1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

প্রদীপ গুপ্তের ধারাবাহিক উপন্যাস 'বাউল রাজা' , সপ্তম পর্ব | সাহিত্য চেতনা

    ধা রা বা হি ক    উ প ন্যা স     

 বাউল রাজা 

    • প্রদীপ গুপ্ত

      দ্বিতীয় খন্ড ( সপ্তম পর্ব )     

গুরুপদবাবার আশ্রমের মেঝেতে পাতা মাদুরে বসে ঝোলাটাকে খুলে গামছা বের করতে যাবো, ইতিমধ্যেই সেই রিক্সাওয়ালা ভাইয়ের ত্তত্বাবধানে গরম চা সাথে গরম জিলিপি আর সিঙ্গাড়া এসে হাজির। দেখলাম একজন টেনিয়া হিসেবে এই ছেলেটি দারুণ রকমের চৌকস। কত হয়েছে সে কথা জিজ্ঞাসা না করে একটা দশ টাকার নোট ওর দিকে বাড়িয়ে ধরলাম। ও ওর লুঙ্গীর খুঁট থেকে খুচরো টাকা বের করতে যেতেই আমি চোখের ইশারায় ওকে কিছু ফেরত দিতে বারণ করলাম। আর দুটো দশ টাকার নোট বের করে ওর দিকে বাড়িয়ে ধরলাম। 

ছেলেটি সকৃতজ্ঞ চোখে আমার দিকে চাইলো। আমি একটু মুচকি হেসে মাথা নেড়ে সবটাই নিয়ে নিতে বললাম। বিদেশবিভুঁইয়ে এরা খুব কাজে আসে। 

-- " প্রদীপবাবু, আমি বলি কি, এখুনি নদীতে নাই বা নাইতে গেলেন। সবে শীত পড়েছে। এখন এই ভোরবেলা স্নান করলে জ্বর চলে আসতে পারে।"

--" আমার একটা কথা আপনাকে রাখতে হবে বাবা। "

--"  বলুন --"

--" আমাকে আপনি আজ্ঞে আর বাবু বলে সম্বোধন করবেন না। আপনি আমার পিতৃতুল্য। কথাগুলো  আমার খুব কানে বাজে। "

গুরুপদবাবা খানিক চুপ করে রইলেন। 

--" আসলে কি জানো বাবা, আমরা কেউ অন্তরের প্রসাধনে সাজতে ভালোবাসি না। নকল প্রসাধনী ব্যবহার করে নিজেকে সুন্দর দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তুমি বাবা একজন শহুরে যুবক। তোমাকে মান দেওয়ার কথা ভেবেই আমি তোমাকে আপনি বলে সম্বোধন করতাম। এ কথাটা বলে তুমি আমার অন্তরের বাসাতে জায়গা করে নিলে। "

আমি ব্যাগটাকে দাদুর কাছে রেখে উঠে দাঁড়ালাম। 

--" বেশ তাই হবে, দুপুরবেলা এসেই স্নানটা সেরে নেবো। এখন যাই একটু মাতৃদর্শন সেরে --"

--" হ্যাঁ, সেটাই ভালো। মন্দির থেকে একেবারে কানাইয়ের সাথে দেখা করে এসো। ওরা দু'জনেই তোমাকে খুব ভালোবাসেন। "

কথাটার ভেতরে নিশ্চয়ই কোনো ইঙ্গিত নেই। তাহলে আমার মনেই কি পাপবোধ লুকিয়ে আছে? নইলে কেউ ওদের প্রসঙ্গ তুললেই আমার মনের ভেতর একটা কাঁটা খচ করে বিঁধে যায় কেন? 

ভেবেছিলাম স্নান করার সময় নদীর মান ভাঙাবো। দাদু সে আলাপে বাধ সাধলেন। আশ্রমের চাতালের টিউবওয়েলে ভালো করে গা হাতপা ধুয়ে মন্দিরের দিকে রওনা দিলাম।


সকালবেলা মা তারাকে দেখে মন ভরে গেলো। এ বিষয়টা আমায় সত্যিই অবাক করে। মুখে যত বডো বিপ্লবীই হই না কেন, মায়ের সামনে এলে কেন যে এভাবে আবিষ্ট হয়ে পড়ি নিজেই বুঝতে পারি না।


প্রভাতী আলো মন্দির গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে পারে কিনা জানি না। নিশ্চয়ই পারে না। কিন্তু তাহলে দিনের বেলায় আর রাতে মায়ের রূপের এ পরিবর্তন কেন? সবে মায়ের বেশ পরানো হয়েছে। মন্দিরের পুরোহিতেরা দেখলাম আমাকে কেউ চিনতে পারলেন না। ত্রাতা হিসেবে সেই রিক্সাওয়ালা। হঠাৎ দেখি আমার হাত ধরে আমাকে গর্ভগৃহের দিকে টেনে নিয়ে চলেছে। নিয়ে একদম মায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলো। ( আমি যে সময়ের কথা বলছি, মনে রাখতে হবে সেসময় পান্ডাদের এরকম রাজত্ব ছিলো না।) 

পুষ্প অলংকারে সালঙ্কারা মা তারা। আবক্ষলম্বিত রূপোর বক্ষাধান, উজ্জ্বল মুকুটে শোভমান পুষ্পতাজ -- মা যেন আমার রাজরাজেশ্বরী। অপূর্ব স্মিতহাস্যে যেন সেই গর্ভগৃহ আলোয় আলোয় দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছে। একজন আমারই বয়সী পুরোহিত এসে আমার মাথাটাকে মায়ের কোলে দিয়ে দিলেন। মুহূর্তে যেন পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল বিদূরিত হলো। এক অতলান্ত নীরবতা এসে আমাকে পরম শান্তির কোলে বসিয়ে পূর্বদিগন্তের সমস্ত আলোকবর্তিকাকে প্রজ্জ্বলিত করলো। আমি মুহূর্তের জন্য আপনহারা হয়ে গেলাম।


নদীর পাড়ে এসে যখন পৌঁছেছি, সূর্য তখনও পুব দিকের গাছের ডালের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাননি। ভোরবেলার চাইতে এখন নদীর জল কিছুটা বেড়েছে। ইচ্ছে হলো নদীর সাথে একটু মজা করে বলি --" নদী তুমি কোথা হইতে আসিয়াছো? " অমনি নদী কলকল করে বলে উঠলো --" আমি অন্তত মহাদেবের জটা থেকে আসিনি গো ঠাকুর, তুমি তো বোধহয় জানো না নদীর লিঙ্গ বিচারে আমি নদী নই, নদ। আর সমূদ্রসঙ্গমেও যাইনি, গেছি নদী সঙ্গমে। "

ভুলেই গেছিলাম এই নদীও যে মনের কথা শুনতে পায়। তাই প্রথমটায় চমকেই গেছিলাম। পরে ধাতস্থ হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম --" তাহলে তুমি কৃষ্ণভামার সই কীভাবে হলে? "

নদী হো হো করে হেসে উঠলো।


( চলবে )

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন