1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত | সাহিত্য চেতনা


কবি ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত















বি ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের জন্ম ১৯৫৩ সালে । দেশ, আনন্দবাজার সহ সবকটি নামী পত্রিকায় ছাপা হয়েছে তার কবিতা ও অন্যান্য লেখা  । তার প্রকাশিত বইগুলি টুকরোগুলো,  বিকেলে হ্রদের ধারে, জিরাফের বাগান, মৎস্যকন্যা, তারাজন্মের দিকে, জ্বলন্ত গিটার । বইগুলির প্রকাশ কাল ২০১৩ থেকে ২০১৮র মধ্যে ।বাংলাদেশ এবং বিদেশের নানা নামী পত্রিকায় তার লেখা ছাপা হয়েছে ।

কবি ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের একগুচ্ছ কবিতা প ্রকাশ করা হল :


অন্ধ মৃত্যুর হরিণ
         ***

আমাকে অণুপল দাও ঘুমোব,
আমাকে পল দাও আমি ঘুমোব,
আমাকে মুহূর্ত দাও ঘুমোব,
শীতঘুম দেব ঋতু ব্যাপী,
দীর্ঘ নিদ্রায় যাব শতাব্দী,
তবু শুনে রাখ মহান, এটা সাময়িক- 
আমার মৃত্যু নেই;
আবার ফিরব এই প্রান্তরে সবুজে।

কফিন ঘেরা চিৎকার থেকে উঠে 
আঙ্গুরলতার স্বপ্ন ঘুমোতে চাই,
সাগর ছুঁয়েছে যে শিশুর হৃদয় 
আমি তার স্বপ্ন ঘুমোতে চাই,
মুমূর্ষুর ঠোঁট ভেজানো জলের হাহাকার নয়। 

শুনতে চাই না মৃতের শরীরে রক্ত ঝরে না,
ঘাসের অত্যাচার শিখতে আর নয়, 
চাঁদের মুখ থেকে আসা সরীসৃপের চেরা জিভেরা 
আমাকে ভুলে যেও, ভোর হবার আগে।

বুকের ভেতর ঝলসে ওঠে হীরের তরবারি,
বসন্ত হাওয়ার একান্ত সুহৃদ আমি, 
ছায়া দিয়ে ঢেকে দিই নিজের অশ্রুবিন্দু। 

আমারও দেহ ঢেকে দিও সাদা মসলিনে, 
পা ভিজিয়ে দিও সুরভি নির্যাসে,
শরীরে ছড়িয়ে দিও আতরবলয়,
নরকের কীটেরা যাতে থাকে দূরে।

সমুদ্রকে হৃদয় দিয়েছিল যে সব শিশুরা,
আমি তাদের ছুঁয়ে ঘুমোব শতাব্দী ।



মন খারাপের দুচ্ছাই 
            ***

এমন সকাল ঝকঝকে রোদ, 
মাঝে মাঝে আকাশটাতে একটু আলো একটু ঘোলা;
হঠাৎ এমন আটকে রাখা সভ্যতার দৈত্যটাকে,
ফুঁসছে সে কাঁদছে সে।

কেউ জানে না থাকবে কে, যাবে কে;
তবুও মানুষ থাকবে মানুষ;
মানুষ তবু থাকবে জেনো,
মন খারাপের বারান্দাতে হাঁটতে হাঁটতে
ফিরবে মানুষ কোলাহলে।


চাহিদাগুলো
      ***

আমাদের সামান্য চাহিদা,
দুমুঠো ভাত ও কিছু আনুষঙ্গিক
সুস্বাদু তরিতরকারি-
এবং 
প্রতিটি কাউন্টারে
সংবেদনশীল নারী।

আমাদের সামান্য চাহিদা কিছু সংবিধানসম্মত
বাকীটা গভীর প্রত্যাশা-
প্রান্তর জুড়ে বিশাল বৃক্ষের কিছু আশ্রয়ডাল
আর ছায়াঘন চাইছি আমরা।

আমাদের চাহিদাগুলো,
পাখি হয়ে উড়ে যেতে থাকে-
শুকিয়ে যায়,
রোদ্দুরে ঝরে পড়া অকালবর্ষা।



রাজনীতি, তোমাকে আমি ঘৃণা করি
                         *** 

জ্বলছে পৃথিবী তাই অসহ্য রাগে জ্বলছি আমি;
রাজনীতি তুমি ব্যর্থ, সর্বত্র প্রচার করো ঘৃণা;
কখনও কি ব্লেম গেম ছেড়ে একসঙ্গে 
কাজ করা যায় না?
রাজনীতি- সর্বত্র ব্যর্থ তুমি,
দেশ বিদেশ আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
সত্যি বিপদের মুখে দাঁড়ালে বোঝা যায়
কতটা অসার তুমি !

রাজনীতি, তোমাকে আমি ঘৃণা করি;
ঘৃণা করি ঘৃণার বেসাতিগুলো;
সংবাদ মাধ্যম যারা ব্যবসা করো-
বিক্রি করো ঘৃণা এবং কলহ-
তাঁদের ঘৃণা করি আমি।

মানুষ জ্বলছে আজ,
ঝড় থামলে ঠিক খুঁজে নেবে
কে প্রকৃত বন্ধু কার !



   ঈশ্বর 
    ***

ঈশ্বর সহায় হলে অনন্ত ক্ষমতা পাবে তুমি,
দেখ, প্রতিটি শক্তিমান ঈশ্বর বিশ্বাসী,
কী সে ঈশ্বর, কেমন তার রূপ-
নিজের অন্তরে দেখ- আমি বলছি না কিছু।

দেখ যদি বিশ্বাসী না হও,
আশ্রয় পাবে না তুমি,
এমন অন্ধকারও আসে মাঝে মাঝে,
তোমাকে আশ্রয় দেন কেবল ঈশ্বর।

আমার আপত্তি নেই, যে নামে খুশি ডাক তুমি তাঁকে,
যেভাবে পূজন করো তাও স্বীকৃত,
প্রকৃতি বলো তাকে- আপত্তি কী?
নিজস্ব বলো তাকে, আপত্তি কী?
দেখ ঈশ্বরবিশ্বাস কীভাবে শক্তিশালী করে তোমাকে,
শুধু একটিই কথা, ঈশ্বরের পরেই স্থান দিও
যুক্তি ও বিজ্ঞানকে।



কবিতার ভূমিজ কৃষক 
              ***

প্রান্তিক তৎপরতায় ব্যস্ত থাকি,
যৎসামান্য উপকরণ, প্রাচীন লাঙল; 
দুর্বল গবাদিকে হলকর্ষণের প্রস্তাবে
কোনমতে রাজি করানো।

আমার শঙ্কাই সত্য প্রমাণিত,
চক্ষুপলকে নিরুদ্দেশ আহৃত উপমা,
পলায়ন তৎপর পাখির মতো
শব্দ নিরুদ্দেশ।

কী যে সংগ্রামে থাকি !
অথচ ভেবেছিলাম সৃষ্টি আমাকে একক
সাক্ষাৎকারে কাহিনী শোনাবে।

অতঃপর বিস্তৃত ভূখণ্ডে আমার চাষবাস,
গভীর কর্ষণ, নক্ষত্রের রীতিনীতি, পতঙ্গপাঠ,
দেহতত্ত্ব, আত্মদর্শন।
কৃষক থেকে সম্রাট!
মৃত্যু ভাবনা আসে না কোন,
ভাষাটাই একমাত্র দেশ শুধু জয় করবার।



আজ তাঁর একশ বছর
( মুজিবুর একাত্তর )
             ***

বাংলাদেশ একটি উত্তরণের নাম,
ধর্ম নিয়ে যারা খেলা করছিল,
দাগ দিতে চাইছিল গায়ে-
মন্দির মসজিদ নিয়ে যারা ভুলেছিল বাস্তব
সেই জনগোষ্ঠীকে মুজিব বললেন,
ওসব পরে হবে,
দেখ ওরা কেড়ে নিতে চাইছে তোমার ভাষার আশ্রয়
আর আত্ম নিয়ন্ত্রণের অধিকার।

ঐ দেখ পশ্চিমারা কেমন শাসন
করে চলেছে দিনের পর দিন
শস্য শ্যামলা বাংলা কিছুই পাচ্ছে না,
তার নাগরিকেরা আজ ক্রীতদাস।

তিনি বললেন, রক্ত অনেক দিয়েছি, আরও দেব-
এদেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ্‌,
ইনশা আল্লাহ তখন কোন আরবি ভাষা নয়,
যেন সে অমোঘ দৈববাণী, গীতার নতুন অধ্যায়,
এই শব্দ তখন কেবল মুসলমানের নয়,
এ হিন্দুর আপ্তবাক্য, বৌদ্ধের ত্রিপিটক,
ক্রিশ্চানের বাইবেল।

ধর্ম ভুলে জাত ভুলে
সমগ্র বাঙালি তখন তাকিয়েছে
এক মহাপুরুষের দিকে।



তুমি, তুমিই
      *** 

তোমাকেই খুঁজেছি শব্দহীন সন্ধানে,
নগ্ন আলোয় দেখি মানুষের ভিড়;
মুখ নড়ে, কথা বলে না কেউ;
শব্দ হয়- বাক্য হয় না কোন।

নৈঃশব্দ্যের শব্দ ভাঙ্গে না কেউ ভয়ে,
গভীর অসুখের মতো শরীরে বাড়ে,
অন্ধকারের মধ্যে মাথায় কে পোঁতে
বীজ; পল্লবিত হয়ে চলে অন্তরালে।

সোমনামবুলিস্ট আমি হাঁটছি গ্র্যানাইটের
পথে, পথবাতির আলোয় ঢাকা ঢুকি দিই
শীতার্ত শরীর; রাত্তির টুকরো করে 
ছুরির ফলার মতো আলো চোখে লাগে।

আসলেই তুমি সেই মেয়েটি যে প্রকৃতিসম্ভব,
ছল চাতুরীহীন; আরোপিত পেলবতা নেই,
বলে দিচ্ছ যা অসম্ভব।
কিছু দুঃখ হয়ত প্রাথমিক,
তারপর স্থায়ীবোধ;
ঘোষিত শত্রুর প্রতি শ্রদ্ধা রাখি আমি
মিথ্যেবাদী স্তাবকের চেয়ে।



দুঃখিত
   ***

দুঃখিত, যেতে পারছি না গ্রিনরুমে, 
আপনার পাশে স্তাবকের ভিড়ে, মহানায়ক;
যাবো না, শূন্য প্রেক্ষাগৃহের
পরিত্যক্ত সপ্তম সারিতে দাঁড়িয়ে কাঁদব,
অনুষ্ঠানের পরে। 
ঠিক কোন শব্দ উচ্চারণ করে
ক্রন্দন সঠিক হবে জানি না, তবু কাঁদব।

সীমাহীন অগণিত হাততালি দেব,
এটা প্রেক্ষাগৃহে আমার একাকীত্বকে সহনীয় করবে,
শব্দ তার মাত্রা হারাবে,
কেবল জাগবে মেধা,
আপনার প্রস্তুতিগুলো মনোযোগ
সহকারে শুনবো, বারবার মনে করবো, 
জানি আপনি বড় সুন্দর প্রস্তুত করেন
নাগরিক জীবনের কান্না ঘাম আর রক্তের উপাখ্যান ।

কনুই থেকে হাতটা ভাঁজ করে 
আপনি আবার ছুঁড়ে দেবেন আকাশে,
আপনার যাদুতে মুগ্ধ হবো জাদুকর
শূন্য মঞ্চের সামনে হাততালি দেব,
উঠে দাঁড়াব সপ্তম সারিতে, হে প্রিয় ।


নিজের সঙ্গে দেখা
           ***

অতিদীর্ঘ দিনের মতো ডূবে যাও,
ধীরে ধীরে উজ্জ্বল আপন মদে;
অপরিচিত চিত্রকলার মতো প্রথমে
মুহ্যমান হও দর্শনে;
সময় দাও, দেখ কী আসক্তি জন্মায়
প্রত্যাশা ছাপিয়ে।

যে পৃথিবী দিয়েছে তোমাকে মূলত
স্পষ্ট অবহেলা,
তাকেও সময় দাও, দেখ সময়পাতে
সে ললনাও স্নেহময়ী হয় কীভাবে,
কীভাবে লঘু হয় বায়বীয় হয়
যাবতীয় শোক তোমার,
যেমন দিনের আলোয় হারিয়ে যায়
একদার গভীর অন্ধকার।


অন্তিম অন্ধকারে
         *** 

প্রতিটি আসবাব অতি পরিচিত,
পরিচিত মুখগুলো রং ঢং;
বাইরে তাকাই না আর,
দেখি কে আছে ভেতর বারান্দায়।

আসলে তো নিজের সঙ্গেই কথা,
খুঁজতে গিয়ে খুঁড়ে ফেলছি দেশ;
প্রত্নবিজ্ঞানে মানুষ রহস্য বিশেষ,
কতো যে ধুলো লেগে থাকে গায়ে।

ধুলো ঝাড়ি খোঁজার তাড়সে,
তুলে নিয়ে যাবো নিজেই নিজেকে
আকাশ থেকে নেমে আসা
দুর্দান্ত ঈগলের মতো।

এ প্রতিরোধ কি বাতাসে এতোটাই স্পষ্ট?
ঠুকরে ঠুকরে নিজেকে রক্তাক্ত করে
অসৌজন্যের এই প্রগাঢ় আকুতি
কি ঈশ্বর মনোনীত?

পরিচিত আসবাবের কারুকাজ দেখে 
ক্লান্ত আমার এতগুলো বছর
আজন্ম স্থির দাঁড়িয়ে আছে
নিজেকে তাই খোঁজা অন্তিম অন্ধকারে।


পেরিয়ে আসা 
       ***

তোমার চোখ আমাকে দেখতে না  পেলে,
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমি কাশবন অতিক্রান্ত;
প্রান্তর শেষে এসেছি চাঁদের মোহনায়।

যে বাড়িটায় থাকব ভেবেছিলাম,
সেখানে কারা যেন বসতি করে
দরোজায় লেখা অনেকগুলো নাম।

ভেজা ভেজা নৈঃশব্দ্যে কবে সে বাড়ি
তলিয়ে গেছে অপস্রিয়মাণ পদসঞ্চারে,
বিদ্যুৎ ও বাতাসের কাছে
বিদায় নিয়েছি কবে।

পেরিয়েছি সংকেতবিহীন নগরী,
দৌড়েছি দৈব নির্ধারিত দৌড়।


আল মাহমুদ
       ***

কার সঙ্গে কার প্রেম হলো, আমার সঙ্গে হলো না ! 
আর খেলবো না যাও ! 
ওদিকে ভাইরাস ঢুকেছে করোনা এবং রোদ্দুর রায়।
বাঙালি কোথায় যে ছোটে
কোথায় যে যায়।
কে কোন অযোগ্যকে পুরস্কার দেয়,
এবং পরে কেড়ে নেয়,
এতো দুর্বল কেন দুনিয়া।
তুড়ি মারি গুলি মারি,
আমার কিই বা আসে যায়,
পাবার কিছু নেই,
হারাবার কিছু নেই।
এমন দিনে মাগরিবের আজান শুনছি দূরের মসজিদে
আর আমার সামনে খোলা আল মাহমুদের শ্রেষ্ঠ কবিতারা !
আজ আমাকে গ্রাস করেছেন আল মাহমুদ, এক কিংবদন্তী,
যাকে না পড়ে বাংলা কবিতার পথে হাঁটা টালমাটাল ।




Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন