1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি কুমারেশ তেওয়ারী | সাহিত্য চেতনা

 কবি কুমারেশ তেওয়ারী 

কবি কুমারেশ তেওয়ারী

কবি কুমারেশ তেওয়ারীর জন্ম আসানসোলের কন্যাপুরে। শূন্য দশকের শেষদিক থেকে লেখালেখি।  কৃত্তিবাস, কবি সম্মেলন, কবিতা আশ্রম, সহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি। কবিতা আশ্রম পত্রিকার  সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য। ‘কায়াকবিতা’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনাও করেন।


কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ—জুড়ন পুকুর (প্রিয়শিল্প প্রকাশন ),  ব্যালেরিনা ও নকশি কাঁথায় নষ্ট গন্ধ (প্রতিভাস), শব্দ স্নানে বেজেছে এস্রাজ(বইতরণী), ব্রহ্মকমলের রেণু( কবিতা আশ্রম থেকে প্রকাশিত) প্রভৃতি।


পুরস্কার —চর্যাপদ পুরস্কার,  হরিৎক্ষেত্র পুরস্কার, তাপ উত্তাপ পুরস্কার, মা হেলথ্ এণ্ড এডুকেশন ট্রাস্ট পুরস্কার প্রভৃতি




কবি কুমারেশ তেওয়ারীর একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :



মাছি

***


মাছিদের পুঞ্জাক্ষির চোখ

দৃষ্টি পেতে দিলে লেন্সবন্দি

পাখি ফুল আর চাঁদের নাব্যতা

                

তবুও তাদের বড়ো নিম্নগামী মন

হয়তো বাগানে কারো পড়ে আছে

মরা ইঁদুরের পচা দেহ, ফুলগাছটির নিচে

ভন্ ভন্ মরা দেহ ঘিরে

অথচ পাশেই ফুটে নান্দনিক ফুল


মৌমাছিদেরও তো পুঞ্জাক্ষির চোখ

গুঞ্জনে গুঞ্জনে তারা উড়ে আসে বাগানের কাছে

ইঁদুরের পচা দেহ কৌশলে ডিঙিয়ে

ফুল থেকে তুলে খায় মধুর কোলাজ


হয়তো তখন তুলে খাচ্ছে 

পচনের পুতিগন্ধ রস মাছির সমাজ



পোড়ার আগুন

      ***


অতঃপর মলিদিদি মল্লার ধরতেই

আকাশের গর্ভগৃহে জমে উঠলো মেঘ

মেঘের ভেতর থেকে দেখা দিল বাঁশি

মলিদিদি আলাপে জোর দিতেই

শ্যামসুন্দরের পরিচিত সেই বঙ্কিম ঠাঠ

মলিদিদির অন্তর তখন অতলান্তিক 


শ্যামের বামভাগে ও কে? রাই

আজন্ম কুমারী জ্বলে ওঠে তেলে ও বেগুনে

আলাপ থামাতেই উড়ে যায় মেঘ

মেঘের ভেতর থেকে কৃষ্ণ-রাই সবেগে পতনশীল 

মলিদিদি রাগে বজ্র, মরুক গে কোনো নয়ানজুলিতে


অনন্ত দুঃখের ভারে নত মলিদিদি ধরেছে দীপক

নাভি পুড়ে যায় তবু কে থামায় তাকে

পোড়ার আগুন যাকে হাতছানি ডাকে



জিরাফ

   ***


এইমাত্র আলো চলে গেছে। অন্ধকার 

চতুষ্পদ প্রাণী? তবে কেন টেই পাই

চারটি পায়ের শব্দ তুলে দৌড়ে যাচ্ছে কেউ ঘরে?

কী দোষ বলতো হৃৎপিণ্ডের? 

দ্রুত লয়ে গান তো গাইবেই । রাগের কথা বলোনা। 

ওসব জানেন ভীমসেন জোসী। 

আমি শুধু জানি স্থির থাকার ভেতরে কতনা লড়াই। 

আয়নার ভেতরেও তো তখন ঝুম চাষ রত অন্ধকার। 

আমি কি সত্যিই আছি? আলোর জিরাফ এসে

দূর করে দেয় সমস্ত সন্দেহ। 

আমিও তার সঙ্গে বাবুলের পাতা চিববো বলেই

ক্রমশ কেমন লম্বা করে নিতে থাকি ঘাড়।



মাথাধরা ও ঈশ্বর

         ***


মাথাধরাটিকে বসিয়ে দিয়েছি মন্দির চাতালে

বলেছি, ধ্যানের ভেতরে থাকো কিয়ৎকাল

সঙ্গে ওউম মন্ত্রটি উচ্চারণ চায় বারবার

মাথাধরাটিও বেশ সুবোধ বালক


মন্দিরের গোপন ভেতরে থাকা অধরা ঈশ্বর

ইতোমধ্যে একবার বাইরে এসে দেখে গেছেন

দেখেছেন কিভাবে ধ্যান করতে হয় 

ওউম মন্ত্রের উচ্চারণে জাগিয়ে তুলতে হয় বীজ

অথচ ঈশ্বর জানেন না কীভাবে সারিয়ে তোলা হয় মাথাধরা


কাঠবিড়ালটি এসে রেখে গেছে কিছুটা বাদাম

যেন মাথাধরা ছেড়ে গেলে 

দাঁত দিয়ে ভেঙে খেতে পারি বাদামের স্বাদ




রাধিকামুদ্রায়

      ***


বহুবার কালো নিয়ে কথা হয়ে গেছে

কেউ গদ্য লিখেছে তো কেউ বা কবিতা

কালীর কথা এনেছে কেউ তো কেউ কৃষ্ণের কথা

আবার কা কা করতে করতে কেউ 

কাককে ডেকে এনেছে খাতার পাতায়

কাকও সব সাদা রং শুষে নিয়ে

কালো ডানা কি বিস্তারে দিয়াছে মেলিয়া


সুতরাং, এখন ওসব কথা বাদ দাও

এসো আলো নিয়ে কিছু বলি

দেখো দেখো আলোর কথা বলতেই

নৃত্যপটিয়স ময়ূর এসে শুরু করেছে নাচ

কলম কেমন ক্ষুধার্ত ভিক্ষুর মতো

চেটে খাচ্ছে আলোক কণিকা 

এসো এসো আলোকের শ্রীচরণে 

নূপুর পরিয়ে দিই রাধিকামুদ্রায়




বোতাম

   ***


প্রায়শই বোতাম নিয়ে ভাবি

যখন জামায়, কী আদর কী আদর

ঘর ছোটো হলে এমন ভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া

ঠেলেঠুলে, যেন আহত না হয় বোতামের মুখ

প্রয়োজনে ঘরকে নিপুণ চিরে দিয়ে 

প্রয়োজন মতো বড় করে দাও ঘর 


আবার যখন অতিরিক্ত বড়ো হয়ে যায় ঘর

কিছুতেই ধরে রাখতে পারেনা, বোতামের সুডৌল শরীর

পিছলে পিছলে বেরিয়ে যায় ঘর ছেড়ে

তখন আবার সেলাইয়ের ফোঁড়ে ছোটো করা ঘর


এসময় বোতাম নীরবে সব দেখে শুধু

তাকে ধরে রাখার কতই না প্রয়াস


ছিঁড়ে যাওয়া বোতামের তো এসব নেই

শুধু যখন নরম কারও হাত তাকে ছেঁড়া স্থানে রেখে

সুতোর সেলাই দেয় আর সেলাইয়ের শেষে

স্বর্ণকান্তি দাঁতে সুতো কাটে

তখন হঠাৎ ঠোঁটের পরশ লেগে যায় তার বুকে

তারপর তো শুধুই ঘর-বার ঘর-বার




অভ্যাস 

   ***


ইদানিং পা টিপে, পা টিপে হাঁটার অভ্যাস করি

যেন পিঁপড়ের কানও শুনতে না পায় শব্দ চলনের

এসব শুনে ভেবে বসোনা যেন

আমার ভেতরে উন্মোচিত হচ্ছে শিকার প্রবৃত্তি 


মাথার উপরে এক কালান্তক সাপ

রাতদিন উগরোই বিষ

আমার সর্বাঙ্গ নীল তবু শব্দহীন চলার অভ্যাস

রপ্ত করে নিতে চাইছি কারণ

অনন্ত ঘোড়ারা রক্ষণশীলতা ছেড়ে

ছুটে যেতে চায় কুরুক্ষেত্রের মাটিতে

তীব্র শ্বাসে তুলে নিতে চায় লহুর উল্লাস

আমিতো তেমন নই, উলঙ্গ শরীরে

কিছুতেই নেচে আসতে পারিনা বুড়িমার থানে

আমি শুধু হাঁটা শিখি শব্দহীন


যেন অন্তিমে বাঘের দিকে ছুটে যাবার সময়

পায়ের গোছের হাড়ে শব্দ না তোলে সুপুষ্ট হাড়



ভুল

***


আমার মায়ের নাম গোলাপসুন্দরী

না না বকুলকথা, না তাও নয়, তবে প্রাণময়ী? 

আমাকে পাগল ভেবে ঢিল ছোঁড়োনো না যেন

এ কেমন ছেলে নিজের মায়ের নাম মনে নেই!


তবে শোনো আমার জন্মের পর নাকি

একটা বেড়াল আতুরঘরের কাছে খুব কেঁদে গিয়েছিল

সেই থেকে আমি খুব ভুলে যাই, এমনকি

বাবাকে কাকা আর কাকাকে বাবা বলে ফেলি

গোধুলিবেলার দিকে তাকিয়ে ভেবে বসি সকাল

এই সবে সূর্যফুল ফুটে উঠলো পশ্চিম আকাশে


তবে এই যে অসুখ, সেরে যায় কখন বলোতো?

সজনে ফুলের বড়া ভাজে যখন মায়ের হাত

নরম মলমলের মতো মুখ থেকে

ঝরে পড়ে স্বর্ণকমলের মতো এক ফোঁটা ঘাম

আমি শুনতে পাই যেন এক সমুদ্রের বুকে 

টুপ করে ঝরে পড়া ঘামের ফোঁটাটি 

                              ঢেউ তোলে উথালপাথাল




মাটি

***


যেতে যেতে সেই মাটির সঙ্গে দেখা

মাটিতো তখন কথা বলছিল লাঙ্গলের সঙ্গে 

আমাকে আসতে দেখে ভয়ে সাঁটিয়ে যাওয়ার মতো

আকড়ে ধরেছে লাঙ্গলের ফলা

আমি কাছে এসে বলি, আমাকে দেখতে ডাকাতের মতো? 

আমিতো নিধুগঞ্জের লোক

মাটিতেই ফসল ফলায় আর 

মাটিতেই কুয়ো খুড়ে পাতালের জল তুলে আনি

শুনেই মাটিতো হেসে লুটোপুটি

লাঙ্গলকে জড়িয়ে ধরে সে কী নাচ! 

আমিও তখন নাচের ভেতরে নেমে পড়তেই দেখি 

কেমন জলের মতো গলে যাচ্ছে আমার শরীর



Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন