1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

প্রদীপ গুপ্তের ধারাবাহিক উপন্যাস 'বাউল রাজা', তৃতীয় পর্ব | সাহিত্য চেতনা

   ধা রা বা হি ক   উ প ন্যা স   

 বাউল রাজা 

                          • প্রদীপ গুপ্ত

দ্বিতীয় খন্ড ( তৃতীয় পর্ব ) 

মুচকি হাসি হাসতে হাসতে ভদ্রলোক আমার দিকেই এগিয়ে আসছেন। ফর্সা চামড়ায় রোদের প্রভাবে তামাটে রঙের ছোপ ধরেছে। বেশ কয়েকটা রুদ্রাক্ষের মালা গলায়। স্থূলকায় বলা না গেলেও আমার দেখা অন্যান্য বাউলের মতো নন, চেহারাটা বেশ ভালো। 

ভদ্রলোককে দেখে ভীষণ পরিচিত মনে হচ্ছে, কিন্তু -- 

--" কী গো ঠাকুর, কেমন আচেন আজ্ঞে --" 

আমি একটু চিনি চিনি ভাব করে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললাম -- " হ্যাঁ গো ভালো আছি গোঁসাই। আপনি ভালো তো? "

ভদ্রলোক আমার গা ঘেঁষে দাঁড়ালেন। -- " কানাইদার ঠাঁয়ে যাচ্চেন বুজি? আমাকে চিনতে পারলেন না তো? আমি শ্যামাদাস গো ঠাকুর, সেই যে প্রভাতী গান গেয়ে সকালের আলোকে ঘুম থেকে তুলি -- আহা, আপনার গাওয়া সে প্রভাতী সংগীত -- বাউলরাজার সেই গান -- শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি -- আহা, জীবনেও ভুলবো না গো ঠাকুর। "

সমস্ত ছবিটা মনে পড়ে গেলো। কানাইদার সেই সারামুখে আলোর বন্যা -- মন্দিরের চূড়ায় এসে প্রভাতী সূর্যর প্রথম আলোর প্রণাম জানানো, কৃষ্ণভামার সাথে দেখা সেই অপূর্ব দৃশ্য সব সব সব -- মনে পড়লো আমার গাওয়া গান শুনে  শ্যামাদাস বাউলের সেই আকুলতা। 

আমি সসম্ভ্রমে উঠে দাঁড়ালাম। 

-- " সে দিনের কথা যে আমি আমৃত্যু ভুলতে পারবো না গোঁসাই। সে গান তো আমি গাই নি, আমার গলায় অন্য কেউ গেয়েছেন। আমার সাধ্য কি যে সেরকম তদগত ভাব নিয়ে --"

--" ঠাকুর, জন্মাবধি আমি তারাপীঠেই আচি। যেদিন থেকে এই খমকের তারে আঙুল ছুঁইয়েচি,  সেদিন থেকেই আমি আমার অন্তর থেকে সুর নিঃসারিত করে প্রভাতী সূর্যর আরাধনা করি,জেবনে কতো কতো মানুষকে আমি গাইতে শুনেচি। কিন্তু সেদিন যে অপূর্ব সুধারসধারায় তুমি আমার মনকে চান করিয়েচো ঠাকুর, এমন অপূর্ব অঘটন আমি আমার জেবনে কোনও দিনও ঘটতে দেকিনি। সেদিন যে ভাবে তোমার সুরের মূর্ছনায় আমি সূর্যকে হাসতে দেকেচি, সে অঘটন দেকার জন্য আমি হাজারবার জন্মগহণ করতে রাজি আচি গো ঠাকুর। "

আমার ভেতরে যে কি আনন্দের দাপাদাপি শুরু হলো, ভদ্রলোক কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি ওঁর চরণ স্পর্শ করলাম। 

--" আজ আপনি আমাকে বারণ করবেন না গোঁসাই। এ প্রণাম একজন নরনারায়ণকে আরেক জন নরনারায়ণের। অন্তরস্থিত আহ্লাদের প্রকাশ। ঠাকুর, আমার এখনও মনে হয় বুঝি স্বয়ং আলোকদায়িনী আমায় দিয়ে আলোক স্তুতি করিয়ে নিয়েছেন। এ সুর যদিও আমার কন্ঠ থেকেই উৎসারিত হয়েছিল, কিন্তু সে উৎসারণের দাবীদার আমি ছিলাম না। "

--" তা ধুবদা কই গো ঠাকুর, তাঁকে তো দেকচি না? এ যাত্রায় বুজি তুমি একাই এয়েচো?"

হঠাৎ করে এ কথা জিজ্ঞাসা করায় কেমন যেন হতচকিত হয়ে পড়লাম। তাহলে কি ইনিও --

-- " পদীপবাবু, তুমিও কিন্তু মনে মনে বাউল হয়ে গেচো। আমরা এবারে ভাদ্দরের আমাবস্যায় তোমাদের কতা আলোচনা করেচি। ধুবদার মন আর তোমার মন -- এ দুয়ের মনের ভেতর অনেকটাই ফারাক। কানাইদা বলচিলেন, পদীপদা নিজেই নিজের মনের পরীক্কা নিচ্চেন গো, তাই এ যাত্তায় এলেন না। তবে না এসে থাকতেও পারবে না গো, মনপাখিরে কি আর শেকল দিয়ে বেদে রাকা যায় গো? পদীপদার মন আসলে বাউলের মন। কটা মানুষ আর বাউল ঘরে জন্মায় বলো দেকি? যে মানুষ জন্মের পর বাউলের মনকে অধিকার করে সেই তো পকিত বাউল গো, আমাদের পদিপদাও তেমনি। "

মনের ভেতর একা আসা নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছিলো, শ্যামাদাস বাউলের কথায় এক ঝটকায় সে সংশয় নির্মূল হলো। 

রাতের অন্ধকারে একঝলক আলোর বৃত্তে গাড়ি এসে  আমোদপুরে দাঁড়ালো।


                         ( চলবে.......)

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন