1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি সুজিত রেজ | সাহিত্য চেতনা

 কবি সুজিত রেজ 

কবি সুজিত রেজ 


কবি সুজিত রেজ জন্মগ্রহণ করেন  ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান জেলার নূতনগ্রামে। পিতা  ঈশ্বর ননীগোপাল রেজ ও মাতা প্রতিমা রেজ ।

  কবি হুগলি জেলার ইটাচুনা বিজয়নারায়ণ মহাবিদ্যালয়ে  বাংলা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ।

এখনো পর্যন্ত কবির প্রকাশিত গ্রন্থগ হল: শ্রুতিসাহিত্য, speech and meaning, বহুরৈখিক, শিক্ষা : দুর্গতি ও প্রগতি, গর্বিত আধবুড়োর উদ্ধত এই গয়না, মেদহীন উদরের নাভি, বাস্তুসাপের খোলস, চলনবিলের নৈর্ঋত কোণে ।


কবি সুজিত রেজ-এর একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :


যম
**
*

হে নচি , আমার বাহুবন্ধন খুলেছি
তোমার মুষ্টি বাড়াও। আজানুলম্বিত বাহুমূল
চেপে ধরো বৈদ্যুতিক ক্ষিপ্রতায় 
নচিকেতাতালের এ পার ও পার জুড়ে

মৃত্যুর ও পারে কোন স্টেশন অপেক্ষমাণ 
সে প্রশ্ন এখন যাদুঘরে
আমার কৌতূহল স্বতন্ত্র  
আর কতদিন এই খাণ্ডবদাহন 
সন্ত্রাস-লাশের উৎকট প্রদর্শনী 
এত কেন ক্ষুৎকাতর তুমি 
হে নরকশ্রী , কী চাও তুমি হে প্রসাদপিতা

ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের তিন সূক্ত কি অহৈতুকী
হে বৃক্ষবাসী বিবস্বান-জাতক
সংহর--- সংহর মহাচন্দ কালপুরুষকে



এত ভালোবাসা পেলে
             ***

এত ভালোবাসা পেলে কুয়াশার ছুটি
তুঙ্গনাথের শিরে রোদের খুনসুটি ।।

এত ভালোবাসা পেলে নদীর এপার
নিশ্বাস ছাড়িয়া কহে জলের নেই আকার।।

এত ভালোবাসা পেলে নৌকো হতে ইচ্ছে করে
অনায়াস ভাসা যায় ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের                                                                ভিতরে।।

এত ভালোবাসা পেলে বেঁচে থাকা যায়
নুড়িরা যেমন থাকে অলকানন্দায় ।।

এত ভালোবাসা পেলে খেজুরপাতায়
ভাঙা চাঁদ নেমে এসে জোছনা বিলায়।


খড়
 ***


চাঁদ ফুটেছে আকাশের ওই গায়ে
জারুলপাতায় কিছুটা মুখ ঢাকা 
দোয়াত ওল্টানো বুকে জমে রয়েছে অসীম খিদে
খাদ্যতালিকায় আমার ক্রম অজানা
সমর্পণের ইচ্ছে জাগে শরীর জুড়ে
তবুও আমি ঝুলেই থাকি তেঁতুলফল
এই পথেই এসেছিলাম হয়ত বা একদিন
অথচ চেনা লাগে না কিছুই বরং ধন্দ জাগে
মনুষ্য শরীরের এই আত্মপর ঔদাসীন্য 
যুগান্তরের পাঠ-পাঠান্তরের ভিজে খড়



নিশ্বাস
  ***


সকালের প্রথম চেতন নিশ্বাসে শোনা যায় 
সুষুম্নাসংগীত
ছেদনগ্রন্থির ভয়াবহ আর্ত চিৎকার

সকালের প্রথম চেতন নিশ্বাসে মাপা যায় 
খরতাপ হলাহল
মসৃণ হলাহল আলো-আগুন

সকালের প্রথম নিশ্বাসে বোঝা যায়
পরিবাহী নাক নল মাত্র 
আরও গভীরের ফুসফুস চিতল ঝরোখা



স্বর্গ
***



সাইকেলে চড়ে স্বর্গে যেয়ো না ,
স্বর্গে সাইকেল স্ট্যান্ড নেই ।
তারচেয়ে স্ট্রান্ডের ধারে এসো , 
আমরা দু'জনা স্বর্গ খেলনা গড়ি।
ইচ্ছে হলে লঞ্চে চেপে জগদ্দলে যাই ;
বিশ্বকর্মাদের জীবনের পাণ্ডুলিপি পড়ি ।
চটকলের গেটে গেটে সুতলি জড়ানো গিঁট
ধৈর্য ধরে খুলে ফেলি বাতুল স্বভাবে ।
যে- স্বভাবের জন্য আমি তোমার কাছে
কানমলা খেয়েছি বারবার সকালসন্ধে ।



কবিতা
  ***

হঠাৎ বৃষ্টি এলে আমি আশ্রয় খুঁজি না। আকাশই আমার আশ্রয় ; আশ্রয় শুধু নয় , আশ্রম।

পায়ে পা ঠেকলে, আমি সরি বলি না, কপালে আঙুলও ঠেকাই না  বরং পরশপাথরের ছোঁয়ায় সোনা হয়ে যাই।

কথার পিঠে কথা বলা আমার অভ্যেস নয়, তার চেয়ে কথার পিঠে চেপে সান্ধ্যভ্রমণ রমণীয়।

কেমন আছিস ----- প্রশ্ন করি না। কেমন আছেন---- প্রশ্নের উত্তরও দি না। কবিতাই বলে দেয় কেমন আছে সে এবং আমি ভালোই আছি।



পার্ক
 ***



পার্কে পার্কে আঙুরের ছেলেমেয়ে।
বিনিসুতোয় মালা গাঁথা হয় এখানে ,
ঝিঁঝিঁ ডাকার আগেই নেমে  
                       আসে খাজুরাহোর সন্ধ্যা।
বোতলে পোরা বসন্তবৌরি শিস্ দেয় , 
চোখের পাতায় দোল খায় পিঙ্কি রঙের খোয়াব।
আলো ও আলেয়ার সখ্যলীলায় ,
বারোয়ারি দূর্গা প্রতিমার মতো                                                            মুখ বদলে-বদলে  যায়।
সারাদিন চুপ থাকার পর,      
      সাঁঝাল আলোয় মৌন পাহাড় কথা বলে।
কমলালেবুর খোসা ছাড়াতে গিয়ে,
            অর্ধেক রস নষ্ট করে অনামিকা।
অলীক উল্লাসে ভাঙা হয় বীজধান। 
কমা-কোলন সহ্য হয় না---- দাঁড়ি দূর ছাড় !



চিঠি
***


তুমি কেন চিঠি লেখো না অচিরা, অকাতরে
রিলকে পড়ে ভালো লাগার কী কী কারণ----
রাঁবো কেন রাত্রি লেখে নীল চাদরে ?
তিমির তারার আলোকমালায় শুদ্ধিকরণ।

তুমি কেন চিঠি লেখো না সোহিনী, পোস্টকার্ড
গানের সুরে ফোসকা জ্বলন গণিতশলায়;
নীরব ছুটির তিরে সন্তপ্ত কিয়ের্কেগার্ড
নির্বাসনে যাবে দেখো ঠিক জৈন গুহায়।

তুমি কেন চিঠি লেখো না দূর্গা, কে জানে
হলুদ রঙের পরুল ফুলের গল্পকথন;
বাবলা গাছের কাঁটা জড়িয়ে সংসার-টানে
সর্বজয়ার চোখের জলে গঙ্গাদূষণ।



পা
***


এখন পায়ের ছড়াছড়ি ।
শ্যাওলার মতো অসংখ্য পা
                       আমার কানের দু'পাশে ,
যেন পিপড়ের ভূতুড়ে লাইন
                      সরলরেখা------বক্ররেখা ।

এত পা দেখি,
ওই পা দুটোই মনে পড়ে ।


শরীর 
 ***


আমি কি আগের মতো ছাই চাপা আপোড়া                                                                বেগুন
হেনা ঘষে ঘষে চুল দুলালের তালমিছরি
কুয়াশার বলিরেখা কাঁকতালে গল-গলগণ্ডে
চামড়া পিতল লোল নিস্তরঙ্গ আবেগ
বৃদ্ধ হয়েছি দ্বিগুণ একক দশক ব্যবধানে
হেঁট হতে কষ্ট হয় ফ্রেম ভেঙে চুর
এই শুরু এই শেষ----- রক্ত অনাসক্ত মৃত গঙ্গা 
বুড়ো বটগাছের মতো সব পালাবদলের সাক্ষী
বিসর্গ বিযুক্ত দুঃখ টিকটিকির মতো নিরীহ






Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন