1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

প্রদীপ গুপ্তের ধারাবাহিক উপন্যাস 'বাউল রাজা' | অষ্টম পর্ব | সাহিত্য চেতনা

   ধা রা বা হি ক    উ প ন্যা স   

বাউল রাজা 

• প্রদীপ গুপ্ত

      দ্বিতীয় খন্ড  ( অষ্টম পর্ব )     

দীর হাসির শব্দ শুনে আমার যেন একটু অভিমান হলো। এ কথায় হাসির কী হলো? বাউলনির কাছে তো আমি বহুবারই নদীকে সই নামে বলতে শুনেছি। একজন পুরুষ আর মহিলার মধ্যে যে বন্ধুত্ব সেখানে সইয়ের অস্তিত্ব কোথায়? 

--" ঠাকুর, তোমার মনে আচে , গতবার ফেরার সুময়ে তুমি আমার সাতে একবেলা গল্প করবে বলে কতা দিয়েচিলে? "

ওরে বাবা সে কথা ইনি এতোকাল ধরে মনে করে রেখেছেন! আমারই তো মনে ছিলো না। 

--" বোধহয় বলেছিলাম। তুমি বলায় মনে পড়লো। তোমার অভিমান কমাতে কথা দিয়েছিলাম। "

--" ও! বোদয় ?  নিচ্চয় নয়? অবিমান কমাতে? বালোবেসে নয়? তালে থাকগে ঠাকুর, আমার সাতে কতা কইতে হপে না।"

-- "  এই দেখো, অমনি বাচ্চা মেয়ের মতো ঠোঁট ফোলানো শুরু হলো। আরে এ কথা আর নতুন কী? শুধুই কি তোমাকে গো নদী, এখানকার আকাশবাতাস, গাছপালা, রাস্তাঘাট, রোদ্দুর, আঁধার সবকিছুই তো আমার ভালোবাসার। কী যে যাদু জানো তোমরা, তোমাদের ভালো না বেসে উপায় আছে? "

--" ও, তালে সবার সাতে আমাকেও সবার মতোই,  - আমার কোনো আলাদা পিঁড়ে জুটলো নি কো তোমার হিদয়ে --! তা জুটবেই বা কীভাবে বলো, কিষ্ণভামী পোড়ারমুখী তো তোমার গোটাটাই দকলে রেকেচে। "

আমি যে কী বলি! এ এক জ্বালা। যাই কিছু বলি না কেন, ঠিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে -

--" তা যাকগে, আমি জানি এই চাঁপা ফুলের গাচটা তোমার খুব পিয়। মনের মতো করে এর ফুল দে সাইজে চিলে তুমি তোমার পিয়ার রাত্তিকালো চুল। মনে আচে ঠাকুর? আমি শুদু দেকে গেচি আর হিংসেয় জ্বলেচি। একেনে, এই ঠাঁয়ে এট্টু বোসো না কেনে গো। দুদন্ড গল্পগাচা করি --"

-- " সে না হয় আমি যখন স্নান করবো তখন -"

--" দেকো, পত্থম কতা আজ নদীতে তোমার নাওয়া হপে না। আর দ্বিতীয় কতাটা সেটা একন বললেও তুমি বুজপে না। দুদন্ড বসলে তোমার লাভ বৈ কতি হপে না কো। "


কী আর করা। নাছোড় নদীকে এখন যাই বলি না কেন, ওর হাত থেকে আমার নিস্তার নেই। সেই চাঁপাফুলের গাছটা এখন আর ফুলে ঝাপসা হয়ে নেই। দু'চারটে, এদিক ওদিক, যেন ভাঙা মেলার মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মনোহারী দোকানের মতো। ওর ডাল সরিয়ে নদীর পৈঠায় গিয়ে দেখলাম মাটি কেটে বেশ দু'জনের বসার মতো জায়গা করে রাখা। বোধহয় কোনো গোপন অভিসারের নিভৃত আসন। 

--" এখানে বসবো? "

--" হ্যাঁ গো ঠাকুর, দেকোনা কেমন বসার আসন করে রেকেচে পাগলগুলো। "

--' এখানে বসাটা কি আমার ঠিক হবে? "

-- " কেনে হপে না কেনে শুনি? এই নাও আমি এসে বসনু তোমার পাশটিতে। "

বলামাত্র ছলাৎ করে একটা ঢেউ এসে আসনের একদিকটা ভিজিয়ে দিলে। আমি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইলাম সে দিকে।

--" বলো গো ঠাকুর, কী যেন বলচিলে? আমি পুরুষ আর সে নারী, তালে আমরা সই হলাম কী করে? তাইতো? "

আমি কিছু না বলে মাথা নাড়লাম। না নেড়েই বা কি করবো? যে সমস্ত ঘটনাগুলো এখানে ঘটতে দেখছি, সেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা তো আমার কাছে নেই। এসব কি আমার মনের গহনে ঘটে চলেছে, না কি বাস্তবিক, আমি সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। কিন্তু যদি শুধু মনের ভেতরে ঘটে চলা ঘটনাই হবে, তাহলে এই জল উছলে ওঠাটার কী ব্যাখ্যা হবে? 

