1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি তৈমুর খান | সাহিত্য চেতনা

 কবি তৈমুর খান

কবি তৈমুর খান


কবি তৈমুর খান জন্মগ্রহণ করেন ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। পিতা জিকির খান ও মাতা নাওরাতুন। কবির পড়াশোনা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি । 

বর্তমানে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষকতা করছেন । 

তার প্রকাশিত কাব্যগুলি হল কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১), নির্বাচিত কবিতা (২০১৬), জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা (২০১৭) ইত্যাদি। 

পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে 'কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য ', নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি ।


কবি তৈমুর খানের  একগুচ্ছ কবিতা  প্রকাশ হল :


অন্ধকারের দেশে 
        ***

প্রত্যাশার বাঁশি বাজাতে বাজাতে চলে যাচ্ছি
অন্ধকারের দেশে
আমার নীরবতা ক্ষুণ্ণ করছে হাওয়া
উগ্র কোনো সন্নিধানে থেমে যাচ্ছে প্রেরণা
কী করে কথা হবে ?
মৃত্যু সব নত করে দিচ্ছে
আর কুটিল রাষ্ট্রবাদে ঢুকে যাচ্ছে মানবতা
মিথ্যাকে সত্যি করার আলো
আর মানুষকে পতঙ্গ করার ম্যাজিক
প্রহরগুলি ঝরছে বন্ধ্যার প্রজনন ইচ্ছার মতো
তবুও কাপড় পরে দৈব অভিমান
কার কাছে করছে নালিশ ?
হত্যার ঘোর জুড়ে আতঙ্কের জন্মদিন
উৎসব নেই তবুও উৎসব কার ?
হাঁটছি, যত দ্রুত হাটা যায়
রক্ত লেগে যাচ্ছে প্রত্যাশার সুরে ।
       

ভিখিরি হতে পারি না
           ***

তোমার বাগানে অনেক গোলাপ ফুটেছে
পাশ দিয়ে গেলে ঘ্রাণ পাই
কখনো ছুঁয়েও দেখিনি

আমার কোনো গোলাপ-বাগান নেই
রাত্রির পর রাত্রি জুড়ে বানাই শুধু ঘর
আকাঙ্ক্ষারা তবুও কেউ থাকতে চাইছে না

যদিও অসীমে সব কাল্পনিক নদী
অনুভাবের সৌজন্যেরা নৌকা নিয়ে যায়
তবুও নৌকায় কেউ চাপতে চাইছে না

তোমার বাগানে দীর্ঘ গ্রীবা, এলোচুল
রাঙা পা ,ফর্সা আঙুলগুলির ক্রিয়া দেখি
আর আমি ভিখিরি হতে পারি না একটি গোলাপের জন্য
রাত্রির উঠোনে চুপচাপ নক্ষত্র দেখি
      

আমাকে নিবিড় করো
            ***

কল্পনার ঝরে পড়া জীর্ণ পালকগুলি
আজও  কুড়োচ্ছি আমি এই ক্লান্ত পথের ধারে
এগুলি কী কাজে লাগে ?
সংসার আছে। সংসারে উনান জ্বলে।
আমাদের কতকথা সেদ্ধ হয়
ছোট-বড়ো বৃহৎ কথাগুলি। 

সংসারের একধারে চুপচাপ বসি
মিনতিকে মাঝে মাঝে একগ্লাস করুণার জল চাই
হাত ফসকে চলে যায় ছোঁয়া
অনুভূতিগুলি কেন যে ভুলে যায় !

এই দেহটি মৃতদেহের মতো
আঁধারকে বলি; আলো নিভিয়ে দাও
আমি এই কোলনের পাশে আছি
এখানে সমস্ত যুবতী-ঘ্রাণ ম্লাল হয়ে গেছে
বাতাস ! বাতাস ! আমাকে নিবিড় করো এই শূন্যতায় !         


 সীতা
  ***

কোনো প্রস্তাবই গ্রহণ করোনি
বিকেল ফুরিয়ে গেলে 
রাঙাপথ ধরে বাড়ি ফিরেছি একা একা
বিরহের সাইকেলে এখনো চেপে বসে আছে স্মৃতিগুলি

নদীতীরে কিছুটা পথ হেঁটে
বালিতে তোমাকে এঁকেছি
এ মাটির সীতা তুমি
আমি এই সভ্যতার নতুন কৃষক

আনন্দের ভাষা চেয়ে 
আদিগন্ত লিখতে চেয়েছি সুখ
খুঁজেছি তোমার কাছে নতুন দিনের সেই চাবি
সমস্ত বিকেল জুড়ে মানস নদীতে তরঙ্গ উঠেছে

কাছাকাছি আমাদের নীরবতাগুলি
নৌকা হয়ে ভেসে গেছে
কোন্ অলীক স্পর্শে মাঝে মাঝে তুমিও কেঁপেছ
আমিও হয়েছি পোষা পাখি তোমার সৌজন্যে শুধু !
         




বিশ্বাসবৃক্ষের ছায়ায় এই জন্ম
                  ***

বিশ্বাসবৃক্ষের ছায়ায় বসেছি এখানে
হতাশার পাখিগুলি ডাকে
রাষ্ট্রধর্মের বিড়ালেরা সারারাত যায়
কোলাহলে তাদের শিকার করে
রাস্তা ফুরোয় না ; জীবনের ভোর নেই বলে
শতাব্দী শতাব্দী  গড়াই জন্ম জন্ম ধরে

কে চেনে হাতের উল্কি ? কপালের দাগ ?
বুকে তিল ছিল ?
কার মনে আছে কী নাম আমার ?

এই ছোঁয়া, এই ঘ্রাণ, এই নিবেদিত প্রত্যয়
তোমাকে চেনায় আজও ; ঈষৎ বাদামি চুল
টোল পড়া গাল , লম্বা গলায় শঙ্খহার—
নিঃশব্দে হেঁটে যাও, প্রত্যেক বসন্তে তোমার

প্রেম সম্ভবনা, কুহু কুহু ডাক
নীরবে নীরবে শুনি
আমার মুকুলগুলি ফোটে, মধু জমে মনে

বিশ্বাসবৃক্ষের ছায়ায় এইজন্ম জেগে ওঠে 
অদ্ভুত বিশ্রামে
খুঁজে পেতে চায় হাতপাখা তোমার সবুজ হাতে
পাতায় পাতায় দৈব-ভাত নক্ষত্র হয়ে ফোটে ।


 নরকযাত্রা
     ***

নরকে যেতে যেতে আমার পাহাড়ের দিকে তাকাই
এতদিন শুধু সঙ্গম দৃশ্যে তৈরি করেছি পাহাড়
অন্ধকারের জানালা-দরজা
পোশাকবিহীন স্বপ্নদের ঘোরাফেরা

যদিও সবাই তৎপর সঙ্গম প্রার্থনায়
কৌতূহলের দোকানে চা খেতে খেতে 
সেই সব ঘ্রাণ নিতে যাচ্ছে মন
মনকে কখনো বাঁধিনি 
শরীর চলে গেলে সেই শুধু দিবে বিজ্ঞাপন
অনেক নতুন শরীরের

নরকে যেতে যেতে হাওয়ায়
চমৎকার সান্নিধ্যের বাঁশি 
শীৎকার শুনতে শুনতে বেশ আরাম

স্বর্গ বলে কোনো কিছুরই ধারণা ছিল না
শুধু কালক্ষয় হয়েছিল 
ঘাসের ওপর বসে বসে
যখন ছাড়াচ্ছিলাম
রোদের বাদাম
আর কুড়িয়ে নিচ্ছিলাম ঝরেপড়া গোলাপি নেলপালিশ


যাপন
 ***

নীল রঙের দুধ , আমি প্রথম হাত রাখি
স্বচ্ছ নরম চকোলেট মনে হয়
এত শতাব্দীর পরও  প্রাচীন নয়
চির নির্ঘুম অপেক্ষায় অন্ধকার পার হয়ে এসেছে সভ্যতায়
তার অপত্যস্বাদ , ঝরনার গার্হস্থ্য হ্রদ

বাক্য ফুরিয়ে গেলে নীরব—নৌকায় 
ভ্রমণ শুরু হয়
তরঙ্গগুলি নির্মাণের অভিমুখ
জলজ শয্যার প্রশ্রয়
রমণ নিয়মে যুগ ক্লান্তিহীন 
রাত্রিও গর্ভবতী হয়
প্রত্যহ যুবক-আলো এসে
সকালের মুখ দ্যাখে 
তারপর যাপন শুরু হয়। 



 হাঃ হাঃ
   ***

শত্রুতাও রাজনীতি
বন্দুকবাজও দেশপ্রেমিক 
ধর্ষকও প্রেমিক
সংবিধান পাল্টে গেলে 
স্বৈরতন্ত্রও গণতন্ত্র
সোজা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি
লেফ্ট্ রাইট্ লেফ্ট্ রাইট্

বেঁচে থাকা এখন চাঁদ দ্যাখে
মৃত্যু এখন ঘরকন্না করে

স্লোগান ওঠে 
স্নোগান নামে 
গুলি চলে 
হাঃ হাঃ ধর্মগুলি

এখন কী সুন্দর অন্ধকার
আমাদের ডাকতে থাকে 
আমরা উলঙ্গ হয়ে দাঁড়াই 
আমরা সঙ্গম প্রার্থনা করি

    

শেয়াল
  ***

কত কত মানুষেরা শেয়াল হয়ে যাচ্ছে
আর আমরা ভয় পাচ্ছি 
ঘুমোতে পারছি না ।

লোকালয়ে তারাও থাকে 
সকাল-সকাল হাঁটতে বেরোয়
সেলুনে দাড়ি কাটে , স্লোগান দেয়
আমাদের ছোট্ট বাংলাভাষার উঠোন
মেঘ-রোদ্দুরের সঙ্গে দাঁড়ায় এসে রবীন্দ্রনাথ
আমরা প্রাচীন আবেগে দেওয়াল বানাই 

বিবেকের লন্ঠন জ্বেলে পড়তে বসি
ঈশ্বর আমাদের মাস্টার

নক্ষত্র-বিথীর পথে কে যায় রোজ ?

শেয়ালেরা রূপ বদল করে
তাদের ঘাতক দাঁতে কাঁপে বক্র হাসি
রোজ এসে ধমক দেয়  ঘরের সুভাষ !

   

ছাত্র
***

এক চিলতে ছাদ 
রোদ এসে শুয়ে আছে
কার্নিশ পাহারা দিচ্ছে দু'তিনটে কাক

নিজের কাছেই আমি ভীরু হয়ে উঠছি
মনে কেন এত তমসা আমার ?

শূন্যের ভেতর  গড়াচ্ছে অজস্র শূন্য
ছায়াটিও অসম্ভব নীরব

কত কথা ! কিন্তু কথা আসছে না 
পালকি চড়ে চলে যাচ্ছে সব বোধ
বোধও কি তবে এমন নির্মম ?

উপলব্ধি রোদের কাছে যায়

উষ্ণ শয্যায় তার লুটোচ্ছে শীতকাল

কাকেরা আমাকে আজ দর্শন শেখায় !

      



Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন