দুই বোন (কিশোর গল্প) জাহাঙ্গীর দেওয়ান
এক গ্রামে এক জেলে বাস করত । জেলের পরিবার বলতে ছিল তার স্ত্রী , বৃদ্ধ বাবা ও দুই মেয়ে । জেলে সারাদিন মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকত । জেলেনি করত ঘর সংসারের কাজ । ছোট মেয়ে এলিনা মায়ের কাজে সাহায্য করত । তার বয়স বড়জোর আট বছর হবে । তার দিদি তার থেকে দু'বছরের বড় । সে যেত বনে কাঠ ভাঙতে , ফুল কুড়াতে , ফল আনতে , তরি তরকারি ইত্যাদি জোগাড় করতে তার । নাম ছিল আ্যলিসিয়া । বৃদ্ধ দাদু বেশি কিছু করতে পারত না । তবু যেতে গম চাষ করত । নয় তো সারাদিন তারা খাবে কি ? এইভাবে চলছিল তাদের সুখের সংসার
কিন্তু হঠাৎই একদিন তাদের বাবা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মারা গেল কুমিরের পেটে । সেই শোকে সবাই যখন জর্জরিত তখনই একদিন মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত তার বাবাও পুত্রশোক নিবারণ করতে না পেরে পরলোকগমন করেন । সংসারের দু-দুটো মাথা পর পর যখন চলে গেল তখন তাদের মা কি করবে ঠাহর করতে পারছে না , মেয়ে দু'টো ছোট । তাদের নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে কাজের খোঁজে কিন্তু শহর অনেক দূরে যেতে যেতে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এল । মা ও দুই মেয়ে গাছের নিচে আশ্রয় নিল । অন্ধকারে ঘন বনের মধ্যে দিয়ে পথ চলা অসম্ভব । সেই গাছে ছিল একটা খুব বড় কোঠর । তাদের মা ভাবল , এর মধ্যে রাত্রি নিবাস করবে কিন্তু সেটা যদি কোন বিষধর সাপের হয় । তখন কি করবে সাত পাঁচ ভেবে নিয়ে সে তার মেয়েদুটোকে গাছের ডালে তুলে দিয়ে নিজে ঢুকলো সেই কোঠরে । অবশেষে সকালে সেখান থেকে তার মৃতদেহ পাওয়া গেল । কারণ সত্যিই কতোটা ছিল বিষধর সাপের । দুই-বোন কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যায় । জ্ঞান ফিরলে বড় মেয়ে বুঝতে পারল এই বনে থাকাটা নিরাপদ নয় । তাই সে এলিনা কে নিয়ে পালাতে চায় কিন্তু তার বড় তেষ্টা পায় । তার চলার শক্তি থাকে না । তখন তার দিদি তাকে সেখানে বসিয়ে রেখে নিজে গেল জলের খোঁজে , এদিকে তার বোনের সামনে আর এক বিপদ । সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা বাঘ গর্জন করতে করতে আসছে ( যদিও তার পেটে আর খিদে ছিল না , কারণ সে সদ্য হরিণ শিকার করে খেয়েছে ) তাকে দেখে এলিনা ভয়ে দৌড় দিল । সে যখন থামল তখন সে এক অজানা অচেনা গ্রামে পৌঁছাল । সেখানে এক দম্পতির কোন সন্তান ছিল না তারা পথ চলতে চলতে দেখতে পেল এলিনাকে । তাকে বাড়ি নিয়ে গেল তার মুখে সব কথা শোনার পর থাকে তারা নিজেদের কাছেই রেখে দিলেন এবং আদর-যত্নের সাথে বড় করতে লাগলেন । এলিনা সব ভুলে গেলেও তার জীবিত দিদির কথা ভুলতে পারেনি । এদিকে তার দিদি ফিরে এসে তাকে খুঁজে না পেয়ে পাগলের মত খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছালো এক অচেনা নগরে । নাম তার অচিনপুর । সেই রাজ্যের রাজপুত্রের ভালো গল্প শোনানোর লোক ছিলনা তাই শহরের সর্বত্র ঢেঁড়া পিটিয়ে দেয় । যে তাদের রাজপূত্রের ভালো গল্প শুনিয়ে খুশি করতে পারবে তার জন্য পুরস্কার আছে । এলিসিয়া সেখানে যায় তার মায়ের কাছ থেকে শোনা গল্পগুলো বলে ও বলতে বলতে কেঁদে ফে'লে । তখন রাজকুমার কান্নার বিষয় জানতে চাইলে সে তাঁকে সব জানায় । ক্রমে তারা ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে । কিন্তু সেও তার বোনের কথা বলে না । এদিকে রাজপুত্র তার দাসীকে সব জানায় । এইভাবে দাসীটিও সব জানতে পারে । এদিকে দাসীটি ছিল এলিনার পালিত বাবার বোন । সে একদিন তার ভাইয়ের বাড়ি বেড়াতে যায় সেখানে এলিনা কে দেখে অবাক হয়ে সে জানতে চায় । যে তার ভাইয়ের মেয়ে হলো কবে ? সব শোনার পর সে বুঝতে পারলোযে এই সেই আ্যলিসিয়ার বোন ।
সে তাকে রাজবাড়িতে নিয়ে গেলে , দুই বোন দু'জনকে পেয়ে খুব খুশি হলো । এদিকে রাজা-রানী , রাজকুমার ও পুরো রাজ্য এলিনার রুপ ও মাধূর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে এই রাজ্যের রানী হিসেবে মেনে নেন । এদিকে তার দিদি মনে মনে কাঁদত তার মায়ের জন্য । যদিও তার বোন সেই সব ভুলে গিয়েছিল । আ্যলিসিয়া বোনকে কিছু না জানিয়ে জঙ্গলে গেল মায়ের সমাধি ক্ষেত্রে ।
সে দেখল একটা হরিণ দৌড়াচ্ছে তার পিছনে একটা রাজপুত্র । মনে হয় মৃগয়ায় বেরিয়েছে । সে আ্যলিসয়াকে দেখে থমকে দাড়িয়ে গেল ও তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল । সে অনেকদিন অচীনপুরের রাজাকেই পিতার মর্যাদা দিয়েছিল । তাই তার অনুমতির কথা বলল । দু'জনেই চলল অচিনপুরে । তারা সবাই রাজি হয়ে গেলেন কারণ সেই রাজপুত্র ছিল অচিনপুরের রাজা পবন দূত এর বন্ধু কুমার বর্মার ছেলে । খুব ঘটা করে ধুমধামের সাথে বিয়ে হল দুই বোনের দু'জনেরই কাটতে লাগলো সুখের সংসার ।।