1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

দুই বোন (কিশোর গল্প) : জাহাঙ্গীর দেওয়ান

 দুই বোন (কিশোর গল্প)
 জাহাঙ্গীর দেওয়ান



ক গ্রামে এক জেলে বাস করত । জেলের পরিবার বলতে ছিল তার স্ত্রী , বৃদ্ধ বাবা ও দুই মেয়ে । জেলে সারাদিন মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকত । জেলেনি করত ঘর সংসারের কাজ  । ছোট মেয়ে এলিনা মায়ের কাজে সাহায্য করত । তার বয়স বড়জোর আট বছর হবে । তার দিদি তার থেকে দু'বছরের বড় । সে যেত বনে কাঠ ভাঙতে , ফুল কুড়াতে , ফল আনতে , তরি তরকারি ইত্যাদি জোগাড় করতে তার । নাম ছিল আ‍্যলিসিয়া  । বৃদ্ধ দাদু বেশি কিছু করতে পারত না । তবু যেতে গম চাষ করত ‌। নয় তো সারাদিন তারা খাবে কি ? এইভাবে চলছিল তাদের সুখের সংসার


                    কিন্তু হঠাৎই একদিন তাদের বাবা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মারা গেল কুমিরের পেটে । সেই শোকে সবাই যখন জর্জরিত তখনই একদিন মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত তার বাবাও পুত্রশোক নিবারণ করতে না পেরে পরলোকগমন করেন । সংসারের দু-দুটো মাথা পর পর যখন চলে গেল তখন তাদের মা কি করবে ঠাহর করতে পারছে না , মেয়ে দু'টো ছোট । তাদের নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে কাজের খোঁজে কিন্তু শহর অনেক দূরে যেতে যেতে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এল ।  মা ও দুই মেয়ে গাছের নিচে আশ্রয় নিল । অন্ধকারে ঘন বনের মধ্যে দিয়ে পথ চলা অসম্ভব । সেই গাছে ছিল একটা খুব বড় কোঠর । তাদের মা ভাবল , এর মধ্যে রাত্রি নিবাস করবে কিন্তু সেটা যদি কোন বিষধর সাপের হয় । তখন কি করবে সাত পাঁচ ভেবে  নিয়ে সে তার মেয়েদুটোকে গাছের ডালে তুলে দিয়ে নিজে ঢুকলো সেই কোঠরে । অবশেষে সকালে সেখান থেকে তার মৃতদেহ পাওয়া গেল । কারণ সত্যিই কতোটা ছিল বিষধর সাপের । দুই-বোন কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যায় । জ্ঞান ফিরলে বড় মেয়ে বুঝতে পারল এই বনে থাকাটা নিরাপদ নয় ‌। তাই সে এলিনা কে নিয়ে পালাতে চায় কিন্তু তার বড় তেষ্টা পায় । তার চলার শক্তি থাকে না । তখন তার দিদি তাকে সেখানে বসিয়ে রেখে নিজে গেল জলের খোঁজে , এদিকে তার বোনের সামনে আর এক বিপদ । সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা বাঘ গর্জন করতে করতে আসছে ( যদিও তার পেটে আর খিদে ছিল না ,  কারণ সে সদ‍্য হরিণ শিকার করে খেয়েছে ) তাকে দেখে এলিনা ভয়ে দৌড় দিল ‌।  সে যখন থামল তখন সে এক অজানা অচেনা গ্রামে পৌঁছাল । সেখানে এক দম্পতির কোন সন্তান ছিল না তারা পথ চলতে চলতে দেখতে পেল এলিনাকে । তাকে বাড়ি নিয়ে গেল তার মুখে সব কথা শোনার পর থাকে তারা নিজেদের কাছেই রেখে দিলেন এবং আদর-যত্নের সাথে বড় করতে লাগলেন । এলিনা সব ভুলে গেলেও তার জীবিত দিদির কথা ভুলতে পারেনি । এদিকে তার দিদি ফিরে এসে তাকে খুঁজে না পেয়ে পাগলের মত খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছালো এক অচেনা নগরে । নাম তার অচিনপুর । সেই রাজ্যের রাজপুত্রের ভালো গল্প শোনানোর লোক ছিলনা তাই শহরের সর্বত্র ঢেঁড়া পিটিয়ে দেয় । যে তাদের রাজপূত্রের ভালো গল্প শুনিয়ে খুশি করতে পারবে তার জন্য পুরস্কার আছে । এলিসিয়া সেখানে যায় তার মায়ের কাছ থেকে শোনা গল্পগুলো বলে ও বলতে বলতে কেঁদে ফে'লে  । তখন রাজকুমার কান্নার বিষয় জানতে চাইলে সে তাঁকে সব জানায় । ক্রমে তারা ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে । কিন্তু সেও তার বোনের কথা বলে না । এদিকে রাজপুত্র তার দাসীকে সব জানায় । এইভাবে দাসীটিও সব জানতে পারে । এদিকে দাসীটি ছিল এলিনার পালিত বাবার বোন । সে একদিন তার ভাইয়ের বাড়ি বেড়াতে যায় সেখানে এলিনা কে দেখে অবাক হয়ে সে জানতে চায় । যে তার ভাইয়ের মেয়ে হলো কবে ? সব শোনার পর সে বুঝতে পারলোযে এই সেই আ‍্যলিসিয়ার বোন ।

                   

                             সে তাকে রাজবাড়িতে নিয়ে গেলে , দুই বোন দু'জনকে পেয়ে খুব খুশি হলো । এদিকে রাজা-রানী , রাজকুমার ও পুরো রাজ্য এলিনার রুপ ও মাধূর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে এই রাজ্যের রানী হিসেবে মেনে নেন । এদিকে তার দিদি মনে মনে কাঁদত তার মায়ের জন্য । যদিও তার বোন সেই সব ভুলে গিয়েছিল । আ‍্যলিসিয়া বোনকে কিছু না জানিয়ে জঙ্গলে গেল মায়ের সমাধি ক্ষেত্রে ।

      সে দেখল একটা হরিণ দৌড়াচ্ছে তার পিছনে একটা রাজপুত্র । মনে হয় মৃগয়ায় বেরিয়েছে । সে আ‍্যলিসয়াকে দেখে থমকে দাড়িয়ে গেল ও তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল । সে অনেকদিন অচীনপুরের রাজাকেই পিতার মর্যাদা দিয়েছিল । তাই তার অনুমতির কথা বলল । দু'জনেই চলল অচিনপুরে । তারা সবাই রাজি হয়ে গেলেন কারণ সেই রাজপুত্র ছিল অচিনপুরের রাজা পবন দূত এর বন্ধু কুমার বর্মার ছেলে । খুব ঘটা করে ধুমধামের সাথে বিয়ে হল দুই বোনের দু'জনেরই কাটতে লাগলো সুখের সংসার ।।

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন