ধা রা বা হি ক উ প ন্যা স
বাউল রাজা
• প্রদীপ গুপ্ত
দ্বিতীয় খণ্ড ( চতুর্বিংশ পর্ব )
–" তুমি আমারই মতন কান্দিও কান্দিও
কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম বদনে জপিও
তুমি বুঝিবে তখন... নারীর বেদন
রাধার এ প্রাণে কতো ব্যথা
বনমালী তুমি, পরজনমে হইও রাধা..
তুমি আমারই মতন জ্বলিও জ্বলিও
শ্যাম কলঙ্কের হার গলেতে পরিও
তুমি পুড়িও তখন -- আমারি মতন
বুকে লইয়া দুখের চিতা...
বনমালী তুমি - পরজনমে হইও রাধা.. "
আজ যদি কেউ আমায় জিজ্ঞাসা করে এ গানটা কি তখন কেউ গাইছিলেন কিনা, না কি বাউলনির চোখের তারায় আশ্রয়স্থল খোঁজার যে আকুল আকুতি অথবা সমর্পণের যে ছায়া দেখেছিলাম, সে আকুতি অথবা ছায়াতেই সে মিশিয়ে দিয়েছিলো এই গানের আকুলতা ভরা সুর আমার মনের গহনে।
--" বুজলে গো পদীপদা, কিষ্ণ অচ্চে পরমাত্মার পতীক। আর ছিমতী রাদিকে অচ্চে গে জীবাত্মা। এই যে আমাদের শরীলটা দেকতিচো, এ যেন একটা অসের ভিয়েন গো। কামের দুদের কড়াই তেকে পেমকে ক্ষীর কইরে তুলতিচে। বাউলের জেবনে এই রাদাকিষ্ণের যুগল মিলনও এক সুন্দর বাবের খেলা গো। তাই এতে কোনও পাপ নেই, কোনও অন্যায় নেই। "
সে জন্যই বুঝি একই চোখের তারায় কখনও আমি নিজেকে কখনও কানাইদাকে কৃষ্ণরূপে আবিষ্কার করি।
হঠাৎ করে মনটা কেমন উচাটন হয়ে উঠলো। কলেজ জীবনে অনেক মেয়ের সাথেই বন্ধুত্ব হয়েছে, কিন্তু প্রেম জিনিসটা আমার জীবনে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। বরং প্রেম বিষয়টাকে আমার কেমন যেন বেশ একটু ন্যাকামো বলেই মনে হতো। কিন্তু শুধুমাত্র নয়নঠারের যে কি মারাত্মক শক্তি থাকতে পারে, সে অভিজ্ঞতা আমার জন্য অপেক্ষায় ছিলো। আমি বারান্দা থেকে উঠে খোলা আকাশের নীচে এসে দাঁড়ালাম। আর কি অদ্ভুত, সেই সুরটা ফের ভেসে আসছে। না, গানটা গাইছে না কেউ, এক অপূর্ব মহিলা কণ্ঠে অনুরণিত হচ্ছে সেই সুর। বাউলনির গলা আমার কাছে পরিচিত, এ তার গলা নয়, সামনের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে গানটা সামনের দিক থেকে ভেসে আসছে, ডান বাম ছেড়ে খোলা আকাশের দিকে চাইলাম, মনে হলো সেই সুদূর নক্ষত্রলোক থেকে এক অতি ক্ষীণ সুরে কোনও নক্ষত্রসুন্দরী বুঝি গাইছে গানটা --
--" তুমি আমারি মতন জ্বলিও জ্বলিও
বিরহ কুসুম গলেতে পরিও
তুমি যাইও যমুনার ঘাটে
না মানিও ননদীর বাধা
বনমালি তুমি.. পরজনমে হইও রাধা -"
কোন ব্যথাতুর নারী তার মনোব্যথার কথা এমন আকুতিভরা ভাবে আমায় শুনিয়ে যাচ্ছে! অথচ এ সংগীত তো আমার পূর্বশ্রুত না! আমি জীবনে কোনোদিনই এই অপূর্ব কাতর সঙ্গীতের বেদনাবিধুর কথা শুনিনি! তাহলে? এটা কি ভাববিস্তার করা? একজনের মনের ভাবকে অন্য একজনের মনের ভেতর তরঙ্গায়িত করা? কোন্ সাধনার বলে এ জিনিস সম্ভবপর হবে? ছায়াচ্ছন্ন চাঁদের আলোয় প্রকৃতির মাঝে আমি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি, খেয়াল করিনি আমার এ চিন্তার মাঝে কখন কৃষ্ণভামা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
--" তুমি একেনে আর এসোনি গো ঠাকুর। পেমের কুহকজাল তোমারে বেদে ফেলপে। তুমি কিন্তু মনে কোরো না এই হতভাগিনী বাউলানি বুজি তোমারে তোমার সংসার তোমার সমাজের তেকে পতিত কইরতে চায়। তুমি বড়ই চেলেমানুষ গো ঠাকুর, বড্ড চেলেমানুষ। নদীর পাড়ে বইসে গা দুয়েচো, মাজ নদীতে ডুব দে দেকোনি ককনও জলের বুকে চোরাটানের শক্তি কতোটা। রাত অনেক হইয়েচে, ছুটকি বিচানা দেচে , শুতে চলো কেনে। "
( চলবে )