও কাপড় ও ঘোমটায়  ঢেকে রাখো আমার মুখ, বুক ও নাভি। সময়ে  ছিঁড়ে ফেলো শরীর, গুঁড়িযে দাও ২০৬টা হাড়। ভেঙে দাও দাঁড়াবার ছাদ ও খুঁটি। যদি  কাটা জিভ জোড়া লাগে আর অজস্র কন্ঠস্বর শোনা যায়। যদি মানুষের শিরায়, রক্তরসে জ্বলে ওঠে আগুন তা কিছুতেই সুররিয়াল ভাবতে বোলো না প্লিজ.... ।


Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন