বাবু আবার কবে আসবি ?
— অতনু মৈত্র
এক দশক পরে এলাম নিজের জন্মভীটেতে, পূজোর পর থেকেই মনটা আনচান করছিল। আমার স্ত্রী শ্রীলেখাকে কত করে বললাম আসার জন্য, কিন্তু কিছুতেই রাজী করাতে পারলাম না। আমার ছেলেটাও খুবই ছোট, তাই একাই চলে এলাম।
মা মারা যাবার পর বাড়িটা একরকম বন্ধ হয়েই পড়েছিল, তাই এখন অনেকটাই ভূতুড়ে বাড়ির চেহারা নিয়েছে । শ্রীলেখা আমাকে বারবার, বাড়িটা বিক্রি করে দেবার কথা বলে। কিন্তু আমি কোন অজানা আকর্ষণের ফলে এখনও বিক্রি করতে পারিনি । পথে আসার পথে রবির মায়ের সাথে দেখা হলো, উনি আমাদের বাড়িতে কাজ করতেন। আমাকে দেখে তাঁর কি আনন্দ, গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “বাবা কেমন আছিস?” আমি তাঁকে প্রনাম করে অনুরোধ করলাম বাড়িতে আসার জন্য। বাড়িতে যখন ঢুকলাম,তখন বিকেল হয়ে গেছে পরন্তু আলোতে দেখলাম ছেলেরা পরিত্যক্ত ক্ষেতে খেলা করছে, নিজের ছেলেবেলাটা বড়ো মনে পড়ে গেলো। গ্রামের বয়স্করা দেখলাম কুশল জিজ্ঞেস করছেন। ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে,তবুও কোন অজানা আনন্দ আমাকে গ্রাস করেছে। বাড়িতে ঢোকামাত্র সেই নারিকেল গাছটা চোখে পড়লো যেখানে মাকে শেষবারের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম..
বছর পনেরো আগের কথা । গ্রামের ছেলে আমি, চাকরী পেলাম শহরে, খোদ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের আপিসে। কিন্তু মাকে ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। মা শুনে বললে-“ কতো দিন এইভাবে এখানে পড়ে থাকবে, যাও নিজের ভবিষ্যত বানাও, আর রবির মা তো আছেই আমার দেখাশোনার জন্য”। অবশেষে রাজি হলাম গ্রামের দামাল ছেলে তারপর থেকেই পরিচয়হীন। সেবার পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক আনন্দ করেছিলাম। ছুটি শেষ হলে শহরে ফেরার পালা, ফেরার দিন অনেক ভোরবেলাতে উঠেছিলাম। ভেবেছিলাম মাকে আর জাগাবো না। কিন্তু ব্যাগ হাতে বেড়িয়ে দেখি, মা নারিকেল গাছতলাতে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারেও দেখলাম মায়ের মুখটা পাংশুটে। জিজ্ঞেস করলো, “আবার কবে আসবি বাবু ?” আমি কিছু না বলে, মাকে প্রণাম করে বেরিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন।
কিছুদিন পরে হঠাৎই টেলিগ্রামটা পাই, আমার বন্ধু রাজু পাঠিয়েছিল। তাতে লেখা ছিল, “তোর মা খুব অসুস্থ তাড়াতাড়ি ফিরে আয়?” ছুটে চলে এসেছিলাম। এসে দেখি সব শেষ, বাড়ির উঠোনে মায়ের নিথর দেহটি শায়িত। তারপর থেকেই গ্রামছাড়া, শহুরে মেয়েকে বিয়ে করে এখন আমি শহরবাসী। দু'দিন নিজের বাড়িতে বেশ আনন্দেই কাটলো, ছেলেবেলার বন্ধুদের আবারও সাথে পেলাম। দুপুরে রবির মা রান্না করে খাবার পাঠিয়ে দিতেন।
আজ আবার অন্ধকার থাকতে ভোরবেলা উঠলাম, শহরে ফিরতে হবে। বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় বুকটা খাঁ খাঁ করছিল। উঠোন পেরিয়ে সদর দরজার চৌকাঠ পেরতে যাব- হঠাৎই শুনলাম, নারিকেল গাছের নীচে এক ছায়ামূর্তি ফিসফিস করে বলছে, “বাবু আবার কবে আসবি?” ফিরে দেখার আর সাহস হলো না, দশবছর পরে আবার মাকে হারালাম।।
— অতনু মৈত্র
এক দশক পরে এলাম নিজের জন্মভীটেতে, পূজোর পর থেকেই মনটা আনচান করছিল। আমার স্ত্রী শ্রীলেখাকে কত করে বললাম আসার জন্য, কিন্তু কিছুতেই রাজী করাতে পারলাম না। আমার ছেলেটাও খুবই ছোট, তাই একাই চলে এলাম।
মা মারা যাবার পর বাড়িটা একরকম বন্ধ হয়েই পড়েছিল, তাই এখন অনেকটাই ভূতুড়ে বাড়ির চেহারা নিয়েছে । শ্রীলেখা আমাকে বারবার, বাড়িটা বিক্রি করে দেবার কথা বলে। কিন্তু আমি কোন অজানা আকর্ষণের ফলে এখনও বিক্রি করতে পারিনি । পথে আসার পথে রবির মায়ের সাথে দেখা হলো, উনি আমাদের বাড়িতে কাজ করতেন। আমাকে দেখে তাঁর কি আনন্দ, গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “বাবা কেমন আছিস?” আমি তাঁকে প্রনাম করে অনুরোধ করলাম বাড়িতে আসার জন্য। বাড়িতে যখন ঢুকলাম,তখন বিকেল হয়ে গেছে পরন্তু আলোতে দেখলাম ছেলেরা পরিত্যক্ত ক্ষেতে খেলা করছে, নিজের ছেলেবেলাটা বড়ো মনে পড়ে গেলো। গ্রামের বয়স্করা দেখলাম কুশল জিজ্ঞেস করছেন। ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে,তবুও কোন অজানা আনন্দ আমাকে গ্রাস করেছে। বাড়িতে ঢোকামাত্র সেই নারিকেল গাছটা চোখে পড়লো যেখানে মাকে শেষবারের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম..
বছর পনেরো আগের কথা । গ্রামের ছেলে আমি, চাকরী পেলাম শহরে, খোদ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের আপিসে। কিন্তু মাকে ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। মা শুনে বললে-“ কতো দিন এইভাবে এখানে পড়ে থাকবে, যাও নিজের ভবিষ্যত বানাও, আর রবির মা তো আছেই আমার দেখাশোনার জন্য”। অবশেষে রাজি হলাম গ্রামের দামাল ছেলে তারপর থেকেই পরিচয়হীন। সেবার পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক আনন্দ করেছিলাম। ছুটি শেষ হলে শহরে ফেরার পালা, ফেরার দিন অনেক ভোরবেলাতে উঠেছিলাম। ভেবেছিলাম মাকে আর জাগাবো না। কিন্তু ব্যাগ হাতে বেড়িয়ে দেখি, মা নারিকেল গাছতলাতে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারেও দেখলাম মায়ের মুখটা পাংশুটে। জিজ্ঞেস করলো, “আবার কবে আসবি বাবু ?” আমি কিছু না বলে, মাকে প্রণাম করে বেরিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন।
কিছুদিন পরে হঠাৎই টেলিগ্রামটা পাই, আমার বন্ধু রাজু পাঠিয়েছিল। তাতে লেখা ছিল, “তোর মা খুব অসুস্থ তাড়াতাড়ি ফিরে আয়?” ছুটে চলে এসেছিলাম। এসে দেখি সব শেষ, বাড়ির উঠোনে মায়ের নিথর দেহটি শায়িত। তারপর থেকেই গ্রামছাড়া, শহুরে মেয়েকে বিয়ে করে এখন আমি শহরবাসী। দু'দিন নিজের বাড়িতে বেশ আনন্দেই কাটলো, ছেলেবেলার বন্ধুদের আবারও সাথে পেলাম। দুপুরে রবির মা রান্না করে খাবার পাঠিয়ে দিতেন।
আজ আবার অন্ধকার থাকতে ভোরবেলা উঠলাম, শহরে ফিরতে হবে। বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় বুকটা খাঁ খাঁ করছিল। উঠোন পেরিয়ে সদর দরজার চৌকাঠ পেরতে যাব- হঠাৎই শুনলাম, নারিকেল গাছের নীচে এক ছায়ামূর্তি ফিসফিস করে বলছে, “বাবু আবার কবে আসবি?” ফিরে দেখার আর সাহস হলো না, দশবছর পরে আবার মাকে হারালাম।।