কবি দেবাশিস লাহা
প্রায় এক দশক ধরে কবিতা,গল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন দেবাশিস লাহা । যদিও লেখালেখির ক্ষেত্রে এক দশক খুব বেশি সময় নয় ।
অথচ বলার কথা, এই অল্প সময়ের মধ্যে কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক দেবাশিস লাহা ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র নাম হিসেবে বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ আসন নিয়ে ফেলেছেন । কেবলমাত্র লেখালিখি সূত্রেই তিনি ইউরোপ ভ্রমনও করেছেন । একজন লেখকের কাছে এটা কিছু কম প্রাপ্তি নয় ।
অতি সম্প্রতি তাঁর প্রবন্ধ গ্রন্থ 'অমৃতস্য পুত্রাঃ' পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে । আরও বলার, এই লেখক কলম স্যাটায়র ধর্মী লেখায় বিশেষভাবে সিদ্ধহস্ত ।
কবি দেবাশিস লাহার একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :
স্বদেশ
***
অর্ধভুক্ত একটি মৃতদেহকে আমি স্বদেশ বলে জানি ;পুবে হায়না, পশ্চিমে যুথবদ্ধ শৃগাল ;মধ্যে নেকড়ের দল --সাম্যবাদী অভিজ্ঞানে কিছুদিন আগেও যাদের মেষ বলে মনে হয়েছিল!
তবু বারান্দায় দাঁড়ালেই আমি প্রতিবাদ দেখি, মানবতার কথা বলা এই সব কলমের নিবে জন্মদাগের মত কিছু গর্ভনিরোধক লেগে থাকে, ফেয়ার এণ্ড লাভলি আর এক্স এফেক্টের সুবাসে নৃশংসতম চাপাতিও খেলনা হয়ে ওঠে বলে কী সরল বিশ্বাসে আমি দোলনা কিনে ফেলি!
প্রতিবাদী, এসো, তোমাকেই কুর্নিশ করি! তুমি, শুধু তুমি হেঁটে যাবে বলে মিছিলের পথে পথে আমি জুঁই আর রজনীগন্ধা রেখে এসেছি ;স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও আমার আত্মজার লাশ ফুল ছাড়া-ই শ্মশানে যাবে !
মোমবাতি
***
নারীদেহ মাত্রেই যেহেতু হুকুমত অথবা গণিমতের মাল, ধর্ষিতার লাশকে এক তাল রক্ত মাংসের চেয়ে বেশি কিছু ভেবে নেওয়ার অর্থ এই যে তুমি এখনও সাবালক হওনি ;সামান্য একটি ক্ষতবিক্ষত যোনী আর তুচ্ছ দুটি ছিন্নভিন্ন স্তন তোমার নৈশভোজে ব্যাঘাত ঘটালে জেনে রেখো তুমি তেমন ব্যাকরণও জানো না --লীলাময় ধরণীতে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম বলেই কর্তাটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ; তাই হে অর্বাচীন, মোমবাতি কেনার আগে ধর্ষকের লিঙ্গ দেখে নিও ;কর্তিত হলে রহিম, অকর্তিত হলে রাম ;তোমার স্বদেশ তাকে এইভাবেই সনাক্ত করে বলে মোমবাতির দৈর্ঘ্য এবং ঔজ্জ্বল্য আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে! দোকানে যাওয়ার আগে তুমি কোন দলে আছো জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি!
নৃশংসতম ধর্ষকের চেয়েও নাবালক তোমার গণতন্ত্র ;তাই ড্রয়িং রুমটিও কত সহজে বধ্যভূমি হয়ে উঠেছে ;আসিফা, অভয়া, পিংকি, তনুর স্তন এবং যোনীর টি আর পি এই মুহূর্তে কত এবং ভবিষ্যতে কত হতে পারে ভেবে শেষ হয়ে যাচ্ছে কাপের পর কাপ কফি ;কিন্তু ধর্ষিতার মুখটিই ক্রমশ আবছা হয়ে যাচ্ছে বলে ভোরের দোয়েল পাখিটি কিছুতেই তাকে খুঁজে পাচ্ছেনা।
শস্য
***
লিখে ফেলি প্রশ্বাসের ঘর, নিকোনোউঠোন জুড়ে অশ্বখুর, বালিকার রেণু অথবাঈশ্বর এক অনিবার্য জঙ্ঘা প্রদেশে, পুরনো সিন্দুক জুড়ে জীর্ণ তেজারতি যতটা বাষ্প হলে কল্পনাও সবিশেষ উর্ধ্বগামী হয়, সেই মতো ওম মেখে নির্নিমেষ অগ্নি কুড়োনো ;অথবা অশ্রু লিখি, যথোচিত শোকের বিন্যাস যতটা নাব্য হলে প্রাজ্ঞ বালিকা ফুরনোসনেট জুড়ে মৃতবৎসা গাভী রেখে যায় ; বাঁশিলিখে ফেলি, ঘাস কিছু রজঃস্বলা হলে অযুতপ্রস্তাবেও জেনো সসাগরা তৃণভূমি আসে, তাই কলম নয় শিশ্ন খুলে নিয়ে হে আদিম সন্ন্যাসীউর্ধ্ব বাহু বলে যাও নশ্বর অক্ষর নয়, রাত হয়ে এলে অমল গুহামুখে কিছু শস্য রেখে যেও ।
শ্যামাপোকা
***
অর্বাচীন কবি আমি রমণীও জেনেছে; জেব্রা ক্রসিং
থেকে মেঘ সরে গেলে অনায়াসে বুঝে যাই
মানুষের সংখ্যা মানেই সমুচিত সফল রমণ ; প্রথাগত
পূর্বাভাসের পর বালিকাটি নিকটবর্তী হলে জামরুলের ডালেও
প্রার্থিত কপোত উড়ে আসে! তবু লিখে রাখো
হে প্রমত্ত রমণী দিশাহীন শিশ্ন আমি, সহস্র
যোনিপথ সাঁতরে দিতে পারি, তবু দিনান্তের আলো
নিভে গেলে কী অবলীলায় আজও দ্যাখো শস্যহীন
থাকি ; ঊর্ণনাভ সদৃশ এই মানব বসতি; রন্ধ্রে
রন্ধ্রে তার ক্ষমাহীন কাম পাখিদের আজও দেখি
উদ্বাস্তু করে; অগণন প্রত্যাখানের পর এপাড়ার দোয়েল
দম্পতীও অলকানন্দার দিকে উড়ে চলে যায়; তবু
এশহরও একদিন সরপুঁটির বাসস্থান হবে এই জেনে
পৃথিবীর শেষ শ্যামাপোকাটিকেই আমি ডাউনলোড করেছি।
সিভিলিয়ান ক্যাজুয়াল্টি
***
নাগরিক সন্ধ্যা মানেই রমণীর ঘ্রাণ উড়ে আসা ;
এপস্-এ ধারালো চোখ, স্মার্ট ফোনে পিকিং পয়েন্ট ;
নাগরিক সন্ধ্যা মানেই মানবীর মুদ্রা হয়ে ওঠা ;
এসবই ভাবছিল এক কাঠের মানুষ, মতান্তরে
বেঞ্চ এক, একুশ শতকে যার হাত গজিয়েছে!
মস্তিষ্ক যেন তার তীব্র এক ঘোড়া, অনাহারেও
প্রাণময় তীক্ষ্ণ হ্রেষারব ----
জলজ অন্ধকারে যুবকেরা আসে, ধর্মগ্রন্থের বিষ,
শিশুদের শ্বাপদ বসতি - এই সব লিখে
নিয়ে যুবতীও বিপ্রতীপ হাঁটে ;অত:পর রাত
নামে, আলপথে বোমারু বিমান ;শ্যামলের চা
ফুটে গেলে উদ্বাস্তু কাঠের বেঞ্চ আড়চোখে দেখে
মানুষের পৃথিবীতে সিভিলিয়ান ক্যাজুয়াল্টি বলে
আজও কিছু রয়ে গেল কিনা----
ওম/ দেবাশিস লাহা
প্রতিটি বৃদ্ধি মানেই কুঠারের অমল ব্যর্থতা,জামরুল বৃক্ষটিও সেই কথা জানে; প্রতিটি বিজয়ও
তাই সুনিশ্চিত পরাজয় কারো;মানুষ ও মানুষী নিয়েকান্তিময় হেঁটে যাওয়া গেলে বড় ভালো হত
মনে হয় ; তবু রাত্রির অন্তিম প্রহরে হরিণীটির
মৃত্যু লেখা হলে জয়ের স্থপতি সেই অশ্বটিকেও
অনন্তের দিকে ছুটে যেতে হয়; প্রাসাদে প্রাসাদে
তখন ঘৃতের সুবাস ; যজ্ঞের লেলিহান শিখা অপার্থিব
ওম নিয়ে এলে তবেই তো রাজসূয় হয়; প্রতিটি
প্রশ্বাসও তাই নিশ্বাসের মৃত্যু লিখে ফেলা--
লীলাময় ফুসফুসও সেই কথা জানে; তবু ঈগল
ও কপোতের দ্যাখা হলে পর যদি বিমল বিমল
কিছু গন্ধ উড়ে যেত, তবে রজঃস্বলা বাদুরের
দেশে বালিকার ফ্রকটিও বিনম্র বিনম্র কিছু শিশির কুড়োতো।
পুনরাবৃত্তি
***
পুনরাবৃত্তি মার্জনীয় বলেই বারবার ভালবাসি বলি;
তুমিও অক্লান্ত তাই শুনে যেতে পারো---
প্রোথিত চার্বাক কথা, অপ্রোথিত স্বেদ ; আলগোছে
লিখে রাখা পরিব্রাজক ভুল ; ঋতু আসে, ঋতু যায় ;
আত্রেয়ীর ধারে দাঁড়াশেরা সঙ্গম সারে ;পুনরাবৃত্তি
মার্জনীয় বলেই যাবতীয় নিমফল ও ঝিঁঝিঁর
কোরাস তোমার চুলের মতই অনিঃশেষ থাকে;
যা বলো, উচ্চারিত সব; তাই পুনরুক্তিও অমার্জনীয়
নয়, ইরোসের শীৎকার ছাড়া মধ্যাহ্নের পাসওয়ার্ড
এখনও অধরা ; আগুন আগুন যত জঙ্ঘা ফুটে আছে--
প্রত্নতাড়িত প্রেম, ভেনাসের স্তন ; আড় চোখে চেয়ে
থাকা আমণ্ড যুবতী, ইউফ্রেটিসের স্রোত কে না ছেনেছে !
তবু ফিলোমেলার কোনো প্রেমিক থাকে না –
অতসীর যোনিটিও সেই কথা জানে
বহ্নি বালিকা
***
তোমাকে কতটা চিনি বহ্নি বালিকে? মধ্যাহ্নের যুথবদ্ধ রোদে
অন্ধকার অশ্বারোহী আমি, যতটা নৈর্ব্যক্তিক হলে অবিন্যস্ত পথ
ধুলোর প্রলাপ থেকেও প্রার্থিত সনেট খুঁজে নেয়, অথবা অনলভ্রমে
পতঙ্গের লাফ যতটা আন্তরিক হলে নিটোল লিরিক,ততটা নির্নিমেষ
কি আমি হতে পারি? তোমাকে কতটা জানি বহ্নি বালিকে?
যতটা তোমাকে চেনে চিবুকের তিল, অথবা নদীর স্রোতে লুকানো
বেলুন, তার থেকে বহুদূরে আমার বসত; কার ঠোঁট কোনখানে
কখন কিভাবে তোমাকে ছুঁয়েছে নাকি আসলে ছিঁড়েছে,সভ্যতার
সেইসব ওলাময় পথ কতটা স্পিনোজা অথবা কতটা দেকার্ত,
কোন চিরকুট বলো এসব লিখেছে? তোমাকে কতটা চিনি বহ্নি
বালিকে? তবুও অমল বিশ্বাসে তোমার শরীর জুড়ে মাভৈ,মাভৈ
দাঁড় টানি,পাল তুলি, প্লাবিত কম্পাস থেকে ধুয়ে ফেলি দিকচক্রবাল ;
আমাকে কতটা জানো তুমিও ভেবনা ; এই ঘোর উচাটনে
আমার অপত্যও আজ আমাকে চেনেনা।
কিশোরী—১
***
কিশোরী তঞ্চক বড়, কত জিবি জোছনা শুষে
নিলে মুঠোফোনও কামগন্ধা হয় সেকথা কিভাবে যেন
বালিকাও জেনেছে ; কিশোরী সঙ্গমও চেনে সুবিন্যস্ত বিষ ;
আনত স্তন তার নগ্ন হলে পর কতটা
প্রস্তরমুখ জল হয়ে যায় এই কথা সেও
আজ আকন্দের ডালে কী নির্বিকার লিখে দিতে
পারে ; অথচ প্রাচীন কিছু বৈকালিক ভুল অম্লান
ডুবে গেলে পর যে ফড়িং ভূমিষ্ঠ হত,
তার সাথে বিকিকিনি সেরে আদিম মধ্যমা সব
ফিরে চলে গেছে, সভ্যতার ফ্রক, আয়ত অক্ষি
জুড়ে ঘাতক সংলাপ এইসব চিহ্ন দেখে ব্যাকুল
নিতম্ব কিছু চিনে নিতে হয় ; চুম্বন দৃশ্য
মানে দুই জন নয়, পর্দার অন্তরালে নতজানু
কেউ, সে খবর বালিকাও আজ বিলক্ষণ রেখেছে।
কিশোরী—২
***
প্রকৃত রমণ কেবল বালিকাই জানে ;মিথোজীবী ভুল
উড়ে এলে কী অবাক সেই শুধু চুল
খুলে রাখে ;আঙুলে আঙুলে কাম, উঁচু নিচু
মেঘ, বিধৃত জোছনাজলে পাখিদের মুখ; একটি শালিক
তবু ধরা দেবে বলে শাল্মলী বৃক্ষে তার
বর্ম রেখে আসে ; অথবা পথিক যাকে বহুকাল
আগে আড় চোখে দেখে নিয়ে মৈথুন সারে,
সেই স্তনও ফিরে এসে প্রগাঢ বিক্ষোভে কী
অতল আজও দেখি তাকেই ভাসায় ; অতঃপর ঝিঁঝিঁ
ডাকে, লালাভ আপেল খেয়ে শঙ্খ লাগা সাপ
ঈশ্বরেরও ক্রোধ ডেকে আনে; অথচ আবহমান এক
ভ্রমের বিন্যাসে বালকেরা আজও দেখি উর্ধ্বগামী হয়,
সেলোটেপে রাত লিখে দুরন্ত নৃপতি নদীজলে নৌকা
নয়, কী আশ্চর্য আজও সেই রাজদণ্ড রাখে !
কিশোরী—৩
***
কর্তব্যের ভানে কিশোরীও ছুঁয়ে দিতে জানে. আঁধারচাঁপার
ডাল,আসমুদ্র বিষ, মৎসগন্ধা বক যেমতি দণ্ডায়মান
চরণে তার অন্যতর পদ রেখে দেয়,কিশোরীও
ছুঁয়ে দিতে পারে, যতটা স্পর্শ পেলে ধূপদানী
যথাযথ থাকে, আরতিরও ব্যাঘাত ঘটে না, ততোধিক
তীব্র তার ফেনিল মধ্যমা সবিশেষ স্পর্শকামী হয়;
আলোহীন ঝুঁকে গিয়ে কী প্রবল আশ্লেষে অমল
বক্ররেখা তার সাপ পুষে রাখে, দূরবাসী অক্ষাংশে
ফ্রক সরে গেলে যা আজও দৃশ্যমান হয়,
তা নিছক কোনো রক্তমাংস নয় ; নৈর্ঋত কোণ
থেকে টোটো উড়ে এলে বৃদ্ধের এনড্রয়েডে তাই
আলো নেচে ওঠে ; এক মুঠো ওম মিলে
যাবে এই ভেবে নিয়ে পৃথিবীর প্রবীণতম বট
বালিকা কেবল বালিকার কাছেই তাই নতজানু হয়।
কিশোরী—৪
***
কিশোরীও সমর্পণ জানে ; মধ্যমার ঘ্রাণ ; সনির্বন্ধ মেঘউড়ে এলে অবলীলায় সেও দেখি বৃষ্টিকথা বলে,
অশ্বত্থামা হত শুনে দ্রোণ যেমতি নক্ষত্রেরও মৃত্যু
লিখে ফেলে,চোখ থেকে চোখ সরে গেলে
কিশোরীও জেনে রেখো শাখাচ্যুত হয়, ভালবাসা বীতশোক
হলে নিষিদ্ধ দ্রাঘিমাও তার অশ্রু লিখে রাখে;
বল্কলে বল্কলে শীত ; অনাঘ্রাতা স্বেদ, যুবকের ওষ্ঠ
তাকে পান করে যাবে এই ভেবে কী
অনাবিল সে আজও নতজানু হয় ; বালিকাও সমর্পন
জানে, রুমাল হারালে পৃথিবীর শেষ করতলও দুর্নিবার
ওথেলো হতে পারে তবু বানভাসি চুল কী
নির্নিমেষ হেঁটে যায়, হংসিনী যেমতি সরোবর শেষে
বিনম্র গৃহস্থের কোলে আঙুল না ছুরি আছে
কদাচিৎ ভেবে বালিকাও ওই দ্যাখো পরফাইরিয়া হয় !
হাত পাখা
***
ঠাকুরমার ডান হাতটি পাখি হয়ে না উঠলে হাতপাখার অস্তিত্ব সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই গড়ে উঠত না ; কোনো এক গ্রীষ্মের দুপুরে, দক্ষিণের জানালাটিও যখন জিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একখণ্ড তালপাতা আচমকাই শূন্যে উঠে পড়ে এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঠাণ্ডা হাওয়ার স্রোত আমার কপাল থেকে ঘাম শুষে নেয়।সেই সেদিনটিকেই আমি হাতপাখার জন্মলগ্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম ! ঠাকুরমার হাতটি তখন হামিং বার্ড অথবা স্বপ্ন সম্ভবের বাতিদান, নাতিকে আলাদীন ভেবে নিয়ে এইমাত্র যার পরিক্রমা শুরু হয়েছে।গরম পড়লেই উর্ধ্বগামী হয় এমন ভালবাসাটি একদিন মহাকাশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ল। দাদুর মাথা, বাবার বুক আর ছোট ভাইয়ের পিঠ ছুঁয়ে দিতে দিতে তার নিজেরও একদিন ঘুম পেয়ে যাবে কে জানত ; কোনো হাতকে আর পাখি হতে দেখিনা; তবু সুতীব্র গরমেও ফ্যান বন্ধ করে দিই ; হে তালপাতা তুমি উর্ধ্বগামী হও।
হাঁস
***
বুবি পিসি যখন আমাকে হাঁস চিনিয়েছিল ডাঙার সঙ্গে তখনও
তেমন সদ্ভাব গড়ে ওঠেনি ; উড়তে অক্ষম এইসব পাখিরা জল
এবং স্থলের সার্থক যুগলবন্দী ঘটাতে পারে কি পারে না
অথবা পারলেও ঠিক কতটা পারে ভাবতে ভাবতে ঠাকুরমার কোলে
বসে গুড় মুড়ি খাওয়া ছাড়া আমার তেমন কোনো কাজই
ছিল না। ফড়িং ধরতে গিয়ে বার বার পড়ে যেতেই
বুঝেছিলাম কমলা লেবুর মত গোলাকার এই স্থলভাগের সঙ্গে আমার
পায়ের সখ্যতা হতে তখনও ঢের দেরি। পুষ্করিণীর জলে সকাল
ডুবে যেতেই অল্পবিস্তর জেনেছি ডানায় আকাশ লেখা থাকলেও চরাচরের
সমস্ত হাঁস কেন জলের দিকে হেঁটে যায় ! আমার পালকেও
মেঘ ছিল, কিন্তু উড়তে না পারার ভবিষৎবাণীটা পিছু ছাড়েনি
বলে আমিও শুধু নদীর দিকেই হেঁটে গিয়েছিলাম ; মানুষের পৃথিবীতে
হেঁটে বেড়ানোর চেয়ে ভেসে বেড়ানো অপেক্ষাকৃত নির্মল বলেই চল্লিশ
পেরোনোর পরেও ডাঙার সঙ্গে আমার তেমন সদ্ভাব গড়ে উঠল না।
লন্ঠন
***
লন্ঠনের সঙ্গে পরিচয় সেই ছোটবেলায়।ইলশেগুঁড়ির বিকেলটা আবছা হয়ে
যেতেই ঠাকুরমার ডান হাতে সে আগুন হয়ে জ্বলে উঠেছিল।বহনযোগ্য আলোর সঙ্গে সেই আমার প্রথম আলাপ ; উজ্জ্বল এক বৃত্তের ভিতর নেচে ওঠা মহাভারতই নয়, ওপাশের অন্ধকারটিও যেন অনেক বেশি রোমাঞ্চকর ছিল তখন ; আগুনকেও এভাবে বন্দী করা যায় ভেবে বিস্ময়ের অবধি ছিল না ; উত্তাপ বহন করা মানুষগুলো তখন খুব সহজেই প্রমিথিউস হয়ে উঠত ; বুবিপিসি, দিনু কাকা, ডুডু মাহাতো কেউই বাদ যেত না। তবু অনেক অনুসন্ধানের পরও লন্ঠনের আবিষ্কর্তার নাম আমার জানা হয়ে ওঠেনি ; এখন অন্ধকারও তেমন বিশুদ্ধ নয় ; ঠাকুরমার ডান হাতটিরও কোনো হদিস নেই। নাগরিক বিপণীগুলিও ভ্রাম্যমাণ আলোকটির কোনো খোঁজ রাখে নি, কারণ বংশবিস্তারের মন্ত্র অন্ধকারের জানা থাকলেও, লন্ঠনের ছিল না। তবু হাইড করা ফোল্ডার থেকে সেই অষ্টম আশ্চর্যটিকেই আমি বের করে আনি ; ঠাকুরমাও আবার গল্প শুরু করেন –
লন্ঠনের সঙ্গে পরিচয় সেই ছোটবেলায়।
স্বদেশ
***
অর্ধভুক্ত একটি মৃতদেহকে আমি স্বদেশ বলে জানি ;পুবে হায়না, পশ্চিমে যুথবদ্ধ শৃগাল ;মধ্যে নেকড়ের দল --সাম্যবাদী অভিজ্ঞানে কিছুদিন আগেও যাদের মেষ বলে মনে হয়েছিল!
তবু বারান্দায় দাঁড়ালেই আমি প্রতিবাদ দেখি, মানবতার কথা বলা এই সব কলমের নিবে জন্মদাগের মত কিছু গর্ভনিরোধক লেগে থাকে, ফেয়ার এণ্ড লাভলি আর এক্স এফেক্টের সুবাসে নৃশংসতম চাপাতিও খেলনা হয়ে ওঠে বলে কী সরল বিশ্বাসে আমি দোলনা কিনে ফেলি!
প্রতিবাদী, এসো, তোমাকেই কুর্নিশ করি! তুমি, শুধু তুমি হেঁটে যাবে বলে মিছিলের পথে পথে আমি জুঁই আর রজনীগন্ধা রেখে এসেছি ;স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও আমার আত্মজার লাশ ফুল ছাড়া-ই শ্মশানে যাবে !
মোমবাতি
***
নারীদেহ মাত্রেই যেহেতু হুকুমত অথবা গণিমতের মাল, ধর্ষিতার লাশকে এক তাল রক্ত মাংসের চেয়ে বেশি কিছু ভেবে নেওয়ার অর্থ এই যে তুমি এখনও সাবালক হওনি ;সামান্য একটি ক্ষতবিক্ষত যোনী আর তুচ্ছ দুটি ছিন্নভিন্ন স্তন তোমার নৈশভোজে ব্যাঘাত ঘটালে জেনে রেখো তুমি তেমন ব্যাকরণও জানো না --লীলাময় ধরণীতে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম বলেই কর্তাটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ; তাই হে অর্বাচীন, মোমবাতি কেনার আগে ধর্ষকের লিঙ্গ দেখে নিও ;কর্তিত হলে রহিম, অকর্তিত হলে রাম ;তোমার স্বদেশ তাকে এইভাবেই সনাক্ত করে বলে মোমবাতির দৈর্ঘ্য এবং ঔজ্জ্বল্য আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে! দোকানে যাওয়ার আগে তুমি কোন দলে আছো জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি!
নৃশংসতম ধর্ষকের চেয়েও নাবালক তোমার গণতন্ত্র ;তাই ড্রয়িং রুমটিও কত সহজে বধ্যভূমি হয়ে উঠেছে ;আসিফা, অভয়া, পিংকি, তনুর স্তন এবং যোনীর টি আর পি এই মুহূর্তে কত এবং ভবিষ্যতে কত হতে পারে ভেবে শেষ হয়ে যাচ্ছে কাপের পর কাপ কফি ;কিন্তু ধর্ষিতার মুখটিই ক্রমশ আবছা হয়ে যাচ্ছে বলে ভোরের দোয়েল পাখিটি কিছুতেই তাকে খুঁজে পাচ্ছেনা।
Tags:
আজকের কবি