1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি সুনীতা | সাহিত্য চেতনা

কবি সুনীতা


কবি সুনীতা


কবি পরিচিতি : সুনীতা জন্মসূত্রে উদ্বাস্তু নন, তবে জন্ম বেলঘরিয়ার উদ্বাস্তু কলোনিতে। মা শ্রীমতী মমতা মিত্র, বাবা শ্রী গৌরাঙ্গ মিত্র। ছোটবেলায় ঠাকুমার কাছে রূপকথার গল্পের পরিবর্তে অদেখা ভিটেমাটির গল্প শুনে বড় হওয়া। শিশুমনে প্রশ্ন উঠত, ‘আমাগো আসল দ্যাশ তাহইলে কোনটা, আম্মা?’ – দেশ মানে তো আসলে সীমানা। মানুষই টানে, মানুষেরা মানে; কারা যেন সেই সীমানা পেরোতে চায় – সীমানা আর সীমানা পেরোনোর প্রচেষ্টার অন্তর্ভেদ হল কবিতা – যা কবির মানসিক যাপনের অবলম্বন। পেশায় অধ্যাপিকা সুনীতা পড়ান পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয় এ। লিখেছেন ‘সংশপ্তক’ কবিতা সংকলনে, বিভিন্ন ই-পত্রিকা ও মুদ্রিত পত্রিকায়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ডিলিরিয়াম পদ্য’  (সনেট পাবলিকেশন) প্রকাশিতব্য ।


• কবি সুনীতার একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ হল :


বিশ্লিষ্ট সমরে

        ***

তুমি আঁকো জলচিহ্ন

পাতাল

কৌণিক বাড়িঘর

যেখানে শুধু বরফ ছিল-

এত দুরুদুরু

বাঁশপাতারাও ছিল

অপাঠ্য হন্যমানতায়

সত্যি জানা ছিল না

যদি আড়াল দিয়ে ঘিরে রাখ

নির্বীজ সমর

ধিক্ তবে!


                                     


 চংক্রমণ 

    ***

তার পায়ের কাছে পড়ে আছে

একরাশ দুপুর; মেঘ গন্ধভার

ফজ়র এর সুর ধৈবত আশ্রয়ে প্রলম্বিত হয়

না দিন হয়, না রাত – ধৈবত প্রলম্বিত হয়।

পাথরে খোদিত নির্মোক সহজিয়া বাণী

অভেদ ফোটানো চক‌মকি, আগুন ভাঙা গুঁড়ো

পাথর পোড়া মিহিন ছাই উড়ে যায়

দূরে যায়, দূর-এ এ সরে যায়

ফড়িংরা ডানা ছোপালে রঙিন কাহিনিতে

বৃষ্টিভেজা ঘাসের মাঠ যৌবন ফিরে পায় ;

ওড়ার গান কথা খোঁজে, কিছু সুর হারিয়ে যেতে চায়

আলাপী খেয়ালের তান খোলে উর্দু জুবানীতে

ইশ্‌কিয়া লবজ্ ফিরে আসে সব : বিস্মৃত পাতা ওড়ে

যা কিছুর শুরু আছে, শেষ নেই –

তার রেশ ধৈবত আশ্রয়ে প্রলম্বিত হয়

আসে-যায়, দূরান্ত অবধি থেকে যায়


                      

মুন্ডুহীন ঘোড়া

       ***

এমনও সময় আসবে ভেবেছিলে কখনো!

তীক্ষ্ণতম শব্দশর বিঁধবে না 

এলোমেলো তারে, 

কাটবে না ছন্দের চলা 

গভীরতম খাদের ধারে 


মুন্ডুহীন ঘোড়া না ,

অন্য বেশে চর 

জানিও মন্দ্র নিষাদে 

রাত্রির গভীর জ্বর 


কাঁচপোকার হাঁটাহাঁটি

ছাদের তার ধরে, 

মৌমাছিরা বলেছিল 

এখানেই উল্কা ঝরে পড়ে 

হীরের বৃষ্টি রাখা  

প্রত্যেক পতনের সম্ভারে 

                        


পরিযায়ী

    ***

আমাদের কাছে গন্তব্যে পৌঁছনোর কোন মানচিত্র নেই

গত তিনদিন অবিশ্রান্ত হেঁটে চলেছি

অনন্ত-শায়িত, নির্জন, প্রশস্ত জাতীয় সড়ক ধরে।

ঘর-বাইরের সঞ্চয়টুকু নিঃশেষ করে নেমেছি পথে;

অস্থায়ী আবাস ছেড়ে, নিজের ঘরবাড়ি, গ্রামের দিকে

আত্মীয়-স্বজনদের কাছে, ঘরে ফেরা

কেবল ফেরার কোন মানচিত্র নেই।

একসাথে দল বেঁধে, কালো পীচ রাস্তা ধরে হেঁটে চলা ছাড়া

আর কোন কল্পচিত্র নেই হাতের কাছে ;

- ঘরে ফেরার।

                              


শত্রু

***

এক অসম দ্বন্দ্বে টেনে নামাই সময়কে,

জেনেশুনেই যে, হাত মিলিয়ে দিয়ে গেছে রশ্মিফলকে;

আঙুলগুলো সব বায়বীয় – মনে হয়, যেন বা নেই আসলে

সময়ের দিকে যে তর্জনী তুলব

এমনটা হতে পায় না।

ঝাউপাতা ঢেকে আছে অধরোষ্ঠ !

আমরা প্রাণপণে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে

বালি সরাতে থাকি

তর্জনী খুঁজে যাই

দুঃশাসন সময়ের মুখে চেপে ধরব বলে,

টেনে নামাব ক্লীবদ্যূত মঞ্চ থেকে-

আছড়ে ফেলব মাটিতে।

কিন্তু, তর্জনী খুঁজতে গিয়ে দেখছি তা কবে

রশ্মিফলক হয়ে গিয়ে আলোয় মিলিয়েছে।

হা ঈশ্বর ! এই ছিল মনে

তাই কি তুমি এত আলো বিলিয়েছ ?


                              

দেওয়াল লিখন 

         ***

ক্লান্ত আমি। দীর্ঘতর অর্ধাহারে বাঁচি

রোজ শুনি আমারই কথার প্রতিধ্বনি

চারপাশের দেওয়ালে লেখা হয়।

শূন্য জঠর অঘোষিত

            মূহুর্মুহু গোলাবর্ষণ।

আমার দারিদ্রগুলি একান্ত পরিসরের বাইরে এনে

শক্তিশালী চোখে সব নেড়েচেড়ে দ্যাখো;

আলাদা আলাদা বর্গে ভাগ করে রাখো

খামতিগুণ অনুযায়ী ।

বর্গকরণ শেষে বৈধ নিরন্ন হাত পাতি

তুমি অন্নপূর্ণা বেশে, হাসিমুখে

দু’টাকা কিলো দরে চাল বিলাও ।

           


                         

তিনমহলার ভাষাবিবরণী

               ***

খোসা ছাড়ানো দিন গড়িয়ে ফুটে ওঠে একটি আধারে

শূন্যে উৎক্ষিপ্ত বারি

ভারশূন্য নেমে আসে

চিন্তারাশি, মাটিতে, বিবশতা প্রমুখে।


যত ভাবি শিখবো বন্দনা-গীতির নতুন শব্দরাজি

গেঁথে গেঁথে সাজিয়ে তুলব তিন মহলা

রঙিন সার্সি, খোলা জানালা দরজা-

দেওয়াল আলো রঙা;


কে সে এক কারিগর জল ঢেলে 

দু’বেলা কাদামাটি মাখে তাল-তাল

নিখুঁত টিপে ছুঁড়ে দিয়ে পরপর তোলে দেওয়াল 

মাথায় পাতার ছাউনি


তিনমহলা রচার ভাষাবিবরণী বেতার এ শুনি

চোখের সামনে একে একে ছবি ভেসে ওঠে 

তিনবার সূর্য ডোবে আর ওঠে

করোটিতে, গলা খুশখুশে – তার দিলরুবাতে


                              

  নিমপাতা

      ***

বইয়ের পাতার ভাঁজে সযত্নে রাখা দু-একটি নিমপাতা !

সেসব দিনের, মনি-মুক্তোর মত অমলিন

উজ্জ্বল সবুজাভ ধরা বলয়ের দ্যুতি ছাড়িয়ে আরো কোথাও।

সময়ের দেহভাঁজ খুলে উন্মুক্ত হতে থাকে

এমন সব দিনের কুঁড়িকথা।

পিছিয়ে যেতে যেতে মুখের আস্বাদ বদলে যায়

              মধুক্ষরা দিনরাত ।

সে সব স্রোতে জাপটে একটিমাত্র নদী

               বয়ে গেছে বহুদূর

আজ ফিরে নদীর পাশে গিয়ে বসি –

এপিটাফ থেকে তেতো স্বাদের অক্ষর উড়তে থাকে

                            নিষ্পলক ।


                                 


ক ও খ  

   ***

ক’ তে কলমেরা সব খদ্যোৎ ! 

সাজছিল বেড়ালরা পরপর, চেটেচুটে সাফ করে 

গুটিয়ে নিচ্ছিল থাবার মধ্যে ধারালো নখর,

পায়ের ওপর পা তুলে রোদে পিঠ দিয়ে ঝলমলে করে নিচ্ছিল গায়ের কম্বল

যা সন্ধ্যে হতেই দ্যুতি ছড়াচ্ছিল ;

ওগুলো দীর্ঘ যতনে শব্দ জল অগ্নি নিরোধক করে নিয়েছিল নিজেদের,

আর ঠিকরানো আলোতে সূর্যাস্ত লাগোয়া অন্ধকারে আরশোলারা এগোচ্ছিল

সান্ধ্য জমায়েতের দিকে;

সেই খেলার শুরু, প্রথম প্রথম শুধু গায়ের কম্বল কায়দা করে মেলে ধরা, 

আরশোলা এগিয়ে যায় যথারীতি পর্বতের দিকে ;

গোটানো টোকায় তাকে যা শেখানো যায়

দীর্ঘতর অবসরের খেলা – একটু নখ দেখানো, 

সামান্য ফালাফালা



                   ‘খ’

সন্ধ্যের আরশোলারা রাত পর্যন্ত ওড়াউড়ি করে বুঝছিল এইটুকু 

আকাশের মত যা কিছু, বিস্তারটা তার একজীবনের থেকেও আরো অনেক বড়

পাড়ি দিতে হওয়া যেতে পারে পাখি

তেলচিটে অন্ধকার থেকে আরো অনেক বাকি ! 

আরশোলারা খেলছিল তবে জানছিল না বেড়াল কি বাঘ

কে কার মাসি ! 

খেলছিল তারা পাখি সাজা খেলা

বাঘ বা বেড়াল জাতীয়

নিশ্চুপ ঘাতকতা ডানায় আঁকছিল না 


                              

শপথ

 ***

আমরা যে পেরিয়ে যাই মরা ঘাসের প্রান্তর,

আমরা যে সশব্দে গাই গান, -

তাতে কি জাগে না প্রীতিশব্দ, কোন অন্তরের আহ্বান।


শুধুই কি ঘাসের দহন, শুধুই কি বর্ণিল ত্রাস ! 

আমাদের একত্রিত হাঁটাহাঁটি জলের রেখার ’পরে

সে কি একান্ত পরিচিত, নিছকই অভ্যাস ভরে – 


তবে আজ বলে গেলে যা, উঁচু করে নীল শিরা

তার দহনে গেছে বহু গাছপালা ছাই

তারই বিষাদে জাগে সিন্ধু, শোকতপ্ত গাঁথা গায় ।


ঐ নখরের আহ্বান তোলা ছিল যত্ন করে। 

এদিক ওদিক বিপুল সময়; ঘুরে দাঁড়ায় মুখোমুখি 

শপথ নিয়েছে জানাবেনা কখনো – ভ্রষ্ট সত্য কি




Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন