ঘুড়ির লেজ
সুশান্ত ঘোষ
হঠাৎ আপন মনে হাসতে হাসতে সুহাস বাজারের দিকে মাথার ওপর হাত বোলাতে বোলাতে পথ চলছিল । পথে অশোক মোটরস এর কাছে শুভদার সাথে দেখা সুহাস এর ।
শুভদা বলল আরে সুহাস, হাসতে হাসতে মাথায় হাত দিয়ে পথে চলেছ কি ব্যাপার ?
সুহাস বলল, না গো দাদা আমার ফ্ল্যাটের ছাদে ছাদিম গাছের একটা ডাল ঝুঁকে পড়েছে । সেখানে একটা কাকের বাসায় তার কিছু বাচ্চা হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবলাম সারা রাত বৃষ্টি হচ্ছে। বাচ্চাগুলো হয়তো কিছুই খায়নি । যদি আমার ভাগের খাওয়ার একটা রুটি বাসার সামনা সামনি ছাদে গিয়ে রেখে দেওয়া যায়। তবে ওদের মা বাচ্চাগুলোকে খাইয়ে দেবে । কিন্তু দেখলাম ভাবনা আর বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক।
শুভদা বললো কেন, কি সমস্যা হলো আবার?
সুহাস বললো কাকের কাছে এই ভালবাসার কোন মূল্যই ছিল না। আমাকে ওর বাসার সামনে যেতে দেখে এমন ঠোক্কর মারল মাথায় যে মাথা থেকে রক্ত বেরিয়ে আমাকে ওষুধ দোকান থেকে ইনজেকশন নিতে হলো। না ভালবাসাটা এই কাকেদের জন্য বড্ড বেমানান । শুভদা বললো ও তাহলে বুঝতে পেরেছো ?
সুহাস বললো, আসলে পাশের এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের কথা শুনছিলেন যখন আমি একটু আগে একজন প্রতিবেশীকে গতকালের ঘটনাটা বলছিলাম । তিনি হঠাৎ নিজের থেকেই বলে উঠলেন, আরে কাকের কথা কি বলছেন মশাই, গতকাল আমার একটা নতুন অভিজ্ঞতা বলছি আমার পাশের বাড়ির এক ভদ্রলোকের স্বভাব ছিল গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে কুকুর দেখলেই তাকে লাথি মেরে ফেলে পালিয়ে যাওয়া । আগের দিনও উনি কুকুরের বাচ্চাটাকে লাথি মেরে ফেলে পালিয়ে গিয়ে ছিলেন । এবার গতকাল যখন উনি অফিসের থেকে ফিরে সন্ধ্যার সময় চায়ের কাপটা নিয়ে স্বামী স্ত্রী বসে বারান্দায় চা খাচ্ছিলেন । এমন সময় রাস্তায় পাড়ায় মোড়ের কুকুরটা তার ঘরে ঢুকে তাকে এমন কামড় মেরেছে একদম একগাল মাংস নিয়ে তবে ছেড়েছে।
তাই ভাবছিলাম কুকুরের না হয় স্মৃতি শক্তি খুবই শক্তিশালী। কিন্তু কাকের স্মৃতি শক্তি প্রখর বলতে পারি না । তবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত সঠিক ও শক্তিশালী এটা বলার কোন অপেক্ষা রাখে না এটা ভাবতে ভাবতে হাসতে হাসতে পথ চলছিলাম । না কাকেদের জন্য আর কোন উপকার নয় ।
শুভদা বললো, কথার মধ্যে কেমন যেন একটা গন্ধ পাচ্ছি । হাসির আড়ালে শুকনো রাজনীতির রহস্যময় ঘটনার ছিঁটেফোঁটা নয়তো ?
সুহাস বললো, সত্যিই দাদা কঠিন রাজনীতি। ঘুড়ি মাঝ আকাশে উড়লেও ঘুড়ির লেজের কিনারা কাকের মতো থাকে অনেক মানুষের নাগালের মধ্যে উঁকি মারে । আর লাটাই হাতে সবার অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে চালনা করেন কোন ব্যক্তি । তিনি মনে করছেন তাকে কেউ দেখতে পাচ্ছেন না, কিন্তু বাস্তবে তিনি সবার নজরের মধ্যেই ঘোরাফেরা করেন কাকচরিত্রের মতো বড়ো বড়ো কথা বলে । আবার কেউ কাকের চরিত্র থেকে নিজেকে দূরে রাখতে ময়ূরের পালক গুঁজে ময়ূর সাজার আপ্রাণ প্রয়াস নিপুণ ভাবে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যান । ভাবতেই অবাক লাগে- এই কথা বলে আবার হাসতে হাসতে বাজারের দিকে এগিয়ে গেল সুহাস ।