--" তুমি একনো বাউলদের গুহ্য কতা কিচুই জেনে উটতে পারোনি ঠাকুর। আমি বাউলসঙ্গ কত্তে কত্তে নিজেও ককন বাউল হয়ে উটেচি, সে আমি নিজেও জানি নে কো। বাউলদের ভেতর কোনো নারী পুরুষের ভেন্নতা নেই গো ঠাকুর। একই অঙ্গে যিনি নারী, সেই অঙ্গেই তিনি পুরুষ গো। একই শরীরে দুই সত্তা। দুইয়ে মিলে এক আবার ভেন্ন। "

আমার কী বোধ হারিয়ে যাচ্ছে, না কি আমি এমন কিছু শুনছি, যেটা আমার অশ্রুতপূর্ব বলেই আমার চেতনায় প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। 

--" তোমার বুজতে কষ্ট হচ্চে, তাই না ঠাকুর? আচ্চা আমি একটু সহজ করে বুইজে বলি -- রমণী মানে কী? যার সাতে রমণ করা যায়। তাইতো? "

আমি মাথা নাড়ি।

--" আর পুরুষ মানে কাদের বোজায়? যে মানুষ তার পরুষ শক্তি দে রমণীকে ভোগদকল করেন। তাই তো গো ঠাকুর? "

এবারও আমি মাথা নাড়ি।

--" ধরো, এমন কোনো মানুষ যকন তার মনের মানুষরে খুঁজতে নিজের শরীরের বাইরে অবস্তান করচে, সচ্চিদানন্দের সুখ আহরণ করচে, ছিষ্টির  রহস্য তাঁর চোকে, তকন তাঁর রমণের ইচ্চে জাগলে তিনি তকন রমণী  পাবেন কোতায়? তালে পরে তো তাকে ফের মাটিতে নেমে আসতে হপে। একবার সে অবস্তা ভেঙে গেলে যে ফের তিনি তার পূব্বাবস্তায় ফেরত যেতে পারবেন, তার নিচ্চয়তা কোতায়? এজন্যিই তিনি তকন নিজের শরীরকেই রমণীসত্তায় নে আসেন। একই অঙ্গে তিনি তকন পুরুষ আবার সেই ছিদেহেই তিনি একজন নারী। নারীর ক্ষেত্তেও ব্যাপারটা একই। আমি কি তোমাকে ঠিক বুইজে উটতে পারলুম গো ঠাকুর? "

তখন আমার কানে আর কোনো শব্দ প্রবেশ করছে না। এক মহাকুন্ডলী আমাকে নিয়ে যাচ্ছে কোথায় কোন জগতে আমি জানি না, সে জগতে শুধু আলোর প্রবেশাধিকার। আর দূর থেকে ভেসে আসছে একতন্ত্রী কোনো বাদ্যযন্ত্রের সুর। সে আলোর মাঝখানে ক্রমশ ক্রমশ আত্মপ্রকাশ করছেন একজন নারী। সে নারী রূপের আশ্চর্য প্রকাশ। ক্রমে ক্রমে সে নারী রূপ পেলো বাউলনির শরীরে। আমি আমার দু'হাত দিয়ে তাকে বেষ্টন করছি। আমার শরীর মিশে যাচ্ছে বাউলনির শরীরের সাথে। আমি নির্ভার এক শরীর নিয়ে যেন সেই একতন্ত্রী সুরের আবহে ভেসে যাচ্ছি ভেসে যাচ্ছি আর ভেসে যাচ্ছি --

হঠাৎ কোনো এক মানুষের স্পর্শে আমার ঘোর ভাঙলো। দেখি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই রিক্সাওয়ালা ভাই। 

--" বাবুর কি শরীরট্যো খারাব লাইগছে নাকি গ? এখখন আপনি যাবেন কুনঠে গ? কানহাই বাউলের ঠাঁয়ে, না কি দাদুর ঠাঁয়ে, বলেন কেনে। পৌছাইন দি বট্টে! "


                      ( চলবে )

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন