কবি খুকু ভূঞ্যা
কবি খুকু ভূঞ্যা |
কবি খুকু ভূঞ্যা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সাল ২২শে অক্টোবর পিংলা থানার অন্তর্গত জলচক সংলগ্ন জঁহাট গ্ৰামে।
পিতা শ্রী রবীন্দ্রনাথ মাইতি এবং মাতা শ্রীমতী রাধারানী মাইতি। পেশায় গৃহবধূ এই কবি জলচক বালিকাবিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করেন ।
কবির লেখালেখির শুরু শৈশব কাল থেকে।
পত্র-পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশ হয় ২০১২ সাল থেকে। তাঁর লেখা প্রথম প্রকাশিত হয় ভারতী সাহিত্য পত্রিকা'য় ভেমুয়া,সাগরপুর,সবং।
ক্রমে মাটি, দৌড়, ইসক্রা, প্রোরেনাটা, আয়ু, কবিমন, কবিতীর্থ, চান্দ্রমাস, আপনজন, আরো অসংখ্য পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
দেশ পত্রিকায় কবির লেখা প্রকাশ হয় ২০১৮সালে ।
কবির প্রকাশিত কাব্যগ্ৰন্থ দু'টি ।
১• লেপের আদর খোঁজে ফুটপাত,
২• মাটিপাঠ
খুকু ভূঞ্যার একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :
মধ্যরাতের ছায়া
***
বাঁশের বেড়া রুখতে পারে না রোদের ঢেউ
একটা ঝিলমিল সমুদ্র খেলা করছে বিছানায়
যমুনা ভ্রমে উঠে দাঁড়ালেন বাসুদেব
হাতের বাঁশিতে রাই কাঁপন
ভাবি বাঁধবো কেন
আকাশ নামুক চাঁদ নামুক
কালপুরুষ সপ্তর্ষি অশ্বিনীকুমার দল বেঁধে আসুক
খড়মন্দির পূর্ণ হোক
সে জানে না আমার জোছনা খেত ভরাট
শান্তি-আনন্দ কীর্তনের মতো বাজে রাত-দিন
আমার জোনাকির কৃষ্ণপক্ষ নেই
তবু যে তাকে কেন ডাকি অশ্রুগানে
ঘুম আসে না মধ্যরাতে
জানে অন্তর্যামী
ঋতুভয়
***
প্রথম ঋতুরঙ দেখে মেয়েটি কাঁপছে, চোখ বৃষ্টি
পাশের ঘর থেকে সান্ধ্য খবরে ভেসে আসছে
সকালে রক্তাক্ত কিশোরীর লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে
কিশোরী–লাশ–রক্ত–
দমকা দমকা রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেয়েটি
প্রচন্ড ভয় ঢুকে পড়ছে
মাকে প্রশ্ন করল, কিশোরী–লাশ–রক্ত–
বেগুন ভাজা গন্ধ হাত, মেয়েটির কপাল ছুঁয়ে
নীরবে সরে যায়
একটা ছমছমে পথ অনেকদূর ভাবিয়ে নেয় মেয়েটিকে
খবরে তখনও বিশেষ বিশেষ সংবাদ–
সমর্পণ
***
দরজা খুলেই দেখবে
একটা নদী শুয়ে আছে তোমার
বিছানায় তৃষিত উদাস
সমুদ্র বয়ে যাবার দৃশ্যে ঝুঁকে পড়ছে নেশাতুর মন
শরীর জুড়ে ফোঁটা ফোঁটা জড়তা আগুন লিখছে
নদী ভাঙছে তার পাড়
খুলে ফেলছে দ্বিধা আবরণ
সমর্পণ'ই পূজা
পূজাই সমর্পণ
যে ফুল নিজগুণে ঝ'রে পড়ে ঈশ্বরের পায়
পাষাণ ঠোঁট বাঁশি বাজায়
রাধা অন্তর ডুবে যায় অশান্ত যমুনায়–
দেবীপক্ষ
***
স্নান সেরে উঠে যাচ্ছে মা
সিঁদুর পরাবে ত্রিশূলে
প্রস্তুত হও তোমার নখের ভেতর যার মাংস
সে শ্মশান ভৈরবী আসছে–
চা দোকানী ভুতো অত লম্বা
কোরো না হাত
সে আসছে
বিষাক্ত আদরের সুযোগ খোঁজা বুড়ো সাবধান
সে আসছে
ভীড় বাসে সুড়ুৎ করে ঐ যে
ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না শোনো
সে আসছে–
আমাদের ঝিমধরা রক্ত
তাকে জন্ম দিল ফোঁটায় ফোঁটায়–
আগুন আহ্বান
***
সময় ঘরে তৈরি হচ্ছে ধ্বংসের দু'পিঠ
না দেখার ভান করে বৃথা চলে যাওয়া
অন্তরে লালিত সাবালক রাবণ
ছিঁড়ে খায় জন্মবোধ
অথচ যাওয়ার ছিল তারাখসা রাত পেরিয়ে
পাখি ভোরের কাছে
সে গান ভালোবাসে না
কোমলতা সরিয়ে কাঁটা রেখে দেয় ফুলের পাশে
ছাইরঙা প্রজাপতি বুকের মাঝে রেখে
তাকে কি শোনানো যায় মীরা'র ভজন কীর্তন
কষ্টের সুড়ঙ্গ বেয়ে শ্বাসমাটি
কেন খোঁজো ঘাসের চরণ
রক্ত-হোলি দুপুর খোঁজে মৃত্যুযোগ
সাহস নিয়ে ভাত ফুটিয়ে নাও শ্মশান চুল্লিতে--
নিভৃত কথা
***
বনপুরুলের ফাঁকে এককুচি চাঁদ
ঝোপের অন্ধকারে মুখ দেখতে পায়না ভ্যাঁডরা ফুল
ডোবার বুকে ঝুঁকে পড়া ছায়ার কাছে কেউ নেই
যে একটি দু'টি জোনাকি উড়িয়ে দেবে
থমথমে চারপাশ
মুখের ভাতে কাঁকর সহ্য করা চোখে বালি অথবা গলায় কাঁটা নিয়ে বাঁচা আর আগুনের ভেতর বসে কবিতার চাষবাস–
কারুর ঘুম ভাঙিয়ে দিইনি একা করিনি
বঞ্চিত করিনি ভাতের থালায় তবু–
সোহাগের চোখ জবা ফুল
ওহে নুপুর বাজানো পাখি শুধু তুমি জানো
আমারও কিছু কান্না আছে
নিভৃত ক্ষুধা ছুঁতে চায় ঈশান কোণের ঝড়, ধ্যানের প্রশ্বাস–
নির্জন আগুন
***
এ প্রান্ত থেকে দেখছি–
জেগে আছে তোমার চোখ নির্জন শূন্যে–
চাঁদ ভাঙে নীল জোছনা ঢেউ
আকাশমণির ফাঁকে আবডাল খোঁজে বাদুড়
ঋষি তারা তাকিয়ে বিস্ময়
ধরো একটা চেয়ার ঠায় তাকিয়ে–
চুম্বনের স্পর্শ নিয়ে চুপচাপ শিহরিত অস্থির
অন্তর থেকে মন্ত্রের মতো বলছো তাকাও, তাকিয়ে থাকো
যতক্ষণ না সূর্য উঠছে শিরায় শিরায়–
তারপর
***
ভর দুপুরে ঘুম পাচ্ছে
রোদের আল্পনায় ঘর সাজাচ্ছে গাছের দল
হরগৌরী ফুলের পাশে চঞ্চল প্রজাপতি
মাচীঘাস শূন্যে তাকিয়ে
খাতা খোলা; টেবিল থেকে গড়িয়ে পড়ছে কলম
কবিতা নেই, অনুভূতি নেই
অদ্ভুত এক ঘুম নামছে
একেই তুমি মৃত্যু বলো টেনে দাও দিঘল ইতি
তারপর নড়ে ওঠো হোক সমাজ যেভাবে বদল আনে রাতা-রাতি–
কারিগর
***
তুলে ধ'রো আরেকটু
সামনে খাদ পেছনে এবড়ো-খেবড়ো পথ
খুব বেশি ভরসা না দিলেও
বাঁচার আনন্দ দেবে ধুলো পায়ে
ঠাকুমা বলতো স্বপ্ন দেখা ছেড়ো না
স্বপ্নের ভেতর চেতনা পথ
আলো জ্বললে প্রাণমূলে
অশ্রুপাতের দীর্ঘ ছায়া খুলে দেবে আকাশের সিংহদ্বার
তুমিই জ্ঞান
দীপ-ধূপ-চন্দনে পূজিত ঈশ্বর
আমার অন্ধত্ব ঘোঁচাও–
কেউ দেখোনি
***
অশ্রু যেখানে নদীর জন্ম দেয়
ভাঙা বেড়া শোনে মহাকালের গান
স্বস্তিক জাগে–
নিঝুমের ঝিঁঝিঁ ফোঁটা ফোঁটা দৈন্যতায় লিখে দেয় জাগরণ
ছিঁড়ে খাওয়া তরুণীর চিৎকার–
বাঁচাও তাকে কাল যে লাশ হবে
কেউ দ্যাখোনি রান্নার কাঠ পুড়তে পুড়তে
একটার পর একটা ধর্ষক পুড়িয়ে চলেছে সে অবিরাম–
ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনআপনাকে অশেষ ধন্যবাদ । সৃজনশীল এই সাহিত্য প্লাটফর্মে প্রবেশ করার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা ও অভিনন্দন । ভালো থাকুন সর্বদা ।
মুছুন