1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি ঈশিতা ভাদুড়ী | সাহিত্য চেতনা

কবি ঈশিতা ভাদুড়ী


কবি ঈশিতা ভাদুড়ী  জন্মগ্রহণ করেন ৪মে ১৯৬১, দক্ষিণ কলকাতায় ।  পিতা শিবেন্দ্রনাথ ভাদুড়ী, মাতা সুনন্দা ভাদুড়ী ।

কবি ঈশিতা ভাদুড়ী  সমকালের বাংলা সাহিত্যাকাশে একটি অতি পরিচিত নাম । আটের দশকে কবিতা দিয়ে সাহিত্য-জীবনের সূত্রপাত। 'সেঁজুতি ভাদুড়ী' ছদ্মনামেও একসময় তিনি লেখালিখি করেছেন। আটের দশকে 'ঠুংরী' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তাঁর সম্পাদনায় 'ছড়া-টড়া' ছড়ার সংকলন পর পর তিন বছর প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতা গদ্য সম্পাদনা মিলিয়ে তার গ্রন্থ-সংখ্যা ৩৫টি। ই-বুক 'গালিব অস্ফুটে' বিশেষ উল্লেখযােগ্য। 

তাঁর জনপ্রিয়তার পাশে পাশে, বিভিন্ন সময়ে তিনি বিঙিন্ন পুরস্কারেও ভূষিতা হয়েছেন যার মধ্যে 

কবি ঈশিতা ভাদুড়ী









অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার । এছাড়াও কবি গৌরাঙ্গ ভৌমিক স্মৃতি পুরস্কার, বিষ্ণু দে পুরস্কার, শান্তিলতা দেবী স্মৃতি পুরস্কার, কিঞ্জল পত্রিকা সম্মাননা, বাংলাদেশ রাইটার্স ফাউন্ডেশন সম্মাননা ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত হন।

 পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একাধিক অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে ভারতীয় দূতাবাস আয়ােজিত অনুষ্ঠানে বেজিং-এ (চীন) একক কবিতাপাঠ করেছেন। 

 তাঁর শিশুবেলা এবং কিশোরীবেলা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে কেটেছে । কর্মসূত্রে বাবা শিবেন্দ্রনাথ ভাদুড়ীকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো, কখনও রাঁচী, কখনও কল্যাণেশ্বরী, কখনও কোচবিহার, কখনও বহরমপুর, কখনও বারাসত, কখনও দুর্গাপুর কখনও বা ঝাড়গ্রাম। বাবার সঙ্গে সঙ্গে মা সুনন্দা দেবী এবং কবিরা তিন বোন মিলে সারা পশ্চিমবঙ্গ ঘুরে বেড়িয়েছেন। কাজেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন স্কুলে কবির লেখা পড়া । দু-তিন বছর অন্তর নতুন স্কুল নতুন নতুন বন্ধু। কবির কলেজ-জীবন কলকাতায় কেটেছে । বর্তমানে কবি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় ডেপুটি চিফ আর্কিটেক্ট পদে নিযুক্ত রয়েছেন।

এই স্বনামধন্য কবির আরও একটি পরিচিতি আছে ! কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী  ঈশিতা ভাদুড়ীর প্রমাতামহ । তাই হয়তো কবিতার জগতে তাঁর সহজ চলাফেরা ও খানিকটা জন্মগত অধিকারও !

কবির নিজের কথায় - “সত্যি কথা বলতে কি, প্রমাতামহ  যতীন্দ্রমোহন বাগচী  যে রবীন্দ্রোত্তর যুগের অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক কবি ছিলেন, সেই সত্যটি বুঝতে আমার বেশ কিছু সময় লেগেছিল। অনেকদিন অবধি  যতীন্দ্রমোহন   আমার  কাছে একটি নাম ছিলেন মাত্র আর স্কুল-পাঠ্য বইতে পড়া কবিতার রচয়িতা।


...দিদিমা এবং  মায়ের কাছে শোনা গল্পই হোক অথবা প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে ‘মাগো আমার শোলোক-বলা কাজলা দিদি কই’-ই হোক অথবা গৌরী ঘোষের কন্ঠে ‘পায়ের তলায় নরম ঠেকল কী। আস্তে একটু চল না ঠাকুরঝি’-ই হোক কে যে মন্ত্রমুগ্ধের মত আমাকে টেনে নিয়ে গেল ধীরে ধীরে  যতীন্দ্রমোহনে !"



কবি ঈশিতা ভাদুড়ীর একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :


 • কবির অপ্রকাশিত কিছু কবিতা


ওরা জানেনা অনুপম
            ***

ওরা জানেনা অনুপম, 
বন্ধুতা বিষয়ক শব্দগুচ্ছের অনুশীলনপদ্ধতি,
জানেনা আড়ালে যেতে যেতে 
কিভাবে সরে যায় মানুষ।

ওরা জানেনা ভার্চুয়াল শব্দের শুষ্কতা 
কিভাবে ভেঙে ফেলে সাঁকো । 
অনুপম, ওরা জানেনা 
খেলতে খেলতে কিভাবে মুখোশে  
ঢেকে যায় পুরো মুখ । 
ওরা জানেনা এসব কিছুই ।

ওরা জানেনা অনুপম, 
বন্ধুতা মরে গেলে 
পৃথিবী কৃষ্ণকায় হয়, 
আর, আকাশ অশুদ্ধ । 
ওরা জানেনা বন্ধুতা মরে গেলে 
রাস্তা জনমানবহীন হয় । 

বন্ধু-সংজ্ঞা ভুলে গেছে ওরা অনুপম ?


যে গচ্ছিত ঠিকানা
          *** 

যে স্বপ্নময় হাতগুলি 
লেগে আছে স্পর্শচিহ্নের মত,
পালকে পালকে আটকে আছে 
যে সূর্যোদয়,
যে পুরোনো নদী , যে পুরোনো মাঠ, 
যে পুরোনো গতকাল, যে পুরোনো চিলেকোঠা, 
শিকড়ে যে উত্তাপ, যে গচ্ছিত ঠিকানা 
বাজে জলতরঙ্গের মত...
সবাইকে আজ 
দিই যদি সমাপনী  সুর ?
যদি উড়িয়ে দিই প্রবল ঝড়ে ? 
যদি ভাসিয়ে দিই সমুদ্রজলে ?



ভাইরাস
   ***

কাচঘর থেকে বার হয়ে পড়ছে ওরা, 
ড্যাশ হাইফেন সকলে একসঙ্গে ।
আর, দুঃখিত হাসিতে ভরে উঠল মাঠ ।
অনিবার্য অনন্তে যে হতাশা ঘুরছে আজ, 
তার নাম ভাইরাস ?


এইসব সেরে গেলে
          *** 

এইসব সেরে গেলে মা-কে নিয়ে চেরাপুঞ্জি যাবো, 
এরোপ্লেনে করে মেঘেদের কাছে । 
এইসব সেরে গেলে হাঁটু মুড়ে 
কুচিয়ে কুচিয়ে ছিঁড়ে ফেলবো অসুখের দিনরাত্রি । 
আর, 'সোস্যাল ডিস্ট্যান্স' শব্দটা ফালা ফালা করে দেবো।

এইসব সেরে গেলে চলন্ত ট্রেনে বসে 
অন্ধকার মাঠ পার করে বিন্দু বিন্দু আলো দেখবো । 
আর, তোমার সঙ্গে দুরন্ত ঢেউ ভাঙবো ব্ল্যাক সি-তে। 

এইসব সেরে গেলে মুখোশ পোড়ানোর সভা করবো 
আমরা হাজরা মোড়ে । 
হাতে হাত রেখে একে অন্যের মুখ দেখবো ।

এইসব সেরে গেলে তেলিনীপাড়া থেকে গঙ্গায় 
জল কেটে কেটে ফেয়ারলি প্লেসে আসবো । 
তখন  আকাশ থেকে রেইনবোর রঙ 
ছিটকে আসবে তোমার চোখে...

এইসব সেরে গেলে একবার কনট প্লেসে 
ওয়েঙ্গার্সে গিয়ে ক্যারামেল পুডিং খাবো, 
আর মেরিন ড্রাইভে হাঁটবো তোদের সঙ্গে।

এইসব সেরে গেলে 'মহামারী' শব্দটা 
ভুলে যাবো বেমালুম। 
তখন আবীর আবীর স্বপ্নগুলো 
লকার থেকে বার করে তাকিয়ে থাকবো,  
দুচোখে মায়া...


এইসব সেরে গেলে ২
            ***

এইসব সেরে গেলে দীপান্বিতার সঙ্গে বাইপাসে নার্সারিতে যাবো,  সিজন ফ্লাওয়ার কিনবো। 
বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে রবীন্দ্রসদনে। কবিসম্মেলন সেরে সেল্ফি তুলবো আমরা।
এইসব সেরে গেলে জুতোর নিচে হাইপোক্লোরাইট দেবো না, বা, 
স্যানিটাইজার দিয়ে দিয়ে ত্বক বিবর্ণ করবো না আর।

এইসব সেরে গেলে হাওড়া স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে ব্যান্ডেল চার্চে যাবো আবার। 
হকারদের কাছ থেকে জেনে নেবো কাকে কাকে হারিয়েছে ওরা এতদিনে। 
অপ্রয়োজনীয়, তবু কিনে নেবো সেফটিপিন অথবা রুমাল।

এইসব সেরে গেলে হৃদয় খুলে আমরা গাইবো আবার 'প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে'...


 • কবির প্রকাশিত কিছু কবিতা

এই অনন্ত রাত
         ***

ছত্রিশ ইঞ্চি মাপের বিছানায় 
ছ-ইঞ্চি তুমি নিয়ে 
বাকি অংশ আমাকে দিলে 
আমি কি পারি 
অত ফাঁক নিতে ? 
অত রাগ ? অত শূন্যতা ? 
আমি কি পারি ?

ছত্রিশ-ইঞ্চি মাপের বিছানায় 
মাত্র ৬-ইঞ্চি যদি 
নাও তুমি 
কীভাবে নেবাে আমি 
এই অনন্ত রাত ? 
চৈত্রের ধুলো ঝড় ?


ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে
              ***

ইচ্ছে করি তোমায় আমি স্বপ্ন নয়, স্পর্শ করি যেন 
স্নিগ্ধ সকাল তোমার সঙ্গে বিসমিল্লা শুনি 
ইচ্ছে করে ভীষণ...

মেঘলা আকাশ বৃষ্টি দুপুর উড়ালপুলে হাঁটি 
সূর্যডােবা বিকেলবেলা নদীর জলে ভাসি 
রাত্রিভোর চাঁদকে ছুঁয়ে স্বপ্নমায়ায় থাকি 
ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে ভীষণ... 
সকাল সন্ধ্যা রজনীগন্ধা হাসি 
তােমার সঙ্গে বসন্ত শীত কাঁদি
ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে ভীষণ...


অন্য কান্না ?
     ***

মায়াবৃক্ষ থেকে দূরে 
যে সব নুড়ি পাথর পড়ে থাকে জলে, 
সেইখানে বেড়ে ওঠে অন্য নদী,  
অন্য জন্ম কোনো ?

ইচ্ছেসুতো ছিঁড়ে 
বেড়ে ওঠে যে অনন্ত আকাশ, 
সেই শূন্যে রয়ে যায় কী অন্য জীবন,  
অন্য কান্না ভীষণ ?


আইসোলেসন
       ***
      
একটা টানেলের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে রূপকথারা, 
ক্রমশ তীব্র অবিচ্ছেদ্য অন্ধকারে... 

সেই অন্ধকার দেখতে দেখতে বিধ্বস্ত নক্ষত্রেরা 
দাঁড়িয়ে পড়েছে একে অন্যের সঙ্গে গজ মেপে মেপে। 
আর, মায়াবী মেঘ, গোপন প্রেম সবই 
গড়িয়ে পড়ছে অতল খাদে । 
শূন্যতার মধ্যে মিশে যাচ্ছে শূন্যতা আরও...

সেই অন্তহীন শূন্যতায় আইসোলেশন শব্দটি 
দাঁড়িয়ে আছে বৃক্ষের মতন । 
আর, চুম্বন, সহবাস এই সব 
অন্যান্য শব্দেরা পড়ে আছে ডাস্টবিনে ।



প্রাপ্তবয়স্ক
    ***

আমরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি।
এখন আমাদের বিরহ নেই।
আমাদের কলহ ঘরের মধ্যেই থাকে।

আমাদের বৃষ্টিও নেই আর।
দু'চারটে কালো মেঘ যা জমে
সেগুলিও উড়িয়ে দিই জানলা খুলে।

আমরা নদীর জলও ঢুকতে দিই না ঘরে।

আমরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি। 
এখন অভ্যেস আমাদের ঘিরে থাকে
বারান্দায় ও ঘরে।
আশ্চর্য জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে না আর
আমাদের ঘরে।



জীবনের ভাঁজ
        ***

সিগন্যালের লাল আলোর সামনে দিকভ্রান্ত আমি 
খুঁজছি পথ। কী যেন ঠিকানা আমার ! উত্তরে যাবো, 
না, পশ্চিমে ! বামে, না, দক্ষিণে ! লাল আলো 
জ্বলছে নিভছে। ...পাশ দিয়ে হুস হুস 
গাড়ি গুলো যাচ্ছে চলে। ... আমি একা দিকভ্রান্ত
পথের মধ্যিখানে বেমালুম হারিয়ে ফেলেছি 
পথ-নির্দেশ, আমার অনিবার্য ঠিকানাটি। 
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রাস্তার কুকুরটিও অবশেষে
চলে গেল লেজ নেড়ে নিজস্ব পথে। আমি অবিচল 
ন যযৌ ন তস্থৌ।... ইদানীং বড়
ভুল হয়ে যায়, দিকভ্রমে পার হয় জীবনের ভাঁজ।..



বিষণ্ণ অভিমান 
        ***

ঘন গভীর অক্ষরে ছুঁয়ে যায় যে ঢেউ, 
তাকে ঘিরেই বেড়ে ওঠে ভালবাসা।
সেই ঢেউ ছুঁয়েই ফুটে ওঠে উজ্জ্বল আলো,
আর, বেজে ওঠে মালকোষ।

আশ্চর্য মায়ায় ওড়ে যে বসন্তের হাওয়া 
তার গায়েই লেগে থাকে ভালবাসা।
সেই হাওয়াতেই ভেসে যায় মেঘ,
আর, ভিজে যায় চাঁদ।

সেই ভালবাসার কাছে নগ্ন পড়ে থাকি।
অথচ এমন ভালবাসার পরেও 
শূন্যতা জমা হয়।
অক্ষরে অক্ষরে বিষণ্ণ অভিমান।



চিত্রাঙ্গদা
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমি চিত্রাঙ্গদা’ গানটি শুনে)
     ***

নই তৃণসম, নই দুর্গেশ্বরী,
নয় হেলাফেলা, নয় অর্চনা

হাতে হাত হাঁটো যদি কন্টকপথে,
যদি সংকুল শোকানলে,
অনুরাগে যদি সাথে সাথে …

সামান্যা নই আমি , নই অলোকসামান্যা
চিত্রাঙ্গদা আমি , আমি চিত্রাঙ্গদা …



দিঘির জল 
     ***

কোনো কোনো দিন বিকেলবেলা 
বিষাদের নৌকোগুলো ভেসে যায় যখন 
দু-এক ফোঁটা বৃষ্টিও কী 
নামতে পারে না তখন ?

বুকের মধ্যে দলা পাকানো কান্না 
বেড়ে ওঠে যখন, 
কোনো চৈত্রের দুপুর দিঘির জলে 
ভিজতে পারে না কী তখন ?

দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি, 
দু-এক আঁজলা দিঘির জল, 
কতদিন আর খোঁজা যায় বলো ! 




Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন