1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

তমাল বাবুর ঘড়ি রহস্য : সমাদৃত দাস




তমাল বাবুর ঘড়ি রহস্য
সমাদৃত দাস



                   

                       
শিক্ষক বলতে আমি বা আপনি যে চেহারার বর্ণনা দেবো সেটা এরকম— উস্কোখুসকো চুল, হাতে একটা ওল্ড প্যাটার্নের ঘড়ি, কোঁচকানো জামা, একটা পুরনো ধুতি। এই ধরনের শিক্ষককে ইংরেজিতে Absent minded teacher বলা হয়। তবে বর্তমানে এইরকম শিক্ষক আমার মনে হয় না নেই। এখনকার শিক্ষকদের চলন বলন বসন হল ডান হাতে স্টাইলিস্ট ঘড়ি, চোখে দামি ফ্রেমের চশমা। ধুতি পড়ার প্রশ্নই নেই। জামা জিন্সের প্যান্টকে সুন্দর ভাবে ইস্ত্রি করা। দাড়ি গোঁফ কেটে ফেলা। তবে তমাল সেন একটু ভিন্ন ধরনের শিক্ষক। তিনি সবসময় সবকিছুই ভুলে যান। তবে ছাত্রদের কথায়, পরীক্ষার খাতা দেখার সময়ে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে নম্বর দেন। অ্যাকচুয়ালি তিনি অংকের শিক্ষক। তিনি পাটিগণিত দেখার সময়ে ইচ্ছা করে নম্বর কমান। ধরুন একটা অংকে তিন নম্বর রয়েছে তিনি দেবেন দেড় নম্বর। তাঁর কথায় একটা পাটিগণিতের অংক নাকি তিন পাতা ধরে লিখতে হবে। তবে ছাত্রদের টার্গেট থাকে বীজগণিতে। কারণ বীজগনিতে পুরো নম্বরই দিয়ে দেন তমাল বাবু। একটু আধটু ভুল করলেও ছেড়ে দেন। ওই মাইনাস এর জায়গায় প্লাস আর প্লাস এর জায়গায় মাইনাস করে দিলে ফুল নম্বরই দিয়ে দেন। ওটাই থাকে ছাত্রদের কাছে ফায়দা।

                     
তমাল বাবু গান শুনতে খুবই ভালোবাসেন। প্রত্যেক রবিবার বেরিয়ে পড়েন ফাংশান দেখতে। তাঁর কাছে খবরও চলে আসে। আজ শনিবার, কালকে হলদিয়াতে যাবেন ফাংশান দেখতে। সময় দুপুর দুটো। একটা কথা বলাই হয়নি, তমাল বাবুর একজন ফাইফরমাস খাটার লোক রয়েছে মৃণাল বলে। তবে তাঁর জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিকও দেন তমাল বাবু। মৃণাল গাড়ি চালাতেও পারে। তাই স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় তমাল বাবু বলে দেন ফাংশানের কথা। প্রতি সপ্তাহেই যান ফাংশন দেখতে তাই সবই জানে মৃণাল। শুধু কোথায় যাবে তোমার বাবু? সেটা বলে দেন তিনি।

      
                      
আজ রবিবার। ঘড়ির কাঁটায় আটটা। মৃণাল সময় মতো গাড়ি নিয়ে চলে এসেছিল এবং দুগ্গা দুগ্গা করে যাত্রা শুরু করলেন তমাল বাবু। গাড়িতে বসতেই জানলার কাজ বন্ধ করে এসি চালিয়ে দিল মৃণাল। তমাল বাবুও মোবাইল বের করে ঘাঁটতে শুরু করলেন।


                    
এখন এগারোটা  মতন বাজে। ওরা অর্ধেক রাস্তা পেরিয়ে গেছে। এবার বেশ খিদে খিদে পাচ্ছে তমাল বাবুর। তমাল বাবু মৃণালকে বললেন,"একটা ভালো ধাবা দেখে দাঁড় করাও তো। তুমি ও আমি জলখাবারটা সেরে ফেলি।"
মৃণাল উত্তর না দিয়ে একটা জনবহুল রাস্তার পাশে দাঁড় করালো আর দুজনে ধাবায় ঢুকে পড়ল। এই সকাল বেলাতে এগ চাওমিন অর্ডার করলেন তমাল বাবু। খেতেও পারেন বটে তিনি। ডান হাত থেকে ঘড়িটা খুললেন এবং টেবিলে রেখে দিলেন যাতে ঘড়িটা জলে ভিজে না যায়। এসে বসে পড়লেন খাবার টেবিলে এবং এর চাওমিন খাওয়া শুরু করলেন। অনিন্দিতা নামের প্রাক্তন ছাত্রী এসে দেখা করেন তমাল বাবুর সঙ্গে। অনিন্দিতা তাঁর নতুন বিবাহিত বরকে দেখায়। দুজনে অতি যত্নের সঙ্গে প্রণাম করে স্যারকে। দেখতে দেখতে খাওয়াও হয়ে যায় এবং বাইরে বেরিয়ে আসেন তমাল বাবু। হাতটাকে তাঁর খালি খালি লাগে। সত্যিই তাই ঘড়িটা তাঁর হাতে নেই। তিনি তৎক্ষণাৎ ধাবার মালিককে খুলে বলেন। ধাবার বয়রা খুঁজতে শুরু করে। একসময়ে ওরাও আর পায় না। তখন সিসিটিভি চালায় ধাবার মালিক এবং ফুটেজে দেখেন ওই অনিন্দিতা নামের মেয়েটির বড়ই ঘড়িটা নিয়ে নেয়।
    
                        
ঘড়িহীন তমাল বাবু ফাংশান দেখতে যান। একটু মুষড়ে পড়েন তমাল বাবু। তাঁর দামি ঘড়িটা চুরি হয়ে গেল। তিনি যদি ঘড়িটাকে ডান হাত থেকে খুলে বাম হাতে পড়তেন তাহলেই আর কিছু হতো না। বাড়িতে এসে তাঁর স্ত্রীকে সব ঘটনা বলেন। স্ত্রী তাঁকে বেশ কটু কথা শুনিয়ে দেয়।

                     
বেশ কিছুদিন পর ওই অনিন্দিতা নামের মেয়েটি খুঁজে খুঁজে তমাল বাবুর বাড়িতে চলে আসে। সে নাকি প্রচন্ড লজ্জিত। ভুলবশত তমাল বাবুর ঘড়িটা ওর বরের কাছে চলে গেছে। তমাল বাবু মনে মনে ভাবেন যাক যা হয়েছে হয়েছে ঘড়ি টা কে তো পাওয়া গেল।


                     

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

2 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন