কবি বিমল মণ্ডল
কবি বিমল মণ্ডল |
কবি বিমল মণ্ডল জন্মগ্রহণ করেন ১০ই ফেব্রুয়ারী পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চৌদ্দচুলীর খেজুরীতে ।
কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আছে অর্পণ , ফিরে পাওয়া কবিতা , শিরোনাম নেই , আকাশ তুমি জানো, বিশ্বাসের চুপকথা , সরোবরের ভেতর চাঁদ ।
এখনো পর্যন্ত কবির যৌথ কাব্যগ্রন্থ ৪টি, যৌথ গল্পগ্রন্থ ২টি, প্রবন্ধ গ্রন্থ "কাজী নজরুল ইসলামঃ প্রসঙ্গ কবি ও কাব্য", সম্পাদিত গ্রন্থ - শব্দ যখন , সম্পাদিত পত্রিকা - অঙ্কুরীশা।
ছোটো বড়ো দেশ বিদেশে ( সিডনি ও বাংলাদেশ ) বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ । আকাশবাণীর প্রাত্যহিকীর সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন থেকে কয়েকটি সম্মান প্রাপ্ত হয়েছেন ।
কবি বিমল মণ্ডলের একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশিত হল :
ক্ষুধা
***
কথা বলার সময় হারিয়েছি- জীবন সমর্থন
আষ্টেপৃষ্টে বেঁধেছি আমার বর্তমান ক্ষুধা
কষ্টের সময় ঘিরে উচ্ছ্বাস আবেগ
আমাকে টেনে এনেছে প্রকাশ্যে
মুহূর্তে ভীড় - যে যার মতো চোখে
প্রাণপনে দুটি হাত বাড়িয়ে
মধ্যিখানে স্তাবকবৃন্দের শাসানি
তাতেও ক্ষুধার সাথে প্রাণ বাঁধা পড়ে।
তির্যক আমোদ
***
মননবিলাসী গাঁয়ের পথে
অলিগলির ভেতর হৃদয়ের দিকে চেয়ে
আমার বাঁচার স্বাদ মায়াবী বিবর্ণ দেওয়ালে
চেনা পুকুরের পাড়ে আমোদ স্বভাব
উঁচু তীর্যক ভরে
মানুষের চাওয়া নিবিড় বিনয়ে
ক্রমে ক্রমে সময়ের পরিমাপধারা
সহজ-সরল অদ্ভুত বৃত্তের ভেতর
তির্যক আমোদে মৃত্যুর সংরক্ষণ ।
পরিত্রাণ
***
যদিও আমার কাজের সময়
এই গ্রামঘিরে কত যুগ চলেছে
যেখানে প্রতীকী মায়ের পদচিহ্ন
হাঁটু গেড়ে প্রণাম রোজ মাটির বেদিমূল
সেইখানে আমার হৃদয়ে হৃদয় গড়ে ওঠে
অপরূপ মা শরীরে
পরিত্রাণ সকল কাজের
সন্তান বাৎসল্যে ।
সন্নিকটে
***
গোপন সন্ধিস্থল নদীর জোয়ারে
দেখা হলে অগাধ চুম্বনের সঙ্গম
বিনীতা আদরে সম্বোর্ধনা
দেখার ছন্দ শরীরি গন্ধেই
তোমার সাথে পূর্ণিমাতে
আমার সাথে সন্নিকটে ।
সৃজন
***
স্নানের ঘাটে জল ছিটানোর অভিধান
ডোবা পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে অনেক্ক্ষণ
আসতে- যেতে, যেতে- আসতে মেঘ
নিষ্ঠাভরে দরকারি শব্দের ঠিকানায়
কিছুটা সময় মৌলিকতার সামনে থমকে
ব্যবহার্য জীবন-ব্যাকরণ শব্দকোষে
সৃজনীয় বাঁশির সুর কাছে দূরে
আজীবন আনন্দ সৌগন্ধ্যে
আমাত শব্দাবলিরর সৃজন
খেয়ার ভাঁজ
***
পাড়ে পাড়ে জলযৌবন খেলে
কথকতা নদীজল কৃষ্ণ সখী অনুসরণ
এপার - ওপার খেয়া জল শাড়ি পথে
ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি অপেক্ষায় প্রেম
দুপুর সূর্য বেশ বিকাল খেয়ার ভাঁজে
অনবরত গায়ে গায়ে জলযৌবন।
এক ঝলক জোছনায়
***
কিছুক্ষণ মোড়ের পাশে বাঁশবাগানের কাছে
জোনাকিরা জমাটি সংসারে
আদরের ঘ্রাণ নিতে নিতে
আমাকে শান্তির চুপকথা
এক ঝলক জোছনায় ছায়া মিশে
আমি আমার অতৃপ্তি সংসারে।
পরবাসের পরে
***
পাশাপাশি খসখসে দুটো সরল শরীরে
কয়েকদিন অস্পষ্ট আঁধারে
চোখেমুখে বিষণ্ণতার মুহূর্ত
ডোবার পাশে মেটে রাস্তায় ধারে
কয়েকজন অবলীলাক্রমে তাকিয়ে
কঠিন কঠোর বাঁশঝাড় পেরিয়ে
সিনেমার নতুন ফিল্মের কায়দায়
পরবাসের পরে আবারও সন্দেহ
পরিবার, আত্মীয় স্বজন সময় গুণনীয়।
ভিতরে অসুখ
***
কাদা মেশানো লাল মোরামের পথ
যে পথ গেছে গ্রামের দূরে - বহুদূরে
মাটি আর সূর্য খরা জেগে মা'য়ের বাসনা
আমি হাঁটি সেই পথে - দেখি সেই মুখ
চোখে ঠোঁটে নেমে আসে সেই সুখ
বড্ড অসময় ভাবনার ক্লান্তির ঘ্রাণে
সেই মায়ের আঁচলে মাটির গন্ধ
আজও হৃদয়ে ভেতরে অসুখ হয়ে ঝরে।
যখন সকলই ছায়া
***
বর্ষা পড়তেই বুঝে গেলে জীবন বিকেল
যা প্রতিদিন এমন সময় অবশিষ্ট
নিরুত্তেজ রোদ প্রমাণের অপেক্ষায়
আশ্চর্য বিস্তৃতি ক্লান্ত জীবনে
পথ পেরিয়ে নদীটার পাশে
সারাদিন হেঁটে -এই শেষ আয়ুর ছায়ায়
সময় হয় - যখন সকলই ছায়া।
Tags:
আজকের কবি