1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

প্রদীপ গুপ্তের ধারাবাহিক উপন্যাস 'বাউল রাজা' , ষষ্ট পর্ব | সাহিত্য চেতনা

    ধা রা বা হি ক    উ প ন্যা স   

বাউল রাজা 

• প্রদীপ গুপ্ত

    দ্বিতীয় খন্ড ( ষষ্ঠ পর্ব )      

গেকার দিনে হলে হয়তো বলা হতো হাফ ফার্লং দূরত্ব, আমরা এখনকার দিনের মানুষ ফার্লং টার্লং বুঝি না। বুঝি ফার লং না নো ফার লং। মোটামুটি পঞ্চাশ পা দূরত্ব পথ হেঁটে গেলেই ওপারে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকো বেঁধে রাখা আছে। দুটো নৌকো পরপর, একটার সাথে আরেকটাকে কাছির দড়ি দিয়ে বাঁধা। খেয়াঘাটের দিকে এগোতে এগোতে মনে করতে লাগলাম, গতবার নদীর সাথে একটা কথাও বলা হয়ে ওঠেনি। সারাটা পথ বাউলনির সাথে কথা বলেই কেটে গেছে। আজ পুরো রাস্তাটা নদীর সাথে গল্প করতে করতে যাবো বলেই ঠিক করলাম। 

নৌকোয় পা দেবের মুহূর্তে হঠাৎ করেই নৌকোটা দুলে উঠলো। নিস্তরঙ্গ নদীর বুকে বেঁধে রাখা নৌকোয় হঠাৎ করে দুলুনি কেন? বুঝলাম, এটা নদীরই কারসাজি। ঘাটে আর কেউ নেই। আমি আর আমার সেই রিক্সাওয়ালা। আমার ব্যাগ কাঁধে করে আমাকে গুরুপদবাবার আশ্রমে পৌঁছে দেবে বলে সঙ্গ নিয়েছে। 

ঈষৎ নীচু হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম -- " কেমন আছো সই? "

হঠাৎ কলকল করে একটা শব্দ ভেসে এলো -- " উহ্, কেমন আছো সই, না কি কেমন আছে সই? "

আমি স্থানকালপাত্র ভুলে গিয়ে হোহো করে হেসে উঠলাম। রিক্সাওয়ালা থতমত খেয়ে বলে উঠলো -- " কী হইলো গ বাবু? কুনো হাসির কুথা মন্যে পইরল না কি গ? "

--" হ্যাঁ গো ভাই, গতবার এখানে পিছলে পড়ে গেছিলাম তো, সেটা মনে পড়লো হঠাৎ। "

--" অ, সি টো বুল্যেন কেনে, আমি ত ভাইবলাম বুঝি -"


আমার ধারণা ছিলো গুরুপদবাবাকে বুঝি স্নানের ঘাটে স্নান করতে দেখবো। তিনি তো এই ঊষালগ্নে স্নানাদি সেরে আসনে গিয়ে বসেন। কিন্তু তাঁকে দেখা গেলোনা। তার মানে, হয় তিনি ইতিমধ্যেই স্নান সেরে নিয়েছেন, নয়তো --

--" কে গো, পদীপবাবু নাকি? "

সোনাদা। গুরুপদবাবার আশ্রমের হেঁসেল যার আওতায় চলে সেই। গতবার অমাবস্যার রাতের ভান্ডারা যিনি একা হাতে সামাল দিয়েছিলেন। 

--" আজ্ঞে হ্যাঁ সোনাবাবা। এই তো সবে এলুম গো। আশ্রমে দাদু আছেন তো? "

--" কে গুরুপদবাবা! হ্যাঁ আছেন, শরীরটা একটু খারাপ। সামান্য জ্বর জ্বর করছে।"

এই সোনাবাবা আসলে একজন গৃহী মানুষ। হাওড়ার মন্দিরতলার দিকে ওঁর বাড়ি। সংসার ভালো লাগে না বলে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। অসম্ভব গুণী মানুষ। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবকিছুতেই একজন মাস্টারপিস।

--" তা আশ্রমে যাচ্ছেন তো? চলুন, আমি স্নান সেরে আসছি। "

রিক্সাওয়ালা আগে আগে চলেছে, যেন আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে। আমি অবাক হয়ে ভাবছি এনাদের কি অসম্ভব স্মৃতিশক্তি। প্রায় দেড়বছর আগে দেখা একজন মানুষকে কীভাবে মনে রেখে দিয়েছেন! 

আশ্রমের ভেজানো কাঠের পাল্লা ঠেলে যখন ভেতরে ঢুকলাম, তখন সবে গুরুপদবাবা ঘুম থেকে উঠে বসেছেন।

চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, দাদুর শরীর একদম ঠিক নেই। ওরকম হাড় জিরজিরে শরীরে চোখ মুখটা যেন একটু ফোলাফোলা মনে হচ্ছে। প্রণাম সেরে ব্যাগটাকে রিক্সাওয়ালার কাছ থেকে নিয়ে মেঝেতে রাখলাম। ব্যাগটার ভেতর থেকে একটা হরলিক্সের বোয়াম বের করে ওনার সামনে ধরলাম। তিনি বিস্ময়বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে চাইলেন। 

--" আপনার জন্য। "

--" তাও তোমরা বেটিকে অস্বীকার করো প্রদীপবাবু। নাস্তিকতার ধুয়ো তুলে ভালোবাসার সাম্রাজ্যে থাবা বসাও। "

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এর ভেতরে ইনি নাস্তিকতা আস্তিকতাকে খুঁজে পেলেন কীভাবে? 

--" শরীরটা এতো দুর্বল লাগছিলো গতকালই ভাবছিলাম এসময়ে একটু এ জাতীয় খাবার পেলে ভালো হয়। আর আজ সকালেই তুমি এটা হাতে করে নিয়ে হাজির হলে। তুমি ভাবছো বটে এটা তুমিই আনলে, আসলে এটা তুমি আনোনি গো, তোমার হাত দিয়ে ওই তিনিই পাঠিয়েছেন। "

বলেই চোখ বন্ধ করে দুহাত বুকের কাছে নিয়ে অনুচ্চস্বরে বলে উঠলেন -- " জয় জয় মা তারা -- জয় গুরু বামদেব। "


( চলবে)

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন