1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি বর্ণশ্রী বকসী | সাহিত্য চেতনা

কবি বর্ণশ্রী বকসী


কবি বর্ণশ্রী বকসী

কবি বর্ণশ্রী বকসী চাকরি সূত্রে আসামের বরাক উপত্যকায় বাস করেন ।সাহিত্য চর্চা তাঁর জীবনের অঙ্গ। কবিতা লেখার  পাশাপাশি সেই ছাত্রাবস্থা থেকেই প্রবন্ধ লেখেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল  এম.ফিলে বিদ্যাসাগরের অনুবাদ সাহিত্য এবং পি.এইচ. ডি -শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যভাষার চিহ্নতাত্ত্বিক অধ্যয়ন ।


প্রকাশিত গ্রন্থ :

১. রবীন্দ্রকাব্যের চলিষ্ণুতা (প্রবন্ধ গ্রন্থ)

২.শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যচর্চা (প্রবন্ধ গ্রন্থ)

৩.আমিও ওথেলো হবো (কাব্যগ্রন্থ)


কবি বর্ণশ্রী বকসী'র একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :


কুশল সংবাদ

      ***


চলে যাওয়া জীবনে পূর্ণিমার জোয়ার উথলায়

যে পথের শেষে মোহনা রয়েছে তার কিনারায়

ঝাপটে পরে অকুলান লহরিত ভালোবাসা ,

শূন্য বাতিদান ভরে ওঠে পবিত্র ঘৃতের আহুতিতে

মেয়েটি হেঁটে গেছে কোন এককালে মরু রাস্তা 

জলের তীব্র খোঁজ সাদা চুড়ি পরা হাতের তালুতে,

অনামিকা প্রকৃতির সন্নিধানে সেদিন ছিলো বদলের!

জহর ব্রত শেষে আত্মদান পর্ব সমাপ্ত

কুঞ্চিত কপালে গিয়ে মেশে পুরুষকার আর

তীব্র বেদনা মঞ্জরিত হয় অলিন্দ থেকে অলিন্দে

গুমড়ানির সুর ছড়িয়ে যায় নারীর অস্তিত্ব জুড়ে।



কণ্ঠি

***



গুরুর আখড়ায় দেখা দুজনের

হরির নাম সংকীর্তনের রাইজাগানিয়া

হৃদয়ের কদম্ব বিকশিত হওয়ার ছন্দে 

নয়নের তীর তীক্ষ্ণ ফলায় গেঁথে নেয়

মনের গভীরতা--

রাত বাড়ে আকুল মরমিয়া বাতাসে 

ভেসে যায় রসকলির চন্দন!

বঁধূয়া আঁখির পলকে নান্দীপাঠ,

সুনিবিড়  কুঞ্জতলে কণ্ঠিবদল লগ্ন 

ঘর বান্ধে বৈষ্ণব বৈষ্ণবী-

তুলসীর মালায় ধরা থাকে 

স্নিগ্ধ প্রণয়ের মধুর বোল

আর উত্তাল ঢেউয়ে নাউ ভাসানো ।



বিস্ময় 

 ***


দীর্ঘ হতে হতে কখন যেন হ্রস্ব হয়ে গেছি

দৌড়ের বিন্দু ক্রমশ আঁকড়ে ধরে পা,

অহল্যা শরীর জুড়ে শ্যাওলার পরত জমে

কৃষিজীবি সমাজের মেরুদণ্ড ছুঁয়ে থাকে 

দৃঢ়তর এক বোধের ইশারা !

দোতলার বাস শেষে একতলা ফিকে হয়

বেদের ঝাঁপি খুলে দেখে নেওয়া কিছুটা

বিশ্বাস আর ভয়ের মিলিত বিন্যাস ছড়ায় ,

পাংশুটে মুখের মাঝে উজ্জ্বল চোখে দ্যুতি

ভালোবাসা আশনাই গড়ে , দিলরুবার তারে

ঝংকৃত মিলন সংগীত !



রাতের অহমিকা

       ***                  


আকাশ আঙ্গিনায় খেলে জড়োয়ার সাজ

দূরের সীমানা খোঁজে পরিযায়ী জীবন যাপন

আমার স্বপ্ন ধরে নিশিথের আঁচল কিনারে!

চরম প্রাপ্তি শেষে চাঁদের মিনারে লাগে ঢেউ

বৃষ্টির পাতার ওষ্ঠচুম্বন শিউরানো লাজে

চলে ক্রমাগত মিলনের আবহ সংগীত।

তোর সাথে পার করি অমাবস্যা আর

রঙিন   মদহোসি ছোঁয়া কালো যবনিকা

বেদুইনের নীল প্লাস্টিক তাবুতে চলে

জীবনের অনুসন্ধানি তলাস,

তবু সে অহঙ্কারি রাগিণীর আলাপ......



ভাসমান

    ***


ভেসে যাওয়া বন্যার জলে

রামধনু রঙের ঢেউ 

হতাশ মানুষের মধ্যে জেগে 

থাকে কচুরিপানা আর মৃত মাছ-

ভাসমান নৌকায় অনন্ত যাত্রা 

মাছ কাটা ,বাসন মাজা ধুয়ে নেওয়া 

পাটাতনের কাঠ! বাচ্চাদের অবাক 

চোখের ভাষায় সময়ের ক্ষতচিহ্ন!


যে জীবন একদিন স্বপ্ন দেখতে দেখতে 

এঁকে যেতো ভ্রূণের বীজ 

উষ্ণতা বিহীন সম্পর্কে সন্তান এ সবই 

জীবনের আপ্তবাক্য-

বানভাসি অবস্থায় রিলিফের চাল ডাল 

আর আলু আসে বাউল সংসার 

কিনার ছেড়ে জলের মজলিসে জেগে থাকে।



সে

*** 


আজন্ম লালিত আদর্শ নিয়ে সে উঠে দাঁড়ায় 

বেঁকে যাওয়া কোমরের ভাজে গুছানো সংসার 

যে ছেলেটি দগ্ধানো রোদের দিনে হারিয়েছে পথ

সে খুঁজে আনে তারও হারানো ঠিকানা !

ভালোবাসা মাধবী কুঞ্জে একা জেগে থাকে

ভৈরবী বাতাসে ঝরে চূর্ণ ব্যথারা,

অনঙ্গ বিরহ ছিঁড়ে চলে আসে সে!

আকন্ঠ মহুল নেশা হৃৎপিন্ডে দামামা বাজায়

চৈতন্য জুড়ে চলে অস্হির প্রলয় নাচন 

দিন বদলের রেখা ক্ষীণ হয়ে আসে.........



অনন্ত

  ***


যদি মরে যাই ঝরে যাই

তৃণে ও মৃত্তিকায়

মিশে যেতে যেতে পঞ্চভূতে

বৃষ্টিভেজা জলে নবজাতক...


দূরে কোথাও আনন্দ উৎসব 

কিংবা কিছু নয়

বৃক্ষ শাখা ও পথ লিখে রাখবে

তুচ্ছ জীবনের মায়াময় বেদনা

আর বিশাল হৃদয়ের অবরুদ্ধ কথা,

ছুঁয়ে থাকে আঙুলে যে উষ্ণ আবেগ

তার থেকে শীতল বরফের আভাস 

মিলে যায় ঈশান ও নৈঋতে.

ক্ষত সেরে দাগ রয়ে যায়  অনন্তকাল অনন্তে.....



সমুদ্র নারী 

     ***


লোনা জলের ঢেউ ছুঁয়ে যায় উদ্ধত 

পায়ের পাতা হয়ে জানুদেশ, সামুদ্রিক হাওয়ার 

ভেসে যায় অষ্টাদশীর শরীরের বাঁধ,

দূর জলোয়া সীমান্ত দিয়ে জেলেদের

মাছ যাত্রা চলে!

মধুচন্দ্রিমায় উদাস মন 

সত্যবতীর ধীবর জন্ম খোঁজে

নোনতা আবেগে ভেসে যায় ক্রমে 

শশহুরে মেয়ের আধুনিক খোলস,

শঙ্খ দিয়ে সেজে ওঠে 

সমুদ্র নারীর দেহ

মাছুয়া পল্লিতে বাজে একটানা

শঙ্খ আর সমুদ্রের মিলিত কনসার্ট।



স্মাইলি 

   ***


এখন সময় বড়ই চিহ্নময়

হৃদয়ের ছোঁয়া শীতলতায়

মোড়া, সংকেত আর 

পোড়া বাঁশিতে নেই ! নেটের

মাঝে সবুজ আলোয় আছে

কপালের ত্রিবলীতে লেখা

বিষাদের ঘোর, ছবিতে নাকি

মোনালিসারা হাসে।

যুগে যুগে সব খুঁজতে চায়

রহস্য সেই ক্ষণিকের টানে

অস্তমিত সৌন্দর্য বেয়ে নামে

পথের  রেখার ঘোরানো বাঁক



উদাসীন পথিক 

       ***


শুধু হেঁটে যাই জীবনের চৌরাস্তায়

হাতে ধরা একতারায় অচেনা সুর

অসীম দূরত্ব কাঁপে দরদিয়া বাতাসে

উড়িয়ে দেওয়া স্বপ্ননীল ওড়নার আঁচল

মেঠো পথে বিভ্রম জাগে মনের কোণায়!

অসংলগ্ন রেকাবিতে সেজে ওঠে

আরাধনার ফুল মালা,

মালিনীর সুখে লেগে থাকে পরাগ

সেই মাধুরীর নয়ন অঞ্জন মুছে দেই

বৈরাগ্যের একাকি যাত্রায় ছুঁয়ে থাকে

পান্হসংগীত আর বিস্ময়ের ঘোর

তবু উদাসীন রাজপথই সখা......



ওরা  

 ***


ওদের বাড়িতে জীবনের নব গান

ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া পাঁশুটে শরীর জানে

কটির ঘুনসি তাবিজের সমারোহ

জীবনটাকে আটকে রাখার মানে।

ওদের মুনিয়া কথা বলে আধো আধো 

দুয়ারে বাঁধা চিন্তার জাঁতাকলে,

ওদের নীরব চোখের ভাষায় লেখা 

অযুতবর্ষী লড়াইয়ের ইতিকথা।

ওরা সেইসব ব্রাত্য জনেরা তাই

ওদের যুদ্ধ কানাগলির পথে,

পাশে দাঁড়াবার ক্ষমতা রাখা তো দূর

ওরা আমাদের কাছে দূর ছাই দূর!



দর্শন

 ***


একটা নীল রঙের স্বপ্নকে বোতলে বন্ধ করে নিয়ে  এগিয়ে যাচ্ছিল এক পথিক তার হাত থেকে কখনযেন ফসকে গিয়ে ছড়িয়ে পড়লো মৃত্তিকায়!তারপর বৃষ্টির স্ফটিক ধারা তা ধুয়ে নিয়ে গেল পৃথিবীর শেষ প্রান্তে আর তার থেকে জন্ম নিলো মিথের অলৌকিক ও লৌকিক মিশ্রিত এক যাদু বাস্তবতার।ক্রমে পরিবর্তনশীল জগতে যুক্তি - তর্কের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এক ছিন্ন চেতনার প্রসব করলো।হয়তো দর্শনের বেলাভূমি ছুঁয়ে জীবন অন্বেষণ .....


মা

***


মা মানে বড় টিপ আর মায়াবী চোখের তারা

জাপটে ধরা উষ্ণতামাখা মোমের আলো

ভোরের শিউলি তোলার আনন্দ  -

মিষ্টি সুরে রবীন্দ্রসঙ্গীতের খেয়ায় ভেসে যাওয়া। 


মা মানে হলুদ লাগা হাতে আদর করে যাওয়া 

হাজার কাজের মধ্যে বইয়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে 

খাওয়া ভুলে ডুবে থাকা,

জ্বর আর অসুখে রাত জাগা সন্তান স্নেহে। 


মা মানে এক আকাশ তারার ঝিলমিল

কষ্ট চেপে হেসে ভরিয়ে রাখা 

কবিতা যাপন, কবিতা শুনিয়ে তৈরির আবহ

মা মানে লুকিয়ে কাঁদা, চাপা দুঃখ বুকে কর্কট 

রোগশয্যা, বাঁচতে চাওয়া সন্তানদের আঁকড়ে 


আমার জীবন জুড়ে লেপ্টানো ভালবাসা 

আশ্রয়, আকুল আকাশে দুর্গারূপে রক্ষাকারী



Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন