কবি তানিয়া চক্রবর্তী
কবি তানিয়া চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন ২২শে নভেম্বর ১৯৯০ সালে, হুগলী জেলার রিষড়ায় । কবির প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে উনিশ-কুড়ি পত্রিকায়।২০১১ সালে প্রথম কবিতা প্রকাশিত । দেশ,উনিশ-কুড়ি,কবিপত্র,কৃত্তিবাস,কবিতা পাক্ষিক,যুগান্তর,ভাষানগর, আজকাল ,একদিন,ঐহিক,কবিসম্মেলন,বিডি নিউজ(বাংলাদেশ),আমাদের সময়(বাংলাদেশ),বৈখরী ভাষ্য,বৈশাখী (বাংলাদেশ),নান্দীমুখ, নন্দন, উত্তরবঙ্গ সংবাদ ইত্যাদি পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ -১) কিছু একটার জন্য(পাঠক প্রকাশনী, ২০১৩কলকাতা বইমেলা) ২) পুরুষের বাড়ি মেসোপটেমিয়া (সৃষ্টিসুখ প্রকাশনী, ২০১৫কলকাতা বইমেলা) ৩) রাহুকেন্দ্রিক ঋতুকাল( শুধু বিঘে দুই প্রকাশনী,২০১৬) ৪)লম্পট-(ছোট কবিতা প্রকাশনী, বাংলাদেশ একুশে বইমেলা ২০১৭)৫/ আমিষ বিবাহ (২০১৭ নভেম্বর, আত্মজা প্রকাশনী)৬/ জুনিপোকার আলোয় বাঁধা ঘর (কারিগর প্রকাশনী ২০১৮) ৭/ পুতুল মানুষ (সিগনেট ,২০১৯) ।
এছাড়াও গদ্যগ্রন্থের মধ্যে আছে বৈতরণি ও অন্যান্য (বই তরণি প্রকাশনী ২০১৮) ।
২০১৬ তে কালিমাটি পত্রিকার “সমকামীতা-রূপান্তরকামীতা” ও ২০১৭ তে “অতিপ্রাকৃত” এই বিশেষ সংখ্যা সম্পাদনা। ২০১৮ তে আত্মজা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্য বিরচিত “মহাভারত ও অন্যান্য” বইটির সম্পাদনা করেন।
তিনি কালকথা পত্রিকার সৌজন্য “কালকথা সম্মান ২০১৪”। ইতিকথা পত্রিকার সৌজন্য “ইতিকথা যুব সম্মান ২০১৬”। শব্দসাঁকো সাহিত্য সম্মাননা ১৪২৪ । বিনয় মজুমদার সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের “চাকা সাহিত্য সম্মান ২০১৭”। রাঢ় বাংলা আন্তরিক সম্মাননা ২০১৮ ইত্যাদি। ভাষানগর মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরস্কার, ২০১৯। সময়ের শব্দ স্মারক সম্মান । বসিরহাট লিটল ম্যাগাজিন মেলা পদ্য পুরস্কারে সম্মানিত হন ।
কবি তানিয়া চক্রবর্তীর একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :
তুন্দ্রা
***
ওঃ তুন্দ্রা , আঃ তুন্দ্রা, নে তুন্দ্রা, খা তুন্দ্রা
সমস্ত তোরা সাভানা খাবি
জানি, এটা গ্রীষ্মপ্রধান লিঙ্গনিধান উষ্ণশোণিত
মেরুর বুকে সূর্য এলো বলে
নাড়ির পিছন শাড়ির পিছন নারীর পিছন
টম্যাটো ছুঁড়ে মার --- লা টম্যাটোনিয়া
চাঁদের গায়ে ভাত লেগেছে --- নষ্ট পোকায় চুমু
রোদ খেয়ে নেয় হেঁচকি
ওঃ পুতল এও পুতুল
কী বাড় ওরা বাড়ছে --- কোথাও কেউ হাসছে
মেরুর মুখে আয় --- কামড়ে নে চামড়া
ওঃ তুন্দ্রা আঃ তুন্দ্রা --- নীল করব তোকে
ছোবল
***
বুঝে নিও ধ্বংসের কত কাছে ছোবল
ভেবে নিও সৃষ্টির কত কাছে ছোবল
চেঁরা জিভ --- উজবুক নেশা
মাঝরাত পেরিয়ে কাকতালীয় পুরুষ
জাতীয় নাভির সঙ্গে নগ্ন আকাশে কালভৈরবী
পেশি - স্নায়ু খুঁটে খাই সন্ধিস্থলে
ধবংসের আগে অমসৃণ চিন নিয়ে এসো
ঠোঁট ভেজিয়ে বোলো তুমি আপত্তিজনক নও...
তিল
***
তিল তিল করে ওটা বাড়ছে
ওটা হয়ত অশনি সংকেত
–প্লিওমরফের কাঁটাতার
উষ্ণায়নের বরফঘরে রঞ্জকহীন সব্জি
ডান পাশে ব্যাথা
–বাঁ পাশে ঘাটা চাঁদ
জমিতে ভক্তদের ভ্রু নিধান
হাড়িকাঠে ঊরু আর সমস্ত স্লিপ ডিস্কের জন্য
–চিপ চিপ চিপস
ক্লিভেজ শুধু স্তনে নয়
ভ্রুণের ঘুমে – মরুলায় থাকে
এবার সমস্ত অবৈধ তিল আসঞ্জন শিখবে
কমনওয়েলথ
***
একটা সাম্রাজ্যবাদ
চুক্তিতে চু চু চু-কিত খেলছে
দ্রাঘিমায় পায়রা ওড়াচ্ছে
পুরশ্চরণের জন্য ভ্যালিয়াম টেন
ইষ্টসিদ্ধির জন্য বিছানায় হাঙ্গর পোষা
তাপদায়ী বিক্রিয়াগুলো সুড়সুড়ির কোরাস
--- একটা কমনওয়েলথ
কত বিলিয়ন উলঙ্গ হয়ে গেছে
জানার আগে ধেই ধেই করে বসন্ত আসে
পর্ণমোচীর পাতা আর গাছপাঁঠা দিয়ে
দম্পতির হাবুডুবু খায় নাইটল্যাম্প
পাওয়ার কাট --- পাওয়ার কাট
কমনওয়েলথ --- কমনওয়েলথ
গন্ধিপোকা
***
ফানুস জুড়ে গন্ধিপোকা
নির্মোচনের দুপুর জুড়ে দাগ
দাগের কোলে রাত্রিকালীন জুনির আলো
বিজিতরা সব লালারসের অতিবলা
এদের জন্য ঘর ফুটো হয়
ঘর ফুটো হয় রাত্রিবেলায়
---চারিদিকে পাখনা ওড়ে
এদেশে
***
যে মেয়েগুলো শিল-পাঁটা নিয়ে
গাছ জড়িয়ে ধরে --- ওদের জ্বরে বাড়ে আয়ু
এ জাতীয় চিন্তার স্রাবে বুড়ো শালিকের চুল---
দুল পড়ে আকন্দে তাকানো মেয়ে
দেবদাসী হয়ে যায়---
যদি ফুলকি থাকে
ডাকা হয় বেশ আয় না, বেশ আঃ
উল্কিমাফিক
***
১
ওখানে কোনো চিহ্নের দরকার নেই
ওখানে কোনো দাগ নির্বিকার!
আসলে একটা যুদ্ধ করি নিয়মিত
গোচরে বা অগোচরে তারা হাততালি দেয়...
সাদা দেয়ালের গায়ে মেশিনের কান্না
তারপর ঝোলে ছবি
কি ঘন তাড়িত আওয়াজ!
একটি বিশুদ্ধ রাতের অসম ঘূৎকার
এখানে সমস্ত যাযাবর পিঠে লালাভ দাগ
ছিন্নমর্মে মুর্খ দোলকের গল্প
২০ মিনিট যুদ্ধের পর
পৃথিবীর গালে চড় মেরে
সূর্যকে বাঁচাতে ইচ্ছে করে খুব!
বিদীর্ণ এতো করো
যাতে মানবিক শ্লাঘায় উতরোতে পারি রোজ---
ওখানে ছবি ফুটুক
শরীরী স্থাপত্য জুড়ে খসে যাক ভয়,
ব্রিটনি চিৎকার করে টক্সিক, টক্সিক
ক্রমশ শিথিল করেছি পিঠ
দাগ বসে থাক, স্মৃতি খসে যাক
২
(উৎসর্গ- ল্য দ্যজিয়েম সেক্স)
আমি ডিম্বাণু থেকে, তুমি শুক্রাণু থেকে
কিছুটা গর্ভপুষ্পের কারসাজি
এখানে ভয়ঙ্কর উন্মাদনা বলে
দূর থেকে দেখি বিপথগামীর হাসি
এসবের বাইরে নিষিক্ত একাকার এক অরণ্য
গাছ থেকে পাতা, পাতা থেকে মাটি
তীব্র শরীরের মাঝে ঝিমোচ্ছে কাকতাড়ুয়া
এখানে জেতেনি কেউ, সময় জিতে গেছে
হিসেবে আহত জল
সমস্ত রং –এর জন্য রঙহীন হয়ে আছে
এখানে কবিতা নেই কোথাও
উল্কির শরীরে ভেসে আছে স্তোকের শিহরণ
আসলে নারী বা পুরুষ নয়
গোটাটা জুড়েই মানুষ কিম্বা অমানুষ
ধারাপাত
***
বয়ে যায় খিদে, বয়ে যায় ক্ষমা
বইছে দেখো, আকুল বেগে সকল পথহারা
ফোয়ারা সে জলের কোলে
জলীয় হয়ে তুরীয় হয়---
তুরীয় হোক, তুরীয় হোক
বীথির মধ্যে দাঁড়িয়ে যেন হাসছে বাতাস
কাঁপছে ঘর, বৃষ্টি এল বলে
তুরীয় হোক, তুরীয় হোক
কুশাসনে যোগী বসে, ফোয়ারা জুড়ে প্রাপ্তি
অগ্নিবীণায় হুতাশনের পাগলপারা শিস
আলুথালু অন্ধকারে শক্তি নামে, শক্তি ওঠে
শোষণ এক ক্রিয়ার মতো
আঁকড়ে ধরে গতি, খুলে দেয় গতি
শোষণ... শোষণ... শোষণ
ঘোরের মধ্যে ঘোর লাগল
চামড়া উড়ে মায়া হয়ে ফোটায় শুধু গতি
গতি... গতি... গতি
গতির জন্য রব উঠেছে --- শোষণ ধারাপাত
রত্ন
***
গলা জড়িয়ে চুমু খাও
গলা জড়িয়ে হার পরাও
গলা জড়িয়ে ফাঁস দাও
ধাতুক্রিয়ায় বান আসছে
রত্নের ফাটলের জন্য একটা নিয়তি
আঙুল বিমুখ করে স্বমেহন শেখাচ্ছে...
পিং-পং
***
উল্টে গিয়ে বসে আছি
দেখছি কী তীব্র খেঁকশেয়াল !
শুনছি কী তীব্র তার শব্দ !
আমার ঘরের মেঝেতে তার আতুড়
আমার কোলে তার শিশু
ক্রমশ খেচর হয়ে গেলাম
সমস্ত নিম্নজ অঙ্গে দেখলাম মুদ্রা
স্তনের বদলে গলা থেকে বেরোলো দুধের ধারা
মাথায় এসে ডমরু বাজাচ্ছে বোলতা
আমার সারা শরীর জুড়ে একটা মা,
আমার সারা শরীর জুড়ে একটা বাবা,
আমি কী ইন্দ্রের গায়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম !
অগ্নি এসে দেখলেন চুমু খেতে খেতে
বাষ্প হয়ে যাচ্ছি আমি
আর কী সব শব্দ চাষ করে
নিয়ত জন্মাচ্ছি চাষীর ঘরে !
নারীত্বের মাথায় এসে বসেছে মণি
মণির লোভে সমস্ত সাধকের
একপক্ষকাল পক্ষাঘাত---
এত কী বুঝতে চাইছ
সমস্ত বোঝার উর্দ্ধে এই বেঁচে থাকা...
বাঁকে বাঁকে গোলাঘর
***
১
গ্লানি থেকে গ্লানি অবধি খাটুনি ও দ্বন্দ্ব
পরাশ্রয়ী তাড়নায় শষ্যসাধনা হয় বিছানায়
কী ময়লা প্রেমের পর
দ্রাঘিমা দ্রষ্টব্যকে চড় মেরে
ফেলে দিল ড্রেনে !
সেই থেকে জৈবিক পৃথিবীতে প্রেমের পর
যোনির কবিতা লিখেছে কারা যেন !
২
এসো ঘি, মধু ও প্রাণায়ামে
কর্ণমাফিক নিরাময় খোঁজো
আমার আলো, যা তোমার ভেতর প্রতিসরণ
শেখার পর কবচ পড়ে ডিগবাজি খাচ্ছে
তাকে মিলনের আগে তীব্র মৈথুন শেখাও
শব্দ, উপমা, শীৎকার ও চিৎকার করাও
ধুকপুক দাও, দাও দরদাম
আঁচিয়ে আঁচিয়ে বিশ্বাস করো
তার লিপস্টিক কামনা !
বৃক্কের পাইপের স্থিতিস্থাপক ধর্ম চেপে দেখো,
শোধনাগার কত বর্জ্যের বন্ধুতা নিয়ে বড় হচ্ছে
৩
সাইকেলে হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়ানো মেয়েটা
কুয়োতে অভিশাপ ও ভ্রূণ জমানোর পর
আধুনিকার কোমর দেখছে
কোমর থেকে ধুপধাপ পড়ে যাচ্ছে লাল, সাদা
দুধে আলতা অসমাপিকা পাপ
৪
আমরা আড্ডাঘরে চুমু ও কুঁড়ি প্রসঙ্গে ঘুরছিলাম
পৃথিবীর কেন্দ্ররসায়ন ও নাভির অবিনশ্বর আদেখলামোর পর
আমরা জোম্বিদেরও প্রণাম করব হয়ত বা!
এই বিরাট লাইন যা অ্যানাকোণ্ডার মতো
দেশজ বাতের বেদনাকে মৌমাছির হুলের ওষুধের লোভ দেখাচ্ছে
তাকে সহিষ্ণুতা বা মাইগ্রেন বলে ডাকছি---
৫
গাঢ় গাঢ় পেগের পর
রেটিনায় স্ত্রী,প্রেমিকা, রক্ষণশীল উপেক্ষা
এক হয়ে লিফটের ত্বরণ শেখাচ্ছে,
বোধ ও অবোধ এক মেঝেতে দর্শন লোটাচ্ছে
একই ভাঁড়ে চা -এর তারল্য ও মাটির কাঠিন্য চুষছে ,
“চা-চা-চা” –এর আগের ওয়ান টু
একটা ম্যাজিক ভূমিকার ভেলকিবাজি
পাকদণ্ডীতে বসে পৃথিবীর বিনাইন তিল দেখেছেন ঈশ্বর
আর মিমিক্রিসুলভ মানুষ অমানুষ হচ্ছে বেঘোরে!
তারপরও অমানুষ মানুষের জন্য যজ্ঞের কবিতা লিখবে
ক্রিমিনালও কাব্যি করবে বিবর্তনের
এখানে “যাচ্ছেতাই” আমাদের মুক্তির মিউকাস বলে
পিছলে পিছলেও ওড়ার স্বপ্ন দেখি,
কনিক্যাল ফ্লাস্কে আমাদের কায়েমী সন্তান বড় হবে
মায়ের পেট ছাড়া আর বাবার বিষণ্ণ স্পার্ম সক্রিয়তায়
বালির বৈভবে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের মতো
বালা নিয়ে গ্রহাণুপুঞ্জকে ধমকাবে নিয়তির গমনের জন্য
আমাদের লজ্জাবতী প্রাণ মাটির নীচে ঝিমোচ্ছে
বাকিটা তালি মারার খেলা--- ক্রমশ খেলে যাব
প্রতিপক্ষ বদলাক বা না বদলাক!
মৃত
***
আমায় মেরেছ তুমি
আসলে মারোনি, মেরেছ বাগানের সদ্য ফুল
আমায় শুষেছ তুমি
আসলে শোষণ নয়
মৃত্যুর যত কাঠ হারিয়ে ফেলেছ !
ঘাম মাখা হাতে সূর্যের খোলস ছুঁয়েছি,
আঙুলের ফোসকার দিব্যি
ওখানে শরীর অশরীরী ছিল বহুদিন---
আমায় মেরেছ তুমি
আসলে সমস্ত খেচর প্রাণী
পৃথিবীর বুকে শুধু ছায়া রেখে যায়---