1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি অলক জানা | সাহিত্য চেতনা

 কবি অলক জানা


জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৮২ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাসুল্যা গ্রামে। বাবা স্বর্গীয় বিজয়কৃষ্ণ জানা, মা শ্রীমত্যা রেণুকাবালা। কবিতা সম্বন্ধে কবি মনে করেন---

"সহজ স্বীকারোক্তিতে আত্মজীবনীর মলাট উন্মোচন করা যায় কবিতায়। কবিতা একটি তপস্যার নাম। যেখানে কোন শৈথিল্য বা ফাঁকি চলে না। অবলীলায় নিরন্তর পুড়ে নিঃশেষিত হওয়া একজন কবিকেই সাজে। পাপ কিংবা দ্বিচারিতার কোন প্রশ্রয় হয় না কবিতার ঐশ্বর্যে।"


প্রকাশিত কবিতা গ্রন্থ : 


বাঁশপাতার চিতা(২০১১) ,চোখতীর্থের শুভেচ্ছা (২০১২),পলি ও প্রত্নরোদ্দুর(২০১৮)

শঙ্খরাগের ছায়া(২০১৯), সম্পাদিত বই: ধুলো-মাটির ৫০: লক্ষ্মীকান্ত (২০১৯)

কালিদহের সূর্যমুখী ২০২০),এক তপস্যার নাম অপেক্ষা(যন্ত্রস্থ) 



• কবি অলক জানা-র একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :



প্রশ্নচিহ্ন 

   ***


শুয়ে আছে বিষণ্ণ পথ, 

বুকে ক্লান্তির দাগ 

প্রতিটি বাঁকে জড়িয়ে থাকে 

সজন বিয়োগের মায়া 


এই অনন্তের কাছে 

পরাজিত পথিক, নিজস্ব গন্তব্যে 

ফুরিয়ে যায়, আর একটা সকাল 

এগিয়ে আসে--------

এভাবেই চরাচর 

একটা আস্ত দুর্বোধ্য জিজ্ঞাসা। 



বীরত্ব 

  ***


দিনযাপন স্পর্শহীন দূরে দূরেই 

আমিও অভ্যস্ত হয়ে উঠি জলরেখা 

একক, মধ্যবিত্ত গতি, পরিযায়ীর

আলাপ আমার জন্য কেবল কৃপণ

ডানা ঝাপটে হয়ত সরে যেতে চায়।

সরাসরি না বললেও জলের মতো 

স্বচ্ছ পরিষ্কার, হাওয়া বয়ে যাবেই

এই সত্যটুকু মানা অতো কী সহজ ?


ছায়ার অতলস্পর্শ আলো ছুঁয়ে কে না 

বৈধ যৌন হতে চায় ? সরল তরঙ্গে

প্রকৃত কবি কখনোই ভাসমান না 

এটাই স্বাভাবিক, প্রিয় কাব্যের জন্য 

কত দায়, থাক্ পড়ে ধুলোয় সংসার

দস্যু চেনাতে কেবল কবিই সক্ষম । 



সমতুল্য 

   ***


সলতের মতো ক্রমশ 

নিঃশেষিত হচ্ছে জীবন

আলো তাপ ধোঁয়ায় এক ভগ্ন উপকূল -----

আলো প্রাপক বলে, সত্যি দেবতা,

আমাকে অঙ্কুরিত করেছে, মহাত্মা তিনি 

উক্তি তাপগ্রহীতার -----

চরম অভিশপ্ত, ধোঁয়ায় ঝলসানো 

চোখেদের তীব্র ধিক্কার। 

জীবন সলতে, সলতে জীবন। 



রাত্রিবাস

    ***


দশ দিগন্তেই মাইকের উচ্চকিত কণ্ঠস্বর

মন ভেজানো একটিও গান এই মিশেল থেকে 

বাছা গেল না, পাহাড়ের গান ডুবে যাচ্ছে সাগরে

বালিদেশের তৃষ্ণায় হারিয়ে যাচ্ছে তরঙ্গ রাশি বনবাদাড় অরণ্যের আলোগান, নিভে যাচ্ছে কার্বন যন্ত্রণায়, জেগে থাকা রবীন্দ্রনাথে মন বসানো চেষ্টায় হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছে দম্ভের আগ্রাসন। এই হিঁচড়ে সময়কে বলাৎকারে অভ্যস্ত করছে নির্দয় রাজপাট পরিচালন সমিতি -------

এসব থেকে কোথা পালাই, পালাই কোথায় ?

মনোযোগী রাত্রিবাসে আমার কোনো অন্তরায় নেই

রাত্রি মানে সেই বন্দর নিশ্চল হ্রদ 

দানব ও দেবতার চিল চিৎকার 

যার আত্মক্ষরণে অতীত গল্পের মতো মনে হবে। 



ভ্রাম্যমান

     ***


ধ'রে থাকা হাতের স্পর্শরেখা আলগা হলে

অপর একটি হাতের ভূমিকা স্বাভাবিক,

অদূরে অপেক্ষা বোনা জমিতে অঙ্কুর হতে 

দেখা যায়, নবাগত সম্পর্কের নাভিপদ্ম 

আর বৃষ্টিভেজা হাওয়ার ভেতর বসন্ত 

গান। মনোগত নিখরচায় সবকিছুই 

সম্ভব----হিসেবিরা অর্বাচীন বলতে পারে 

নির্দিষ্ট আলম্বে সবাই নিয়ত ভ্রাম্যমান।


ভালোবেসে গানের পাশে, ছবি ও মেঘবৃষ্টি

রোদের পাশে, উপচে পড়ে অঢেল দরদ, 

সবটাই বিমুখ হয়ে গেলে আবার দৌড়

জীবন জানে জোয়ার ভাটা , গতির বদল

হবে ? বাঁচার মতো ফুল ভরাটে বাঁচো তবে 

মরা ডালের কিছু অতীত, থাকতেই পারে। 



আবাসন

   ***


হলুদ পর্ণমোচী পৌঢ়ত্ব ফিরে এলে

মায়াটানে ভাসে ঢিলেঢালা উদাস ঘুঘুর গান

তখন নিকানো উঠোনে চলতে থাকে

সন্ধ্যাহ্নিক প্রস্তুতি ------


বাবা মানে তার বৌ, দু-একটি বাচ্চা, 

বৃদ্ধ বাবা-মা সহ পেছনে জ্ঞাতির আদিচর।

একটি সংসারি ঘরের ভেতর কত ঘর

একটি বাসভবনের নাম বাবা, দরজা খুলে

ভেতরে এলে দেখা যায় 

একটি পৃথিবীর চেয়ে কম কিছু নয়। 



নিরসন

  ***


চোখের অবাকে ভাসতে থাকে গগন মুখ

কোনরূপ পরিখা-প্রাচীর বাধা দিতে এসে

সমূলে পরাজিত, আহত সৈনিক যেভাবে।

এটুকু অধিকার ছিনিয়ে যদি নাও, তবে

সমস্ত অক্ষর অবিকৃত শবের পাহাড় 

বসুধায় সৃষ্টিহীন ভারাক্রান্ত মরুঝড়

অফলা গাছের মেরুদণ্ড ভাঙে, অধিকার

বুঝে নিতে জেদ আওড়াতে থাকে অবান্তর। 

মূল মন্ত্রটুকু হাতের বাইরে চলে গেলে

তরঙ্গহীন জীবন যাপন খাঁ খাঁ শ্মশান ! 


মননে নোঙর করেছে সেই মুখের মায়া

তপস্যার যাবতীয় মেধাবী রোদ ছড়িয়ে

লিখেছে দীর্ঘ সফরের চুক্তিপত্র আমার 

সমীপে, আপাদমস্তকে শিহরণ ঝংকার,

প্রত্ন-জ্বরাট খোলস ছেড়ে সভ্যতা মুখর 

দিগন্তদশে দুখ-নিরসন জীবন স্তব। 



অনন্যোপায়

     ***


কেলেঘাই জানে আমার কিছু ইচ্ছে অনিচ্ছে।


আলোর হাত সরিয়ে সরীসৃপ ছায়া নামলে 

শীত মজুত খেজুর শরীরে অতল গন্ধ ভাসে,

ঘনিষ্ঠতার আবেদন মঞ্জুর হোক তবে, অনেকদিন

শস্যহীন কাটতে দিতে নেই, নেশায় কেমন 

অধৈর্যের আগুন লেগে যায়। আমিও তো 

একটা শূন্যোধিক শূন্যতা, যেদিকে দু-চোখ যায় 

অভিমুখ পালটে চলে যেতেই পারি।


নাড়িপোঁতা নিস্তারিণী চরে 

অমরত্বের রাইকালা গানের বসন্ত অষ্টপ্রহর, 

আমার তপস্যার একান্তপীঠ, 

অনন্যোপায় চাই না বলে তুমিও কী 

এই দুর্বলতার তীব্র পরীক্ষা নেবে ? 



চিঠি

***


দু'বেলা শুকনো কথায় আমার রোগমুক্তি হয় না

রাত্রির তরঙ্গে অন্তত একাকার -----

আমাকে ইহকালের পরমব্রত অসুখের হাত থেকে

বাঁচিয়ে দিতে পারে।

অপেক্ষা সহ্য করতে পারি না, আমার সব ভালোর

ভেতর এই টুকু খারাপ মানলে, তোমার পদেই আছি

নচেৎ তোমার ভেতর আমার মৃত্যু 

নিশ্চিত করতে পারো।



বিরহ 

 ***


পরিস্রুত আলো থেকেও অসুখ আসে

নিত্যসঙ্গী হয়ে ক্রমশ প্রয়োজনীয়

পরজীবী, তাকে এড়ানো এমন সাধ্য 

কার ? অবিরাম ওষুধ সেবন হার 

মেনে গেছে, ঘ্যানর ঘ্যান্ বাস্তুঘুঘুর

আবদার মেনে নিয়ে সবাই কেমন

ঘোরতর সংসারি, প্রিয় অসুখ প্রেমী

কিংবা তার জন্যই অনন্তকাল যাত্রা।


এক জীবনে কত আর বিরহ লেখা 

যায় ? আগুন নিভে গেলে পড়েই থাকে 

ব্যর্থ রোদন আর অব্যবহৃত মগ্ন 

আয়ু। কেবল কিছু বিষণ্ণতা দিনের

ছায়ারৌদ্রের পাঁজরে দেদার বেজে

যায় বিনিদ্র প্রহর, বুকের ভেতর।

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন