1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান
জয় গোস্বামী



জয় গোস্বামী : জন্ম ১৯৫৪, কলকাতায়। বাংলা সাহিত্যের এক খ্যাতিমান কবি। তার লেখা উল্লেখযোগ্য কবিতার বই 'প্রত্বজীব' বাউপাতা?, “বজবিদুত্ভর্তিখাতা” “পাগলী তোমার সঙ্গে” “সূর্য পোড়া ছাই” “হরিণের জন্য একক” “ভালোটি বাসিব’, “হার্মাদ শিবির”, “গরাদ! গরাদ!” প্রভৃতি।

“যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল, তাঁর স্মরণীয় কাব্য-উপন্যাস। তাঁর রচিত বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে “সেই সব শেয়ালেরা” “সুড়ঙ্গ ও প্রতিরক্ষা” প্রভৃতি। বাংলা কবিতার আলোচনায় তাঁর লেখা ‘আকম্মিকের খেলা” “আমার রবীন্দ্রনাথ” “গোসাইবাগান (তিন খণ্ড), ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সাহিত্য কৃতির জন্য পুরস্কার সহ বহুবিধ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।{alertSuccess}

{tocify} $title={সূচীপত্র}

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর

বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর


১. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি যে কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত

ক. ‘পাগলী, তােমার সঙ্গে

খ. পাতার পােশাক

গ. বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতা

ঘ. ভুতুম ভগবান



২. তােমায় নিয়ে বেড়াবে গান’-উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে গান নিয়ে বেড়াবে-

ক. উন্মুক্ত আকাশে

খ. রণভূমিতে

গ. মৃত্যুদীর্ণ সমভূমিতে

ঘ. নদীতে, দেশ গাঁয়ে


৩. আঁকড়ে ধরে _ _ রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে। (শূন্যস্থান পূরণ করাে)

ক. নদী-দেশগাঁ

খ. সে-খড়কুটো

গ. সে বর্মটা

ঘ. আদুড় গাটা


৪. মাথায় কত শকুন বা চিল—মাথায় শকুন বা চিল ওড়ার অর্থ-

ক. কবি শিকারি পাখিদের পােষ মানিয়েছেন।

খ. চারিদিকে শকুন ও চিলদের ভিড়

গ. সমাজটা যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

ঘ. তারা আকাশে রামধনু দেখতে পায়।


৫. অস্ত্র ফ্যালাে, অস্ত্র রাখাে _দটি পায়ে (শুন্যস্থান পূরণ করাে)

ক. দেশের

খ. মায়ের

গ. শয়তানের

ঘ. গানের





৬. আমি এখন __________ হাতে পায়ে এগিয়ে আসি- (শূন্যস্থান পূরণ করা)

ক. নুন্ড

খ. চারটি

গ. হাজার

ঘ. সহস্র


৭. বুলেট কোন্ জাতীয় শব্দ?

ক. তৎসম শব্দ

খ. তদ্ভব শব্দ

গ. দেশি শব্দ

ঘ. বিদেশি শব্দ


৮. আমার শুধু একটা কোকিল…… এই কোকিলটি হল-

ক. বসন্তের দূত।

খ. এক ঋষি বালক

গ. একটি নদী ।

ঘ. কবির অনুভূতির জগৎ


৯. বর্ম খুলে দ্যাখাে……..বর্ম খুললে দেখা যাবে

ক. আদুড় গায়ে যেন গান ঋষি বালকের মতাে এসে দাঁড়িয়েছে।

খ. গান মানুষকে নিয়ে নদীতে দেশ-গাঁয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

গ. পায়ের কাছে প্রতুর অস্ত্র পড়ে রয়েছে।

ঘ. মাথার ওপরে অজস্ৰ চিল-শকুন উড়ে বেড়াচ্ছে।



১০. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ একটি

ক. নৈসর্গ বিষয়ক কবিতা

খ. সাংকেতিক কবিতা

গ. ব্যঞ্জনাধর্মী কবিতা

ঘ. রূপকধর্মী কবিতা


অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর

১. ‘মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক’—এখানে কার ইঙ্গিত করা হয়েছে?

উত্তর : কবি জয় গােস্বামী তার ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা ঋষিবালকের উল্লেখের মধ্য দিয়ে শিখি পুচ্ছ শ্রীকৃষ্ণুের ইঙ্গিত করেছেন।


২. ‘তােমায় নিয়ে বেড়াবে গান’—কোথায় বেড়াবে?

উত্তর : ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত এই অংশে ‘তােমায়’ বলতে যে ব্যক্তির উল্লেখ করা হয়েছে তাকে। গান নদীতে অর্থাৎ, নদী-সৈকতে, দেশগাঁয়ে অর্থাৎ, সহজ সরল গ্রামজীবনে বেড়াবে।


৩. ‘আমার শুধু একটা কোকিল’—কোকিল কী করবে?

উত্তর : কোকিল বসন্তের দূত। শীতজর্জর প্রকৃতিতে বসন্ত আসে কোকিলের আহ্বানে। কবির যে কোকিলটি আছে সেটি সহস্র উপায়ে গান বাঁধবে। অর্থাৎ সুরের ঝরনাধারা ছােটাবে।



৪. ‘গান দাঁড়াল’—গান কী রূপে দাঁড়াল?

উত্তর : কবি জয় গােস্বামী তার ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় গানকে ঋষিবালকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। গান মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা ঋষিবালকের বেশে দাঁড়িয়েছে।



৫. ‘গান দাঁড়াল ঋষিবালক’—ঋষিবালকের মধ্যে কার ছায়াপাত ঘটেছে?

উত্তর : কবি জয় গােস্বামী তার অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় যে শিখিপুচ্ছ ঋষিবালকের কল্পনা করেছেন তাতে যশােদানন্দন শ্রীকৃষ্ণুের ছায়াপাত ঘটেছে।


৬. ‘অস্ত্র রাখাে গানের দুটি পায়ে….’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর : গানের পায়ে অস্ত্র রাখাে বলতে কবি প্রেম ও শুভ চেতনার কাছে অস্ত্রনির্ভর হিংস্রতাকে নতজানু হতে বলেছেন।


৭. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় ‘গানের বর্ম গায়ে পরেছেন বলে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর : অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি গানের বর্ম গায়ে পরেছেন অর্থাৎ, সংগীতের ঝরনাধারায় শুচিত হয়ে কল্যাণমন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিজ্ঞা-কঠোর মানসিকতা লাভ করেছেন।


৮. অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় মােট কতগুলি স্তবক আছে?

উত্তর : জয় গােস্বামী রচিত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় মােট তিনটি স্তবক আছে।


৯. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় মােট কতগুলি চরণ রয়েছে?

উত্তর : ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় প্রথম স্তবকে পাঁচটি, দ্বিতীয় স্তবকে ছ-টি, তৃতীয় স্তবকে সাতটি মােট ১৮টি চরণ রয়েছে।




১০. অস্ত্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কবির গতিপ্রকৃতি কেমন?

উত্তর : আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কবিসক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসেন, উঠে দাঁড়ান। গানের বর্ম গায়ে পরে হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়ান।


সংক্ষিপ্ত প্ৰশ্নের উত্তর

১. ‘রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে’—উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য লেখাে।

উত্তর : কবি জয় গােস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উস্তৃত এই অংশে অস্ত্রের বিরুদ্ধে অর্থাৎ, হিংসার বিরুদ্ধে গানের মানবিক, প্রেমময় প্রতিবাদী অবস্থানকে তুলে ধরা হয়েছে। অস্ত্রের প্রকৃতিতেই আছে হনন, জীঘাংসা, রক্তপাত, নারকীয়তা, কিন্তু গানে আছে প্রাণের সুধা।

গানের সুরের ঝরনাধারায় স্নাত হৃদয়ে জাগে শুভ চেতনা, প্রেম, শান্তি, সৃজনশীলতা। অস্ত্রের আঘাতে যে রক্তক্ষরণ ঘটে, যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় গানেই আছে তার প্রকৃত উপসম। গান ভুলিয়ে দিতে পারে যাবতীয় জীঘাংসা বৃত্তি এবং নরকের দুঃস্বপ্নগুলিকে।{alertSuccess}


২. ‘মাথায় কত শকুল বা চিল’—উদ্ধৃতাংশটি ব্যাখ্যা করাে।

উত্তর : কবি জয় গােস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত এই অংশে শকুন বা চিল বলতে কবি স্বার্থান্ধ, অস্ত্রনির্ভর, যুদ্ধবাজ মানুষদের বুঝিয়েছেন। স্বার্থান্ধ, সুবিধাবাদী, লােভী, নিষ্ঠুর, অস্ত্রনির্ভর মানুষগুলি যাবতীয় মানবিক হৃদয় বৃত্তি, বােধ-বুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়েছে।

তারা যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায় মেতে উঠে হেলায় পদদলিত করছে মানবকে তাদের একমাত্র লক্ষ্য যেনতেন উপায়ে স্বার্থ সিদ্ধি করা। তাদের এই ঘৃণ্য স্বার্থান্ধ হিংস্র প্রয়াসের চিত্রটি ভাগাড়ের ওপর মৃতভুক তীক্ষ নখ-চক্ষুবিশিষ্ট শকুনের চক্কর কাটার সঙ্গে তুলনীয়।{alertSuccess}


৩. ‘আমার শুধু একটা কোকিল’-একটা কোকিল কোন্ ভুমিকা পালন করবে?

উত্তর : কবি জয় গােস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত এই অংশে অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানের অপরাজেয় ভূমিকা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে। অস্ত্র নৃশংসতার পরিচয় দিয়ে মানুষের শুভ চেতনাকে ধ্বংস করে তার প্রবৃত্তিগত নীচতার বিকাশ ঘটায়। মানুষকেশকুন বা চিলের মতাে মৃতভুক করে তােলে।

কিন্তু কোকিলের গান বয়ে আনে বসন্তের বার্তা। তার ‘সহস্ৰ উপায়ে বাঁধা গান হৃদয়ে হৃদয়ে নির্মাণ করবে প্রেমের মন্দির। কোকিল সংখ্যায় অনেক না হলেও অনেক গভীরে প্রভাব ফেলবে তার গান। মানুষকে নীচতা, স্বার্থপরতা, নিষ্ঠুরতা ভুলিয়ে প্রাণের বসন্তের উৎসবে শামিল করবে।{alertSuccess}


৪. বর্ম খুলে দ্যাখাে আদুড় গায়ে’-কবি কেন বর্ম বুলে আদুড় গায়ে দেখতে বলেছেন?

উত্তর : অস্ত্রনির্ভর আধুনিক সভ্যতায় ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ মানুষ অহংকারের বর্মে আচ্ছাদিত। ক্ষমতার দম্ভই সুকোমল মানবিক বৃত্তিগুলিকে ধ্বংস করে এক ধরনের যন্ত্র-জটিল জীবনে তাদের অভ্যস্ত করে তােলে। এভাবেই সমাজে বেড়ে চলে অশুভ শক্তির দৌরাত্ম্য। মানবতাবাদী কবি এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে চান। অস্ত্রনির্ভর হিংসাশ্রয়ী মানুষকে তার অমৃতময় সত্তায় ফেরাতে চান। তার শাশ্বত অধ্যাত্ম আত্মাকে জাগ্রত করে সহজ সরল প্রকৃতির রাজ্যে বিচরণ করাতে চান। তাই বর্ম খুলে আদুড় গা হতে বলেন। {alertSuccess}


৫. ‘গান দাঁড়াল ঋষিবালক/মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক’—উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।

উত্তর : কবি জয় গােস্বামী তার ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানের প্রতিবাদী চরিত্রটি বিশ্লেষণের পাশাপাশি এর প্রকৃতিগত মাধুর্যকে কাব্যসুন্দর ভাষায় উপস্থাপিত করেছেন। গান বুলেটকে প্রতিরােধ করতে পারে। সহস্র সুরের ঝরনাধারায় মানব হৃদয়কে ধৌত করে তাকে স্নিগ্ধ, সতেজ এবং স্বতঃস্ফূর্ত করতে পারে। জাগ্রত করতে পারে এক শাশ্বত অধ্যাত্মবােধ। এক্ষেত্রে গান যেন শিখিপুচ্ছ ঋষিবালকের বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়, যে তার মধুর বংশীধ্বনিতে মাতিয়ে দেয় বিশ্বভুবন। {alertSuccess}




অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর

১. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখাে।

উত্তর : কবি জয় গােস্বামী বাংলা সাহিত্যে বিশ-একুশ শতকের এক বিশিষ্ট কবি। তাঁর লেখা ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’একটি কালজয়ী কবিতা। কবি অস্ত্রবাজ যুদ্ধবাজদের অস্ত্রকে পায়ে ফেলে রাখতে বলছেন। তিনি গানের বর্ম গায়ে পরেছেন। সকল আহত মানুষের প্রতীক হয়ে হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসেন, উঠে দাঁড়ান, হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়ান।


গানের সম্বল সামান্যই। কবি গানের স্পর্শে অস্ত্রাঘাতের রক্ত মােছেন। নিহত মানুষের শবের লােভে শকুন-চিলের মতাে স্বার্থলােভী অস্ত্রধারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কবির আছে নানা উপায়ে বাঁধা গানের কোকিল। কবি অস্ত্রধারীদের গা থেকে বর্ম খুলে খালি গা হয়ে দেখতে বলছেন।


তখন সে দেখবে নিরস্ত্র গান খালি-গা ঋষিবালক হয়েছে—তার মাথায় ময়ূরপালকের দৃষ্টিলােভন মধুর সৌন্দর্য। তখন অস্ত্র ফেলে দেওয়াদের নিয়ে গান নদীতে, দেশগাঁয়ে প্রসন্ন নিরুদবেগে বেড়িয়ে বেড়াবে। নামবে শান্তি অতএব গানের কাছে অস্ত্র সমর্পিত হােক। {alertSuccess}


২. অস্ত্র রাখাে গানের দুটি পায়ে ….’।কবির বক্তব্য বিশ্লেষণ করাে।

উওর : উদ্ধৃতিটি কবি জয় গােস্মামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার অন্তিম পঙক্তির অংশবিশেষ। বলা যায়, অস্ত্রধারীর প্রতি বক্তব্যটি উক্ত কবিতার আশাবহ আবেদনকে মহিমান্বিত করে। কবি তাঁর উক্ত কবিতার প্রথমেই বললেন, ‘অস্ত্র ফ্যালাে, অস্ত্র রাখাে পায়ে। অর্থাৎ, অস্ত্রধারীকে অস্ত্র ফেলতে বলছেন, অস্ত্রকে পায়ে রাখতে বলছেন। চাইছেন, অস্ত্রের কার্যকারিতা বন্ধ হােক।

এ থেকে বলা যায়, কবির মনে যে পূর্ব প্রশ্নটি উঠে এসেছে, তা হলাে, মানুষ যে—তার হাতে অস্ত্র কেন? অস্ত্র কী মানুষকে সুখ দেয়, শান্তি দেয়? নাকি অপূর্ব কোনাে নির্মাণকে সম্ভাবিত করে? তা নয়। তাই কবির নির্দেশ—‘অস্ত্র ফ্যালাে, অস্ত্র রাখাে পায়ে। কারণ, অস্ত্র যাবতীয় সৃষ্টিকে ধ্বংস করে। অপরিমাণ রক্তপাত ঘটায়। শিল্প, সভ্যতাকে বিনষ্ট করে। বিভীষিকা সৃষ্টি করে। একা কবি হাজারাের হাতে পায়ে এগিয়ে আসেন।

উঠে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়ান। কেন-না, গানের বর্ম পরেছেন তিনি। অস্ত্র কী করবে তার ? কবি গানেই মুছে ফেলেন অস্ত্রাঘাতের রক্তক্ষত। অর্থাৎ, গানেই মুছে ফেলেন সকল অন্তর্বেদনা। মাথার ওপর অস্ত্রধারী শকুনচিলেদের ওড়াওড়ি। কিন্তু কবির আছে গানের কোকিল; যে নিরস্ত করবে ওদের।

তাই কবি বলেন, বর্ম খুলে ফেলে আদুড় গায়ে দাঁড়াতে। সে তখন গানের ঋষিবালক। প্রসন্ন শুচিসুন্দর, মাথায় গোঁজা আনন্দের ময়ূরপালক। তাহলে সেই গান ওই অস্ত্র খুলে ফেলাদের নিয়ে বেড়াবে নদীতে, দেশগায়ে, পৃথিবীময়। সেই পৃথিবী তখন গানময়, শান্তিময়, আনন্দময়। সেই পাওয়া কি সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া নয়? সর্বশ্রেষ্ঠ জয় নয়? তাই কবির সার্থক আবেদন — ‘অস্ত্র ফ্যালাে, অস্ত্র রাখাে গানের দুটি পায়ে ….’। কী মহিমময় উচ্চারণ ! {alertSuccess}




৩. ‘তােমায় নিয়ে বেড়াবে গান/নদীতে, দেশগাঁয়ে -কার কোন্ কবিতার অংশ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

অথবা, 

তােমায় নিয়ে বেড়াবে গান/নদীতে, দেশ-গাঁয়ে’ –এই মন্তব্যে গানের যে স্বভাবধর্মের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখাে।


উত্তর : বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় কবি জয় গােস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি উৎকলিত হয়েছে। ব্যক্তিজীবনে, জনজীবনে তথা সভ্যতায় গানের সীমাহীন অবদানের কথা বলতে গিয়ে কবির এই কাব্যিক উপস্থাপনা।

মানব-মনের ওপর গানের প্রভাব সুগভীর। গানের ঝরনাধারায় ধৌত হতে পারলে হৃদয়ের ক্ষত দূর হয়ে যায়। গানই পারে মানব-মনের গতিপ্রকৃতির ধারাকে বদলে দিতে। তাই তাে অস্ত্রশক্তি বৃদ্ধির অশুভ প্রতিযােগিতায় বিশ্ব যখন উন্মাদ, অস্ত্রের আস্ফালন যখন মানুষের শুভ বােধবুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে দিচ্ছে তখন কবি গনিকেই অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রধান অবলম্বন হিসেবে গণ্য করেছেন। গানের শক্তি সীমাহীন।

গানে আছে মানুষের শুভ চেতনা, সৃজনশীলতাকে জাগ্রত করার ক্ষমতা। সত্য-শিব-সুন্দরের রক্ষায় মানুষের বিনয়ের প্রতিবাদী সত্তাকে জাগ্রত করার ক্ষমতা। গানকে হাতিয়ার করেই একদিন শিখি

 

পুচ্ছ ঋষিবালক বাঁশির সুরে মাতিয়েছিলেন { ননুকে। গানই পারে স্বার্থান্ধ জীবনের স্বার্থের দ্বন্দ্বের জটিল জিল থেকে মানুষকে মুক্ত করতে। মানুষের হৃদয়ের ভর দু-পাপের উৎসকে ধুয়ে মুছে নির্মল করতে।

নদী-সৈকতে (পাপপার অবারিত সুন্দর প্রকৃতির তাঁচলতলে ভ্রমণের অনাবিল ( ইন নিয়ে নিয়ে যেতে। সুতরাং জীবনকে পরিপূর্ণ সৌন্দর্যে ভোগ করার প্রয়োজনে গানের দরিয়ায় ভাসতে হবে প্রাণের * ক্ষেত্রে কবির পরামর্শ—তা ফ্যালো, অস্ত্র রাখো গলার দুটি পায়ে …’। {alertSuccess}


৪. ‘গান দাঁড়াল ঋষিবালক/মাথায় গোজা ময়ূরপালক’- গানকে ঋষিবালকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কেন? ঋষিবালক রূপে গান কোন্ ভূমিকা পালন করবে?


উত্তর : কবি জয় গােস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উ ধৃতাংশটি উৎকলিত হয়েছে। অস্ত্রবিরােধী এই কবিতায় কবি অস্ত্রের আস্ফালনের বিরুদ্ধে গানের বলিষ্ঠ ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। গানকে শিখি পুচ্ছ ঋষিবালকের সঙ্গে তুলনা করে চমৎকার কাব্যোকর্ষতার পরিচয় দিয়েছেন কবি।

ঋষিবালকটিকে যদি শ্রীকৃষরূপে কল্পনা করা যায় তাহলে তার কংসবধের অধ্যায়টিকে অস্ত্রের অশুভ আস্ফালনের বিরুদ্ধে গানের সাফল্য হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। বংশীধারী শ্ৰীকৃয় অসির বদলে বাঁশিকেই হাতে তুলে নিয়ে কংসের অত্যাচারে হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে এসেছিলেন। অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানের ভূমিকাও দৃঢ় কিন্তু মাধুর্যপূর্ণ।


হিংসায় উন্মত্ত অস্ত্রনির্ভর পৃথিবীতে গান ঋষিবালক রূপে বিরাট ভূমিকা পালন করবে। অস্ত্রের অশুভ বিস্তার মানব প্রবৃত্তির নীচতাকে বৃদ্ধি করে চলেছে। হিংসা, হানাহানি, রক্তপাতে জীবন নারকীয়, বীভৎস হয়ে উঠেছে। সমাজটা যেন ভাগাড় হয়ে উঠেছে। মাথার ওপর চক্কর কাটছে চিল-শকুনের দল। এই অবস্থায় শক্তি ও মাধুর্যের প্রতীক ঋষিবালকের আবির্ভাব এক বিরাট ভরসা।

ঋষিবালকের অমৃতময় বংশীধ্বনির মতাে গান নির্মল ঝরনাধারায় স্নাত করবে মানুষকে। হিংসাকুটিল স্বার্থান্ধ মনােবৃত্তি ঘুচিয়ে জাগাবে শুভ চেতনা। সৃষ্টিশীল করবে হৃদয়কে। এভাবে অস্ত্রনির্ভর যুদ্ধক্লান্ত মানুষ প্রেম-মানবতায় পূর্ণ সহজ সরল, পবিত্র, অনাবিল এক জীবন স্রোতে শামিল হবে। কবির কথায়—‘তােমায় নিয়ে বেড়াবে গান । নদীতে, দেশগাঁয়ে।{alertSuccess}




৫. কবি জয় গােস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় যুদ্ধবিরােধী মনােভাবের যে প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় বিবৃত করাে।


উত্তর : বিবেকী কবি জয় গােস্বামী পাতার পােষাক’ কাব্যগ্রন্থের ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’কবিতায় গানের নান্দনিক সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের ভয়াবহতাকে অতিক্রম করতে চেয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অস্ত্রের আস্ফালনের সাহায্যে সভ্যতার গতিপ্রকৃতিকে স্তন্ধ করতে চায়। অন্যদিকে সৃষ্টির সম্ভাবনাকে বুকে নিয়ে গান মানুষের পৃথিবীতে সম্প্রীতি ও ভালােবাসার ছবি আঁকতে চায়। হৃদয়তন্ত্রীতে জন্ম নেওয়া গান অনন্ত শান্তির কথা বলে।

অস্ত্রের ব্যবহার মানুষের কোমল প্রবৃত্তির অপমৃত্যু ঘটায়, তার হননশীল মনােভাবকে জাগ্রত করে। কবি সুনীল গঙ্গােপাধ্যায় জ্বলন্ত জিরাফ’কবিতায় তীক্ষ বিদ্রুপে তাই লেখেন “পুলিশ এসে বলেছিলাে, এই নিয়ে সাতটা খুনের জন্য তুমি মােট তেরােটা ছুরি ভেঙেছে। ইস্পাতের এ-রকম অনটনের দিনে তােমার অমন বিলাসিত।”অন্যদিকে, গান মানুষের অন্তর প্রকৃতিকে নিস্পাপ করে, কলুষ মুক্ত করে। জয় তাই গানের পবিত্রতার কথা বলতে গিয়ে লেখেন—

“গান দাঁড়াল ঋষিবালক/মাথায় গোঁজা ময়ূর পালক।” কবি হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীর পরিবর্তে এক শান্ত, সমাহিত, সুচেতনার পৃথিবী চান যেখানে রণ-রক্ত-সফলতা কখনােই শেষ সত্য হবে না। প্রকৃতির অমলিন পটভূমিতে গান তখন হবে মানবতার শ্রেষ্ঠ আশ্রয়।{alertSuccess}


Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন