1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস | সাহিত্য চেতনা

কবি পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস  

কবি পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস  


কবি পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস   জন্মগ্রহণ করেন উত্তর ২৪ পরগণা জেলার গাইঘাটা থানার অন্তর্গত ঝিকরা
(ডুমা অঞ্চল) নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। পিতা অনাথবন্ধু বিশ্বাস ও  মাতা মীরা রানি বিশ্বাস।
স্ত্রী-ধৃতীজীতা বিশ্বাস ও একমাত্র পুত্র- পৃথ্বীজীৎ বিশ্বাস ।  তাহার  পিতা   একজন
দরিদ্র কৃষক।

কবি ঝিকরা আর.পি. স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে ঝিকরা উচ্চতর বিদ্যালয়, ডেওপুল অধর
মেমোরিয়াল উচ্চতর বিদ্যালয় ও চাঁদপাড়া উচ্চতর বাণী বিদ্যা বীথি থেকে যথাক্রমে অষ্টম , দশম ও দ্বাদশ
শ্রেণী উত্তীর্ণ হন। এর পর তিনি বনগাঁর দিনবন্ধু মহাবিদ্যালয় থেকে কলাবিভাগে স্নাতক হন।

কবি ঝিকরা চিল্ড্রেন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক। সমাজে সকল শ্রেণীর মধ্যে শিক্ষার প্রসারে
সদা সচেষ্ট থাকেন। তিনি বর্তমানে শিয়ালদহ দেওয়ানী কোর্টের গ্রুপ সি পদে
কর্মরত রয়েছেন।স্কুল কলেজে 'গণিত' ছিল কবির অতি প্রিয় বিষয় । কর্মজীবন বাদে বাকি সময় তিনি সাহিত্য চর্চায় নিমগ্ন থাকেন।  বিদ্যালয়ে লিটিল ম্যাগাজিনে কবিতার মাধ্যমে লেখা শুরু করেন।
বর্তমানে কবি 'সীমান্ত বাংলা, যমুনামতি, মহাজনপদ, সাহিত্য চেতনা , যুগ সাগ্নিক ও আর বহু
লিটিল ম্যাগাজিনে লেখা লেখি করেন। ফেসবুক তাঁর খুব প্রিয়। ফেসবুক ছাড়া তাঁর কবিতা প্রকাশিত
হয়েছে স্থানীয় বেশ কিছু লিটিল ম্যাগাজিনে। ইতি মধ্যে ' বাংলাদেশ' থেকে  দশজন কবির কবিতা নিয়ে ' শব্দপুষ্প' নামক কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে।'ইছামতীর চোখে জল' - তার প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ । সাহিত্যের অন্যান্য দিকে যেমন  ছোটদের জন্য গল্প, ছড়া , অণুকবিতা , অণু গল্প, প্রবন্ধ , রম্যরচনা, উপন্যাস ক্রমান্বয়ে লিখে চলেছেন। 'প্রত্যাশা , আজকের মিরকাশিম' অপ্রকাশিত উপন্যাস । তার পরবর্তি কাব্যগ্রন্থ ' বেওয়ারিশ লাস, খুব শিঘ্র প্রকাশিত হবে ।


শাড়ির ভাজে কালসিটে
              ***

বস্ত্র হরণের পালা চলছে সর্বত্র
প্রকাশ্যে দিনের আলোতে
অথবা গভীর অন্ধকার রাতে
যখন তখন সর্বক্ষণ
ফুলিয়া শান্তিপুর ঢাকা
তাঁতকল মিলমালিকের মুখে লম্বা হাসি
সেই পৌরানিক যুগ থেকে আজ অবধি
দু:শাসনের লম্বা হাত অক্লান্ত
তথা কথিত বুদ্ধিজীবিগণ
মুখে কুলুপ এটে
বসে থাকে চিরকাল
পিতামহ ভীষ্ম দ্রোনাচার্যের
চোখে কালো চশমা
রজস্বলা রমনীর রক্তে
প্লাবিত ঘর সংসার
দীর্ঘ লসাগুর মতো
অজস্র মিলের শাড়ি
জমা হয় দিগন্তের রাস্তায়
অসংখ্য ভাজক, ভাজ্যকে ভাগ করে
অসীম ভাগফল
তবু অবশিষ্ট থেকে যায়
আদিবাসী রমনীর উরু উলঙ্গ
গাইতি আর বেলচার আঘাতে
পাড়ের ভাজে ভাজে
নির্বাক শাড়িতে
কালসিটের দাগ
পার্বতী দশভূজা সর্বশক্তিময়ী
দ্রৌপদীরা তবু বিবস্ত্র হয়
কোথায় কর্ণ, কোথায় পঞ্চস্বামী
তোমরা কি আজও নপুংসক  ?
   


 পিরামিড 
     ***


প্রিয় তোমাকে কালরাতে
স্বপ্নে খুব কাছে পেয়েছিলাম
সবেমাত্র পূর্ণ চাঁদ মাঝ আকাশে
দেওয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দ
ঝিঝিপোকার কান্না
মশাদের গুঞ্জন তখন স্পস্ট
দুষ্কৃতকারী নিশাচর দলের
পায়ের শব্দে রাস্তার কুকুর গুলি
কেবলই ঘেউ ঘেউ করছিল
তুমি তখন বিদিশা - শ্রাবস্তীর বেশে
আমার শিহরে এক নিঃশ্বাস দূরে
কাঠবিড়ালীর লেজের মতো
নরম হাত রেখেছিলে কপালে
তৃষিত মন লতার মতো
জড়াতে চেয়েছিল তোমাকে
তবু কী ভীষণ শান্ত ছিলে তুমি
পাছে টিকটিকি ঠিকঠিক দেয়
স্বপ্নে তবু এত ভয়
সকাল নাহতেই চলে গেলে
তবে যাওয়ার আগে ধাক্কা দিয়েছিলে
যেন ভূমিকম্প হওয়ার পর
পরতে পরতে কাপন
দরজা জানালার পর্দা
মাথা দোলায়
কেন এতো আলোড়ন
কেন এতো বিষ্ফোরণ
সংগঠিত কর
মমতাজ ' কে ঈর্শা করে
তুমিও কি সহমরণ চাও
যদি তাই হয়
আমি তবে পিরামিডের মমি হয়ে
শুয়ে থাকব অনন্তকাল
আর হাজারও মশা মাছির গান শুনব ।



ধোঁয়াশা 
   ***
          
 বাগ্মিতার শিল্পে
     শব্দের জাগলারিতে
        ঢেকে যায় বাস্তবতার মুখ
জীর্ণ কাঁথার ভাঁজে
প্রতিনিয়ত উলঙ্গ হয় স্বপ্ন
তবু প্রকৃতির নিয়মে
নিরবে বেজে চলেছে
ভোরাইয়ের আগমনী সুর

অস্তিত্বের সংকট কাটাতে
দরোজা- জানালার পর্দা
হাওয়ার তালে তালে মাথা নাড়ে
পাকা আমের রস ফেলে
উচ্ছিষ্ট ঠোঁটে চুমু খায়
দোয়েল আর ময়না

শুন্য ঘর অন্তহীন রাতের বিছানা
অ্যাসট্রেতে সিগারেটের শেষাংশের
ধোঁয়া আর জীবনের এপিসোড
                      মিলেমিশে একাকার




বিরামচিহ্ন
    ***
   
আমার সমস্ত শরীরে আজ বিরামচিহ্ন
হৃদস্পন্দন যেন ক্রমিক হাইপেন
ডান হাতে দাড়ি অথবা পূর্ণচ্ছেদ
বাম হাতে সেমিক্লোন
মাথার চুল গুলি সব
প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় বন্ধনী
আর চোখের দৃষ্টি যেন ক্রমিক ডট
ডান পায়ে কমা বাম পায়েও কমা
এতসব বিরামচিহ্ন মাঝে কন্ঠ যেন
বিস্ময় বোধক জিজ্ঞাসা চোখে মুখে


 স্বপ্ন 
  ***

স্বপ্ন মানে, রং তুলিতে আঁকা; তোমার অবয়ব।
স্বপ্ন মানে, কল্প কাহিনী - তোমারই তো সব।
স্বপ্ন মানে, দুঃখ ভুলে, সুখের জাল বোনা ।
স্বপ্ন মানে, আকাশ জুড়ে- হাওয়ার বিছানা ।
স্বপ্ন মানে, আবেগ মোহিত অনাবিল আবেশ ;
স্বপ্ন মানে, তুমিই শুরু; তোমাতেই সব শেষ ।



যদি মনে পড়ে 
       ***

একটা ঘুরঘুটে অন্ধকার নিঝুম রাত
ফেলে রেখে যাচ্ছি
স্বপ্ন দেখো নদী- জল -
বাঁকা নৌকো চলকানো ঢেউ
একটা খাঁ খাঁ দুপুর
একমালা ভাদ্রুরে রোদ রেখে যাচ্ছি
সিদ্ধ ধান ভিজে মশাল শুকিয়ে নিও
শুধু তোমার জন্য একটা
কবিতা লিখে যাচ্ছি
তাতে সাত সুর বেঁধে
তোমার নিজের গলায়
একটিবার অন্তত গেয়ো
দেওয়াল আলমারিতে
কয়েকটি বই রেখে যাচ্ছি
শোবার সময় অন্তত একটি বই
মাথার বালিশের পাশে রেখো
মহাকাশের মতো ফাঁকা একটা
ক্যানভাস রেখে যাচ্ছি
সঙ্গে কিছু রং তুলি
অকারণে আচড় কেঁটো ।


 স্বাধীনতা 
      ***

 স্বাধীনতা তুমি কোথায়
ছদ্মবেশে অভিধানের পাতায়
বাঁশ দড়ি পতাকায়
নাকি ইট সিমেন্টের বেদীতে
নাকি শত শত শহীদের
আত্মীয় পরিজনের স্মতিতে

কোথায় তুমি স্বাধীনতা
যাত্রা থিয়েটারে নাটকের মঞ্চে
উপন্যাস গল্পে কবিতা গানে
নাকি নেতা নেত্রীর ভাষণে

স্বাধীনতা কোথায় তুমি
মানুষের পকেটে মোবাইল রিং টোনে
নাকি সোস্যাল মিডিয়ায়
ফেস বুক ওয়াটস্ অ্যাপ প্রফাইল পিকচারে
তোমাকে খুঁজে খুঁজে
ভীষণ ক্লান্ত আমি
স্বাধীনতা, তবুও তোমাকে পেতে চাই
উন্মুক্ত চেতনায় প্রেমিকের চোখে
শহুরে রাস্তায় ফুটপাতে
হকার ফেরিওয়ালার মুখে
কেন তুমি আবদ্ধ থাকবে
শুধুমাত্র কল্পনার চিত্রকলায়

স্বাধীনতা, তোমাকে চাই
বেকার যুবকের চোখে
শ্রমিক কৃষকের হাহাকারে
অন্ধ ভিখারীর ঘামে ভেজা কাপড়ে
বাস্তবতায় মানবিকতায় ভালোবাসায়
তুমি কোথায় স্বাধীনতা
কবে, কবে আসবে তুমি  ?



আসবে তাই 
       ***

ঘুম ভাঙলেই চোখ মেলে
প্রথম তোমাকে দেখব বলে
একটা আস্ত রাত-
এক নিমেষে হেঁটে পার হলাম ।
দুপুরে তোমার নিজের হাতে রান্না
কলমিশাক আর কড়াই শুটির ডাল
খাব বলে অকারণে
ছুটি দিয়েছি বাবুর্চিকে ।
বিকালে শুধু তোমাকে নিয়ে
দিগন্ত পারে-
সূর্য ডোবা দেখব বলে
কাক-কোকিলদেল নিঃশব্দে
বাসায় ফিরতে বলেছিলাম ।
সেই কাক ভোর থেকে
ভর দুপুর
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা এল
কখন আসবে তুমি ?



ইছামতির চোখে জল 
             ***

ইছামতি তোমার চোখে জল
তোমার করুন আর্তনাদ
আমার বুকে আমাদের বুকে
তীরের মতো আঘাত করে
বারে বারে

তোমার উচ্ছ্বল যৌবন ঢেকে গেছে
দাম আটা কচুরি পানায়
তোমার লাবন্যের মুখে আজ
পাতা শ্যাওলার ছ্যাদলা
তোমার গতিমর দুটি পা
কালের তীরে অবরুদ্ধ

আচ্ছা ইছামতি তুমি কি
গভীর রাতে একা একা কাঁদ
কেন কাঁদ
কার জন্য ফেল চোখের জল
তোমার চারিধারে স্বার্থান্বেসীর দল
লোলুপ দৃষ্টিতে
তোমার গতি লক্ষ্য করে
কেউ কেউ তোমার হাত পা কেটে
করেছে ভাটা দিয়েছে ভেড়ি
কেউ আবার তোমার দেহের
সব রক্ত চুষে
বানাতে চায় ইমারথ

জানি আজ আর কেউ
খেলতে চায়না তোমার সাথে
তোমার খেলার সাথী 'অপু-দুর্গা'
আজ তারা অনেক দূরে
আকাশের গহ্বরে
তবু তারা প্রার্থনা করে
প্রতি বরষায় যৌবন আসুক
তোমার বুকে
আবার তোমার শরীর
নেচে উঠুক উচ্ছ্বল আনন্দে ।


বেওয়ারিশ লাশ 
          ***

তোমাকে ভেবে ভেবে
চলে যাই ইতিহাস থেকে আরও অতীতে
মুখের লালা শুকিয়ে আসে
হৃৎপিণ্ডের রক্তসঞ্চালনে গতিপথ পরিবর্তিত হয়
গঙ্গোত্রীর মতো অশ্রুধারা
নেমে আসে দু'চোখ বেয়ে
তোমার মৃত্যু আমাকে পাষান করে তোলে
শুশুনিয়ার মতো মাথা মুড়িয়ে
হাঁটু গেড়ে বসে পড়ি ছ্যাৎছেতে মাটিতে
লোক মুখে শুনেছি
এক বিধবা মায়ের একমাত্র অবলম্বন
তার দুধের শিশুকে বাঁচাতে
অকালে এমন তাজা প্রাণ ঝ'রে গেল
কেন কীসের প্রতিবাদ করো তোমরা?
পৃথিবীর মতো স্বার্থপর হয়ে
আপন গতিতে ঘুরতে পারোনা !
সমাজ সেবা,দেশভক্তি
এসব আজ দুরারোগ্য ব্যধি
সেই রোগেই প্রাণ দিলে!
একবারও বিবেকানন্দের কথা
নেতাজীর কথা মনে এল না!
শুধু ১২ই জানুয়ারি,
২৩শে জানুয়ারিতেই শেষ!
সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করা
দেশকে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া
এসব কেবলই সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে
নেতা-নেত্রীর ভাষন আর বুলি
ভেবে অবাক হই
বেঁচে থাকতে কোন কমিউনিষ্ট
তোমাকে বলেনি কমরেড
জানাইনি লাল সেলাম
কোন ডান পন্থি নেতা
তোমাকে সতীর্থ বলে
করেনি সম্বোধন
অথচ আজ
তোমার শবদেহকে
লাল পতাকায় মুড়ে
পার্টি অফিসে রাখবে বলে
অসংখ্য সাদা পোশাকে ছদ্মবেশী
বামপন্থি নেতা জিন্দাবাদ
ধ্বনি দেয় তোমার নামে

তোমাকে কমরেড
তোমাকে সতীর্থ বলে
নিজের পরিচিতি বাড়াতে চাই না
সংবাদ পত্রে ছবি ছাপাতে চাই না
ইলেকট্রনিকস মিডিয়াতে মুখ দেখাতে চাইনা
পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনায় বসতে চাইনা
অসংখ্য মানুষের ভিড়ে
সকলের অলক্ষে
এক ফোটা চোখের জল ফেলতে চাই
মাটিতে নিত্যান্ত অযত্নে
লুটিয়ে পড়ে থাকা
বিকৃত ছিন্নভিন্ন তোমার দেহখানি দেখে
আমি অন্তত কাউকে কাঁদতে দেখিনি
যে বিধবা মায়ের শিশুকে বাঁচাতে
বলি হলে তুমি
তারও চোখে এক ফোটা জল আসেনি
জানিনা তোমার জন্মদাত্রী
দুঃসংবাদটি পেয়েছে কিনা!
তবু এত মানুষ
যারা তোমার শেষ যাত্রা দেখতে এসেছে
কেউ বলেছে বেচারা
কেউ বলেছে আঃহাঃ
কেউ বলেছে ছিঃছিঃ
কেউ বলেছে এমন করে-
সত্যিইতো এমন করে
তোমার হাত দু'টো কাঁটতে
তাদের হাতের অস্ত্র
একটুকুও কি কাঁপেনি !
রাইফেলে কতটা গুলি থাকলে
এভাবে ঝাঝরা করা যায় বুক
তাদের রক্ত লাল না কালো!
জল্লাদের দল
যতই তোমার দেহকে টুকরো করুক
তোমার মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখে মনে হয়
তোমার প্রতিবাদ
ঐ রাইফেলের গুলির চেয়ে তীব্র
তোমার বিষ্ফারিত চোখ দেখে মনে হয়
ঘাতকের দল তোমার হাতে নগ্ন হয়েছিল
তোমার মুখ ঠোঁটহীন দাঁত গুলি দেখে মনে হয়
অন্তত একজন
কেবল একজন যদি
হাতিয়ার নিয়ে দাঁড়াত তোমার পাশে
তুমি সে সময় বুড়ি বালামের লড়াই লড়তে
তোমার মুষ্টিবদ্ধ হাত
তোমার তীব্র প্রতিবাদ
তোমার বিষ্ফারিত চোখ
তোমার মুখ ঠোঁটহীন দাঁত নিয়ে
কত আলোচনা সমালোচনা
তবু কেউ-
শেষ যাত্রায় এক গ্লাস জল
দেয়নি তোমার মুখে
তোমার কথা ভেবে
আকাশ আজ কাঁদে
মেঘেদের দু'চোখ ভরে জল
বৃষ্টি হয়ে নামে
তোমার তৃষিত মুখে ।


ভালবাসা পেলে 
         ***

তোমাকে পেলে-
ফেরারী মনটা সংসারী হবে ।
ইলিশ-চিংড়ি জুটাতে না পারি ,
আবাদের ঘ্যাটকোল বাটা ,
কিম্বা পিপুলের ডাটা
রেদে দিও; আর-
তালপাতার হাওয়াটুকু দিও ।
তোমাকে পেলে আবার কবিতা লিখব ।
আমার কল্পনার ছন্দ তুমি ।
তুমি এলে তবে-
আবার গান গাইব ।
তোমার ওই শিশুর মত হাসি ,
আমির হারিয়ে যাওয়ি স্বরলিপি ।
যদি তুমি চাও-
প্রকাশ্যে চুমু খাব গালে -
কেউ যদি মারে মারুক ,
থাপ্পর দেয় চোয়ালে !
ভালবাসা পেলে -
কে কার চোখ রাঙানি শোনে ।


বাঙালী
   ***


বাঙালী নিজেকে আজ বাঙালী বলতে
ভীষণ লজ্জা করে !
লজ্জা করে ভীষণ ।
ভাবতে অবাক লাগে -
সালাম,বরকত-আকবরদের মত ;
কতশত প্রাণ শহীদ হয়েছিল ,
এই বাংলা ভাষার জন্য ।
এই বাংলা ভাষার জন্যই আজ ;
অমর একুশে ফেব্রুয়ারী ।

পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ-আসাম-ত্রিপুরা ;
পৃথিবীর যে কোনো দেশে আজ ,
বাঙালির পদচারণা ।
মেকি ছদ্মবেশীগন
নিজেদের বাঙালী বলে জাহির করে ।
বাংলা ভাষাকে মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে তুলনা করে ।

তোমরা বুকে হাত রেখে -
পিতা-মাতা অথবা ইশ্বরের নামে ;
শপথ নিয়ে বলতে পারো ?
তোমরা কেউ একটানা-
নির্ভেজাল বাংলায় ;
কথা বলতে পারো !
গুরুচন্ডালী আজ আমাদের
অস্তি মজ্জায় ।
বাংলা -হিন্দী-ইংরেজী মিশিয়ে ;
খিচুড়ি ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত।
বাংলা সাহিত্যে -
সে কবিতা হোক কিম্বা উপন্যাস ;
প্রবন্ধ হোক অথবা ছোট গল্প ,
এমনকি রম্যরচনাতেও-
বিদেশী শব্দ ভাণ্ডারের অবাধ বিচরণ

একটু বলনা সত্যি করে -
বাংলার আকাশ কি অন্ধকার মেঘে ঢাকা
এখন কি গোধুলীবেলা পুব আকাশে
রামধনু দেখা যায় না !
এখন কি বাংলার আকাশে বাতাসে
সোনিলী ধানের গন্ধ ভেসে আসে না?
না কি কীটনিশক আর বিষ
ছড়িয়ে আছে সর্বত্র !

ক্ষুদিরাম-নেতাজী-স্মামীজি আমার রক্ত ।
রবীন্দ্র-নজরুল আমার সুর আমার গান ।
অবরীন্দ্রনাথ-যামিনি রায় আমার মুখ আমার ছবি।

আমরা যে মহাসমারোহে
যে আড়ম্বড়ে পহেলা জানুয়ারীতে মাতি ।
আমরা কতজন বাঙালী
পহেলা বৈশাখে
কত প্রিয়জনকে
বাংলায় লিখি-আমি তোমাকে ভালবাসি ।
স্মরণ করে বলতে পারো
কাকে কবে 'রুপসী' বাংলা কিনে দিয়েছ ;
'মৌরিফুল' 'আরণ্যক' দিয়েছ উপহার ?
মাথা চুলকে চুলকে
চুল যাবে ছিড়ে
তবু শুধু হ্যারিপটার আর
পাবলু নেরুদা ঘুরপাক খাবে ।

ফি বছর বিভিন্ন চ্যানেলে পত্রিকায় ;
যারা সেরা বাঙালীর পুরষ্কার পায় ;
তাদের বর্তমান ঠিকানা
বিদেশে-আমেরিকা-ইংল্যাণ্ড-জার্মানী ।
স্বদেশে-মুম্বাই,ব্যাঙ্গালুরুতে,
বাংলায় নয় ।

নিজেকে বাঙালী বলতে
সত্যি সত্যিই ভীষণ লজ্জা করে ,
লজ্জা করে ভীষণ ।



জীবনকে উপভোগ করতে হলে 
                     ***
 
জীবনকে উপভোগ করতে হলে দৌঁড়াও ;
দৃষ্টি রাখো স্থির এবং শুধুই সামনে ।
মাঝে মাঝে ডাইনে  বায়েও তাকাতে পারো ;
তবে ভুলেও পিছন ফিরে দেখোনা ।
চলার পথ চড়াই উতরায়ে ভরা ,
একবার পা পিছলে গেলে -
হাত ধরে টেনে তুলবেনা কেউ !
বরং সুযোগ পেলে মিরজাফরের দল ঠেসে ধরবে ।
যাতে তুমি তলিয়ে যাও অতল গভীরে !
যদি জীবনকে উপভোগ করতে চাও ; তবে -
তোমার অভিধানের পাতা থেকে  ,
ভালোলাগা - ভালোবাসা শব্দ গুলিতে ,
কালো রঙের সেলুটেপ লাগিয়ে দাও ।
ওই শব্দ গুলি আগুনের চেয়ে শক্তিশালি !
আগুন তবু দাহ্য বস্তুকে ছাই করে ;
কিন্তু এরা জীবনের অস্তিত্ব একেবারে শেষ করে ছাড়ে ।
যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় ;
গড়ের মাঠে হনুমান দখলে -
তাকে দশ টাকার বাদাম কিনে দিয়ো  ;
আর রামায়ণের গল্প শুনতে চেয়ো ।
দেখো সে বুক চিরে দেখিয়ে দেবে -
ভালোবাসা কী আর কোথায় থাকে ।
রাম- সীতার জন্য হনুমানের মুখ পুড়লেও ;
কীভাবে বুকের মাঝে আগলে আছে ,
তার ভালোবাসা তার আরাধনা ।
মাঠে যেতে যেতে গঙ্গাফড়িং
 পঙ্গপাল দেখেছো নিশ্চয়  !
তোমাদের কী মনে হয়  ?
 ওইসব  গঙ্গাফড়িং পঙ্গপালেরা
সব কি কেবলই ফসল খায় ?
আমার সেটা মনে হয় না কখনো ।
আসলে তারা ফসলের রক্ত চুষে নেয় !
তাইতো ফসল নষ্ট হয় গোড়া থেকে ,
পড়ে থাকে শুধু  অস্তি চর্ম সার খড় ।
ওই সব হনুমান ওইসব গঙ্গাফড়িং পঙ্গপাল দেখে -
পা আটকে রেখোনা মাটিতে ।
দৌঁড়াও কেবলই দৌঁড়াও ;
দৃষ্টি রাখো স্থির এবং শুধুই সামনে ।
রাতের সামান্য অন্ধকারের মতো -
ব্যর্থতাকে ভুলে আরো দ্রুত পা চালাও ।
হাজার বছর পথ হাঁটার পরেও ;
'জীবনানন্দ দাশের ' বনলতা সেন ' জানতে চায় ,
এত দিন তিনি কোথায় ছিলেন !
এরই নাম জীবন ।
সেই জীবনকে উপভোগ করতে হলে -
দৌঁড়াও আর দৌঁড়াও আরো দৌঁড়াও ।



এই  বিভাগে লেখার জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করুন  

                        লেখা জমা দিন





Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন