কবি-সাহিত্যিক মলয় রায়চৌধুরী
কবি-সাহিত্যিক মলয় রায়চৌধুরী |
মলয় রায়ের রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য সাহিত্যের সনাতন ধারা অনুশাসনের বিরুদ্ধাচারণ। এ বিষয়ে স্বপ্ন পত্রিকায় লিখিত প্রবন্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান উল্লেখ করেছেন, 'সাহিত্যের সনাতন অনুশাসনগুলির বিরুদ্ধে মলয় রায়চৌধুরীর বিদ্রোহ তার রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য'। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাশের অধিক। তার ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ৪টি উপন্যাস, ১০টি সমালোচনা গ্রন্থ এবং কয়েকটি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েঝে। উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে শয়তানের মুখ, জখম, ডুব জলে যেটুকু প্রশ্বাস,নামগন্ধ চিৎকার সমগ্র,কৌণপের লুচিমাংস অ্যালেন গিন্সবার্গের ক্যাডিশ গ্রন্থের অনুবাদ প্রভৃতি অন্যতম । ২০০৩ সালে অনুবাদ সাহিত্যে তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
১৯৬১ সালে দাদা সমীর রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং হারাধন ধাড়ার (দেবী রায়) সঙ্গে হাংরি আন্দোলন আরম্ভ করে আবির্ভাবেই সাড়া ফেলে দেন। তার সাংগঠনিক দক্ষতায় প্রায় চল্লিশজন কবি, লেখক ও চিত্রশিল্পী এই আন্দোলনে যোগ দেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিনয় মজুমদার, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, সুবিমল বসাক, বাসুদেব দাশগুপ্ত, ফাল্গুনী রায়, অনিল করঞ্জাই, রবীন্দ্র গুহ প্রমুখ। এই আন্দোলনের মুখপত্র হিসাবে এক পাতার বুলেটিন প্রকাশ করা হতো। ১০৮টি বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছিল, যার মাত্র কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি এবং ঢাকার বাংলা একাডেমিতে সংরক্ষণ করা গেছে। ১৯৬৫ পর্যন্ত এই আন্দোলন পুরোদমে চলেছিল; বিখ্যাত হাংরি মামলার পর তা ভেঙে যায়। আন্দোলনটি নিয়ে মলয় রায়চৌধুরী হাংরি কিংবদন্তি নামে একটি গ্রন্থে আন্দোলনের ইতিহাস তত্ব ও তথ্য নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। পরবর্তীকালে প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় নথিপত্র, আদালতে সাক্ষ্য, আদালতের রায় এবং হাংরি আন্দোলনকারীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রকাশিত হয় হাংরি আন্দোলন গ্রন্থ। মলয় রায়চৌধুরী তিরিশ বছর যাবৎ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সেগুলি একত্রিত করে প্রকাশ করেছেন প্রতিভাস প্রকাশনী।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি.দে "মলয় রায়চৌধুরী ও হাংরি আন্দোলন" বিষয়ে ৩৫০ পৃষ্ঠার গবেষণাপত্রের জন্য ডক্টরেট লাভ করেন । ২০১৩ সালে হাংরি আন্দোলন নিয়ে আই.আই.টি খড়গপুর থেকে ডক্টরেট করেছেন অধ্যাপক রিমা ভট্টাচার্য। ১৯৯৭ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে ডক্টরেট করেছেন অধ্যাপক উদয়নারায়ণ বর্মা। দেবায়ুধ চট্টোপাধ্যায় হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় সম্পর্কে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এমফিল করেছেন। রূপসা দাস ২০১৮ সালে মলয় রায়চৌধুরী সম্পর্কে গবেষণা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ড্যানিয়েলা ক্যাপেলো হিডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেছেন।
১৯৬৪ সালে হাংরি বুলেটিনে প্রকাশিত প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতাটির জন্য মলয় অশ্লীলতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এবং ৩৫ মাস ব্যাপী কোর্ট কেস চলে । কলকাতার নিম্ন আদালতে সাজা ঘোষণা হলেও, ১৯৬৭ সালে উচ্চ আদালতে অভিযোগমুক্ত হন । মলায়ের পক্ষে সাক্ষী ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তরুণ সান্যাল, জ্যোতির্ময় দত্ত এবং সত্রাজিত দত্ত । মলয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষী ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শৈলেশ্বর ঘোষ, সুভাষ ঘোষ, পবিত্র বল্লভ, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এবং উৎপলকুমার বসু । মকদ্দমা চলাকালীন মলয়ের খ্যাতি আমেরিকা ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ভাষায় এই কবিতাটি অনুদিত হয় । ৪৫ বছর পরও কবিতাটি নিয়ে বিতর্ক কবিতাটিকে জীবন্ত রেখেছে, এবং এম ফিল ও পি এইচ ডি গবেষণার বিষয়বস্তু হয়েছে । গবেষণা করেছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক কুমারবিষ্ণু দে ও রবীন্দ্রভারতী থেকে অধ্যাপিকা স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় । ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত 'Modern And Postmodern Poetry Of The Millenium' সংকলনে দক্ষিণ এশিয়া থেকে অন্তর্ভুক্ত এইটিই একমাত্র কবিতা বলে ভূমিকায় জানিয়েছেন সম্পাদক জেরোম রোদেনবার্গ। হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে The Hungryalists নামে ২০১৮ সালে একটি বই লিখেছেন মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য চৌধুরী । মলয় রায়চৌধুরীর 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' কবিতাটিকে অধ্যাপক শীতল চৌধুরী বলেছেন এটি বাংলা সাহিত্যে একটি সার্থক ও গুরুত্বপূর্ণ কবিতা।
মলয় রায়চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ শয়তানের মুখ ১৯৬৩ সালে কৃত্তিবাস প্রকাশনী ধেকে প্রকাশিত হয়েছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে গ্রন্থটিিকে একটি জলবিভাজক বলে মনে করা হয়। মলয় তার প্রতিটি কাব্যগ্রন্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার কবিতার জনকরূপে বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ স্হান করে নিয়েছেন। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যের সনাতন ঐতিহ্যকে, নিয়মানুবর্তিতাকে, আমূল নাড়া দিয়েছিল। কবিতার ভাষায়, ছন্দে, অলংকারে, চিত্রকল্পে তুমূল ভাংচুর পাঠকের অভ্যস্ত চোখ ও কানকে বিব্রত করেছিল। যৌনতার সংগে তিনি এনেছিলেন ব্যঙ্গ, আত্মপরিহাস ও অসহায় মানুষের নিষ্ফলতার যন্ত্রণা। উপন্যাস ও ছোটগল্পে তিনি নিজস্ব গদ্য সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রবন্ধকে আপোষহীন বলে মনে করা হয়। তার নাটক তিনটিকে বলা হয়েছে উত্তরাধুনিক, যদিও সেগুলি হাংরি আন্দোলনের সময়ে রচিত। তার প্রবন্ধ ও পোলেমিক্সগুলি থেকে স্পষ্ট হয় কেন তাকে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার জনক বলা হয়। মলয় যাঁদের কাজ অনুবাদ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন– উইলিয়াম ব্লেক, জাঁ ককতো, সালভাদোর দালি, পল গঁগা, ব্লাইজি সঁদরা, ত্রিস্তান জারা, অ্যালেন গিন্সবার্গ, লরেন্স ফেরলিংঘেট্টি, পাবলো নেরুদা এবং ফেদেরিকো গারথিয়া লোরকা । মলয় গ্রন্থে সম্পাদক মুর্শিদ এ. এম. ভূমিকায় জানিয়েছেন যে নব্বুই দশকের পর রচিত তার সাহিত্যকর্মকে বলা হয়েছে অধুনান্তিক।
২০১২ সালে তিনি প্রথম গোয়েন্দা উপন্যাস রচনা আরম্ভ করেন। তার সৃষ্ট মহিলা ডিটেকটিভ রিমা খান (নোংরা পরি) একজন ভিন্ন প্রকৃতির চরিত্র-বৈশিষ্ট্যসহ উপস্থাপিত। বর্তমান যুগের পুলিশ কর্ম-কর্তাদের মতো রিমা খান নির্দয় ও নির্মম। মলয় রায়চৌধুরীর গোয়েন্দা উপন্যাসটির নাম ডিটেকটিভ নোংরা পরির কঙ্কাল প্রেমিক ।
মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা, গল্প ও উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য হল যে সেগুলো মুক্ত-সূচনা ও মুক্ত-সমাপ্তি দ্বারা চিহ্নিত; এবং তা বহুমাত্রিক আঠ্গিক-ভাঙা, ঘটমান, যুক্তির কেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত, কেন্দ্রাতিক, অফুরন্ত অর্থময়, সংকরায়িত, রাইজোম্যাটিক. অপরিমেয়, ভঙ্গুর বাকপ্রতিমায় আপ্লুত, একাধিক বার্তাবহ এবং ক্যানন-অতিক্রমী । উত্তরপ্রবাসী পত্রিকার হাংরি আন্দোলন সংখ্যায় অধ্যাপক নন্দলাল শর্মা জানিয়েছেন যে, স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্পবস্তু বা 'আর্ট ফর আর্ট সেক'-এর ঔপনিবেশিক তত্বকে বর্জন করার কথা বলেছেন মলয়, যা বাংলা সাহিত্যে তার পূর্বে কেউ বলেননি ।
শ্রীজিত মুখোপাধ্যায় বাইশে শ্রাবণ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রটিতে একজন হাংরি আন্দোলনকারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। মলয়ের প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতাটি নিয়ে মৃগাঙ্কশেখর ও হ্যাশ তন্ময় একটি ছোটো চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন যেটি বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে।
হাংরি কিংবদন্তি • মলয় রায়চৌধুরী |
কবি মলয় রায়চৌধুরীর একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা প্রকাশ করা হল :
মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো
***
মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো
মুখ দেখে ভালোবেসে বলেছিলে, "চলুন পালাই"
ভিতু বলে সাহস যোগাতে পারিনি সেই দিন, তাই
নিজের মাথা কেটে পাঠালুম, আজকে ভ্যালেনটাইনের দিন
ভালো করে গিফ্টপ্যাক করা আছে, "ভালোবাসি" লেখা কার্ডসহ
সব পাবে যা-যা চেয়েছিলে, ঘাম-লালা-অশ্রুজল, ফাটাফুটো ঠোঁট
তুমি ঝড় তুলেছিলে, বিদ্যুৎ খেলিয়েছিলে, জাহাঝ ডুবিয়েছিলে
তার সব চিহ্ণ পাবে কাটা মাথাটায়, চুলে শ্যাম্পু করে পাঠিয়েছি
উলঙ্গ দেখার আতঙ্কে ভুগতে হবে না
গৌড়ীয় লবণাক্ত লিঙ্গ দেখবার কোনো স্কোপ আর নেই
চোখ খোলা আছে, তোমাকে দেখার জন্য সবসময়, আইড্রপ দিও
গিফ্টপ্যাক আলতো করে খুলো, মুখ হাঁ-করাই আছে
আমার পছন্দের ননভেজ, সন্ধ্যায় সিঙ্গল মল্ট, খাওয়াতে ভুলো না
মাথাকে কোলেতে রেখে কথা বোলো, গিটার বাজিয়ে গান গেও
ছ'মাস অন্তর ফেশিয়াল করিয়ে দিও, চন্দনের পাউডার মাখিও
ভোর বেলা উঠে আর ঘুমোতে যাবার আগে চুমু খেও ঠোঁটে
রাত হলে দু'চোখের পাতা বন্ধ করে দিও, জানো তো আলোতে ঘুমোতে পারি না
কানে কানে বোলো আজও উন্মাদের মতো ভালোবাসো
মাথা কেটে পাঠালুম, প্রাপ্তি জানিও, মোবাইল নং কার্ডে লেখা আছে
অংশুমালী, তোর ওই হরপ্পার লিপি উদ্ধার
***
কী গণিত কী গণিত মাথা ঝাঁঝা করে তোকে দেখে
ঝুঁকে আছিস টেবিলের ওপরে আলফা গামা পাই ফাই
কস থিটা জেড মাইনাস এক্স ইনটু আর কিছু নাই
অনন্তে রয়েছে বটে ধূমকেতুর জলে তোর আলোময় মুখ
প্রতিবিম্ব ঠিকরে এসে ঝরে যাচ্ছে রকেটের ফুলঝুরি জ্বেলে
কী জ্যামিতি কী জ্যামিতি ওরে ওরে ইউক্লিডিনি কবি
নিঃশ্বাসের ভাপ দিয়ে লিখছিস মঙ্গল থেকে অমঙ্গল
মোটেই আলাদা নয় কী রে বাবা ত্রিকোণমিতির জটিলতা
মারো গুলি প্রেম-ফেম, নাঃ, ফেমকে গুলি নয়, ওটার জন্যই
ঘামের ফসফরাস ওড়াচ্ছিস ব্রহ্মাণ্ড নিখিলে গুণ ভাগ যোগ
আর নিশ্ছিদ্র বিয়োগে প্রবলেম বলে কিছু নেই সবই সমাধান
জাস্ট তুমি পিক-আপ করে নাও কোন প্রবলেমটাকে
সবচেয়ে কঠিন আর সমস্যাতীত বলে মনে হয়, ব্যাস
ঝুঁকে পড়ো খোলা চুল লিপ্সটিকহীন হাসি কপালেতে ভাঁজ
গ্যাজেটের গর্ভ চিরে তুলে নিবি হরপ্পা-সিলের সেই বার্তাখানা
হাজার বছর আগে তোর সে-পুরুষ প্রেমপত্র লিখে রেখে গেছে
হরপ্পার লিপি দিয়ে ; এখন উদ্ধার তোকে করতে হবেই
অবন্তিকা অংশুমালী, পড় পড়, পড়ে বল ঠিক কী লিখেছিলুম তোকে–
অমরত্ব অমরত্ব ! অবন্তিকা অংশুমালী, বাদবাকি সবকিছু ভুলে গিয়ে
আমার চিঠির বার্তা তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে তুই আমাকে জানাস
নেভো মোম নেভো
উৎসর্গ : লেডি ম্যাকবেথ
***
আপনি আমার প্রিয় নারী, যদিও শুধুই শুনেছি ঘুমন্ত কন্ঠের কালো
ফিল্মে দেখেছি, আগুন নগ্নিকা, বুক দুটো অতো ছোটো কেন
দুঃখ হয় নাকি ? আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল বুক ছোটো বলে
হত্যা করতে গিয়ে কিছুটা ঝুঁকলেন, নয়তো বুক উঁচু করে বলতেন
যা করি তা কারি, প্রেত তোর তাতে কী, তুই কি ঘুমের ইন্দ্রজালে
শুধু বুক খুঁজে বেড়াস নাকি ! সত্যিই তাই, আপনার ঘুমে ঢুকে
তাছাড়া কি খুঁজবো বলুন ? ফেরার ট্যাক্সিভাড়া ? গ্যাসের রসিদ ?
যা ইচ্ছে করুন আপনি, জেনে নেবো, চলন্ত গাছেরা বলে দেবে,
না জানলেও আকাশ তো ভেঙে পড়ছে না ; আপনি আমার প্রিয় নারী,
মন খারাপ করে দিলেন আজকে বৃষ্টির দিনে, ছাতাও আনিনি,
আপনার পাশ দিয়ে যেতে-যেতে ছাতার আড়াল থেকে আপনার
ছোট্টো দুটো বুক জরিপ করে নিতে পারি, ব্র্যাঙ্কোর প্রেত আমি,
ছোরা দুটো নিলেন দুহাতে তুলে, মনে হয়েছিল বুকের গরবিনি, হত্যা
নেহাতই অজুহাত, কেউ তো আর মনে রাখবে না, উনিও জানেন
তোমাকে দেখেই চুমু খেতে ইচ্ছে করেছিল, না না, হাঁ-মুখের ঠোঁটে নয়
পাছার দু-ঠোঁটে, আহা কি মসৃণ হতো রাজরানি হওয়া, যেন ইস্কাপন
নষ্ট করে নেচে উঠছে বিদ্যুতের খ্যাতি, যার অস্তিত্বে আমি বিশ্বাস করি না
খুলে বলি আপনাকে, আমি কীরকমভাবে নারীকে খুঁজি তা বলছি শুনুন,
যেমন ঘোড়দৌড়ের জুয়াড়িরা ঘোড়ার রেসবই খুঁটে খুঁটে পড়ে
আমার ভেতর সেরকমই পোষা আছে কয়েকটা অসুখ
বুঝলেন, যখন প্রথম পড়ি, প্রেমে পড়ে গিসলুম নগ্ন আপনার !
লেডি ম্যাকবেথ ! আহা কি শঙ্খিনী নারী, কি ডাগর রক্তময়ী চোখ
ঘুমন্ত হেঁটে যাচ্ছো মৃত্যুর মসলিনে সম্পূর্ণ পোশাকহীন, কোনো খেয়াল নেই,
চেয়েছি জড়িয়ে ধরতে, বলতে চেয়েছি, লেডি, লেডি, নগ্ন পশ্চিমে
একটা চুমু শেষবার দাও, পুরস্কার নিয়ে ডাইনিরা দাঁড়িয়ে রয়েছে
রক্তাক্ত ছোরার সঙ্গে কথা বলো, বুকের নির্দয় ওঠা-নামা, লেডি
ম্যাকবেথ, ওই যিনি ছোটো বুকে মনটা খারাপ করে ফিরছেন বাড়ি
ওনাকে উৎসাহিত করো, বড়ো, আরবের সমস্ত আতর ধুতে পারবে না
হত্যার মিষ্টি গন্ধ, যেমনই লোক হোক সে তো তার নিজস্ব দৈত্যের সৃষ্টি,
তেমন নারীও, আত্মজীবনীতে লিখবেন কিন্তু প্রথম হস্তমৈথুনের স্বাহা
ক্লিটোরিসে অঙ্গুলিবাজনার মৃদু উগরে-তোলা ঝর্ণাঝংকার
আপনার নগ্নতার ব্যক্তিগত ছন্দ লেডি ম্যাকবেথের মতো হাঁটছেন
কলকাতার রাস্তা দিয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ, আমাকে চিনতে পেরেছেন ?
আমি ব্যাঙ্কোর প্রেত, প্রতিটি হত্যাদৃশ্যে উপস্হিত থেকে
বুকের বর্তুলতা মাপি, যবে থেকে স্কুলপাঠ্য বইয়ে দুরূহ লেগেছিল
লেডি ম্যাকবেথের লোভ সিংহাসনে রাজমহিষীর মতো উঁচু বুকে
বসে আছো, স্কুল-ফেরত সম্পূর্ণ উলঙ্গ তুমি হাঁটছো পাশাপাশি
ঘুমন্তকে নয়, ঘুমকে খুন করেছিলে তুমি, চিৎকার করছিলে
'কে জানতো বুড়ো লোকটার গায়ে এতো রক্ত এতো রক্ত ছিল !'
এসবই আপনার নারীত্বের রক্ত, ছোট্টো দুটো বুকের দুঃখের
ভাববেন না বেশি, যৌবন ফুরোবার সঙ্গে এই দুঃখ চলে যাবে
তখন দেখবেন ক্লিটোরিস সাড়া দিচ্ছে না, রসশাস্ত্রহীন দেহ
আদিরস প্রথমে লোপাট, ঘুমন্ত হাঁটবার আহ্লাদ নামছে দুঃস্বপ্নে
আপনার ছোট্টো বুক ছোট্টোই থেকে যাবে যতোই উদার ওন
ভিখিরি দেখলেই বটুয়াতে কয়েনের ওজন কমান, লেডি ম্যাকবেথ
ছাড়বে না, উচ্চাশার কি দুর্দশা, হাতে রক্ত, নেভো মোম নেভো
কপিরাইট
***
অবন্তিকা, অতি-নারী, অধুনান্তিকা
পঞ্চান্ন বছর আগে চৈত্রের কোনারকে
লোডশেডিঙের রাতে হোটেলের ছাদে
ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট রেখে বলেছিলি
চুমু প্রিন্ট করে দিচ্ছি সারা নোনা গায়ে
ম্যাজেন্টা-গোলাপি ভিজে লিপ্সটিকে
গুনেগুনে একশোটা, লিমিটেড এডিশান
কপিরাইট উল্লঙ্ঘন করলে চলবে না ।
অবন্তিকা, সাংবাদিকা, অধুনান্তিকা
এ-চুক্তি উভয়েরই ক্ষেত্রে লাগু ছিল
কিন্তু দুজনেই এর-তার কাছে থেকে
শুনেছি কখন কবে কার সাথে শুয়ে
ভেঙেছি ভঙ্গুর চুক্তি কেননা মজাটা
ঠোঁটের ফাইনপ্রিন্টে লিখেছিলি তুই ।
প্রজাপতি প্রজন্মের নারী তুই অবন্তিকা
***
রবীন্দ্রনাথ, এটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না।
অবন্তিকা বলছিল আপনি প্রতিদিন
ওকে রুকে নিচ্ছেন, আপনাকে সাবান
মাখাবার জন্য, বুড়ো হয়েছেন বলে
আপনি নাকি একা বাথরুমে যেতে
ভয় পান, আর হাতও পৌঁছোয় না
দেহের সর্বত্র, চুলে শ্যাম্পু-ট্যাম্পু করা--
পোশাক খুললে, আসঙ্গ-উন্মুখ নীল
প্রজাপতি ওড়ে ওরই শরীর থেকে
আর তারা আপনার লেখা গান গায় !
এটা আপনি কী করছেন ? আপনার
প্রেমিকারা বুড়ি থুতথুড়ি বলে কেন
আমার প্রেমিকাটিকে ফাঁসাতে চাইছেন !
অন্তরটনিক
***
বিড়ি ফুঁকিস অবন্তিকা চুমুতে শ্রমের স্বাদ পাই
বাংলা টানিস অবন্তিকা নিঃশ্বাসে ঘুমের গন্ধ পাই
গুটকা খাস অবন্তিকা জিভেতে রক্তের ছোঁয়া পাই
মিছিলে যাস অবন্তিকা ঘামে তোর দিবাস্বপ্ন পাই
পপির ফুল
***
বোঁটায় তোর গোলাপ রঙ অবন্তিকা
শরীরে তোর সবুজ ঢাকা অবন্তিকা
আঁচড় দিই আঠা বেরোয় অবন্তিকা
চাটতে দিস নেশায় পায় অবন্তিকা
টাটিয়ে যাস পেট খসাস অবন্তিকা
পরমাপ্রকৃতি
***
মেঘের রঙ দিয়ে ছুঁয়ে দিস অবন্তিকা
চামড়া বাঘের ডোরা ধরে
হাওয়ার রেশম দিয়ে চুল আঁচড়ে দিস অবন্তিকা
মাথা বেয়ে ওঠে বুনো মহিষের শিং
ঝড়ের মস্তি দিয়ে পাউডার মাখিয়ে দিস অবন্তিকা
গায়ে ফোটে গোখরোর আঁশ
হরিণের নাচ দিয়ে কাতুকুতু দিস অবন্তিকা
ঈগল পাখির ডানা পাই
রোদের আঁশ দিয়ে নখ কেটে দিস অবন্তিকা
গজায় নেকড়ের থাবা হাতে-পায়ে
নদীর ঢেউ দিয়ে ঠোঁটে চুমু খাস অবন্তিকা
কাঁধে পাই রাবণের জ্ঞানীগুণী মাথা
বৃষ্টির ঝাপটা দিয়ে জড়িয়ে ধরিস তুই অবন্তিকা
হুইস্কির বরফ হয়ে যাই
গানের সুর দিয়ে চান করিয়ে দিস অবন্তিকা
ডুবে যেতে থাকি চোরা ঘূর্ণির টানে
আমি তো কেউ নই
***
আমি তো কেউ নই, তুমি তো বিখ্যাত
কেউ না হওয়াও কি খ্যাতির প্রতিচ্ছায়া নয় ?
তুমি তো জ্যোতির্ময়ী, তুমি তো অবিনশ্বরী
আমি তো কেউ নই, তুমি তো পরমাপ্রকৃতি
আমি প্রকৃতির অংশ, যৎসামান্য, বলা যায়
উষ্ণতম মলয়বাতাস, আমি কার্তিকেয় যোদ্ধা
অথচ কেউ নই । কেউ না হওয়ায় যে আনন্দ
তা তুমি বুঝবে না আমি তো আমিও নই
কেউ নই কিছু নই অস্তিত্ববিহীন তুমি ছাড়া
তোমার হাত ধরে অন্ধ আমি ইতিহাসে
তোমার সঙ্গে থেকে যেতে চাই
বুড়ি
***
এই বুড়ি আমার দিদিমার বয়সী
চুল পেকে গেছে, কয়েকটা দাঁত
নেই, দিদিমার মতন শুয়ে থাকে
কবে শেষ হয়ে গেছে পুজো-পাঁজি
ক্যালেণ্ডারে ছবি-আঁকা তিথি
দিদিমার মতো এরও প্রতি রাতে
ঘুম পায় কিন্তু আসে না, স্বপ্নে
কাদের সঙ্গে কথা বলে, হাসে
চোখে ছানি তবু ইলিশের কাঁটা
বেছে ঘণ্টাখানেকে মজে খায়
দিদিমার মতো বলেছে, মরবে
যখন, চুড়ি-নাকছাবি খুলে নিয়ে
তারপরে আলতা-সিঁদুর দিয়ে
পাঠাতে ইনসিনেটরে, এই বুড়ি
চল্লিশ বছর হলো সিঁদুর পরে না
পঞ্চাশ বছর হলো শাঁখাও পরেনি
দামি দামি শাড়ি বিলিয়ে দিয়েছে
দিদিমা যেমন তপ্ত ইশারায়
দাদুকে টেনে নিয়ে যেতো রোজ
এও আমাকে বলে, এবার ঘুমোও
আর রাত জাগা স্বাস্থ্যের পক্ষে
খারাপ, এই বুড়ি যে আমার বউ
বিছানায় শুয়ে বলে, কাউকে নয়
কাউকে দিও না খবর, কারুক্কে নয়
একথাটা আমারই, কাউকে নয়
কারুক্কে বোলো না মরে গেছি ।
তানিয়া অবন্তিকা চক্রবর্তীর জন্য প্রেমের কবিতা
***
কী নেই তোর ? মরুভূমির ওপরে আকাশে পাখিদের তরল জ্যামিতি
প্রতিবার -- বিপদের ঝুঁকি -- সম্ভাবনা -- বিরোধ -- সমাক্ষরেখা --
আমি তো লাল-ল্যাঙোট সাধু, আমি বাস্তব, তুই বাস্তবিকা
কুলু-মানালির পাইন থেকে ঝরাচ্ছিলিস সবুজ ছুঁচের গোছা
ক্ষান্তি -- পূর্বপক্ষ -- ধাঁধা -- গূঢ়গুণ -- শিল্পবর্ম -- মেজাজ -- সন্দেহ
আমি তো ছায়াফোঁকা সাধু, তুই যতোদিন আছিস মরব না
এক মিনিট দাঁড়া : "কোনো কিছু প্রিয় নয়", মানে ?
জানি রে জানি, অঙ্কুরের বোধ তার বীজে, অয়ি স্পন্দনসমঙ্গ
আমি তো সীমাভাঙুনে সাধু, তোর রহস্য দখল করার দাম চুকিয়েছি
চাপাতি দিয়ে কেটে যেসব মেঘ নামিয়েছিলিস, অক্ষরগুলোর শ্বাস
বানান ভুলে যায়, ফি-সেকেণ্ডে নাড়ি-ঘাতের হার বাড়িয়ে দিস
আমি তো বুনোপ্রেমিক সাধু, আমার প্রেম বদনাম করবে তোকে
প্রাণচঞ্চল বাদামি পাথরের কাঁপুনি, অণুরণন, অয়ি প্ররোচনাময়ী
অ্যানার্কি -- হাই ভোল্টেজ উল্কি -- ক্রিয়া না য়িশেষ্য বুঝতে পারি না
আমি তো মাটিতে-পোঁতা সাধু, তুই খুঁড়ে তুলবি বিপদে পড়বি
আমি ভাটিয়ালি গেয়ে বেড়াই, নৌকোর দাঁড় বাইনি কখনও
আসলে গান তো নৌকোর, দাঁড়ের, নদীর স্রোতের, ভাটার টানের
আমি তো তোকে-চাই মার্কা সাধু, বাক্যদের উত্তেজিত কোন ম্যাজিকে করিস
এক মিনিট দাঁড়া : "কাউকে ভালোবাসিনি আমি", মানে ?
অয়ি ফাঁদগর্ভা, যখন কাঁটাগাছের দিকে জিরাফের জিভ নিয়ে যাস
আমি তো ভাঙাগড়ার সাধু, পথ গুটিয়ে পাথর করে দিস
পৃথিবী থেকে ছবি খুঁটে-খুঁটে নিজের ব্র্যাণ্ডের ছাপছোপ দিস
টের পাই কালো বিশ্ববীক্ষায় আমার নামের স্হায়িত্ব নেই
আমি তো সাধু-প্রেমিক তোর, পৃথিবীর নাম দিসনি কেন ?
অয়ি শব্দমোহিনী, না পড়েই উল্টে যাচ্ছি পাতার পর পাতা
অস্হির কৌতূহলে এই কবিতাটা এগোচ্ছে আর তোকে শুনতে পাচ্ছে
আমি তো বাকমোহন সাধু, লিখিসনি তো প্রেম কেন ভিজে এবং গরম
আসলে জীবন নষ্ট করার কায়দা সকলে জানে না,
ঘুম থেকে উঠে হাই তুলিস আর তোর গোলাপি আলজিভ দেখি
আমি তো খুনির খুনি সাধু, যথেচ্ছ খরচ করিস শব্দ -রজঃ - টাকা
ম্যাডক্স স্কোয়ারের কুঁজো পুরুতের ঢঙে তোর আরতি করি
তোর ইঙ্গুজের বেদনা যন্ত্রণা ব্যথা কষ্ট প্যানিক দিয়ে
আমি তো হাজারঠ্যাং সাধু, গাছেদের ঝোড়ো চিৎকার
এক মিনিট দাঁড়া : "ব্যথা ছাড়া জীবনে আর কিছু নেই", মানে ?
তোর কথার হাঁফ-আকূলতা আমার হৃদরোগের কারণ
আমি তো ২৪x৭ সাধু, ফলো করি ফলো করি ফলো করি
মৃত্যু মানেই তো প্রতিশোধ, মানুষের হোক বা প্রেমের
দেখেছিস তো, যতো রাগি ঝড়, ততো সে দেশদ্রোহী
আমি তো ল্যাঙোটহীন সাধু, দেখি অনুভবকে আঙ্গিক দিচ্ছিস
সঙ্গীত যে-ভাবে গানকে বিষাক্ত করে, আমার কপালে খুনির বলিরেখা
ইটারনাল ব্লিস, রেড ওয়াইনে চোবানো তোর ছবির ঝুরো
সোনালী মিত্র অবন্তিকার জন্য প্রেমের কবিতা
***
পুরাণের সংস্কৃত পাতা থেকে নেমে এসে তুইই শিখিয়েছিলিস
কবির লেখকের গণ্ডারের চামড়া খুলে রাস্তার ভিড়েতে মিশে যেতে
তার আগে নিজেকে বড়ো উন্নাসিক ভেবে কাদার সুপারম্যান
হাতঘড়ির কলকব্জায় ঝড়েতে মেটাফরগুলো চালুনিতে চেলে
ভেবেছি পিস্তল পাশে নেই বলে আত্মহত্যা করিনি এখনও
দিল্লির নিম্নচাপে চোখ এঁকে ফিরিয়েছিলিস শব্দ ভিজুয়াল
তরোয়ালে আইনি ঝলকে লিপস্টিকে ছাপা অটোগ্রাফ
প্রতিটি বিপ্লবের দাম হয় বদলের বাজারও তো বসে
জুলিয়াস সিজারের গম্ভীর শেক্ষপিয়ারি সাহিত্যের গমগমা ছেড়ে
সাধারণ মানুষের মতো প্রেমিক চাউনি মেলি তোর কথা মেনে
বুড়ো বলে সক্রেটিস সাজবার সত্যিই দরকার ছিল নাকি
গ্রিসের গাধার ওপরে বসে আথেন্স বা কলকাতার পচাগ্যাঞ্জামে
ধুতি পরে ? কাঁধে উত্তরীয় ! সাহিত্য সভায় ? নাকের বক্তিমে ঝেড়ে !
ভুলে যায় লোকে । মজার এ মরে যাওয়া । গন ফট । খাল্লাস ।
সোনালী প্রেমিকা ! তুইই বুঝিয়েছিলিস : হুদোহুদো বই লিখে
বিদ্বানের নাকফোলা সাজপোশাক খুলে দেখাও তো দিকি
কালো জিভ কালো শ্লেষ্মা কালো বীর্য কালো হাততালি
উলঙ্গ নাচো তো দেখি তাণ্ডবের আঙ্গিকবর্জিত তালে তালে
চুমুর পুনঃচুমু পুনঃপুনঃচুমু দিল্লির নিম্নচাপ মেঘে
এ দ্যাখ গণ্ডারের শিব-সত্য-সুন্দরের চামড়া খুলে ফেলে
আজকে পেয়েছি নখে প্রেমিকার চুলের জীবাশ্ম !
ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় অবন্তিকা-র জন্য প্রেমের কবিতা
অসহ্য সুন্দরী, আমার নিজের আলো ছিল না
তোর আলো চুরি করে অন্ধকারে তোরই ছায়া হয়ে থাকি
তোর আর তোর বরের নাঝে শ্বাসের ইনফ্যাচুয়েশানে
অসহ্য সুন্দরী, বেহালার কোন তারে তোর জ্বর, তা জানিস ?
জানি না কেমন করে রেমব্রাঁর তুলি থেকে পিকাসোর তুলিতে চলে গেলি !
তোর মাতৃতান্ত্রিক ইতিহাসের চেতনায়
তিনশো বছর পড়ে আছি সমুদ্রের গভীরতম জলে ভাঙা জাহাজে শেকলবাঁধা
সময়কালকে যে স্বরলিপিতে বেঁধে ফেলিস তা বলেছিস তোর বরকে ?
বলেছিস পরস্ত্রীকাতরতার প্রেমিককে মগজে চাকর করে রেখেছিস ?
সাঁতারু যেমন জলে সহজ তেমন তুই সময়কালে
অসহ্য সুন্দরী, আমাকে গড়ে নিয়েছিস ভয় যন্ত্রণা আনন্দের মিশেলে
অ্যানার্কিস্ট করে দিয়েছিস আমাকে--
মনে রাখি ব্যথা আর দুঃখই আগুন, হে অসহ্য সুন্দরী
তোর আর তোর বরের মাঝে পরস্ত্রীকাতরতার শ্বাস
শুনতে পাচ্ছিস ? শোন, কান পেতে শোন...
উপমা অগাস্টিন খেয়া অবন্তিকার জন্য প্রেমের কবিতা
আমাদের দুজনের মাঝে একটা চুলের কাঁটা তারের সীমান্ত
একটা চুলের কাঁটা তারের ওই দিকে শুকতারা তিরিশ মিনিট আগে ওঠে
উপমাকে পেতে আমার সারা জীবন লেগে গেল, জানি পাবো না
পুরুষদের কাটা মাথার আবর্জনায় আমার মাথা তুই চিনতে পারিসনি
কবিতারা কেন যে উপমাকে বাদ দিতে শকুন কলোনিতে ঢোকে
আকাশে পাক ধরেছে, দেখতে পায় না--
প্রেমের ময়াল প্যাঁচ, ভালোবাসা আমার পেশা
আগুনে পোড়ানো ছায়া পাঠিয়ে দেবো চুলের কাঁটা তারের ওই পারে
ঝিঁঝিপোকাদের কোরাস ভেবে তুই এড়িয়ে যাবি
অথচ আমিই তো সেইন্ট অগাস্টিন, ভালোবাসা আমার পেশা
মগজের ভেতরে তোর কন্ঠস্বর দিয়ে ফাঁদপাতা মাকড়সার জাল
বর্ষার ফোঁসফোঁসানি মেশানো তোর হাঁ-মুখের ইলশেগুঁড়ি
ঘুমোতে ঘুমোতে একরাতে নিজের চামড়া খুলে পৌঁছে যাবো
দেখবো খেয়ার ঠোঁট বিদেশ চোখ বিদেশ থুতনি বিদেশ চুল বিদেশ
হাত বিদেশ নাভি বিদেশ বুক বিদেশ আলিঙ্গনও বিদেশ
গোলাপি পূর্ণিমার বিছানায় জন্মেছিলিস
তোর আব্বু আমাকে আফ্রিকার মানুষ মনে করেছিলেন
কেননা তোর দিকে চাইলেই আমার দুই কাঁধ নেচে ওঠে
অথচ আমি সেইন্ট অগাস্টিন, ভালোবাসা আমার পেশা
অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায় অবন্তিকা'র জন্য প্রেমের কবিতা
মনে থাকে যেন, রাজি হয়েছিস তুই, হাত ধরে নিয়ে যাবি নরকের খাদে
রাবণের, কর্ণের, ভীষ্মের, দুর্যোধনের আর আমার জ্যান্ত করোটি
হাজার বছর ধরে পুড়ছে অক্ষরে, বাক্যে, ব্যকরণে, বিদ্যার ঘৃণায়
মনে থাকে যেন, শর্ত দিয়েছিস, আমার সবকটা কালো চুল বেছে দিবি
তিন-বুকের আধাবিদেশিনি, দুইটি বাঙালি বুক, একটি রেডিণ্ডিয়ান
সফেদ বৃন্ত দুটো পুরুষের নামে কেন ? প্ল্যাটো ও সক্রেটিস ? বল অ্যানা
অ্যানা দি র্যাভেন কাক, ঠোঁটে রক্ত, উসিমুসি বুক ? তৃতীয় কি টেকুমেশ চিফ ?
যিনি বলেছেন : কোয়াও-বোচি ওয়ে-আউ ফি ( এই সুন্দর পৃথিবী )
বুৎ ওয়া তে ওয়া ( হায় ) ওয়াও-কোয়ন-অগ ( স্বর্গ )
সব কিছু নষ্ট করে দিচ্ছে এই শাদা লোকগুলো
ওদের জীবনে কোনো প্রেম নেই, শুধু হিংসা, হত্যা, লোভ
অ্যানা, হাত ধরে নিয়ে চল রেডিন্ডিয়ান প্রেমিকের
তাঁবুর সুগন্ধে, মনে থাকে যেন, রাজি হয়েছিস তুই, উসিমুসি বুক
সবকটা কালোচুল বেছে দিবি, কোলে মাথা নিয়ে, অ্যানা, অনামিকা
আবার তোর সঙ্গে কবে দেখা হবে, ক্যামেরা মুখের কাছে এনে
তোর হাঁ-মুখের দেখবো চটুল বিশ্বরূপ ! অ্যানা দি র্যাভেন ?
বদনাম হবার জন্য তৈরি হ, চল তোকে কুখ্যাত কুসঙ্গে নিয়ে যাই
তোর স্বর্গে ছেটাই খানিক এই প্রেমিকের নারকীয় করোটির ছাই
সোনালী চক্রবর্তী অবন্তিকা'র জন্য প্রেমের কবিতা
***
ব্যথা জখমকে ভালোবাসে -- মাংসকে ভালোবাসে ব্যথা --
সাধু হয়ে গেছি তো, নিভিয়ার মাস্ক পাউডার ছাই
বাড়িতে ল্যাংটো ঘরে বেড়াই -- পোড়ানো পাণ্ডুলিপির গন্ধ মেখে
ভালোবাসাকে ভালোবাসি -- অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ --
সুরের নোনতা খসড়া বাঁধি -- স্মৃতি দাও -- স্মৃতি দাও --
উজবুক তাকাই ঈশ্বরীর ডিজিটাল অনুপস্হিতির ফ্রেমে
নিকেলিত পূর্ণিমা, বেচারী ঈশ্বরী কেন এতো সুন্দরী !
অবচেতনার খলিফার ফতোয়া -- আস্তিক হয়ে যা শিগ্গিরি --
হায় -- ঈশ্বরী তো নিজেই নাস্তিক --
বোকা না কি -- সোনার হরিণ কেই বা চায় ?
লাভার ফুটন্ত বিছানায় -- খদিরচুল রূপসী -- নিঃসঙ্গতা আর বঞ্চনা --
আব্রাহামের তিন ছেলের রক্ত আমার গায়ে কেন ?
আমি তো ল্যাংটো খলিফা, নিভিয়ার মাস্ক পাউডার ছাই--
পঞ্চবটির হাইপাররিয়াল জঙ্গল তোকে ঘিরে
ভবঘুরে -- কুঁজোশঠ -- নুলো -- টোটোবেকার -- খোচর --
নাঙবুড়ো -- লোফার -- নেশুড়ে -- মিথ্যুক -- জুয়াড়ি -- বেয়াদপ --
রাজনর্তক -- জ্যোতিষী তোর বাঁহাত কখন থেকে ধরে রেখেছে --
তুই তো এই শহর -- রাজপথ -- রাস্তা --লেন -- বাইলেন --
শেষই হতে চাস না শেষই হতে চাস না শেষই হতে চাস না
ব্যথায় ঢালাই নিজেরই গড়া আদল -- সেই যুবক তো ? চিনি আমি !
সে তোর মাংসে ব্যথার মতন আঁকড়ে থাকেনি -- যেমন আমি --
যখন সময় আসবে -- গায়ের সমস্ত পালক -- মখমল -- স্টিলেটো --
ভুরু কোঁচকানো জাদু -- তোর হাতে বটল ওপনার কেন ?
আমি তো সাধু হয়ে গেছি, নিভিয়ার মাস্ক পাউডার ছাই --
বাড়িতে ল্যাংটো ঘুরে বেড়াই -- প্রতিবেশিনীদের প্রিয় উন্মাদ --
সত্যের দপদপানিতে ঘায়েল -- চোখ বুজি -- একদিন তো সব যাবেই --
এখন নয় কেন ? খদিরচুল রূপসী ? তুই চাস নাকি সোনার হরিণ ?
বিশ্বাস করিসনি -- ভয় পাসনি -- যা হয়নি তা তোর নাগালে -- চেষ্টা ছাড়িসনি
ব্যথা মাংসকে ভালোবাসে -- আঘাতকে ভালোবাসে ব্যথা --
কৃতি ঘোষ অবন্তিকা'র জন্য প্রেমের কবিতা
***
এই সেই গালফোলা যুবতী
যাকে তার বাবা ডাকে ডাবলিউ
রোদের সঙ্গে ষড় করে যে
আমার ছায়াকে ভাঙেচোরে সে
সিগ্রেট ফোঁকে বলে চুমু ওর
খাওয়া এক বাসি কার্ড এটিএম
পিন ওর দুই চোখে মিচকায়
ইস্তিরি-করা মোর ভজনা
আমি ছিনু সতেরোশো শতকে
ও রয়েছে বাইশের কোঠাতে
যা নিয়েছি ফেরত দেয়া যাবে না
উকুনের সাথে চুলে পুষেছি
মৎস্যবালিকা যার বুকে আঁশ
ও আমার পিন-আও পোস্টার
নদী ওর ঘাম ছাড়া বয় না
প্রেমিকেরা কারাগারে বন্ধ
ফোলাগাল ছুঁই ফেসবুকে রোজ
চুমু খাই সিগ্রেটি ঠোঁটে ওর
আমার কান দুটো কুমিরের
গিটার বাজিয়ে ডাকে আয় আয়
ও আমায় নিলামেতে কিনেছে
এক টাকা পঁয়ত্রিশ পয়সায়
চেন বেঁধে পথে-ঘাটে নিয়ে ঘোরে
তবু বলে তুতুতুতু আয় আয়
তুতুতুতু আয় আয়
তুতুতুতু আয় আয় আয় আয়
অবন্তিকার শতনাম
***
আমি অবন্তিকার দুটো মাইয়ের নাম দিয়েছি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া...বাঁদিকেরটা আদর করলেই গোলাপি হয়ে যায়...ডানদিকেরটা আদর করলেই হলদেটে রঙ ধরে...বাঁদিকের বোঁটার নাম করেছি কুন্দনন্দিনী...বঙ্কিমের বিষবৃক্ষ তখন ও পড়ছিল চিৎ শুয়ে...ডানদিকের বোঁটার নাম ও নিজেই রেখেছে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার যে লোকটা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ডিটেকটিভ...ডিটেকটিভ বই পড়তে ওর জুড়ি নেই...ছুঁলেই কাঁটা দিয়ে ওঠে তাই...যোগেন চৌধুরীর আঁকা ঝোলা মাই ওর পছন্দ নয়...প্রকাশ কর্মকারের আঁকা কালো কুচকুচে মাই ওর পছন্দ নয়...পেইনটিঙের নাম রাখা গেল না...যোনির কি নাম রাখবো চিন্তা করছিলুম...অবন্তিকা চেঁচিয়ে উঠলো পিকাসো পিকাসো পিকাসো...পিকাসোর যোনির কোনো আদল-আদরা নেই...কখনও বাদামি চুল কখনও কালো কখনও কিউবিক রহস্য...তাহলে ভগাঙ্কুরের...ও বলল সেটা আবার কি জিনিস...ওর হাত দিয়ে ছুঁইয়ে দিতে বলল অমঅমঅমঅম কি দেয়া যায় বলতো...পান্তুয়া চলবে...ধ্যুৎ...রস পানেই পান্তুয়া নাকি আরও কতো রকম মিষ্টি হয়...ছানার পায়েস...নারকেল নাড়ু...রসমালাই...নকশি পিঠা...রাজভোগ...লবঙ্গলতিকা...হলদিরামে ভালো লবঙ্গলতিকা পাওয়া যায়...আমি বললুম স্বাদ কিছুটা নোনতা...ও বলল দুর ছাই আমি নিজে টেস্ট করেছি নাকি যাকগে বাদ দে...হ্যাঁ...এগোই...পাছার কি দুটো নাম হবে...ডিসাইড কর...ডিসাইড কর...তুই কর আমি তো দেখতে পাচ্ছি না...না না ফের ফের...লাবিয়া নোনতা হলেও ওটার নাম দিলুম গোলাপসুন্দরী...পারফেক্ট হয়েছে...তাহলে পাছার একটাই নাম দিই...নরম নরম কোনো নাম...পাসওয়র্ড...ঠিক...এর নাম দেয়া যাক পাসওয়র্ড...ধ্যাৎ...পুরো রোমান্টিক আবহাওয়া ফর্দাফাঁই করে দিচ্ছিস......গ্যাস পাস হয় বলে পাসইয়র্ড হতে যাবে কেন...ছিঃ...তাহলে এর নাম হোক গরমের ছুটি...গরমে বেশ ভাল্লাগে পাউডার মাখিয়ে পাছায় হাত বোলাতে...ওক্কে...তারপর...ঘুমোবো কখন...বাঁ উরুর নাম দিই ককেশিয়া...ডান উরুর নাম দিই লিথুয়ানিয়া...রাশিয়ানদের উরু দারুণ হয় বিশেষ করে শীতকালে যখন ওরা চান করে না...ভোদকা খেয়ে ভরভরিয়ে প্রতিটি রোমকুপ দিয়ে গন্ধ ছাড়ে...শুয়েছিস নাকি কখনও রাশিয়ান মেয়ের সঙ্গে...না কল্পনার যুবতীদের ইচ্ছেমতন হ্যাণ্ডল করা যায়...ছাড় ছাড়...এগো...মানে নামতে থাক...তাড়াতাড়ি কর নইলে গাধার দুলাত্তি দেবো...তা্হলে পায়ের নাম রাখছি জিরাফ...বামপন্থী জিরাফ আর দক্ষিণপন্থী জিরাফ...এবার ওপরে আয়,,,মুখে...ঠোঁট...ঠোঁটের নাম দিই আফ্রিকান সাফারি...আচ্ছা...ঠোঁটের নাম আফীকান সাফারি...ব্লোজবে খণ্ড খণ্ড মাংস ছিঁড়ে খাবো...খাস...থুতনিতে সেকেন্ড চিন...পিৎজা কোক খাওয়া থামা...থুতনির নাম দিই গোলাপজাম...কেন কেন কেন...পরে বলব...এখন দু'চোখের নামদিই...শতনাম হলো না তো...চোখ বোজ চোখ বোজ...তুই তো একশোসমগ্র আবার শতনামের কী দরকার...তাহলে আয়...আজ তুই ওপরে না নিচে ?
আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন মলয় দা , অর্থাৎ কবি~মলয় রায়চৌধুরী ! আমি আমার কাব্যজীবনের প্রারম্ভ থেকে কিন্তু মলয় দা'র নামের ও কবিতা'র সাথে পরিচয় ঘটেনি । আমি জানতাম না কবি~মলয় রায়চৌধুরী'- নামে একজন কবি আছেন , যিনি বাংলা কাব্যসাহিত্য'-কে তাঁর সৃজন কলমের যাদুতে শাসন করছেন ! পরবর্তী সময়ে ৭০ দশকের শেসে একটু একটু তাঁর নাম কানে আসছিল । ওই সময় প্রথম কলেজ স্ট্রিটের বুক স্টল থেকে একটা চটী পত্রিকা'-য় কবি~মলয় রায়চৌধুরী'-র নাম ও কবিতা চোখের সামনে ভেসে ওঠে ! বলা বাহুল্য ; ওই চটী পত্রিকা'-র নাম এখন এই মুহূর্তে ঠিক মনে আসছে না , এবং কি কবিতা পড়েছিলাম সেটাও স্মরণে নেই ! যাই হোক , 'সাহিত্য চেতনা'-য় 'আজকের কবি'-র আনুষ্ঠানিক পাতায় আমার প্রিয় ও ভালোবাসার কবি'-র কবিতা দেখে চোখ যমুনায় জল ঝরে পড়লো ! কি সিস্টেম্যাটিক লেখা , সঙ্গে শব্দ কাস্টিং এবং ভাবনার অনাবিল নান্দনিক প্রকাশ ! ব'লতে দ্বিধা নেই , আমাদের মতো অক্ষর কর্মীদের উনি কবিতার শিক্ষক । এটাও ঠিক যারা বর্তমান বাংলা আধুনিক কবিতাকে দুর্বোধ্য বলে চিহ্নিত করে আসছেন , কবি~মলয় রায়চৌধুরী'-দের মতো ক্রিয়েটিভ কবিদের কবিতা তাদের জন্য নয় ! কারণ আমি মনে করি , 'দুর্বোধ্যতা' এই সমস্ত পাঠকদের অযোগ্যতা ছাড়া আর কিছু নয় ! 'সাহিত্য চেতনা'-র সম্পাদক মহাশয়'-কে ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাই , এই ধরণের একজন আটপৌড়ে হীন কবির কবিতা প্রকাশ করে আমাদের মতো পাঠক ও লেখকদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য । পরিশেষে প্রিয় কবি~মলয় রায়চৌধুরী'-মহাশয়-কে অনেক অনেক শ্রদ্ধানত প্রণাম ও শরৎকালীন শিউলি শুভ্র ভালোবাসা জানাই ,------- কবি~বিদ্যুৎ ভৌমিক // ~ছায়ানীড়~ // ৬৫/১৭ , ফিরিঙ্গী ডাঙা লেন , সূচক ৭১২২০৩ মল্লিকপাড়া , শ্রীরামপুর , হুগলী , পশ্চিমবঙ্গ , ভারতবর্ষ //
উত্তরমুছুন