1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

প্রদীপ গুপ্তের ধারাবাহিক উপন্যাস 'বাউল রাজা' | সাহিত্য চেতনা

    ধা রা বা হি ক    উ প ন্যা স     

 বাউল রাজা 

    • প্রদীপ গুপ্ত

        দ্বিতীয় খন্ড  ( পঞ্চম পর্ব )         

খন সবে রাত তিনটে। স্টেশনের বাইরে এসে যখন দাঁড়ালাম তখন শীতটা বেশ লাগছে শরীরে। কলকাতায় এখনও একটা মোটা ফুলহাতা জামা পরলেই চলে যায়। সার দিয়ে রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে। সবাই সমানে তারস্বরে তারাপীঠ -- তারাপীঠ বলে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। প্যাসেঞ্জার  সাকুল্যে আমাকে নিয়ে জনা আটেক হবে। 

রিক্সাস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে চিন্তা করে নিলাম কীভাবে যাবো। পায়ে হেঁটে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের হবে না। পথঘাট এমন কিছু চিনি না। শুধু একবার যাওয়া আর একবার ফেরার অভিজ্ঞতার সঞ্চয় জমা রয়েছে অভিজ্ঞতার ঝোলায়। কাজেই রিক্সা করে যাওয়াটাই ঠিক হবে। দরদাম করে একটা রিক্সাকে বারো টাকায় ঠিক করলাম। কথা হলো মুনসুবা মোড়ের ধাবায় চা খেয়ে ফের রওনা হবো। ধাবার মালিকের নামটা ঠিক মনে পড়ছিলো না। রিক্সাওলাই জিজ্ঞাসা করলো 

--" কুনঠে যাবেন বট্টে -- লালটুর ঠাঁয়ে ত? "


রিক্সায় উঠে ঝোলা থেকে বাড়ি থেকে আনা বাবার তুসের আলোয়ানটাকে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। বেশ ভালোই শীত পড়েছে এদিকটায়। হাইওয়েতে ওঠার আগে পর্যন্ত বেশ ঘন বসতিপূর্ণ অঞ্চল। তবে বাড়িঘরগুলো তেমন উন্নত না। নিঃসাড় হয়ে, আলোহীন হয়ে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। রাতটা স্টেশনে কাটিয়ে এলেই ভালো ছিলো কিনা ভাবছি। রিক্সাওয়ালা বলে উঠলো --" বাবু মনিব্যাগটো সিট্টের তলায় রাইখ্যে দেন কেনে গ। অঞ্চলটো সুবিধার লয়। মুনসুবার পর থ্যিক্যে রাস্তাটো --"

হাইওয়ে থেকে মুনসুবা মোড়ের ধাবাগুলোর সামনে জ্বেলে রাখা টিউবলাইটের আলোগুলো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। হুসহাস করে ভারী ট্রাকগুলো দৈত্যের মতো ছুটে যাচ্ছে। আমি ইচ্ছে করেই বলে উঠলাম -- " আমার কাছ থেকে আর নেবেই বা কী? টাকাকড়ি কীই বা আছে। গিয়ে তো উঠবো গুরুপদবাবার আখড়ায়। আর বেকার মানুষ, একটু সাধুসঙ্গ করা, তামাকটামাক খাওয়া এজন্যই তো --"

-- " গুরুপদবাবা মানে -- শ্মশানের দাদুর ঠাঁয়ে? সিখাইনকে ত কইলকাতার আরেক বাবু আমার রিক্সা ছাড়া -- কী যেন নামটো বট্যে -- কালাপানা - বাঙ্গাল বট্টে উও -"

ও কি ধ্রুবদার কথা বলছে না কি? ধ্রুবদা কি এতোটাই পপুলার নাকি যে একজন রিক্সাওয়ালাও তার খোঁজ রাখে? 

-- " তুমি কার কথা বলছো? ধ্রুববাবু? "

--" হ - হ - সি নামটোই আছে। ধুবদা বট্ট্যে। খুব দিলদার মানুষ গ। না চাইতেই --"


রিক্সাওয়ালা রিক্সাটাকে সটান হাইওয়ে থেকে ধাবার উঠোনে নামিয়ে দিলো। 

--" শুধু চা, নাকি সাথ্যে রুটিও বুইলবো? "

রিক্সাওয়ালা প্রশ্নটা করে আমার মুখের দিকে চাইলো।

বুঝলাম আমার সাথে সাথে,বেচারারও একটু খাওয়াটা জুটে যাবে। তাছাড়া এই রাতের বেলায় এখনও প্রায় আট কিলোমিটার পথ ওর সাথে যেতে হবে। 

-- "হ্যাঁ, চারটে করে রুটি আর ডিম আলু ভাজি বলে দাও। "


বড়শোল গ্রাম এ অঞ্চলে বেশ বর্ধিষ্ণু গ্রাম। বেশ কিছু পুরোনো দিনের পাকা ইমারত দেখতে পেলাম এখানে। এই বড়শোলের পরেই দিগন্ত বিস্তৃত ধূ ধূ মাঠ। দুপাশে নয়ানজুলি। নয়ানজুলির পরে যতদুর চোখ যায় কোনও জনবসতি নেই। মনে পড়ছে গতবার এই পথ ধরে যাওয়ার পথে এমন একজন সন্ন্যাসীর  দেখা পেয়েছিলাম, যার কথা জীবনেও ভুলবো না। দীর্ঘদেহী জটাজুটধারী শ্বেতকায় একজন সন্ন্যাসী রাস্তার এদিক থেকে ওদিকে মিলিয়ে গেছিলেন। সেকথা মনে পড়তে গায়ের রোমগুলো দাঁড়িয়ে গেলো। কিছুটা এগোতে দূর থেকে মন্দিরের চূড়া দেখতে পেলাম। তখন সবে সূর্যদেব তাঁর সপ্তাশ্বর রথের লাগাম হাল্কা করেছেন। 

দূর থেকে একটা অস্পষ্ট গানের সুর ভেসে আসছে। বাণী পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে না। কুয়াশার চাদরে মুড়ে একটা সলজ্জ ভোরাইয়ের সুর মাঠঘাট পেরিয়ে ভোমরার গুনগুন শব্দের মতো কানে এসে পৌঁছুচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই শ্যামাদাস বাউল। কি আশ্চর্য, এর ভেতর তিনি তারামা কে ভোরের গান শোনাতে পৌঁছে গেলেন? 

--" বাবু, চলেন গো, এইটুস পথ পায়দল চলেন কেনে। "

সামনে নদী -- সেই নদী -- আমার কৃষ্ণভামার প্রাণের সই। আমাকে চিনতে পেরেই কি নদীর জলে সামান্য কাঁপন লাগলো?

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন