1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি মৃণাল সরকার | সাহিত্য চেতনা

 কবি মৃণাল সরকার


কবি মৃণাল সরকার

কবি মৃণাল সরকার কমার্স নিয়ে স্নাতক হন । যৌবনের শুরুতে কিছু কিছু লেখালিখি করলেও তারপর দীর্ঘ ছত্রিশ বছর সাহিত্য জগতের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক ছিলো না। সাহিত্য জগত থেকে স্বেচ্ছায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলেন নিজেকে। তারপর ২০১৩ থেকে ফেসবুকের হাত ধরে ধীরে ধীরে ফিরে আসেন থাকি সাহিত্যের আঙিনায়। 



কবি মৃণাল সরকারের একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল  :



ইনক্লাব জিন্দাবাদ

        ***


কেদারায় গা এলিয়ে..

ঠ্যাং দুলিয়ে

বাবুরা হাড় চিবায়..

টেবিলের নীচে ডান হাতের অধীর প্রতীক্ষা...

সাহেবেরা একটু পর্দানশীন..

হাড়গোড়ের সিংহভাগে তাদেরও নখদন্তের স্পর্শ লাগে..

রয়েসয়ে আলতো ভাবে..

পেটের তো নয়.. শুধু মনের খিদে..

আগামী প্রজন্মের সুদিন কিনবে বলে

একটা বিশাল অংশ তুলে রাখে..

বিনিময় প্রথার সূত্র...


রাজপথ জুড়ে মুখোশ-মিছিল..

সারমেয় মানুষে মিলেমিশে একাকার...

সবার কন্ঠ জুড়ে ধিক্কার.. দুর্নীতি নিপাত যাক.. দুর্নীতিবাজ দূর হটো..

সর্ষের ভেতর ভূতের দুরন্ত নাচন...


'ইনক্লাব জিন্দাবাদ' মর্গের হিমঘরে

আয়েস করে গড়গড়া টেনে যায়

তামাক ছাড়াই....



 চিনি কম

    ***


ঘড়ির কাঁটার সেই একই বৃত্তপথ...

ক্লান্তিহীন ঘুরে চলা.. বাঁধাধরা গতি...

ধূমায়িত চায়ের কাপ.. কমে আসা চিনি..

নিস্তরঙ্গ রক্তে জমে মিছরির পলি...


ঘিরে থাকা জনারণ্য অপসৃয়মান..

চোখে ছায় কুয়াশার ঘন পর্দা..

মনের আকাশ আজও নির্মেঘ নির্মল..

সময় বিমুক্ত.. নেই ঘড়ির শাসন...


মন তাই নির্ভার ডানা মেলা পাখি..

স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যত.. অবাধ উড়ান...

দেহের তো চিরন্তন অগ্নি-পরীক্ষা..

বিদেহী আত্মার বুক মন্দাকিনী ধারা....



 যদি কখনো ছবি হয়ে যাই

              ***


মাঝে মাঝে বড় ইচ্ছে করে..

ইচ্ছে করে ছবি হয়ে যাই..

দেয়ালের এক নির্জন কোণ..

আধো আলো আধো অন্ধকার..

ঝুলে থাকি ফ্রেমবন্দী হয়ে..

অবহেলার মালা বুকে ধরে...


এবার মন্দরা সব ধুয়ে মুছে যাবে..

নতুন করে লেখা হবে আমার ইতিবৃত্তি..

চেনা মুখগুলো নিঃশব্দে ঢেকে যাবে

ভালমানুষির মুখোশের অচেনা আড়ালে...


জীবনের সুদীর্ঘ পথ ধরে

কোন এক প্রিয় হাতের স্পর্শধন্য গোলাপ

মৃগতৃষ্ণা হয়ে রইল ধূ ধূ বালুচরে

আমার অনুভূতির বিস্তীর্ণ মরু জুড়ে...


আজ যদি অকস্মাত্‍ ছবি হয়ে যাই..

দেয়ালে স্থির হই ফ্রেমবন্দী হয়ে..

ধুলোধূসরিত মালা বুকে শোভা করে..

তখন আসবে কি সেই প্রিয় হাত

কোমল স্পর্শে গোলাপগন্ধ জড়িয়ে

সমর্পণের অনুরাগে পূর্ণসিক্ত হয়ে..

অভিমানী চোখ ভরা টলটলে দীঘি....



 শুধু ব্যর্থ প্রতীক্ষা

           ***


নীল আকাশে শুধু মেঘের আনাগোনা,

চমকায়, গর্জ্জায়, বর্ষণেই যত অনীহা।

অথচ আমি কবে থেকে বসে আছি

ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভিজবো আপ্লুত হয়ে,

জানালার ধারে বসে দেখবো অঝোর ধারা,

টিনের চালে বৃষ্টির টাপুর টুপুর অনিন্দ ছন্দ

আমাকে নিয়ে যাবে আমার উদ্দাম শৈশবে,

বড়দের ভ্রূকূটিতে হয়ে আরও বেপরোয়া,

ভাসাবো কাগজের নৌকো বৃষ্টির দুরন্ত ধারায়,

পাগলা হাওয়ার ছোঁয়ায় তার এলোপাথারি দোল,

এক সময় ডুবে যাবে আঙ্গুল ডোবা জলে,

বিষন্ন ও প্রসন্ন চিত্তে করবো রচনা

খাতা ছেঁড়া পাতা দিয়ে আরও কত কাগজের নাও...


চকিতে ফিরে আসি অতীতের মোহজাল ছিঁড়ে

বর্তমানের অতি চেনা কঠিন বাস্তবে...


বিষন্ন গহণ রাত, তুমি পাশে শুয়ে,

আহা, যদি এ সময়ে আকাশ ভেঙ্গে পড়ে,

রাতভর পাগলা হাওয়া.. অঝোর ধারা,

বয়সটা কি যায় না কমানো একটি রাতের তরে?

এলোমেলো ভাবনাগুলো দোল দিয়ে যায়,

শুধু বৃষ্টিই অদেখা থাকে চরাচর জুড়ে..

দু'চোখের পাতা বেয়ে ঘুম নেমে আসে ব্যর্থ প্রতীক্ষায়।



কানামাছি ভোঁ ভোঁ

        ***


বুকের রক্ত হিম করা জল..

ধূয়েমুছে করছি সাফ

তোমার অনুভূতিহীন ভালবাসার দাগ।

যাযাবর তোমার প্রেম..

প্রতি মুহূর্তে আনুগত্যের ঠিকানা বদল।

আমার সেকেলে বুকে

প্রেমের আধুনিকতা সয় না...

বুকের ব্যথা চাপা দিতে

দু'হাতে চাপিয়েছি বুকে

বিশাল এক বরফের চাঁই..

ধীরে ধীরে দ্রবিভূত হয়ে

বুকের জমাট রক্ত যেন স্রোতস্বিনী।

কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলা...

স্পর্শের দাগ গুলো বড় দগদগে..

ধুয়েমুছে বেদাগ হবার অধীর প্রতীক্ষা।


তবু যেন রক্তের রঙ এখনও বিষাক্ত নীল....



ঘষা কাচ

    ***


বিবর্ণ নীল খাম বেয়ে

নেমে আসে বিস্মৃতির বর্ণমালা

বুকে জড়িয়ে গোলাপের অসহায় বিবর্তন..

স্মৃতির কিছু কিছু প্রলম্বিত ছায়ার

হয়তো বিলম্বিত আলোর প্রত্যাশা...


উষ্ণতাহীন কার্মুক শরীর.. মেরুদণ্ডে ঘুণ..

নিষ্প্রভ ত্বকে জেগে ওঠা ছোট ছোট ঢেউ..

ছানির ভালবাসাবন্দি স্বপ্নিল দু'চোখ...

তবু অধীর আগ্রহ স্মৃতি হাতড়ায়..

নিশ্ছিদ্র ঘন অন্ধকারে হারিয়ে যায়..

স্মৃতিও এখন তবে বরিষ্ঠ নাগরিক !


অব্যক্ত ভাললাগা মনের মুঠোয়

গুঁজে দেয় মোমগলা দীপ্ত স্নিগ্ধতা..

অলস পায়ে মন হেটে যায় অগস্ত্যযাত্রা...


এক প্রাগৈতিহাসিক ভালবাসার ফসিলের সন্ধান....



পাদপ্রদীপের ছায়া

         ***


বার বার কেন উঁকি দাও স্মৃতিপথে,

তুমি যে আমার কন্ঠ হারানো সুর,

যাও ফিরে যাও, জড়াও নবীন কন্ঠ,

আমার আকাশে জ্যৈষ্ঠের রোদ্দুর।

তোমার সূর্য ভোরের স্বর্ণরেখা,

মধ্য গগনে আমার তপনতাপ,

তোমার আঙনে পাখির স্নিগ্ধ কূজন,

আমার দুয়ারে বসে আছে অভিশাপ।

যাও চলে যাও, ছেড়ে দাও স্মৃতিপথ,

যত বিতৃষ্ণা আসুক এ পথ ধরে,

মিষ্টি মধুর স্মৃতির বিষাক্ত কীট,

দংশণে তার কেবলই অশ্রু ঝরে।

এই বেশ আছি, বেসুরো গলায় গাই,

পাদপ্রদীপের তলায় আঁধার ছায়া,

এই আলোতেই ছিলাম উদ্ভাসিত,

এখন শুধুই তমসায় মিশে যাওয়া।



 ম্যারাথন

    ***


আমার স্বপ্নরা এখন পিছপায়ে হাঁটে...

প্রৌঢ়ত্ব যৌবন কৈশোর পেরিয়ে

হাঁটি হাঁটি পা পা শৈশব অঙ্গন..

নড়বড়ে পায়ে শুধু পিছু হেঁটে চলা।

একদিন পিঠ ঠেকে যায়..

সাদা-কালো স্মৃতিমাখা

অতীতের সীমান্ত দেয়াল।

অতীতকে ভবিষ্যতে টেনে এনে

নতুন করে প্রস্তুতি শুরু নবজাত এক বর্তমানের।

ভেবে দেখতে হবে, হয় তো আমারও

প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় কোথাও জড়িয়ে আছে।

গোধূলির আলোতে দাঁড়িয়ে

দু'চোখের স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করি,

বলি, পিঠ বুঝি দেয়ালে ঠেকেছে?

আয়, স্টার্টিং পয়েন্টে এসে স্থির হয়ে দাঁড়া..

আবার এগিয়ে চলার পালা..

শুরু হবে ম্যারাথন রেস।

পিস্তলটা গর্জে উঠলেই দে ছুট...

শুরুটা হাঁটি হাঁটি পা,

সামনে অনেকটা পথ দিগন্ত পেরিয়ে...

কোথাও ফুল.. কোথাও কাঁটায় রক্ত ঝরিয়ে

ছুটতে হবে একটা গোটা জীবন...

জীবন কোন দিনই হবে না স্থবির

যদি না তুই ছিটকে যাস এ রেস থেকে।



আমার একাকীত্ব ও তুমি

             ***


এক একটা দিন বড় একা হয়ে যাই...

চারপাশের ভিড় গুলো

ধীরে ধীরে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে,

কোন দুঃখ নয়..

বেদনা কিংবা হতাশাও নয়..

শুধু একরাশ শূন্যতা

বিমর্ষের ভারী বোঝা কাঁধে

আমার চারপাশ ঘিরে থাকে..

যেন আমার অস্তিত্বকে পাহারা দেয়...


ঠিক এমনি দিনে তুমি আসো

অনায়াস সমস্ত পাহারা অগ্রাহ্য করে...

পরনে সেই আকাশনীল শাড়ি..

আঁচলে রঙধনুর ছটা..

আশ্চর্যভাবে প্রতিবার

শুধু তোমার মুখটা পাল্টে পাল্টে যায়...

অথচ তোমায় চিনতে কোন ভুল হয় না আমার..

তোমার চোখের কোণে হাসি আর প্রশ্নের সহবস্থান..

মন খারাপ বুঝি ?

আমি মাথা নাড়ি, অসম্মতি জানাই..

এবার তুমি পাহারাদারদের দ্যাখো..

তোমার চোখে প্রশ্ন জাগার আগেই

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই..

তুমি একগাল হাসো..

প্রগাঢ় ভালবাসায়

পেলব হাতে আমায় স্পর্শ করো..

তারপর হঠাৎই অদৃশ্য হয়ে যাও...

আমার একাকীত্বের বরফ

যেন ধীরে ধীরে গলতে থাকে....



ভালবাসা ভালবাসা

         ***


তোমার অনুরাগ তখন মন্দাকিনী

আমার বুকে স্রোতস্বিনী

অনুভূতির প্রান্তরেখা ছুঁয়ে বয়ে যায়...

অভিমানের অভেদ্য বাঁধ

ভেসে যায় খড়কুটোর অসহায়তায়।

দু'হাতে এক টুকরো মেঘ সরিয়ে

জ্যোত্‍স্নাকে ডেকে আনি মনের গভীরে।

ভেসে যাওয়া অভিমানী দম্ভের নীচে

পড়ে থাকে এক চিলতে নিথর অনুভূতি

পরম আহ্লাদে,

অনুরাগে সিক্ত হবার তৃষিত প্রত্যাশা...






Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন