কবি দেবযানী কর সিনহা
কবি দেবযানী কর সিনহা জন্মগ্রহণ করেন বর্ধমান (পশ্চিম) জেলার কুলটিতে। এরপর স্কুল (কামিনী কুমার গার্লস হাই স্কুল) ও কলেজ, শ্রী চৈতন্য কলেজ অফ সায়েন্স (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) জীবন কেটেছে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবড়ায়। কবিতা লেখা মূলত শুরু হয়েছে তখন থেকেই,কবিতা ছাড়াও গল্প লেখাতেও সাবলীল, তিনটে বই আছে দুটি কাব্য সংকলন ও একটি গল্প সংকলন।এ পর্যন্ত দুটি উপন্যাস লেখা হয়েছে। লেখা ছাড়াও কিছু ভালো লাগার জায়গা হল ফাইন আর্টস, ফোটোগ্রাফি, ভ্রমণ, বই পড়া।
কবি দেবযানী কর সিনহা'র সাম্প্রতিক কালের একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :
১
***
যারা বার বার ফিরে আসবে তারা চরম
মিথ্যুক, মিথ্যেবাদীরা প্রতিবার খাবার
খেয়ে ধরায় তৃপ্তির সিগার,
সারাদিন এ দুয়ার ও দুয়ার
ঘুরে ক্রেতা পেলে বেঁচে দেবে তার নিজস্ব
জমি, তারপর সে যাবে মথুরা বৃন্দাবন
সব কথার কথা! ভালো ভালো গান
গেয়ে পুরনো অংহ চাপাতেই জারণ পর্বে
এক দেশ থেকে অন্য সমৃদ্ধশালী দেশে
ঘুরে আসলে সে মনোজৈবিক উপায়ে মাংসে
ঘোরে বেঘোরে নিন্দা- মন্দে দানে গ্রহণে
ধ্বংস করছে রাক্ষুসে বীজ, ভুল কি সে ?
মিথ্যের আড়ালেও কত সঠিক গণিত
২
***
কেউ কেউ আত্মপীড়ন নিতে পারেনা
পেরে গেলে প্রকৃতি বিস্মৃত হয়ে
জাহান্নামের দরজা ভাঙে
তারপর সেই দরজায় নকশা বুনতে
বুনতে বুঝতে পারে নিবেদক ঠগ না
মনন নৃত্যের মতো, অন্তঃকরণ চপল
মদীয় রক্তবারিশ,
এতে ভিজলে স্বস্তিক,ইশ্ক
করো,ফেরারি দিওয়ানা
৩
***
আমি চাইনা পরাক্রমশালী হয়ে এসে
পরে কঞ্চির দরে বিকিয়ে যাবে,
আকাশে হাত না পৌঁছালে
পথে আঁকো চরিত, যা যা দেখলে
এ পর্যন্ত গাছের গায়ে মেলে দাও পোশাক
অন্তত ওর লজ্জা ঢাকুক, এমনিতে গাছ
বোহেমিয়ান না, শাখায় লুকোনো শোক
কুঁড়ি হয়ে যায় কোনো সকালের জাদুতে
তারপর কিসসা কাহিনী মুখে মুখে
উড়ো পরাগ উচ্ছলতার প্রকাশ
নয় পরিহার নয় বহিষ্কার নয় ব্যবহার
গাছ মাল্য চায় বন্ধন চায় ঊর্বশীর মতো।
৪
***
আমাদের জানা-শোনা হয়েছিল
গতজন্মে আমরা প্রীতি ও প্রেম
লেখা পতাকা উড়িয়েছি হাতে হাতে
ঘৃণা অসাধ্য বলে স্তুতি আর স্তুতি বিলিয়েছি
ত্বকের গোপনে মাংসল রক্ত ধারায়
আমাদের ইতিহাস বিদিত যুগ্ম কিরা
কেউ নাজানে জানুক আহ্লাদের সিক্ত
সরণি ধরে এই জন্মরন্ধ্রে এসে গেছিল যে
তৃতীয় সন্দিহান দেয়াল, শরীর পন্ডিতি
আগাপাস্তলা কুটি কুটি করে কূট
প্রশ্ন কীটের অবিকল সন্ধানী কর্তা
এল রহস্য এল আঁধার নামের জটিলতা
আমরাও সরে গেছি পিছল নির্জনতা
ছেড়ে ভীড় জনপদের দিকে মেঘের মতো
লেপের ওমে ইচ্ছের বশে পাঁশুটে ধান্দায়
৫
***
কুকুর না হতে শিখলে প্রেম দেখাতে যেওনা
এ দেশে কুকুর পূজিত হলে সব বদলে যেত
আমি এত বিশ্লেষণ করতে পারবনা, ছাদে
দাঁড়িয়ে সূর্য ওঠা আর সূর্যাস্ত দেখব তোমার
হাতে হাত রেখে,আরক্ত চোখ থেকে তুলে নেব গোলাপ, ক্রুদ্ধ তমসা সেঁধিয়ে গেছে মননে
কোলে মাথা রেখে টের পাও আগুন অর্থেই আলো না, বিন্দু বিন্দু জল পেয়ে কুকুরদের যা- তা দশা হয়,লেজ নাড়ি দুজনেই, এই সহজ ভাবনা আমাকেও তীব্রভাবে মরমি করে অতঃপর দুজন কুকুর হলেও দোষ থাকেনা
৬
***
আমার প্রীতিতে তোমার স্বর্গ না
জীবন হোক অদম্য
শরীরী বিভঙ্গ, না জেগে
ওঠে যদি
রিপু হোক সে অপ্রাকৃত
দেহাতীত তবু
আধিপত্য করো,
জোর জবরদস্তি করে
বুঝিয়ে দাও প্রেম একমাত্র
অধিকৃত জহরত।
৭
***
চাঁদ উঠেছে প্রতিদিন যেভাবে ওঠে
সব দীর্ঘদেহী গাছের মাথা টপকে সে উঠেছে
এত করাল সময়েও উপস্থিতি জোরাল
সফেদ মুগ্ধতার আলো এত মোহ
তার এত প্রেম কার জন্যে?
আমরা যাচ্ছি গন্তব্য হারিয়ে যাচ্ছি
অনুসন্ধান যে যার পরিধি পেরোনো অথবা
সীমাবদ্ধ, হেস্তনেস্ত হবে তার প্রতীক্ষা
চাঁদ চর্চা বন্ধ হবেনা তবুও
চাঁদ আসেনা সেভাবে ছায়া এসে দাঁড়ায়
কোনো বিনিময় উদ্দেশ্য ছাড়াই
৮
***
রূপবান,সৌন্দর্যকে খামে ভরে ক্যুরিয়ার
করে পাঠাবে তোমার ঠিকানায়
যতগুলো অক্ষর লেখা বাকি ছিল সেটাও
জলপ্রপাতের ছন্দে ধকধক হার্ট বিট
চুমুতে চুমুতে ভরে যায় সকাল
দুপুর নিজের খোসা উড়িয়ে দেয়
মেঘের মতো রূপবান কিন্তু নিস্তেজ
পুরুষ আসে কেন,কোন অভিলাষ ?
মিছিমিছি অন্তর্বাসের দোহাই দেবেনা
রৌদ্রতাপে দহনে গলনে ভ্রমণ মুলতুবি
উদ্বেগ দ্রুত ডিনার টেবিলের সরীসৃপ
গুম্ফার গায়ে ছাপ পরে প্রতিটি নখর
আঙুলের,অনুত্তপ্ত ধর্মের কারণেই মানুষকে
পেঁচিয়ে ধরবেই তুমি বেষ্টনীতে আবদ্ধ
হয়ে অনুভব করবে সঙ্গম সুখ, যদিও
প্রত্যেক সুখের পরে হ্যাংওভার স্বাভাবিক
নিয়মে দখল চায় ...
৯
***
এসো, মধ্যরাতের বুক চিরে দ্যাখো
অন্তঃসলিলা চলে গেছে পাতালপুর
ভারি বাতাসসমূহ সীমারেখা লঙ্ঘন করে
সামুদ্রিক স্টেশনে নেমে পড়ছে
গভীরেও গাম্ভীর্য অটুট গতিবেগ
অভিমানী নারীর দম্ভ, প্রাণপণ তার চেষ্টা
কীভাবে সে লুকোবে তার আবেগটা
স্বীকারোক্তি অশনিসংকেত তাকে বাঁধো
লাল হলুদ বালিয়াড়ি হাওয়ায় ওড়ে
বসত ভেঙে যায় নজরে আদরে
বিদ্রুপ? সেও তো গহীনে বেড়ে যাচ্ছে
ভালোবাসা আর বিনাশের সীমান্তে
এক দৈত্যসম পাহারাদার কিন্তু মূখ,ভাষা
লুপ্ত,সূর্যের আলোর উৎসবে সিঁদুরের স্পর্শে
উথালপাতাল
১০
***
ওগুলো কি আকাশের বুককে দুভাগ করে একটা নারীর জন্ম দিতে এল? চূড়ান্ত অভিমানের আড়ালে কে যেন প্রেমের গান গাইল আলো আলোকিত রঙের ধারা চমকিত আমরা পথিকের গর্জন শুনে কিশোরী এক নওল যুবককে দেখে আত্মহারা, হরকরা চিঠি দিয়ে গেছে কাকভোরে তার গায়ে ঝড়ের তিক্ত রেশ মুছে গেছে, অদ্য এসে দাঁড়িয়েছে পায়ে পায়ে মৃদু উৎসব
১১
***
এই যে তুমি ইচ্ছে করে সারা শরীরের পাতা, লক্ষ পাতা পাতার পৃথিবী পাতা তোমার সর্বস্ব দেহ চেতনা রিপু ওই পাতাদের চুপ করিয়ে গুটিয়ে রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছ, চোখ কান নাক অনাবৃত, সংযম যে একপ্রকার ত্যাগ বোঝাও, এখনো সেই বিশ্বাস সকলের ভেতর দুএকটা 'মা' থাকবে ঠিকই
স্নান করিয়ে গা মুছিয়ে ভাত খাইয়ে দেবে যে প্রতিদিন, এই বিশ্বাসে হাত মুঠো করে প্রতিজ্ঞা
করলে, প্রচন্ড ঝড়ে হাত-পা খুলে গেল, চোখ বুজে
বললে এই কি আমাদের দেশ,পিপাসার জল নেই, চাল নেই
চালচিত্র কী, দেখে কিছু ধারালো দাঁত আসে জল দেয়, শেকড় এত ক্ষীণ ফিসফাস শুনতে পায়না ! তবু তো আসে ডানা ছেঁড়া বিহঙ্গ,কালো ঠোঁট
একটু বৃষ্টি হোক সে মন্দ না তুমি ভিজে ওঠো আশরীর, খুলে যাক সব পাতাগুলো ।
১২
***
এভাবে কি একা থাকা যায় ?
ঝিঁঝিঁ ডেকে যায় কোন আবেদন রেখে ? তার রাতের শরীরে আঁকা একটা বায়নার মতো ব্যতিক্রমী যন্ত্র সংগীত
দেখি জানালা ধরে মশা আসে রাখি পূর্ণিমার
চাঁদ আলোতে জঙ্গল স্পষ্ট প্রেম স্পষ্ট না !
কারোর কিছুই করার নেই প্রকৃতির থেকে
নেয়ার অনেক কিছু থাকলেও কিছু
সন্ধেতে প্রেমিক কে চাই মদের পরিবর্তে