1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি বিদ্যুৎলেখা ঘোষ | সাহিত্য চেতনা

 কবি বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

কবি বিদ্যুৎলেখা ঘোষ 


কবি বিদ্যুৎলেখা ঘোষ । জন্ম ও নিবাস - কলকাতায় শিক্ষক পরিবারে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে । পড়াশোনা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষা ও সাহিত্য নিয়ে।  স্কুলবেলা থেকে কবিতা ও অন্যান্য লেখালেখি শুরু খাতার মলাটের ভিতরে লুকনো পাতায় । প্রথম কবিতা প্রকাশ পায় কলেজ ম্যাগাজিনে । তারপর শূন্য দশকের প্রথম দশক থেকে নিয়মিতভাবে সীমানা বিহীন বিভিন্ন বাংলা সাহিত্যের লিটল ম্যাগাজিনে , ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়ে চলেছে কবিতা , গল্প, মুক্তগদ্য , নিবন্ধ , রম্যরচনা ইত্যাদি লেখালিখি । মূল হিন্দি সাহিত্য থেকে অনুবাদের কাজও করছেন । 


বিদ্যুৎলেখা ঘোষের একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :



অন্নপূর্ণা লোকাল

         ****

ধোঁয়াশা ভোরের ক্যানিং 

দুমুঠো দেবার কথা ছিল যার 

সে তাড়ি খেয়ে লেৎকে আছে মরনঘুমে

কচি ছেলেটা খিদেয় কাঁদলেও

খেতে দেবে না কেউ তাকে

পিঠে বাঁধা ঘুমন্ত শিশু, যাত্রী সেও

সেদিন কিছু ছেলে মেয়ে 

জাপটে ধরে কত চুমু খেলো

এ খবর তার কাছে নেই,

নাদুস নুদুস দিদিমনিরা হাতে 

কী সব লিখে নিয়ে মিছিল করে, কে জানে 

সে কেবল জানে পেটকাপড়ের চোলাই

জায়গামতো পৌঁছে দেবার পর

পাওনা টাকা নেবার আগে শুতেও হয় মাঝেসাঝে...।।


                                                            

দূরদর্শনের পর্দায়

        ***      

লোভ লোভনীয় ক্ষতির লাভ

আহা ফ্ল্যাশ ঝলসানো জৌলুস

সব তোমাদের জন্য

সব উৎসব তোমাদের

অক্লান্ত অপরাজেয় মুষিক সাম্রাজ্যবাদও

ঠাণ্ডা নরম অন্ধকারের কাছে বসে

গলা খুলে গাই আজকাল

বহুদূরে অনেক দুরে তোমাদের থেকে


এখানে বিজ্ঞাপনের শ্বাসরোধী হোর্ডিং নেই...।।



ছবি ও সংলাপ  

       ***

পোট্রেট আঁকা চলছিলো ,

মেজেন্টার পাশে ইয়লো অকার

একটু সাদার হালকা ছোঁয়া 

কখনো একটু মভ আভাস নিয়ে 

ফুটে উঠছিলো ওরা আদিগন্ত 

ডেইজি ক্যালেন্ডুলা অ্যাসটার 

মৃদুল হাওয়ায় দোল খেতে লাগলো।

ঠিক মনে পড়ে না কখন 

কেন অ্যাসটার হতে চাইলো ডেইজি

ক্যালেন্ডুলা হতে চাইলো অ্যাসটার

ছবিটার উপরে ক্রমশ নতুন আঁচড় 

বোহেমিয়ানার রঙে শেষমেশ 

কোনো ছবিই আঁকা হোল না

পোট্রেট এখন কফিনের মতো 

এক বিরাট বাক্সের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে

শিল্পী এবার বললেন, আমেন

পোট্রেটের জন্য অন্তিম চুম্বন শব্দ ।।



ফুল জন্ম

     ***           

কাঁটার উপরে নিজেকে রাখি সানন্দে

ছুটে আসা উপহাস বিরোধী সংলাপ শঠতা

এইসব অক্ষয় ধনরাশি জমা করে 

যে কুঁড়ি ফুটতে চলেছে এবার

তিন হাজার অপেক্ষার বছরে

সেই আমার পরকীয়ার নাম রেখেছি, অন্ধকার ।।



হ্যাশ ট্যাগ 

    ***         

কিছুদিন রংচঙে উড়তে উড়তে 


বেলকাঁটার উপর লটকে আছে

অবশেষে ছেঁড়াখোঁড়া ঘুড়ি

ভেবো না ওকে বাড়ানো লাটাইটা নেই


উৎসবের হাজার আলোর

ঝুমরের নীচে, কেবল মনে হয়

কোথায় যেন কেউ কাঁদছে

হাল্কা থেকে ঘন আরও গাঢ় কৃষ্ণ

অন্ধকারে আঁধারের কলমকারি


 সমস্ত নকশায় কেবল দাসখৎ আমার কাছে ।।


শ্রাবণ-বনজ্যোৎস্না

           ***

রূপটান গলে গলে পড়ছে

বেরিয়ে পড়েছি আমি

এই অন্ধকার জুড়ে 

সময় তোমাকে আমি বলে যাই

সুতীক্ষ্ণ ঘন জলের মুকুটে

আমার আধিপত্য বিস্তার,

সাম্রাজ্যবাদ তোমাদের হোক

তবু অনিশ্চিত ভোর নিশ্চিত

তবু এভারেস্টে পঙ্গুর পতাকা

মাথা আউলে দেয় হেলায়

এ জীবনে কিছু পারি বা না পারি 

প্রতি মুহূর্ত নিরঙ্কুশ স্বাধীন আমার


সীমানাহীন কুলুঙ্গির দীপান্বিতা ।।


একটি সান্ধ্য স্কেচ

          ***

বৈশাখী সন্ধ্যার ভেজা বাতাস আর 

জানলার উথাল পাথাল পর্দার যত পরামর্শ 

ছড়িয়ে গেল নতুন ধারাপাতে

রিক্শোর হুড খুলে দিলাম 

মাথা মুখ চুল সর্বশরীর বেয়ে 

সেসব গোপনীয়তা শুষে নিতে চাইছে বাতাস 

পর্দার হা হুতাশে মিলিয়ে যাচ্ছে 

ক্রমশ ডার্ক মেরুন অস্তরাগ


রিকশা এগিয়ে নিয়ে চলেছে নিভৃত চালক...।।


বোধহয় কিছু অদ্ভুতুড়ে চেয়েছিলাম 

                     ***

চেয়েছিলাম তোমার আমার মধ্যে

সগৌরবে বসত করুক অমিল পয়ার


তোমার আমার ঘরবাড়ি হোক

কিন্তু গর্বিত কোনো তন্ত্র থাকবে না


আহার নিদ্রা মৈথুনের মোনো রেল থেকে 

হুট করে নেমে গিয়ে ছুটে পালিয়ে যাবো চলো


ফুল ফুটুক একটা দুটো তা থেকে ফল হোক

যথা সাধ্য কয়জন মানুষ প্রসাদ পাক শান্তি


সন্ততিরা সময় হলে পাখি উড়ে বেড়াতে যাক

ঘুরে আসুক সারা পৃথিবীর গাছ কুটুমবাড়ি


আসলে এইসব অদ্ভুতুড়ে চাওয়াগুলো আমার

গুমঘরে কীভাবে যেন কখন চালান হয়ে গেছে


তুমি তার খোঁজ কখনো পাওনি

আমি তার হদিস তোমায় বলিনি 


বিকেল চারপাশে বিছনো উদার অমলতাস

এসবের মধ্যেই আছি মুক্তিযুদ্ধের ঈশ্বরী ।।



 অনুবাদ 

   ***

হাওয়ার মতো আবছায়ার মতো

দুলকি চালে জিন্দেগী

এত বেশি নজরানা চেও না

এই তো ফুরোবে আলো

ফুরিয়ে যাবো অন্ধকার অফুরান

অনুপ্রবেশকারী শিলমোহর

বিশ্বাস করো সেই দৈত্যও

মালিকানা চেয়েছিলো


তবু........

কারো বেঘর বিভুঁই চায়নি  ।।



      দাহ

      ***      

শঙ্খিনীরাত্রি সেই জীবাশ্মের অলি গলি অশেষ সন্ধান করে রঙ্গন চাঁদ

আরক্ত ঠোঁটের উপর লালাভ জ্যোৎস্না মিলিয়ে যাওয়ার পর মৃত দাহ শুরু হয়

এলোমেলো উড়তে থাকা চুল বশীভূত হয়ে পড়ে ওর হাতে অনায়াসে


এত আলো বাঁধ মানে না

বেড়ে ওঠে নিজের মতো

যেমন খুশি ক্রমাগত

ওরা কেবল হার মানে না


নিবিড় ঘনিষ্ঠ লোপমুদ্রায় অভিষেক হয় এরপর ব্রাহ্ম মূহূর্তে


নাভি জমা করে রাখে ত্রয়োদশী সঞ্চয়..।।


কী চাস তুই ? 

     ***      

–শুধু তোর

    নরম আঁধার

    অরণ্য বুক

    আর কিছু না ।


কী পাস না ?

–পোষা সব

   ইচ্ছেগুলোয়

    সূর্য সোনা ।


কে জন্মায় ?

–মেঘলা মনে

   জমিয়ে রাখা

    বন্য তুফান ।


কী গা'স তুই ?

–তোর যত

   আগুন চাওয়ায়

   ঋতু জায়মান

   আর কিছু না  ।।



 রাজার বাড়ি

      ***           

শিশু থেকে মধ্য ব্যঞ্জন পাতে

যত বর্ণময় রামধনু আকাশ 

ক্রমশ তোমার সঙ্গে কথা বলে

নীরবে বয়ে চলা স্রোতের নিঝুম 

পাশাপাশি বিনিময় হয়ে যায় 

স্বপ্ন স্বাধীনতা সৃষ্টি কোনো নতুনে

হে বন্ধু হে প্রিয়, জীবন থেকে জীবনে 

এই জন্ম মুহূর্তরা হাতে হাত রেখে 

অনুসৃত মধুরে মাথুরে 

সব আরক্ত পারে সকল বিপ্রতীপ 

তবু কেবল সেই তো তোমার বালুতটে

আমার রাজবাড়ি আমার ছায়ানট ।।



দলমা

 ***   

আগুনের দিন জাগছে রাত জ্বলছে নিয়ত

হাতগুলো ক্রমশ উপরে আরো 

উপরের দিকে বাড়ানো গলাজল থেকে

তুমি বাঁচতে চাইছো

আমি বাঁচতে চাইছি

আমরা বাঁচতে চাইছি


তবে অসময়ে মৃত্যু অসুখ প্রেমের ভুখমারি চায় কে বা কাহারা 


সোনার ডিম পাড়া হাঁস এ জনতার মিছিলে

সকলেই সুস্বাদু ডাঁটা পোস্ত মানুষ

জন্ম হয়েছে নাকি নিজেকে লোলুপ দৃষ্টির কাছে

তীক্ষ্ণ ক‍্যানাইনের নিচে 

তির তির কেঁপে ওঠা জিভের ডগায়

দারুন ভাবে চিবিয়ে চোষার পর ছিবড়ে হয়ে যেতে


এতদিন সোনার গয়না গড়েছে সোনারি

অনিবার্য ক‍্যাননের কাল এলো এতদিনে ।।



 

 হে গান্ধারী         

     ***


আর একটিবার তোমার উর্বরতা আমাকে দাও

শতপুত্রের পরিণতি মহাকাব্যের উই ধরা পাতায়

এ আখ্যান সকলেরই জানা।

শত বিদ্যুন্মালার জন্ম দেবো খোলা চোখে-- 

দুহাতে তাদের কোমল মুখ ধরে শেখাবো

বেঁচে থাকতে ভুলিয়ে দিতে চাওয়া অমরাবতী মন্ত্র।

স্তন্যে সঞ্চালিত করে দেবো আগামী রক্তবীজের পুষ্টি ।

অন্তত একটিবার তোমার উর্বরতা আমাকে দাও ।।



Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

2 মন্তব্যসমূহ

  1. মীনা মুখার্জী৷২০ আগস্ট, ২০২০ এ ১:২৭ AM

    খুব ভাল লাগল বিদ্যুৎলেখার কবিতা৷অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা৷আরও লেখা পড়বো এই আশায় রইলাম৷

    উত্তরমুছুন
  2. ভালো লাগল বিদ্যুতের কবিতাগুলো। বিদ্যুতের লেখা গদ্যও আমার ভালো লাগে। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

    উত্তরমুছুন
নবীনতর পূর্বতন