কবি পূজা মৈত্র |
কবি পূজা মৈত্র :
কবি পূজা মৈত্রের জন্ম কলকাতায় হলেও বেড়ে ওঠা রাণাঘাটে। পিতা অতিবাম আন্দোলনের প্রখ্যাত নেতা। মাতাও সাহিত্যসেবী। পড়াশুনায় বরাবরের কৃতী এবং রাজ্যের মেধা তালিকায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে স্থান পাওয়া কবির ডাক্তারি পড়া শুরু হয় কলকাতায়। এরপর চেন্নাই এবং বোস্টন থেকেও উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।লেখার শুরু ১৯৯৪ এ। রাণাঘাট এবং নদীয়ার লিটল ম্যাগাজিন থেকে শুরু হয়ে সমস্ত বড় পত্রিকাতেই লিখেছেন। "দমকা হাওয়া" সাহিত্য পত্রিকার মুখ্য সম্পাদিকা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ -ভালো আছি জলে ও আগুনে, আত্মজা সিরিজ, কবরের ধারে ফুটেছিলো কিছু হাসনুহানা (বাংলাদেশ)। এছাড়াও অনেক উপন্যাস এবং ছোটগল্পের বই আছে।
কবি পূজা মৈত্রের শুভ্রাংশু সিরিজ থেকে একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :
শুভ্রাংশু, হিল স্টেশন আর একজন ত্রিশের কোঠার মেয়ে
***
শুভ্রাংশু তুমি "দার্জিলিং" গল্পটা পড়েছ ?
ও তুমি তো আবার গল্প টল্প পড় না
আমিই লিখেছিলাম দমকা হাওয়ার পাতায়
এক হানিমুন কাপলের গল্প
ওই দ্যাখ হানিমুন শুনেই তোমার সবুজ গাল লাল হল
ঠিক গল্পের নায়কের মতই
সে ছিল পাহাড়ে বিভোর,পাহাড় এবং প্রকৃতিতে
আর মেয়েটি আয়োজিত বিবাহের সব লাজলজ্জা
বয়ে বেড়িয়ে চলেছিল অবিরল
বলতে পারছিল না কিছুই
শরীর যা বলতে চেয়েছিল
শুভ্রাংশু,তোমাতে আমাতে এবার
পাহাড়ে গেলে কেমন হয় ?
যা গরম পড়েছে এমনিতেই ঘরে টেকা দায়
তার থেকে চল ফালাকাটা
সেখানে প্রণবদা রয়েছেন
সব আয়োজন উনিই দেখে নেবেন না হয়
অফিস থেকে দিন চারেকের ছুটি
খুব বেশি ক্ষতি হবে না কি বল ?
সেখানে গিয়েও তুমি তাসের আড্ডা জঙ্গল সাফারি
আর ব্যবসার কেজো কথা বাদে
কিছুই করবে না জেনেও যেতে চাই
কয়েকটা দিন তোমায় একান্তে দেখতে পাব বলে
এমনিতেও বাচ্চাদের কথা ছাড়া কথা হয় না আজকাল
শুভ্রাংশু আমি পেরিমেনোপসাল নই এখনো
হরমোনেরা কমে বাড়ে মাসিক আন্দাজেই
মাঝেমাঝে কাজ পালাতে মন করে আমারও
অথচ জানি তোমার কোন না কোন অজুহাত তৈরিই আছে
হয় কাজ না হয় মা,বাবার শরীর
না হয় বাচ্চাদের ফেলে এ-ত দিন ?
মন,মন তোমার শরীর নাই শুভ্রাংশু ?
শুভ্রাংশু, তার বউ আর কবিতা সন্তানেরা
***
শুভ্রাংশু তুমি কবিতা চেন না
কবিতা অবশ্য না চিনলেও হয়
রাস্তায় হেঁটে গেলে যেকটি কুকুর মেলে বর্ষায়
কবির সংখ্যা গাণিতিক হিসাবে তার থেকে একটি বেশি হয়
এমন সরল হিসাব শিখে গেলে
কবিতা চিনতে লাগে না কারো
অবশ্য আমিও চিনিনা অনেক কিছুই
হাড়ি, কড়াই, বটি আর খুন্তিরা সব
সিলেবাসের বাইরেই পড়ে থাকে বেবাক
তুমি-ই তখন হাত পুড়িয়ে রান্না কর
আর বন্ধুরা বলে-ভাগ্য করে বউ পেয়েছিলি মাইরি !
সেকথা আমি গায়ে মাখিনা
তার থেকে চট করে বসে পড়ি লেখার টেবিলে
আর একটি নতুন কবিতা লিখব বলে
কবিতারা বীজ হয়, চারা হয়, শিকড় মেলতে থাকে
আমার সারা শরীর দিয়ে
কবিতাদের মা হয়ে যাই আমি প্রতিরাতে
তুমি চাইলেও এতগুলি সন্তান দিতে পারতে না আমায়
জানোই আমার মা হবার বাতিক আছে
আমার সারা গায়ে লেগে থাকে ধূপের গন্ধ
যেমনটি হয় সমস্ত সাধিকার
আর তুমি পূজার ছলে সরে যাও নীরবে
শুভ্রাংশু কী করছে আজ ? কেমন আছে ?
প্রশ্ন করে পাঠকেরা
তখন-ই প্রসববেদনা উঠে জন্ম নেয় আর একটা কবিতা
তাদের বাবা তাদের গায়ে হাত বুলায় না কখনো
তবুও জন্মায় তারা যেমনটি জন্মেছিলেন
এক মেষপালক দুই সহস্রাব্দ আগে
তাদের খোঁজে যখন রাজার দূত আসে
আমার একান্ত পুরুষ বিরক্ত অধিকারবোধে বলে-
আজ কবিতা জন্মাবে না
শুভ্রাংশুর বউ আজ ভারী অসুস্থ।
শুভ্রাংশু, রাম-রহিম আর শেষ মেট্রো
***
শুভ্রাংশু আজ দিল্লীতে নাকি কারফিউ
মানুষ মানুষকে জ্বালাচ্ছে পোড়াচ্ছে
ধর্মের নামে জায়েজ হচ্ছে ধর্ষণ
এমনি তো কোন মেয়ে জ্বালিয়েছে তোমায়
ত্যাগের নামে সত্যের নামে
তবুও তোমার জন্য চিন্তা তাকে ঘিরে ধরে
দানপত্র করে দেওয়া জিনিসের উপর
কোন মোহ থাকা উচিৎ নয়
পাশাতে বাজি না ধরেই তো হেরেছি তোমায়
তবুও শুভ্রাংশু উত্তরের জানলায় মেঘ জমে
রাম রহিম একসাথে গুরমিত হয়ে
ফেরায় মধ্যযুগীয় অন্ধকার
কুহক রাত্রি বিনিদ্রতার বুক চিরে
ডেকে বারবার শুধিয়ে যায়
শেষ মেট্রোটি চলেছে তো, আদৌ চলেছে তো?
শুভ্রাংশু, ন্যাপি বদল আর একটি কুমারী মেয়ে
***
শুভ্রাংশু তুমি থোড় বড়ি খাড়া হওনি
একদিক থেকে ভালই হয়েছে
না হলে বাজারের হিসাবের আট আনা চার আনায়
আটকে যেত জীবন
লন্ড্রি থেকে আনা কাপড়ের গন্ধ মেলাতে মেলাতেই
কেটে যেত দিন কাজের মাসির রোজনামচায়
দিনের বেলায় বদ মেজাজ আর রাতের বেলায়
বদ গন্ধের বিনিময় করতে করতে
চলে আস্ত ন্যাপি বদলের পালা
কিন্তু ন্যাপি তো বদলাতেই হয় নাহলে
প্রগতিশীলেরা মুচকি হাসে পর্দার আড়ালে
শুভ্রাংশু আমি প্রগতির মুখে লাথি মেরেছি বরাবর
জিনের কার্বন কপি তৈরির বদলে
লিখে গেছি কয়েক গন্ডা কবিতা তোমার শরীর নিয়ে
একে অপরের ভাই-বোন হয়ে সহাবস্থান করিনি
মাঝে চিল চিৎকার করা পাশ বালিশ নিয়ে
তাই তোমার আর আমার ভালবাসায় ড্যাম্প ধরেনি এখনো
শুভ্রাংশু এসো আজো ঠোঁটে ঠোঁট মেলাই
আমি যে কুমারী সেই প্রথম দিনের মতই।
শুভ্রাংশু,মল্লিকা,বিনয় আর একটি বাঘ
***
শুভ্রাংশু মল্লিকার মত আমি যেতে চাইনি
বীট গাজরের দেশে-
বিনয়ের মত ভুট্টা আর গুহার উপাখ্যান
হাতড়াইনি কোনোদিন
আমি তো কেবল অ্যানাটমি বুঝি
কর্পোরা ক্যাভারনোসা আর কর্পোরা স্পঞ্জিওসাম
হরমোনের আচমকা ক্ষরণে
রক্তসঞ্চালিত হবার ধারাপাত শিখেছি সযত্নে
শুভ্রাংশু তাই আমি চিনেছি
জাদুকরী মাংসের টুকরো
জটিল গণিতে বুঝেছি জি স্পট
দৈর্ঘ্যের আনুপাতিক হার
নিজেকে সযত্নে মেলেছি সময়মত
তিথি-নক্ষত্র পাঁজি-পুঁথির তোয়াক্কা না করে
আর তুমি খাঁচা থেকে বাঘ বার করতেই পারনি।
শুভ্রাংশু, দশমীর রাত আর একটি খোলা দরজা
***
দশমীর রাতে তুমি দরজা খুলে রেখেছিলে শুভ্রাংশু
সারা দুনিয়া মেতেছিল ভাসানে-
বাজির শব্দ আর উন্মাদ নাচে মাতাল হয়েছিল আবহ
"আসছে বছর আবার হবে" কে তুমি ভেবেছিলে
"হয় এবার নয় নেভার।"
রাত ঢলেছিল একটার পর একটা সিগারেটে
রুগীরা ভর্তি হয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডের বেড উপচে
যখন ফ্লোর ভরিয়েছিল
নির্বিকার তুমি একটার পর একটা রিক্যুইজিশন লিখছিলে
দরজা খোলা রেখেই।
চারতলা তিনতলা বেয়ে দোতলায় গড়িয়ে পড়া মেয়েটি
স্টেথোস্কোপ গলায় জড়িয়ে
চলতি-ফিরতি পাথর হয়ে গিয়েছিল সেইদিন
খোলা দরজার ওপার থেকে তুমি হেসেছিলে
মেয়েটার মন ছুঁয়ে সে হাসি শরীর ছোঁয়নি
তুমি ভেবেছিলে মেয়েটি অশরীরি
ছাইদানিতে ছাই রাখার জায়গা ফুরালে
অভিমানে দরজা ভেজিয়ে দিয়েছিলে তাই
শুভ্রাংশু, আমার একান্ত শুভ্রাংশু-
তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম বলে
এ জীবনে আর দশমী আসেনি কোনোদিন।
শুভ্রাংশু, এক পরী আর এক বুক চেরাপুঞ্জী ***
শুভ্রাংশু তোমাকে চেরাপুঞ্জী যাবার কথা বলব ভাবছিলাম
ভাবতেই মনে এল একগাদা জ্বর,সর্দি,কাশির ওষুধের নাম
রানাঘাট এখন মিনি চেরাপুঞ্জী তাতেই
নিয়মিত ইন্টারভ্যালে হাঁচছ,কাশছ
ছত্রিশ না ছাপ্পান বোঝা বড় দায়
তোমার থেকে অনেক ভাল বান্ধবীর বর
এই ঘোর বৃষ্টিতেও বোর না হয়ে
বন্দীদশা এনজয়ের উপদেশ দিচ্ছে তাই
তার ঘাড়ে গলায় আমি দেখি কামড়ের দাগ
আর তুমি কেবল সন্তর্পণে পেরিয়ে যাও সমস্ত ইট-
কাদায় তোমার পা ডোবেনা কখনো
শুভ্রাংশু তুমি ফুটবল খেলোনি কোনদিন
শুভ্রাংশু তুমি এনজয় চেনোনি তাই
তোমার থেকে অনেক ভাল সিলেটি যুবক
যে আমাকে পরী বলে ডাকে নিরন্তর
ভাবছি তার কাছেই চলে যাব ডানা মেলে
সেই শহরেও নাকি মেঘেরা রূপকথা গড়ে
ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে মাছ ধরব দুজনে
ডলুর জলে-
কবিতা লিখব হাত ধরাধরি করে
তুমি তো কেবল ব্যস্ত হিসাবনিকেশে
জলপাই রং আর স্টেথোস্কোপ নিয়ে
শুনছ শব্দ যত রুগীর বুকেতে
কখনো কি পাশ ফিরে শুনেছ চকিতে
তোমার ঠিক পাশে ফুট খানেক তফাতে
শুয়ে থাকে যে পরী তার নিঃশ্বাসে
আস্ত এক চেরাপুঞ্জী স্থির হয়ে আছে।
শুভ্রাংশু, হলুদ গুঁড়ো আর ভেসে থাকা সংসার
***
শুভ্রাংশু তুমি আর আমি বিপ্রতীপে বসে থাকলে
মাঝখান দিয়ে হেঁটে যায় সমস্ত সংসার
হলুদ গুঁড়ো, পাঁচ ফোড়ন আর বাসি কাপড়ের ডাই
বাচ্চাদের স্কুলের বই আর টিউশন ফিজের সাথে
অকারণে ঝগড়া করে প্রতিনিয়ত
তুমি উদাসীন হয়ে যাও কাটাছেড়ায়
আমি লেখার টেবিলে বসে কবিতা জাপটে ধরার
ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে চলি অবিরত
এদিকে কাজের মাসি আর কাগজওয়ালা
ড্রাইভারের সাথে মাতে গভীর মস্করায়
শুভ্রাংশু নৌকার মত ভেসে চলে সংসার
মাঝিহীন-অথচ কী নিতান্ত যাদুবলে ডুবে যায়নি এখনো
তুমি আমি সেই বিপ্রতীপেই বসে থাকি
বাচ্চারা চারা থেকে গাছ হয়,ফুল ধরে তাদের গায়ে
হলুদ গুঁড়ো, পাঁচ ফোড়ন, বাসি কাপড়েরা
কাজের মাসি,কাগজওয়ালা আর ড্রাইভারের হাত ধরে
নিশ্চিন্তে হেঁটে চলে যায়
শুভ্রাংশু, জন্মদিন আর একটি ভুল নামতা
***
তোমার জন্মদিন এলেই শীত আসে শুভ্রাংশু
বৃষ্টিও হয় কোনকোন বার
কুয়াশা গায়ে মেখে আমি হেঁটে চলে যাই
হাঁসখালি বগুলায়
আবার কখনো বা পোয়াতি বান্ধবীর ছবিতে লাইক দিই
নিত্যদিনের মত
তুমি কেক কাটো শুভ্রাংশু
তোমায় ঘিরে থাকে কোলাহল
উজ্জ্বল জীবন ছবি তুমি মুড়ে নাও মিথ্যার রাংতায়
আমি তখন শামুকের মত জলছবি খুঁজি
এক এক করে গুণে চলি সমস্ত মেকিত্বকে
তোমার জন্মদিন এলেই নতুন শাল পরি
নিজেকে ঢেকে নিই তোমার আবরণে
বেশ লাগে আজকাল এই ছলনাটুকুনি
অঙ্কের খাতায় পাওয়া শূন্যেরা দাঁত বার করলে
আমি তাদের বলি,"চুপ।আজ কার জন্মদিন খেয়াল নেই ?"
তোমার জন্মদিনে তারাও থম মেরে যায়
শূন্যতারাও উজাড় করে ভালবেসেছে তোমায়
তুমি-ই শুধু চুমুক দিতে শিখলে না
তোমার জন্মদিনে শুভ্রাংশু একবার আমি
নামতা শেখাতে চাই তোমার নাতি-নাতনিকে
শুভ্রাংশু আর কিছু এয়ো স্ত্রীর গল্প
***
শুভ্রাংশু, যেদিন আমার দিদা মারা গেলেন
আমার নব্বই বছরের উচ্চশিক্ষিত সংস্কারমুক্ত দাদু
দোতলা থেকে একটিবার দেখেছিলেন তাকে
নেমে আসেননি, অনেকেই বলেছিল এসে অন্তত
সিঁদুর পরিয়ে দিতে-
এয়ো স্ত্রী মরলে নাকি স্বামীর হাতের সিঁদুর পরতে হয়
দিদা বারবারই বলতেন আমি লাল কাপড়ে যাব
সিঁথিতে থাকবে লাল সিঁদুর, হাতে শাখা, পলা, নোয়া-
স্বল্প শিক্ষিত দিদার আজন্মলালিত সংস্কার ছিল এসব
দাদু অত সংস্কার বোঝেননি
নীরবে দু-এক ফোঁটা জল ফেলেছিলেন হয়ত
কেউ দেখেনি তা
পত্নীবিয়োগে চোখের জল ফেলা দূর্বলতামাত্র
যেদিন আমার দিদি মারা গেলেন শুভ্রাংশু
দিদি মানে বাবার মামি, বারিন্দির ডাক
তুমি লালমাটির দেশের লোক ওসব বুঝবে না
আমি তখন ডাক্তার
আমার দাদার একান্ত চাওয়া ছিল দুটি ডেথ সার্টিফিকেট
তাও দিদিকে আগে পার করে দিয়ে পরের খেয়ায় নিজে
নাহলে পাগলি দিদিকে দেখত বল ?
দিদি মারা যাবার খবর দাদাকে বলতে যেতেই
শয্যাশায়ী মানুষটি কথা ঘুরিয়ে দিলেন
সদ্য গাড়ি কিনেছি তখন
হঠাৎ বললেন," তোমার গাড়ি আমার আর চড়া হলনা দিদি।"
কুড়িদিন পর দাদাও চলে গেলেন,গাড়ি না চড়েই
নাহ,দিদিকে শেষ যাত্রায় সিঁদুর দিয়ে যাননি তিনিও
"ওকে নিয়ে যাও" বলে পাশ ফেরে শুয়েছিলেন একবার
বারিন্দির জমিদারে তুখোড় মেজাজে
পিএইচডি করা দিদির তাতে কিছু এসে যায়নি
গরমেও সোয়েটার গায়ে দিয়ে এক সিঁথি সিঁদুর পরে
ড্যাং ড্যাং করে চলে গিয়েছিলেন দোলায়
শুভ্রাংশু আমি যেদিন পড়ে থাকব
নামহীন পরিচয়হীন এক অচেনা উঠোনে
জীবনের জুয়ায় চুড়ান্ত ব্যর্থ এক নারীকে তুমি
দেখতে আসবে এমন আশা করিনা কখনো
আমি তো নাস্তিক এক সব সংস্কার ত্যাগী
নিজের গণ্ডি নিজেই ভেঙ্গেছি বারবার
তবুও দোলায় দেখি এক পূর্ণ শব
শাঁখা পলা নোয়ায় ভর্তি তার দুটি হাত
কপাল সিঁথিতে ভরে আছে লাল রং
সব ব্যথা দিনশেষে মিশেছে সেখানে
শুভ্রাংশু চোখের জল ভুলেও ফেলোনা
পুরুষের কাজ নয় অমন সোহাগ
দূর থেকে নিশ্চুপে দেখে যেও তবু
শুভ্রাংশু,আমি যে কখনো বিধবা হইনি
শুভ্রাংশু অর্জুন আর দ্রুপদকন্যা
***
তুমি অর্জুন হলে মানাত শুভ্রাংশু
ডুব দিয়ে তুলে আনতে নাগকন্যা
পাণিপ্রার্থনা ফেলতে না পেরে
গলায় মালা দিয়েই দিতে শিভালরি দেখিয়ে
সারা বিশ্ব বাহবা দিত তোমায়
রমণীর কামাহ্বান প্রত্যাখ্যান করা অপুরুষোচিত বটে
অথবা আত্মগোপনের জন্য বেছে নিতে
সুদূর মণিপুর যেখানে চিত্রাঙ্গদা অস্ত্রশিক্ষা করে
অপুত্রক রাজার বংশ রক্ষার অনুরোধে
গলে যেতে মোমের মত
তবে বংশধর কোলে তুলে দিয়েই মোহমুক্ত হতে
তারপর বংশীধারীর কথামত ইলোপ করতে
তার বোনকে,বন্ধুকৃত্য করে ফেলতে অনায়াসে
রথ ছুটিয়ে সোজা চলে আসতে ইন্দ্রপ্রস্থ
সুভদ্রায় মাতোয়ারা হতে ঠিক ভুল ভুলে
ভুলে যেতে প্রথমার পালাটিও আসেনি এখনো
তবে অনিন্দ্যসুন্দর তুমি পার্থ হলে
আমিও পাঞ্চালী হতে পেরেছি জেনো
তুমি চারভাগ হলে আমিও পাঁচ
আঙ্গুল গুনেছি নিপুন গণিতের হিসাবে
কখনো ধর্ম কখনো অতিবলশালী
কখনো বা সুন্দরতমের আড়ালে নেমে আসবে
প্রেম আর অগুনতি সঙ্গম
কামনার সব শাস্ত্র আবার লেখা হবে
সুভদ্রারা দেশে কালে যে নামেই আসুক-
শুভ্রাংশু তুমি এটি স্থির জেনে রাখ
তোমাকে পৃথিবী চিনবে সেই পুরুষ বলেই
পাঞ্চালী যার গলায় মালা দিয়েছিল স্বয়ম্বরে।