1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

নলজীবনের পাকদণ্ডী : সুজিত রেজ– সাপ্তাহিক সাহিত্য পাতা

 

নলজীবনের পাকদণ্ডী

সুজিত রেজ



বাবার পায়ে রাঙা পথের ধুলো 

আদুল গায়ে ধানের শীষের রেখা

চোখের কোণে বাঁকা কাস্তের আলো

ঠোঁটের বিড়ি যেন জোনাক্ সখা 


বাবা আমার দাঁতে কাটত নখ

বকা খেত খুব মায়ের কাছে

বাবার ছিল টিয়া ছানার সখ

বড় হলে রেখে আসত গাছে


সারা দুপুর ঘুঘু ডাকে আপন

বাবা বোনে খেজুর পাতার তালাই

মা তখনও পুকুরঘাটে বাসন

আমিই শুধু দুপুরবেলা ঘুমাই


বাবা উঠত সুয্যি ওঠার আগে

গায়ে মাখত কুয়াশা ছেঁচা জল

শ্যামাসঙ্গীত গাইত ভুল রাগে

রক্তজবা শুনে হোত বিহ্বল


বাবার ছিল সাতপুরুষের সিন্দুক

মায়ের কাছে থাকত তার চাবি

কোনদিনই খোলেনি তার মুখ

আমিই শুধু সাতপাঁচ আছে ভাবি


বাবার ছিল ছোট্ট পানসি তরী

বাঁধা থাকত চলনবিলের ঘাটে

জোয়ার এলে মায়ের মুখ ভারী

বাবা যাবে জ্যোৎস্নাপুরীর হাটে


পুজোর সময় বাবা আনত জুতো

মায়ের জন্য শাঁখা আর পলা

নিজের বেলায় নানান ছলছুতো  

দিদির জন্য বোরোক্যালেনডুলা


সেবার যখন অভাব ধরল ঘিরে

মাঠের ধান শুকিয়ে গেল মাঠে

রাতের বেলা খেতাম ভিজে চিঁড়ে

ঠাকুরঘরে মায়ের সময় কাটে


জমি ছিল বড় রাস্তার ধারে

বিক্রি টাকায় হবে দিদির বিয়ে 

শিল্প হবে ,সরকার নিল কেড়ে

দুপুরবেলায় কাঁদে মায়ে-ঝিয়ে


দিদির আমার কপাল মন্দ নয়

পাশের গ্রামেই পেল শ্বশুরবাড়ি

টৌটো চালায় জামাই মন্ময়

এমপ্যানেলড্ আপার প্রাইমারি


চাকরি হবে চাকরি হবে কবে

কেউ জানে না জানে টিয়ের ছানা

এখন  আমায় বড় হতে হবে

মন দিয়ে খুব করছি পড়াশোনা 


কাঁঠাল তলা কালো হয়ে  এলে

মা জ্বালাত সন্ধ্যাপ্রদীপ-ধূপ

ছিপছিপে একটু বৃষ্টি হলে

পচা খড়ের গন্ধ উঠত খুব


ভূগোল পড়া যেই করেছি শুরু 

বাবা বলত বিলে যাব,চল

ঘাটজালটা সঙ্গে নিবি হারু

চিংড়ি মাছে ছলকাচ্ছে জল


চিংড়ি ঝালে পান্তা হোত হলুদ

হ্যারিকেনের আলো হাওয়ায় কাঁপে

ঢিমে আঁচে মা বসাত খুদ

গরুদুটো দুধ দিচ্ছে না মাপে


একটু একটু বড় হচ্ছি আমি

দিদির বাড়ি যাচ্ছি একা একা

দিদির হাতে নাক ফুঁড়বে রামী

মা বললো সঙ্গে নিয়ে যা খোকা


পথে পড়ে কাশের ঘন বন

দুজন মিলে খেলি লুকোচুরি

কাশের শীষে বেঁধে নিলাম মন

নাক ফুঁড়তে অনেক হল দেরি


মাধ্যমিকে লেটার পেলাম চার

বাবার মুখে শামুকখোলা হাসি

আমার চোখে নামল অশ্রুধার

পাশ করতে পারেনি রামী দাসী


কলেজ আসা-যাওয়ার পথে নাচে

কাশের বন, দোলায় মাথা সাদা

সাইকেলটা ঠেসিয়ে রেখে গাছে

খুঁজে মরি কোথায় আমার রাধা


অঘ্রাণেতে শিশির হাসে ঘাসে

চলনবিলের জলে কাঁপে রোদ্দুর

বাড়ির পাশে আরশিনগরবাসে

বেজে উঠল নহবতের সুর


একটু একটু বড় হচ্ছি আমি

বুঝতে পারি শুরুর আগে শেষ

পূর্বরাগেই মাথুর এল নামি

কোথায় পাব সব পেয়েছির দেশ 



অলঙ্করণ : জয়ন্ত মন্ডল

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন