1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

প্রদীপ গুপ্তের ধারাবাহিক উপন্যাস 'বাউল রাজা', চতুর্থ পর্ব | সাহিত্য চেতনা

   ধা রা বা হি ক   উ প ন্যা স   

বাউল রাজা 

• প্রদীপ গুপ্ত

    দ্বিতীয় খন্ড  ( চতুর্থ পর্ব )    

মোদপুর আসতেই শ্যামাদাস বাউল উঠে দাঁড়ালেন। 

--" তাহলে ঠাকুর, আমি এবারে আসি... "

--" সে কি গো গোঁসাই, আপনি রামপুরহাট যাবেন না? "

-- " না গো ঠাকুর, এখানে একটু কাজ সেরে --"

--" তাহলে কাল প্রভাতী সঙ্গীত কে গাইবেন? "

--" ভেতর ভেতর আমোদপুর তেকে মায়ের থানে হেঁটে যেতে এমন কিচু সুময় লাগে না গো পদীপভাই। আমি একান তেকে ভোরাই গান গাইতে গাইতে ঠিক পৌঁচে যাবো গো --"

আমার এ বিষয়ে এতোটুকুও জানা নেই।  বাউলকে বিদায় জানাতে আমিও উঠে দাঁড়ালাম, তিনি ধীরে ধীরে দরোজার দিকে এগিয়ে গেলেন। আধো অন্ধকার, আলো ছায়ার মাঝে বাউলের শরীর ক্রমশ ঘন কালো আঁধারের বুকে মিলিয়ে গেলো। আমি আমার নির্দিষ্ট আসনে এসে বসলাম। এ পথটুকু যে কীভাবে পেরিয়ে এলাম, এতোটুকুও টের পেলাম না। এই সরল গ্রাম্য মানুষগুলোর মাঝে যে কি বিশাল এক একজন মানুষ লুকিয়ে থাকেন, সেটা এনাদের সাথে সঙ্গত না করলে বোঝা যায় না। 

ট্রেন চলছে, ট্রেনের দুলুনিতে সবে একটুখানি তন্দ্রাভাব এসেছে এমনসময়ে একটা মৃদু পরিচিত গন্ধ নাকে এসে লাগলো। গন্ধটা ভীষণ চেনা কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না কিসের গন্ধ, কোথায় এর বাস পেয়েছিলাম।  ট্রেন যেদিকে চলছে, সেদিকের জানালায় মুখ রেখে বসে আছি। হাওয়ায় হাওয়ায় মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। গন্ধটা বুঝি হাওয়ায় ভেসেই আসছে। আমি নাসারন্ধ্রটাকে ফুলিয়ে গন্ধটাকে বুকের ভেতর টেনে নিচ্ছি। খুব অস্বস্তি হচ্ছে। চেনা গন্ধটা যেন আমার অস্তিত্বের ভেতর বাসা বাঁধছে ক্রমশ। আমাকে কেমন আচ্ছন্ন করে দিচ্ছে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য একটু উঠে দাঁড়াতেই মনে পড়লো। গন্ধটা অনেকটা কাঁচা আমের গন্ধের মতো। তবে যেন একটু বুনো। এই গন্ধটাই তো আমি বাউলনির গায়ের থেকে পেয়েছিলাম !  তাহলে কি কৃষ্ণভামা আমার আশেপাশেই আছে? নিশ্চয়ই না। কিন্তু সে তো অশরীরী নয়, তাহলে কি এর মধ্যে ওর... 

নিজেই নিজের মনকে ধমক দিয়ে উঠলাম। মনে পড়লো, গতবার ফেরার পথে ও বলেছিলো -- " ঠাকুর, ভালোবাসার মতো কঠিন ব্যামো আর নেই গো। সব সময় যেন সে তোমায় ঘিরে থাকপে। তোমার চিন্তায়, চেতনায়, স্বপ্নে, জাগরণে, তোমায় তিষ্ঠোতে দেপে না গো। এই দেকো না কেনে আমি কোতায় যাই, কার সাতে কতা বলি, এই যে ধরো আমার চুলে তুমি যে ফুলটা বেঁদে দিলে সে সবকিচু কিন্তু গোঁসাইএর নজর এড়ায় নি গো। আমার গায়ের গন্দে তিনি টের পান আমি কতোদূরে আচি। "

তাহলে কি আমি সত্যি সত্যিই বাউলনিকে... ? আমার এবারের যাত্রার মূল কারণ কি তাহলে ওই টান? ভালোবাসার অমোঘ টানই কি আমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে কানাই বাউলের আখড়ায়? আমি মনে মনে চিৎকার করে উঠলাম -- তুমি কি বিশ্বাস করো বাউলনি যে আমার মতো একজন শহুরে যুবক শহরের এতো সুন্দরী নারীকে ছেড়ে তোমার বাঁধনে বাঁধা পড়েছি? এ গন্ধ কি সেই ভালোবাসার অস্তিত্বকে প্রমাণ করতেই আমায় ঘিরে ধরেছে, নাকি এ ভ্রম! এ মায়া! এ তোমার তৈরি কুহক ! আমি এইসব অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস-আনুগত্যের কেন্দ্রে পৌঁছুতে চাইনা। আমি এক ঘোর বস্তুবাদী যুবক। এ সমস্ত ভাববাদী চিন্তাচেতনার কুহক জালে আমাকে আটকে রাখতে পারবে না। এ অবিশ্বাস্য বিশ্বাসের কুহকী মায়ার বন্ধন ছিন্ন করার জন্যই আমি এসেছি। আমি প্রমাণ করবোই যে, এ সব আজগুবি চিন্তাভাবনা যে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে, সে কক্ষপথ বাস্তববাদী কক্ষপথের সাথে সংঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। তুমি যতোই তোমার শরীরের কাঁচা আমের গন্ধের জালে আমাকে বন্দী করতে চাও, আমি এসব ---

--" কোই সামান হ্যায় সাব --"

জানালা দিয়ে মুখ বাড়ানো কুলির ডাকে হুঁশ ফিরতে দেখি গাড়ি কখন রামপুরহাটে পৌঁছে গেছে।

                              ( চলবে....)

         

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন