ধা রা বা হি ক উ প ন্যা স
বাউল রাজা
প্রদীপ গুপ্ত
দ্বিতীয় খন্ড ( দ্বিতীয় পর্ব )
গাড়িটা প্ল্যাটফর্মে এসে গা এলাতেই জানালায় চাওয়ালা এসে হাজির। এখন আমি ঠিক এটাই খুঁজছিলাম। মনে পড়ছে গেলবার গলা শুকিয়ে গেলেও এককাপ চা খেতে পারিনি। এবার তাই একসাথে দু দুকাপ চা খেয়ে নিলাম। গাড়িটা যদিও নৈহাটি হয়ে আসে, কিন্তু নৈহাটিতে এতোটুকুও চা খেতে ইচ্ছে করে না। হঠাৎ কী যেন হয়ে গেলো আমার। না, মাথাটাথা ঘোরেনি, মনে হলো যেন আমার একপাশে কানাইদা আর অন্যপাশে কৃষ্ণভামা বসে আছেন। মাত্র এক ঝলকের জন্য। একদম পরিষ্কার দেখতে পেলাম। কৃষ্ণভামার দুচোখ মেঝের দিকে নামানো। মুখে স্মিত হাসি, আর কানাইদার সেই কোটরের ভেতর লেপ্টে যাওয়া আঁখিপল্লবের মাঝে সেই ভুবনভোলানো হাসির ঝলক।কেন দেখলাম ওদের? তাহলে কি সূক্ষ্মশরীরে ওরাও আমার সঙ্গী হয়েছে আজ? শুনেছি মনের মধ্যে যাদের বসত তাঁরা কখনও কখনও হঠাৎ করে চেতনার মাঝে দৃশ্যমান হন।
--" আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে ---"
লম্বা কম্পার্টমেন্টের একেবারে শেষের দিকটায় খমকের আওয়াজের সাথে গানটার কলি ভেসে আসছে। ঠিক এই সময়েই গানটা ধরতে হলো? আমার চেতন অবচেতনে যখন আমার মনের মানুষেরা এসে উঁকি দিয়ে গেলো, ঠিক তখনই কে তুমি বাউল আমার শ্রবনে সেই সুধারস ঢেলে দিচ্ছ --" ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো, দিও তোমার মালাখানি বাউলের এই মনটারে --"
মনে হলো সিট ছেড়ে উঠে ওর কাছে যাই, পরক্ষণেই মনে হলো দূর থেকে যেটা মধুর, কাছে গেলে তার মাধুর্য নষ্ট হতে পারে।
তবে মনে মনে গায়ককে বললাম -- না গো গোঁসাই -- আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখবো না। যে আমার মনমন্দিরে আসন পেতেছে, তার সাথে আমি অন্তরের অন্তরেই মধুর মিলনের আনন্দ উপভোগ করবো। জানালার বাইরে এই যে অনন্ত আকাশ, এই যে আদিগন্ত ব্যাপী চরাচর, এই নক্ষত্রপুঞ্জ, ছায়াপথ -- আকাশগঙ্গা ছাড়িয়ে যে ব্রহ্মাণ্ড, সে ব্রহ্মান্ডের কোনও এক নক্ষত্রসৃষ্ট গ্রহের অভ্যন্তরে যে লীলায় মেতে আছেন বিশ্বপিতা, তার আস্তানায় না যেতে পারলেও যদি মনের আস্তানায় তার প্রেমকে প্রত্যক্ষ করতে পারি, তাহলে এই মানবজন্ম ধন্য হবে।
-- বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো
সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও --"
কানাইদা -- তুমি আর তোমার সাধনসঙ্গিনী যে মায়ার বাঁধনে আমায় বেঁধেছো সে কি শুধুই মায়া না কি সেটাই প্রেম, সেটাই অন্তরের যোগ। নইলে আজ আমি কিসের টানে ছুটে যাচ্ছি? স্থানমাহাত্ম্যেতারাপীঠ হলেও কি টানটা মা তারার না কি ওই কালো হরিণ চোখের যে মায়াবী ডাক সে ডাকে সাড়া দিতে আমার এই অস্থিরতা!
ওগো বাউলনি, আমি জানি তোমার সাথে আমার কোনও সম্পর্ক থাকতে নেই, আমি জানি কানাইদার কাছে তুমি অঙ্গীকারবদ্ধ। তবুও এ কোন টানে আমায় নিরন্তর টানছো? কেন আমি ধ্রুবদাকে ফেলে রেখেই ছুটে চলেছি একা? কই মা তারার মুখ আমার মানস চোখে ভেসে উঠছে না কেন? কেন আমি তোমায় দেখতে পাই আমার পাশে? যদিবা তুমি আমার কাছে প্রকট হও, তাহলে সাথে কানাইদাকেও এনে হাজির করাও কেন?
গাড়ির দুলুনির সাথে মনের তলায় তলিয়ে থাকা কথাগুলো নড়াচড়া করতে থাকে। আমি যেন ভাবনার অতলে তলিয়ে যেতে থাকি। এজন্যই বুঝি সাথে একজন হলেও ভ্রমণসঙ্গী প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝি এই ভাবনার অতলে তলিয়ে যেতে হয় না। কথায় কথায় সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।
হঠাৎ করেই হট্টগোলে চিন্তাসূত্র ছিঁড়ে গেলো। জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি গুসকরা এসে হাজির। গতবার এই গুসকরাতেই সাথে পেয়েছিলাম প্রখ্যাত বাউল গোষ্ট গোপাল দাসের বাবাকে। ধ্রুবদা আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। নামটা যেন কী বলেছিলেন মনে নেই। তবে ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে তিনি একজন চমৎকার মানুষ। দুচোখ দিয়ে প্ল্যাটফর্মের সমস্ত মানুষদের একবার দেখে নিচ্ছি। সম্ভবতঃ গোষ্ঠর বাবাকেই মন খুঁজছে। গাড়ির দরজা দিয়ে একজন গৈরিক বসন পরিহিত মানুষ খমক হাতে আমার দিকেই এগিয়ে আসছেন। শ্মশ্রুমন্ডিত মুখে গোঁফের আড়ালে কি একটুকরো হাসির রেখা দেখলাম?
( চলবে....)
বইটি সম্পূর্ণপড়া।কৃষ্ণভামা আর কানাইদার সাথে নতুন করে যোগাযোগ সত্যিই আগ্রহ জাগাচ্ছে।
উত্তরমুছুনপোর্টালে মন্তব্য রাখার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ । তবে নাম জানালে ভালো লাগতো..
মুছুনপ্রদীপ দা'র "বাউল রাজা" উপন্যাসের প্রথম খণ্ডটি আপনার কাছে থাকতে পারে । এটি কিন্তু দ্বিতীয় খণ্ড , ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ হচ্ছে...
মুছুনপড়ে গেলাম ...আগ্রহ বাড়লো ...প্রদীপ দার কলমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম ....ধ্রুবতারা (ইন্দ্রনীল ব্যানার্জী)...ছত্তিসগড় ...
উত্তরমুছুনআপনাকে অশেষ ধন্যবাদ । ভালো থাকুন নিরন্তর ।
মুছুন