সাহসিনী
গোকুল মণ্ডল
'দেখ্ও দেখ্ও সব্বাই দেখ্ও
কুসুম কুমারী নেড়া হইয়া বাচ্চা মেইয়ের জামাটো পইরা বুক খুইলা ছবি তুলাছে
তাই খবরের কাগজের বাবুটা বইলছে -
''কুসুম কুমারী সাহসী হ'য়ে উঠছে''!
হাসি পায়গো বাবু হাসি পায়
আমরা কুলি-কামিন মাইয়া গুলান
গাইতি হাতে খাদানে নাইমা যায়
কতই বৌ-ঝি কয়লার নিচে মইরা যায়,
মিডিয়া বাবু গুলান আমাদের সাহস দেখেন নাই।
সোদর বনে কাঁকড়া ধইরা মাচ ধইরা বাঘের মুখ থেকে
ফিইরা আসি
আমাদের সাহস তখন কেউ দেইকতে
পাইনা গো।
যখন বেইদিনী হইয়া
জঙ্গল গুলান থেকে সাপ ধইরা
বাবু গুলানের বাড়ি বাড়ি খেলাটো
দেখান যায়-
তখনও আমরা সাহসী নইগো !'
আমরা যারা আলোর পৃথিবীর মানুষ
যাদের ভাতের জন্য
দুঃচিন্তার পাথর ভাঙতে হয়না তিন বেলা।
যাদের পোশাকে জীর্ণতায় বার্ধক্য নামে না,
বরং অনাবৃত শরীর উষ্ণতা ছড়ায় বাণিজ্যিক বিপণিতে।
চিত্র সাংবাদিকের এডিট পেজে সাহসিকতার
সংসাপত্রে বিজয়িনী তারা।
খুব ছোট চুলের হেয়ার স্টাইলে আথবা রূপালী পর্দার আইটেম গার্ল হলেই গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে তার দখলদারী।
আতি আধুনিক নায়িকার সস্তা সামান্য কথা অসামান্য টক-ঝাল-মিষ্টি মোড়কে সংবাদ শিরোনামের ফ্লাস লাইটে ঝলসে ওঠে
কাঙাল হরিনাথ হরিশ মুখার্জি লেনের বাঁকে রাস্তা অনেক কাল বদলেছে।
যে মেয়েটা রোজ তিরিশতলা থেকে পঞ্চাশতলা, পঞ্চাশতলা থেকে সত্তরতলায় ইট-পাথর বয়ে যায় রাজমিস্ত্রির শ্রমিক সেজে ক্লান্ত শরীরে,
যে মেয়েটা সৈনিকের পোশাকে ছত্রিশগড়ের জঙ্গল থেকে অরুণাচলের পাহাড়ে হামাগুড়ি দেয়, অরুণাচল থেকে সিয়াচেনের তুষার ভেঙে সীমান্তে দাঁড়ায় নৈশ পাহারায়।
যে মেয়েটা রোজ ঘুমন্ত শিশুকে পাশফিরিয়ে শুয়ে রেখে বনগাঁ বারুইপুরের ফার্স্ট ট্রেনে শহরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে, গতানুগতিকতার ভিড়ে ঠাসা জীবনে তাদের সাহসিনী রূপ তায় ফিকে হয়ে আসে
ব্যবসায়িক টানা পোড়েনে।
অলঙ্করণ : জয়ন্ত মন্ডল