কবি শমীক জয় সেনগুপ্ত
কবি শমীক জয় সেনগুপ্ত |
কবি শমীক জয় সেনগুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন ৯ই অক্টোবর ১৯৮৬ (বাংলা ২২শে আশ্বিন ১৩৯৩)। পিতা– শ্রীযুক্ত অভিজিৎ সেনগুপ্ত। মাতা– স্বর্গীয়া কেতকী সেনগুপ্ত। শিক্ষা: ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। লেখালিখি শুরু ১৯৯৪ সাল থেকে কচিকাঁচা সবুজ সাথী পত্রিকার শিশু বিভাগে। ৯০এর দশকের কনিষ্ঠতম কবিদের মধ্যে একজন হলেও নিজেকে লিটিল ম্যাগাজিন কর্মী বলতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্ বোধ করেন। বারো বছরের মত সময়কাল ধরে শমীক জয় সেনগুপ্তর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়ে আসছে সপ্তপর্ণ পত্রিকা। সপ্তপর্ণ পত্রিকা ও অভিজয় প্রকাশনীর প্রাণপুরুষ শমীককে বাংলা সাহিত্যে আরো একটি বিশেষ কারণে মনে রাখার কারণ হচ্ছে সারা বাংলা জুড়ে জেলা ভিত্তিক ভাবে লিটিল ম্যাগাজিন সম্মান ও সাহিত্যের বিশেষ কিছু শাখার জন্য অভিজয় সাহিত্য সম্মানের জন্য। লিটিল ম্যাগাজিন এর সাথে সাথেই কলকাতা ক্যুইয়ার মুভমেন্ট ও অ্যান্টি ৩৭৭ আন্দোলনে শমীক জয় সেনগুপ্ত অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ।
প্রকাশিত বই :
নদীর কাছে ওরা ক'জন (২০১৬)
পকেট ফুল অফ জয় (২০১৭)
পুরাবর্ত্ম (২০১৭)
পুরস্কার ও সম্মান :
কচিকাঁচা সবুজ সাথী শিশু সাহিত্য সম্মান(১৯৯৬), সরলাবালা বিশ্বাস স্মৃতি সম্মান (১৯৯৯) ও চুণী কোটাল সম্মান (২০১৭)
কবি শমীক জয় সেনগুপ্তের একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :
জন্মদিনের কবিতা
***
ক্রমশ উৎসবহীন হতে হতে নবমীর শেষ রাতে
যে ঘরেতে ফিরিয়ে আনে
তার নাম বয়স
আলোর ওপর আমার অভিমান
অভিমান মিশে গেছে আওয়াজে, আসরে
কোথাও বা আড়াল টেনেছি
কেউ কেউ রেখেছে আড়ালে
তারপর একদিন দমকা বাতাস
ঘাড়ের ওপর ফেলে তপ্ত নিঃশ্বাস
ষষ্ঠী পার হয়ে যদিও নবমী
তবুও বোধ শূন্য দেখে তার বড়ই শাসন
আমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে এনেছে
এভাবেই বারবার বেড়ে যায় দেনা
নওই অক্টোবর সে কথা বোঝে না
ঋণে ঋণে অধমর্ণ
পরিপক্ক হয়েছে যে কেশ
উৎসব রেখে যায় বোধন বেলার সব রেশ
বুকের ভেতর তাও স্মৃতি সব করে চিনচিন
ছবিতে মায়ের সাথে
হেসে চলে বাইশে আশ্বিন।
বোধনের কবিতা
***
যে শিউলিগাছটা কাটা পড়লো প্রমোটরের ছকবন্দি ঘেরাটোপে
তার জন্য জল তুলসী তিল তোলা নেই
ছেলেবেলায় কতবার ফুল কুড়িয়েছি আর
এখন স্মৃতি শুধু কুঁড়ে খায় মন
আশ্বিনে না পাওয়া শিউলির মতন
গন্ধটা বয়ে নিয়ে বয়স বেড়েছে ।
কতদিন হয়ে গেল তোর কোন এসেমেস নেই
খাঁ খাঁ করছে সব শূন্য ইনবক্স
চিরকুট হাত বদলালে গোপনীয়তার
একশো আট, পদ্মালয়েতে আজ কানাকড়ি নেই
কি দিয়ে শান্তি আনি, কুশ না হরতকি !
পায়ে পায়ে স্রোত সব সোহাগে শরমে
বুঝিয়ে দেয় হ্যাংলামো মানায় না আর।
পুজোর বাজার শেষ, মামা বাঁকুড়ায়
বাবার হাতেতে ফোন , গান বাজে
শ্রোতা ঘুমে দেয়ালা করেছে ।
যাকে যা দেওয়ার সব চুকিয়ে বুকিয়ে
অবসর চেয়ে নিলে নিজের জীবনে
আঙুল স্পর্শ করে শাড়ির সম্ভার
অর্ডার প্লেস হলে পরে সম্বিত ফিরে আসে
যাকে উপহার দিতে সব রং ছেঁকে ছেঁকে রাখা
সেই বিবর্ণ করে চলে গেছে দূরে
বোধনে গ্রহণ লাগা নষ্টচন্দ্র হাত
তাড়াহুড়ো করে।
শিউলির গন্ধটা ঘর ছেড়ে মনে গেঁথে আছে
স্মৃতিও অনলাইন সামগ্রী হলে
সহজে চাই না বলে
ক্যানসেল বোতামেতে ছোঁয়ালে আঙুল
বড় ভালো হত।
দেবীহীন আশ্বিন আমি
এর আগে দেখিনি কখনো ।
প্রয়াণ
***
আসলে প্রয়াণ বলে কিছু হয় না শ্রাবণ
ঝুলি উপচে সহবাসী হৃদয়পল্লব
লিখে রাখে লোকান্তরের দ্ব্যর্থ কথনলিপি
চলে যাওয়া মানে শুধু শোক নয় তাই
আমাদের ঋতু জুড়ে বৃষ্টিও সাম-গীত গায়।
আসলে প্রয়াণ বলে যেটুকু বুঝেছি
স্মৃতি আর পত্রপুটে অবারিত গতি
চোখের ওপরে তার কড়া চৌকিদারি
মনে মন পুড়ে খাক; ওটুকুই ক্ষতি
বাকি সব ঠিক আছে আগেরই মতন
তবু কিছু না পড়েও অভিমানে চোখ
অদেখার গ্লানি নিয়ে চিকচিক করে।
বৃষ্টি হয়নি আজ আমার শহরে
দুঃসহবাসে তাই রাস্তা ও চোখ
দুজনেই হেঁটে চলে স্মরণিকা ধরে।
এক টুকরি মনখারাপ
***
ধরো অনেকদিন আমার মন খারাপ হয় না
ঝগড়া করার আগেই দেখি বাকরুদ্ধ পড়ে আছে বিছানা
বৃষ্টি চেয়ে মল্লার গাইবো ভেবে বেখেয়ালেই সুর লাগালাম শুদ্ধ সা-এ
খবরের কাগজ টানটান করে মেলা আর
খবর এসে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে কাপের গায়ে
অনেকদিন কথা বন্ধ হয়ে গেছে
ধরাধরি করতে করতে স্পেশ খাচ্ছে অস্বস্তি
বীজগণিত কষতে কষতে অঙ্কুরেই নাশ হচ্ছে মন
আর মনই যাদের নেই তাকে তুমি কি ভাবে উপহার দেবে
এক টুকরি মন খারাপ
বর্ণপরিচয়
***
আমরা তখন ঘুমিয়ে ছিলাম
চোখ যদিও খোলা
আঁতকে উঠে তাকিয়ে দেখি
ছুটছে গুলি গোলা
আমরা তখন দুধার জুড়ে
পালাচ্ছি প্রাণ ভয়ে
আলোর থেকে অন্ধকারে
উদ্বেগে সংশয়ে
কারা যেন অট্টহাসে
কাঁপিয়ে দশ দিক
বলছে হেরো, ভীতুর দল
মুখ লুকিয়ে নিক
বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে
ওমনি জাগে ভাষা
দুর্বলতার মেঘ সরিয়ে
সুদৃঢ় জিজ্ঞাসা
নিজের কাছে হেরে যাওয়া
এত সহজ নয়
প্রতিবাদের শব্দ জোগায়
বর্ণ-পরিচয়
ভাষা যখন ছলকে ওঠা
মায়ের বুকের সুধা
মিটিয়ে দিচ্ছে চোখের, মনের
অজ্ঞানতার ক্ষুধা
তখন আমার ভয়টা কিসের
ভয়কে বলি - ষাট
বৃষ্টি নামায় বর্ণমালার
একলা সহজ পাঠ
দু এক মুঠো তুচ্ছ বারুদ
করবে পাতা লাল
সেই শোনিতে আর্দ্র হরফ
আনবে ফের সকাল ।
মৎস মিথুন
***
নিতান্তই অগোছালো আছি
দায় কাঁদেনি, তাই অচেনা ছোঁয়া
বড্ড বেশী নিজের মনে হলে
হাপড় টানি, শরীর ছ্যাঁকা পোড়া
আড়িয়াল সব চিস্যাপণা মুখ
বুকের মধ্যে ধুকপুকুনি বাড়ায়
অন্ধকারে জল ছোঁয়া সব হাওয়া
গাছের গায়ে দেওয়াল ঘেঁসে দাঁড়ায়
দু এক টহল ভাঙলে অভিসার
বসতে শেখা অন্য তরুমূলে
খোচর শালা ভেল শিখেছে ভালোই
হাওয়ার মত ফিসফিসিয়ে আসে
রফায় যদি বকেয়া হয় দেনা
নজর থেকে কাজল চুরি
ঝোপগুলো তো চেনা
আড়িয়াল সব চিস্যাপণা মুখ
বুকের খাঁজে লুকিয়ে যৈবন
এক বাজারে মাছের খোঁজে আসে
মাছসঙ্গ বড়ই প্রিয় তাই
আঁশ ছুঁয়ে থাক খণ্ড ভাগ্যবান