1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি চিত্রদীপ ব্যানার্জী | সাহিত্য চেতনা

কবি চিত্রদীপ ব্যানার্জী'র একগুচ্ছ কবিতা

কবি চিত্রদীপ ব্যানার্জী জন্মগ্রহণ করেন বীরভূম জেলার রামপুরহাট শহরে। রামপুরহাট শহরের ঐতিহ্যময় স্কুল জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবন থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করেন এবং মালদা পলিটেকনিক থেকে মেক্যানিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রথম বিভাগে ডিপ্লোমা পরিক্ষায় উর্ত্তীন হন । পরে পশ্চিমবঙ্গ তাপ বিদ্যুৎ নিগমের ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জুনিয়র ম্যানেজার পদে চাকরিতে যোগদান করেন । সেখান ১৬ বছর কাজ করার পর ২০১৪ সালে বক্রেশ্বর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যোগদান করেন । সাহিত্য জগতে নিতান্তই নবীন, কিন্তু অপার উৎসাহ নিয়ে তাঁর সাহিত্য জগতে প্রবেশ।

কবি চিত্রদীপ ব্যানার্জী


কবি চিত্রদীপ ব্যানার্জী'র একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :



প্রজাতন্ত্র দিবস
         ***



সকাল সকাল প্রভাতফেরি, সেই হারানো সুর

মফস্বলের রাস্তায় যেতাম অনেক অনেক দুর। 

সরণির পর সরণি ঘুরে আবার ইস্কুলে

কেক কিমবা বিস্কুট আজ গেছি ভুলে। 

লুটেছি আনন্দ স্বাদ ছোট্ট মুঠোর মাঝে

প্রজাতন্ত্র আজও আসে হয়তো আলাদা সাজে। 

আজ শুধুই একটি ছুটি, আমার স্বাধীনতা, 

স্বদেশভূমি জুড়ে দেখছি গণতন্ত্রের চিতা। 

দেখছে তাঁরা নীল আকাশের অসীম পাণে চেয়ে

প্রজা যে সব ধুঁকছে কত স্বাধীনতা পেয়ে। 

এতো দামি মুক্তির স্বাদ হারিয়ে আজ নোনা

কোথায় গেল আনন্দ সেই ? শুধুই কল্পনা ? 

মিছিল করে আজও হাঁটি অনেক দাবি-দাওয়া

মুক্তির স্বাদ কোথায় দেখি ? পরাধীনতার হাওয়া। 

তিরিশ সালের সেই রাতটির ছিল অনেক আশা

পুর্ণ স্বরাজ মানে দেখি অশ্লীলতার ভাষা। 

রাজনীতির এই জোয়ার দেখে সবাই মাথা নোয়ান

এঁরাই আবার বলবে আজকে মেরা ভারত মহান।।



শৈলমারীর সেই সাধু
            ***



রক্তের আহ্বানে সেই স্বাধীনতার ডাক

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ছিল অনেক ফাঁক। 

অহিংস নীতি মতের পক্ষে ওজন ছিল ভারি

সুভাষচন্দ্র একাই একশো! তিনি তো দেশের নাড়ি। 

শহীদ রক্তে রাঙানো সেদিন, সেই সময়ের স্বদেশ

ভগৎ সিং, ক্ষুদিরামের মৃত্যু নয় কি অশেষ? 

জালিওয়ানাবাগের সেই কাহিনী ছিল অহিংস? 

প্রার্থনা সভায় গুলি চালানো নয় কি নৃশংস? 

বিনয় বাদল দীনেশ তিন বাংলার সন্তান

স্বদেশভূমি ভালোবেসে হলেন বলিদান।       অহিংস,আর সত্যাগ্ৰহে কি পেয়েছি সত্যি? 

সেলুলার আর বার্মার জেল!  ইংরেজ বুৎপত্তি। 

একবারটি ভাবুন সেই সাইমন কমিশন

অসহযোগের শেষ নির্দেশ নয় কি প্রহসন? 

এসব দেখেই গর্জে ওঠেন আমাদের নেতাজি

রক্ত দিয়ে আন্দোলনের পণেতে জীবন বাজি। 

এ হেন শহীদ শতাব্দীতে একটি বারই আসেন

তাই তো সেই শৈলমারীর সাধুকে আজও সবাই ভালোবাসেন।।



ঠিক না ভুল
      *** 


সফলতার সেই ইতিহাস বড়োই স্বাধীনচেতা

আশা,নিরাশা সব ছেড়ে হও কাজের শুধু ক্রেতা। 

এও জানি সম্ভব নয়, মানুষ মানেই লোভী

বিরল হয়তো খুবই অল্প, সব লোকেরই দাবি। 

শ্রীকৃষ্ণও বলে গেছেন ফলের আশা ছাড়ো, 

কাজ করে যাও নিঃশব্দে, মনোযোগ দাও গাঢ়। 

ওই যে গীতা! সবাই বলে শব্দ নিগুঢ় সত্যি

বিতর্ক শুধু এই বিষয়ে মনের উপলব্ধি। 

আশাই যদি না থাকে, উৎসাহ তো শেষ

কাজই হবে বৃথা সেথা, ফল যে নিরুদ্দেশ। 

উৎসাহ আর সফলতা খুব কাছেরই বন্ধু

সম্পর্ক ঠিক তেমনই আর্য সহিত সিন্ধু। 

আশা ছাড়া কাজ যে বেকার,সরল মনে বুঝি

সফলতা আসবে পিছে, নিরাশা কেন খুঁজি?



প্রতিভা ও অধ্যবসায়
         ***


একটি কথা শুনতে আমার মন্দ লাগে বৈকি ! 

ওই ছেলেটির ভীষণ বুদ্ধি, কি যেন বেশ নামটি ? 

প্রতিভা থাকলে সফল হবে এই ধারণা মিথ্যা

অধ্যবসায় না থাকিলে প্রতিভা বেকার সত্বা। 

উদাহরণও দিতে পারি এর সপক্ষে যুক্তি

শচীন বিনোদ দু'জনেই তো আচড়েকরের শক্তি, 

মুম্বাই এর বুক দাপিয়ে খেলেছে অনেক ক্রিকেট

কাম্বলির প্রতিভা বেশি ছিল ওপেন সিক্রেট। 

এমন নয়তো গুণের দিকে ছিল না কোনও বিকাশ

শচীনও ছিলেন দুরন্ত মাপের রক্তে ক্রিকেট প্রকাশ। 

বিজ্ঞাপন আর বিনোদনে মোহময়ী সব ডাক

অধ্যবসায় না থাকিলে প্রতিভা জ্বলে খাঁক।

কাম্বলি গেল দল থেকে বাদ,জীবন হলো শেষ

শচীন কিন্তু চালিয়ে গেল তপস্যাটি বেশ। 

পরিণতি তো সবার জানা, আজ সে বিশ্বসেরা

শুধু প্রতিভায় হয় নাতো কাজ,চেষ্টাটুকু ছাড়া।



গল্প নয় সত্যি
       ***



সেই যে লেখা রবি ঠাকুরের

হঠাৎ দেখার গল্প

বহুদিন পর হারানো প্রেমিকা

স্মৃতি সব নয় স্বল্প। 


পেরিয়েছে কাল শতক বর্ষ

সে লেখার সারমর্ম

প্রেম পীড়িতি আজও আছে

রূপান্তরিত ধর্ম। 


সেই শালবন এখন উধাও

কাঠের বেঞ্চি নাই

কয়লার ধোঁয়া নিয়েছে বিদায়

তড়িতে পেয়েছে ঠাঁই। 


ভালোবাসা সব শূন্য এখন

কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত

দুনিয়া হয়েছে মস্ত জটিল

বাস্তবে অভ্যস্ত। 


দালিম ফুলের চাহিদা কই ? 

রাঙা মুখে নেই লজ্জা

প্রেমিক ছিলে এককালেতে

হয়তো পেয়েছি শয্যা। 


মিলও আছে একটি খানে

সময়ের বড়ো অভাব

সেকালেও ছিল,একালেও আছে

নকল ব্যস্ত স্বভাব। 


হারিয়েছে অনেক আগেই

যে দিন চলে গেছে

আকাশের তারা গভীরেই আছে

ভালো,আরও ভালো বেছে।



সেনা দিবসের প্রাক্বালে
           ***



শব্দ আজকে বিদ্রোহী তাই

কলমে আসে নি লেখা

বীর সেনাদের জয় গান করি

দুঃসাহসের পাখা। 

কেউ বা তাঁরা সিয়াচেন,বরফ মোড়া দেশে

সূর্যের তাপ পায় না তো দেহ একদিনও প্রতিমাসে। 

কেহ বা আছেন কার্গিলে,সেই শত্রুর নিশানা

সংসার সব করেছেন ত্যাগ, তাঁবুতেই ঠিকানা। 

জীবন মৃত্যু পরোয়া করে না,নেই কোনও ভয়ভীতি

সেই সেনাদের কুর্নিশ ঠুকি, এক সমুদ্র প্রীতি। 

একটি মর্টার, একটি গোলা জীবনের ইতিকথা

তারপর? 

সেই যে পেনসন আর অকাল বৈধব্য ব্যাথা।। 

আমরা সবাই নিরাপদ,থাকি গৃহ কোণে

সেই ব্যাথা বোঝার ক্ষমতা আছে কজনের মনে??শচীন,দ্রাবিড়,গাঙ্গুলীকে মাঠের হিরো মানি

কার্গিল আর গালিয়ানের শহীদকে কি চিনি??



উত্তর পর্ব
    ***



জীবনের একটি বছর কাড়লো হাসিখুশি

আজ করোনা সবার চোখে হয়েছে খুব বাসি। 

অনেক প্রিয় বিদায় নিলেন,প্রাণ নিল এই দৈত্য

বিশের বছর বিষ আর বিষ,শুধুই বেদনা চিত্ত। 

লক, আনলক প্রক্রিয়া আজ দেশের প্রধান কাজ

এক বছরের এই ধাক্কায়, সবার কপালে ভাঁজ। 

পরিক্ষা সব লাটে উঠলো, সবাই হলো পাশ

প্রাণ বাঁচলো এটাই অনেক,এবার খাবি ঘাস। 

সিলেবাসের অনেক বোঝা,হলো যে কাটছাঁট

না শিখলো ছাত্র কিছু শূন্য জ্ঞানের মাঠ। 

দোষও নেই বিন্দুমাত্র নাদান বালক তারা

মহামারী শেষ হলো তো!রাজনীতি বড়ো ফাঁড়া।



সাধু বনাম আমরা
        ***


গঙ্গাসাগর,বাবুঘাট বসেছে সাধুর মেলা

কেউ করো না তাঁদের কিন্তু কোনও অবহেলা। 

কপালে তাঁদের তিলক কাটা বৈচিত্র্যে ভরা

সাদা,কালো আর লালের বাহার অর্থপূর্ণ খেলা। 

মহাদেবের ভক্ত যিনি সাদায় বিশ্বাসী, 

হরির নামে কালো পড়েন কেহ বা সন্ন্যাসী, 

মায়ের সাধক তিনি আবার লাল তিলকের ভক্ত

এসব কিন্তু না জানলে বোঝা অনেক শক্ত। 

পরিযায়ী পক্ষী যেমন, সাধুও পরিযায়ী

মকর সংক্রান্তি মেলা শেষে তাঁরাও উদ্বায়ী। 

কেউ বা যাবেন হিমালয়, কেহ বা চিত্রকূট

আমরা যাঁরা সংসারি সব যে লিলিপুট। 

মুখ ভর্তি সাদা রঙেই খুশির ঝিলিক দেখি

হাজার ধনেও অমিল হাসি,চাহিদা অনেক বাকি।



সেই বিয়ে বাড়ি
      ***



অনেক দিনের হারানো প্রথা সেই যে বিয়ে বাড়ি

বিলীন হওয়া সেই যে স্মৃতি অজানা দেশে পাড়ি। 

প্লেটের দাম,বুফে সিষ্টেম কোথায় তখন ছিল? 

ফোনে ফোনে কুটুম্বিতা ছিল না কোনও হ্যালো। 

আত্মীয়দের আত্মীয়রাও বিয়ের আগে হাজির

ঝগড়া বিবাদ নেই যে কোনও,সবাই বিয়ের উজির। 

গাম্ভীর্য ভরা জেঠু চেহেরা তাঁর ভারি

ভাঁড়ার ঘরের দায়িত্বে সে লেভ ইয়াসিনের জুড়ি। 

কে সি নাগও হার মানবেন হিসাবে এতোই পটু

মিষ্টি আর দই এর হাঁড়ি গুণতে ব্যাস্ত জেঠু। 

লম্বা ডাঁটির বেগুন ভাজা কোথায় এখন দেখি? 

ষ্টার্টার নামের একধরণের ইংলিশেতে ঠকি।

গুরজনদের তুষ্ট করে জাগটি হাতে পেয়ে

অনেক বড়ো আজ যে আমি ভাবটি মনে ছেয়ে। 

প্যাকেজের এই জলের বোতল কোথায় ছিল তখন? 

খুড়ির ওই মাটির গন্ধ হারিয়ে গেছে এখন।



স্বামীজি
   ***


প্রণমী তোমায় যোগী এ লেখনী আগে

এখনও ভারতবাসী তব নামে জাগে। 

সেই ছেলেটি বিলে নামের,নরেন ও নাম যাঁর

শিবের কাছে ভিক্ষা মেগে জন্ম ছিল তাঁর। 

দস্যিপণায় বীভৎস নাম ছিল না কোনও জুড়ি

একাগ্ৰতায় তেমনই চিত্ত সন্তান শ্রীহরি।                             

বিশ্ব সম্মুখে হে গৈরিক সন্ন্যাসী 

জ্বালাময়ী তব বাণী ছিল রাশি রাশি

দার্শনিক,সঙ্গীতজ্ঞ হে অতিন্দ্রীয়বাদী

আবার এসো হে স্বদেশ তোমারে যে সাধি।

প্রকান্ড ব্যাক্তিত্ব জোরে হে বেদান্ত স্বামী

অচেনা বিদেশে বহু, তব পথগামী। 

সেই যে অমোঘবাণী, হে আমেরিকাবাসী

সম্মোধনে ভাই বোন, নও যে বিদেশী

এ কথা তো বলেনি পূর্বে অন্য সন্ন্যাসী ! 

মূহুর্তে স্থবির শিকাগো ধর্ম সম্মেলন

বিদেশের কাছে দেশ হলো উম্মোচন। 

নবজাগরণের প্রতীক হে বীর সন্তান

তুমি তো স্বামীজি ! কেন হলে অন্তর্ধান ?


contact-form

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন