অন্তঃসার
অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়
***
কপিইইই...কোওওপি...কোপ্পি...কপিই...কপি...
শুনতে পাচ্ছিলেন ঠিকই, তবু কোনও ভাবান্তর ঘটল না অমরেশের। একচুল চাঞ্চল্যও নয়।
অভ্যেস হয়ে গিয়েছে এই কয়েকমাসে। ঐ হেঁড়ে-গলার টেনে টেনে ‘কোপ্ কোপ্ কোপ্ কপি’ পর্যন্ত। কী যেন নাম ছোঁড়াটার! রতন, না তমাল! তাঁর অন্তুর থেকেও বয়েসে ছোট হবে দু-চার বছর...! অথচ...
না, এখন আর খারাপ লাগে না তেমন...। উৎকট শব্দের পচন বলে মনে হয় না উচ্চারণগুলো; বাসি আনাজের খোসার মত বিশ্রী দুর্গন্ধ উঠে আসে না—এমনকি রাস্তার বেওয়ারিশ ডাস্টবিন থেকে বেরনো নোংরা ত্যাঁদড়ের দল—পিতৃপরিচয়হীন বদখত কিছু জঞ্জালের সমষ্টি—এরকমকিছুও মনে হয় না আর অ চৌ-র, কবি অমরেশ চৌধুরীর।
প্রথমদিকে এতটাই খারাপ মনে হয় নি এই পাড়ার লেন-বাই লেন-সার সার আবাসন-বড় রাস্তা-মোড়-দোকানপাট তৎসহ লেজুড় ক্লাবঘরটিকেও। আরপাঁচটা নির্বিরোধী মফস্সলের টুকরোটাকরা যেমন হয়ে সাধারণত!
কিন্তু ঐ যে মারণরোগের বৈশিষ্টই হল, ওপর ওপর দেখে বোঝা যায় না পুঁজরক্তক্ষত কতদূরে শিকড় মেলেছে। সাদা চোখে সবকিছুই ঠিক—বাজারহাটে কৌতূহলী চাউনি—চলতে-ফিরতে সদ্য আলাপী প্রতিবেশির কুশল-সম্ভাষণ; ক্লাবের কান ঘেঁষে বেরোনোর সময় টাইমপাস-করা কিছু ক-অক্ষর-গোমাংসর ‘হেঁ হেঁ কাকা ভাল তো?’ গোছের সংস্কৃতিবর্জিত-উক্তি—সবমিলিয়ে খারাপ কী! হোক না বখে-যাওয়া, দায়ে-অদায়ে এরাই তো ভরসা—বিপদের দিনে জান লড়িয়ে পাশে দাঁড়ায় এইসব অল্পবয়সীরাই—থাক না ওরা ওদের মত, এক-আধটু কী-কেমনের প্রত্যুত্তর জানালে লাভ বই ক্ষতি নেই কোনও!
কিন্তু এই সামান্য খেজুরে কথাবার্তাই যে সহস্রাধিক ব্যুমেরাংয়ের অভিঘাত নিয়ে ফিরে আসবে তা কে জানত ?
অবশ্য ধাক্কাটা প্রথম এসেছিল অমরেশের দিক থেকেই। ওদের সাধের টালি-ছাওয়া ক্লাবঘরের ছাত ঢালাইয়ের ব্যয়ভার বহন-করার-প্রস্তাব সবিনয়ে ফিরিয়ে দিলেন তিনি। অনুরোধ-উপরোধ দিয়ে শুরু হয়ে জোর-চাপাচাপি; শেষে কটু বাক্যবর্ষণ! এরা ভেবেছে কী, কুবেরের ভান্ডার রয়েছে তাঁর কাছে!
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথম-শ্রেনীর-কর্মচারী হোন না কেন—সদ্য অবসরপ্রাপ্ত—পি এফের সিংহভাগই বেরিয়ে গেছে এই তেলিনিপাড়ার চারহাজার-স্কোয়ারফিটে; যেহেতু দক্ষিণখোলা, তদুপরি সাততলার টুবিএইচকে—সেইজন্য দাতাকর্ণ হতে হবে—ইল্লি আর কী। তায় একমাত্তর ছেলেকে বসিয়ে বসিয়ে এমবিএ পড়াচ্ছেন বেঙ্গালুরুতে--সুতরাং রাজকোষ উপচে উঠেছে মা, লুটেপুটে নে! মগের মুল্লুক চলেছে যেন!
আবাসন কমিটির দপ্তরে অনুযোগ জানিয়েও লাভ হল না কিছু! সেক্রেটারি ভারতখ্যাত ওস্তাদজীর নাড়া-বাঁধা শিষ্য; সুর ভাঁজতে ভাঁজতে উদারার থেকে মুদারায় উঠে আদেশ দিলেন ‘আপোষে বসে মীমাংসা’র !
অলংকরণ শুভ্রা আচার্য বন্দ্যোপাধ্যায় |
কিমাশ্চর্যম! ‘আপোষে বসে মীমাংসা’ আর ‘সোনার পাথরবাটি’—দুয়ে তফাৎ কোথায়! ভেবেছিলেন লোকাল কাউন্সিলারকে খুলে বলবেন সবটুকু! বাধ সাধলেন স্ত্রী ও শ্যালক। শ্যালক প্রাজ্ঞ মানুষ। স্থিত বুদ্ধি। কাঁচাপাকা দাড়িতে আঙুল চালিয়ে বাচিক শিল্পীর মতই ভরাট গলায় বললেন, ‘খবরদার! ঐ রাস্তার আশপাশ দিয়েও যেও না! টপ টু বটম কানেক্টেড! তলে তলে সবাই একগোয়ালের—সব শেয়ালের এক রা—ওকাজ করলে টিকতে পারবে না এখেনে’—
বিচলিত অমরেশ বললেন, ‘তবে! উপায়!’ আরও ভরাট গলায় ভাষ্যপাঠের ভঙ্গিতে থেমে থেমে উচ্চারণ করলেন শ্যালক, ‘সহ্য করো! সহ্য করো অমুদা—জীবনে এক একটা সময় আসে যখন মানুষকে শুধুই সহ্য করা শিখতে হয়’—কথা শেষ-হওয়ার-আগেই খরখর করে-উঠলেন অমরেশ-গিন্নি, ‘আর নাহলে ছেড়ে দাও ওসব, খাতা-কলম তুলে রাখো তাকে—বন্ধ করো ওসব জায়গায় যাওয়া—ওসমস্ত লোকের সঙ্গে মেলামেশা’—
ব্যথিত চোখে স্ত্রী-কে উদ্দেশ করে কিছু বলতে গিয়েও—কাঁপা কাঁপা স্বরে মিনমিন করেন অমরেশ, ‘তুমিও শেষকালে এইকথা বলতে পারলে, ইউ টু?’--বেদনায় কোঁচকানো বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে একটা।
অভয় দিলেন শ্যালক-মশাই; তড়িঘড়ি আবৃত্তি করে উঠলেন, ‘নানা, ওসমস্ত ছাড়ার প্রশ্নই আসছে না কোনও! তুমি নিশ্চিন্তে চর্চা চালিয়ে যাও অমুদা। এদের দৌড় খুব বেশি হলে ঐ ‘কপি’ পর্যন্তই! তাও দেখবে দুদিনেই হাঁফিয়ে চুপ মেরে যাবে’--।
সেই দুদিন লম্বা হতে হতে দুমাসে গিয়ে ঠেকল! হাঁফিয়ে গেছেন অমরেশ নিজেই। একটানা দিনের পর দিন শুনতে শুনতে। কানের ফুটোদুটো বুজে এসেছে এখন তাঁর। ভেতরে ঢোকে না যেন কিছুই। অথবা ঢুকলেও অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে যায় সেসব শব্দকল্পদ্রুম।
সেই কলেজ-জীবনের দিন থেকে নিজেকে কবিতায় জুতে দিয়েছেন অমরেশ চৌধুরী। চাকরি-ব্যস্ততা-স্ত্রী-সন্তান কোনওকিছুই কাব্যসৃজনের মত কর্মযজ্ঞ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি কখনও। সাত-আট দিস্তে লিটল ম্যাগে ধরা রয়েছে তাঁর এই নিরবচ্ছিন্ন কাব্যপ্রয়াস। নিজের খরচেই ছাপিয়ে ফেলেছেন অন্তত আটখানি বই। ভগবানের কৃপায় কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় বোদ্ধা প্রকাশকের অভাব নেই আজকেও! রক্তবীজের মত দিন দিন বেড়ে চলেছে তাদের প্রজাতিরা। ফেলো কড়ি, মাখো তেল...না না, ছাপো কবিতা, চৈত্র সেল!
সুতরাং অবসরগ্রহণের পর যখন পূর্ণ অভিনিবেশ নিয়ে মনোনিবেশ করতে চলেছেন কবিতার-অকূল-সমুদ্রে ঠিক তখনই এই পড়ে-পাওয়া বিপত্তি। কলম বুঝি অচিরেই বন্ধ হয়ে যায় অ চৌ-র!
পাশের আবাসনের বাংলার শিক্ষক গোপীনাথবাবু কীউপায়ে যেন আহরণ করে ফেলেছিলেন তাঁর কবি-পরিচিতি। তিনিই সেসব বিতরণ করলেন ছাত্রসভায়? সেখান থেকেই জেনে গেল আপদগুলো? কে জানে!
তবে সেই যে শুরু হয়েছে যথাযোগ্য ব্যঙ্গানুবাদ সহযোগে ‘কবি’কে আওয়াজ-দেওয়ার-পালা; সেই শব্দবাণ তিরের বেগে আঘাত হানতে চাইছে রোজ রোজ। প্রতিদিন। প্রতিনিয়ত।
গোড়ার দিকে কষ্ট পেতেন। রাগ হত। দুঃখ-ও। বাইরে রাস্তায় বেরোলেই চতুর্দিক থেকে ‘কপি’। আসা-যাওয়ার পথে যতক্ষণ না ক্লাব পেরিয়ে দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছেন, কানের গুহায়-মাথার গভীরে ঝমঝম রব তুলত, শেলের মত উড়ে-এসে বুকে বিঁধত সেই ‘কপিকুল’! জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যেত বুক- মাথা-মন। পথে-ঘাটে যেকোনো লোককেই মনে হত শত্রুপক্ষের—মাথা নীচু-করে হাঁটতে হাঁটতেও টের পেতেন দাঁত বের-করে হাসছে আবালবৃদ্ধবণিতা!
আস্তে আস্তে সয়ে আসছে এখন। থিতিয়ে আসছে জ্বালা-যন্ত্রণা। অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে নৈমিত্তিকের এই ‘কপি’বুক। আজকাল ভেতরে ঢেউ ওঠে না আর। খুব কিছু আপত্তিকর মনে হয় না এই হাঁকডাক। যেন এসবই খুব স্বাভাবিক। এমনটাই হওয়ার কথা ছিল বুঝিবা!
তাই চারিদিক থেকে ছুটে-আসা শব্দবূহ্যের মধ্যে দিয়েও মাথা উঁচু করে হেঁটে যান অমরেশ। কারো চোখে চোখ পড়লেও আর প্রতিপক্ষ মনে হয় না তাকে।
গৃহিণী গজরাচ্ছিলেন, ‘আশ্চয্যির কথা বাপু, একটা লোকও কখনও বলে না কিছু ঐ ছোঁড়াগুলোকে, আরে তোদেরও তো বাপ-মা রয়েছে বাড়িতে, বাপের বয়েসী একজন লোককে কিনা—ছিঃ একটা ভদ্রলোক, একটা পুরুষমানুষও কি আর নেই এপাড়ায়? একফোঁটা প্রতিবাদও কি আর আসে না কারো...?’
ফ্যালফেলে হাসি নিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন সহধর্মিণীর মুখের দিকে। কথাগুলো মগজে সেঁধোচ্ছিল না ঠিকঠাক। কিংবা গলে বেরিয়ে যাচ্ছিল আরেক কান দিয়ে...।
এতকিছুর পরেও সীমা ছাড়িয়ে গেল সেইদিন, যেদিন পাউরুটি কিনে ফেরার সময় ক্লাবঘরের জটলার ভেতর থেকে হেঁড়ে গলায় চেঁচিয়ে কবিতা পড়ছিল কেউ। ঝাঁকুনি খেয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন অমরেশ। নিমেষে গরম হয়ে উঠল কান। রগ ঠেলে রক্তের হলকা যেন ছড়িয়ে যাচ্ছিল কপালে, স্নায়ুতে, শিরায়। ওইতো, সুর করে কবিতা বলছে কেউ, ‘পাখীর ন্যাড়ের মত চোখ তুলে’...খট করে আটকে গেল কানটা; ঠিক শুনেছেন তো?...হ্যাঁ, ভাঙা ভাঙা বিকৃত স্বরে চিৎকার করে উঠল আরেকজন, ‘পাখীর ন্যাড়ের মত’...আর থাকতে পারলেন না, থমকে একঝটকায় ঘুরে দাঁড়ালেন অমরেশ চৌধুরী—চোখ লাল, দরদর করে ঘাম ঝরছে কপাল বেয়ে...এত দুঃসাহস, এতদূর পর্যন্ত নীচে নামতে পারে এরা...তাঁকে অপমান করুক ক্ষতি নেই, কিন্তু এই বাংলার একজন সত্যিকারের কবিকে...ওফ্, এত স্পর্ধা, এতখানি বিকারগ্রস্ত মন এদের...মুহূর্তের মধ্যে উড়ে এলো সমস্বরে বিভিন্ন টোনের, বিভিন্ন ক্যারিকেচারের ‘কপি’।
মাথাটা নামিয়ে নিয়ে পিছনে ফিরলেন। শকুনের মত ঘাড় নিচু-করে স্তব্ধ সন্ত্রস্ত হতমান পা ফেলে ফেলে হেঁটে যেতে লাগলেন অমরেশ চৌধুরী। আকাশ-বাতাস ব্যপ্ত হয়ে-উঠেছে কুৎসিত শব্দের দূষণে; ধোঁয়ায়, ধুলোয়...।
পরেরদিন সকালবেলা বাড়ি ফিরছিলেন রিকশায়। সমস্ত চোখ-মুখে নিশ্চিন্ত নির্লিপ্তি। হয়তবা ঔদাসীন্যও। রিকশায় পা-দানির ওপর দুটো পেটমোটা ফোলা কাপড়ের ব্যাগ বা থলে। সকাল দশটার মাঘের রোদ্দুরে ঝিকিয়ে রয়েছে চারপাশ।
টালি-চালের ক্লাবটা পার করে ডানদিকের গলিতে বাঁক নিল রিকশা। এক...দুই...তিন...চার...মনে মনে কাউন্ট করছিলেন তিনি।...পাঁচ..ছয়... ‘কপি কপি কোওপি কপিই’...সম্মিলিত কলরোলে কিছুটা হলেও চিড় খেল শীতসকালের নির্জনতা।
--এই দাঁড়াও! দাঁড়াও!...থামিয়ে দিয়েছে দেহাতি বুড়ো রিকশা। ভ্যাবাচাকা-খাওয়া ঘোলাটে চোখের মণি।
একসেকেন্ডও যেতে না-দিয়েই স্পষ্ট ও সুদৃঢ় স্বরে ডাক দিলেন অমরেশ।–এই যে ভাই শোনো!...মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে ওরা। ভারি মজা পেয়েছে। ফুটে উঠেছে চাপ চাপ চাপা বিদ্রুপ।
--আমাকে বলছেন কাকা? খসখসে ভাঙা গলায় জানতে চায় রতন কিংবা তমাল। কথার ভঙ্গিতে ব্যঙ্গের ছোবল।
--শুধু তোমাকে নয়, তোমাদের সবাইকেই ডাকছি। শোনো এদিকে একবার!...মুখ মচকে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে সবাই। আশপাশের আবাসনের বিভিন্ন তলের বারান্দা-জানলায় উৎসুক চোখেদের উঁকিঝুঁকি। উত্তেজনার গন্ধ উঠেছে যেন! মুদি দোকানের কাউন্টার সরিয়ে বেরিয়ে এল দোকানদার। খোঁচা খোঁচা সাদা দাড়ির ফাঁকফোকরে থমথম করছে মুখ। পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে কিছুটা গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ল একটা সাইকেল। ঘাড় ঘুরিয়েছে। কৌতুক। কৌতূহল। রতন বা তমালের চোখে এখন ঝড়ের আগের চাপা পূর্বাভাস। এসপার-ওসপার করেই ছাড়বে আজ একটা। অনেকটা সেইরকম প্রস্তুতি-নেওয়া ভয়েসে বলল, যেন বা তৈরী হয়েই, ‘বলুন বলুন কাকা, কী বলবার আছে?’ পেছন পেছন চোখ মটকে হাসছে আরও কয়েকজন।
উদ্ভাসিত মুখ নিয়ে স্পষ্ট স্বরে বললেন, ‘হ্যাঁ, কপি। কপিই। মাত্র দশটাকা এক একটা। সাইজও দারুণ’। চটপটে হাত ফাঁক করে ধরেছে দুখানা থলের মুখ। প্রমাণ সাইজের বড় বড় ফুলকপিতে ঠাসা থলে দুটো। শীত শুরুর ফলন। ধবধবে সাদার গায়ে ঘন সবুজ পাতার মোড়ক।
আবারও বললেন কবি অমরেশ চৌধুরী, ‘মাত্র দশ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সব বাজারে। এই নাও—জমিয়ে রান্না কোরো আজ ক্লাবে—ঝাল ঝাল কষা কপির ডালনা—তোফা জিনিস, জমিয়ে কপি খাও, কেমন? অ্যাঁ?’...
কেউ কিছু বলে-ওঠার আগেই ইঙ্গিত বুঝে বিহারি রিকশাবুড়ো দ্রুত থলেদুটো নামিয়ে দিয়েছে সামনে, রাস্তায়। প্যাডেল ঘুরলে দ্রুত এগোয় সাইকেল-রিকশা। ইঙ্গিত বুঝেই।
অনেকরাতে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলেন অমরেশ। যতদূর দেখা যায় শূন্য ধূধূ এক কপিক্ষেতে দাঁড়িয়ে আছেন একা। এলোমেলো হাওয়ার ঝাপটায় উড়ছে চুল। আলো মরে আসছে। বুঝিবা বিকেল বয়ে এলো।
যেদিকে তাকান ছোট-বড়-মাঝারি-প্রকান্ড সব কপির স্তূপ। কপির পাহাড় জায়গায় জায়গায়। একটু এগোতেই চোখে ঠেকে বিশাল গর্ত। ছোটখাটো পুকুর যেন! হাঁ-করে আছে।
সেই পুকুরভর্তি গর্ত বুজে উঁচু হয়ে আছে কালো কালো দুর্গন্ধময় গোবরের সার! মশা। মাছি। পোকা। কেন্নো। জোঁক। বিনবিন করছে চারধারে।
আস্তে আস্তে মাটিতে বসলেন হাঁটুমুড়ে। তারপর সেই দুর্গন্ধওঠা সারের গুঁড়ো মুঠো মুঠো তুলে অবলীলায় ছড়িয়ে দিলেন ডাইনে-বাঁয়ে-সামনে-পিছনে আদিগন্ত কপিক্ষেত জুড়ে। হাত দিয়ে ডলে ডলে ভূমিতে মেশাতে লাগলেন সারাৎসার।
...আলো হাওয়া জল ক্কাথ...সবকিছুর থেকে পুষ্টি সঞ্চয় করে বেড়ে উঠুক ওরা...! ছোট, দুর্বল, জড়, আধফোটা ফুলকপিরা কৈশোরের শীর্ণতা কাটিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে-উঠুক আনন্দে...। ওম্ অপবিত্র পবিত্রবা সর্বাবস্থা গতওপি...!
এক পৃথিবীভরা বিপুল কপিক্ষেতে ধৈর্য ধরে সার মেশাতে থাকেন অ চৌ।