1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

গল্প • শীতের ছুটিতে – নারায়ণী দত্ত

 • ভূতের গল্প


    শীতের ছুটিতে

     নারায়ণী দত্ত



বিরাট কারুকার্য করা পালঙ্ক , পরিপাটি করে গোছানো বিছানা ৷ নায়েব মশাই মশারিটা টাঙিয়ে দিয়ে গেছে ৷ একটু তন্দ্রা এসেছিল কিন্তু মাঝ রাতে হঠাৎ নীচের ঘর থেকে ছমছম নূপুরের শব্দ শোনা গেল তার সাথে হারমোনিয়াম বাজিয়ে কে যেন গাইছে ৷ মনে হচ্ছে নীচের বৈঠকখানা থেকে আওয়াজ আসছে ৷ ঘুম ভেঙে গেল ওদের  ৷ কে যেন লাঠি ঠকঠক করে ওদের ঘরের সামনে দিয়ে চলে গেল ৷ তিনজন ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে পড়ল  ৷ হঠাৎ দুম করে একটা আওয়াজে ওরা আঁতকে উঠল ৷ 


অলঙ্করণ : বিশ্বজিৎ মণ্ডল



রি, অশোক আর রাজা প্রাণের তিন বন্ধু ৷ একসাথে কলেজে পড়ে ৷ একবার শীতের ছুটিতে ওরা ঠিক করল রাজার মামারবাড়ি (জমিদার বাড়ি ) ঘুরতে যাবে দেবগ্রামে ৷ রাজার মা গত হবার পর আর মামারবাড়ি যায়নি ৷ খোঁজ খবর ও রাখে না ৷ মামারবাড়িতে দাদু দিদা ছাড়া আর কেউ নেই ৷  নায়েবমশাই সব দেখাশোনা করেন ৷ তাই নায়েবকে রাজা চিঠি লিখে জানিয়ে দিল ওরা তিনজন যাবে কয়েকদিন থাকবে ৷ তখন গ্রামে ফোনের চল ছিল না ৷

নির্দিষ্ট দিনে তিন বন্ধু ট্রেনে চেপে বসল ৷ দেবগ্রামে যখন ওরা পৌঁছাল তখন রাত প্রায় ১০ টা ৷ ট্রেন ৩ ঘন্টা লেট ছিল ৷ স্টেশনে নেমে ওরা এদিক ওদিক তাকালো কাউকে দেখতে পেল না ৷ পাড়াগাঁয় সন্ধ্যে হলেই সব ঘরে ঢুকে যায় তার ওপর মাঘ মাসের কনকনে ঠান্ডা ৷ তিনজন মাফলারটা ভালো করে কান গলায় জড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে টর্চ হাতে নিয়ে এগিয়ে চলল ৷ কিছুটা হাঁটার পর দেখল একটা গরুর গাড়ি ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে এগিয়ে আসছে ৷ গাড়িটা ধীরে ধীরে ওদের সামনে এসে দাঁড়াল ৷ একজন বৃদ্ধ লোক জোরে ডেকে বল্ল ... ও নাতি উঠে এস তোমরা ... ৷ রাজা বলল ..কে নায়েব দাদু  ? লোকটা বলল ..হ্যাঁ গো ৷ তিনজন উঠে বসল গাড়িতে ৷  রাজা বলল ... তুমি আমায় ঠিক চিনতে পেরেছো তো  ? লোকটা ... হাহা হা হা করে বিকট হেসে উঠল ৷ তিন বন্ধু চমকে উঠল ৷ 

  গাড়ি এগিয়ে চলল ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে ৷ খানিকবাদে একটা বিশাল পোড়ো বাড়ির সামনে এসে থামল ৷ 

সবাই নেমে বাড়ির ভেতর ঢুকল বিশাল বড় গেট দিয়ে ৷ সামনে বড় বাগান সেখানে লন্ঠনের আলোতে অস্পষ্টভাবে দেখা গেল বড় বড় মার্বেলের মূর্তি ৷ সদর দরজা দিয়ে ঢুকে নায়েব ওদের দোতলায় নিয়ে গেল ৷ রাজা অধীর আগ্রহে বলল ... দিদা , দাদু কোথায় ? 

পাশের একটা ঘর থেকে ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকা একজন বৃদ্ধা এসে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন ...এই তো আমি দাদুভাই ৷ এতকাল পর এই বুড়ো বুড়িদের মনে পড়ল ? রাজা হেসে উত্তর দিল ... পড়ার ভীষণ চাপ তো তাই আসা হয় না ৷ দিদা বললেন ...ও .. বুজেছি .. বুজেছি ৷ রাজা দিদাকে প্রণাম করতে গেল করার সময় দিদার পা-টা মনে হল ঠান্ডা কনকনে , কারেন্টের মত লাগল ৷ অশোক, হরি ওদের ও প্রণাম করার সময় একই অবস্হা ৷ দাদু ও এসে দাঁড়ালেন  ৷ দাদুর পায়ে প্রণাম করতে গিয়ে অস্পষ্ট আলোয় মনে হল পা-টা উল্টো ৷ ওরা চমকে উঠল ৷ ভয়ে বুক শুকিয়ে গেল তিনজনের ৷  ঘরে গিয়ে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে যাচ্ছিল ঠিক সেইসময় বড় থালা চাপা দিয়ে খাবার নিয়ে হাজির নায়েব মশাই আর দিদা ৷ রাজা কৌতুহল চাপতে  না পেরে বলল ... দিদা তোমার মুখটা দেখাবে না ? দিদা চুপ করে রইল ৷ নায়েব বলল ... আগে খেয়ে নাও তোমরা খোঁকাবাবু  ৷ বড্ড খিদেও পেয়েছিল ওদের তাই ওরা সব ভুলে তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে খেতে বসে গেল ৷ পেট ভরে খেয়ে ঘুমোতে গেল কিন্তু কেন জানিনা কারো আর ঘুম আসলো না ৷ অশোক বলল ... রাজা আমার খুব ভয় লাগছে রে ৷ হরি  বলল ... হ্যাঁ রে রাজা ৷ বাড়িটা কেমন যেন ৷ গা ছমছমে ৷ চল ফিরে যাই আমরা ৷ গ্রামে থাকার সাধ আমার মিটে গেছে ৷ রাজা বলল ... আরে ভয় কিসের ? এখন ঘুমা কাল সকালে গ্রামটা ভালো করে ঘুরবো ৷ কথা শেষ করে তিনজন কম্বল চাপা দিয়ে  খাটে শুয়ে পরল তিনজন  ৷ বিরাট কারুকার্য করা পালঙ্ক , পরিপাটি করে গোছানো বিছানা ৷ নায়েব মশাই মশারিটা টাঙিয়ে দিয়ে গেছে ৷ একটু তন্দ্রা এসেছিল কিন্তু মাঝ রাতে হঠাৎ নীচের ঘর থেকে ছমছম নূপুরের শব্দ শোনা গেল তার সাথে হারমোনিয়াম বাজিয়ে কে যেন গাইছে ৷ মনে হচ্ছে নীচের বৈঠকখানা থেকে আওয়াজ আসছে ৷ ঘুম ভেঙে গেল ওদের  ৷ কে যেন লাঠি ঠকঠক করে ওদের ঘরের সামনে দিয়ে চলে গেল ৷ তিনজন ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে পড়ল  ৷ হঠাৎ দুম করে একটা আওয়াজে ওরা আঁতকে উঠল ৷ একটা কালো বেড়াল চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে , ঘরের টেবিল থেকে লাফ দিয়ে নেমে দরজার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেল ওদের আরও ভয় লেগে গেল কারণ ওদের বেশ মনে আছে ওরা দরজায় ছিটকিনি দিয়ে শুয়েছিল ৷ হরি কাঁদো কাঁদো সুরে বলল ... রাজা তোর মামারবাড়িতে কি ভূত আছে ? রাজার গলাও শুকিয়ে গেছে এসব দেখে ৷ বলল ... কি জানি ! অশোক বলল .. ভাই আমি কাল ভোরেই  বাড়ি চলে যাব ৷ কথাটা শেষ হতে না হতে লণ্ঠনের আলোটা দপ্ করে নিভে গেল ৷ মনে হল ঘরের ভেতর কে যেন বিকট শব্দে হা হা হা হা করে হাসছে আর নাকেসুরে বলছে  .. এ বাড়িতে কেউ আসলে আর যেতে পারে না রে ৷ এদিকে বাইরে তখন মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে  ৷ রাজা দুই বন্ধুকে বলল ..  চল এখনই আমাদের পালাতে হবে ৷ হরি বলল ...এতবৃষ্টিতে কোথায় যাব ? ভাই ঠিক বাড়িতেই এসেছি তো আমরা ? রাজা বলল ..আর কথা না বাড়িয়ে চল দৌড়ে পালাই  এ বাড়ি থেকে এখনই বেরাতে হবে ৷ এই বলে তিনজন ছুটতে লাগল ৷ অন্ধকার বাড়িটায়  মনে হল কারা ওদের পেছনে তাড়া করছে ৷ অশোক হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল , হরি  অশোককে টেনে তুলে আবার ছুটতে লাগল ৷ ছুটতে ছুটতে তিনজন  একটা বড় শক্ত কাঠে হোঁচট খেয়ে পড়ে জ্ঞান হারাল ৷ ভোরবেলা কিছু লোকজন জমিদার বাড়ির বাইরে ওদের পড়ে থাকতে দেখে ,ওদের চোখে মুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরাল ৷ তারপর ওদের থেকে সব ঘটনা শুনে বলল ... রাজা তোমার দাদু দিদা ও নায়েব তিন জন বছর দুয়েক আগেই  মারা গেছেন কলেরায় ৷ তোমাদের কোন ঠিকানা খুঁজে পাই নি আমরা তাই জানাতে পারিনি ৷ তারপর থেকে ওটা ভূতের বাড়ি হয়ে আছে ৷ বিকেলের পর থেকে এমন সব বিকট শব্দ শোনা যায় , ভৌতিক কান্ড হয় তাই ভয়ে কেউ যেতে পারেনা ৷ তোমাদের ভাগ্য ভাল প্রাণে বেঁচে গেছো ৷ রাজা তুমি এ বাড়ির নাতি বলে হয়তো প্রাণে মারেনি তোমাদের কাউকে ৷ বেঁচে গেছো ৷ গ্রামের মোড়ল বললেন ... আমার বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে তোমরা বাড়ি ফিরে যাও এখানে আর থেকো না ৷৷

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন