1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

সম্পর্কটা ঐতিহাসিক : আকাশ নীল বিশ্বাস—শারদ ১৪২৮

আ কা শ  নী ল  বি শ্বা স
 সম্পর্কটা ঐতিহাসিক


অলঙ্করণ : বিশ্বজিৎ মণ্ডল



আলতামিরার গুহা থেকে নির্গত স্রোত যখন ভিক্টোরিয়ার জলপ্রপাত হয়ে টাইগ্রিসের প্রবাহে মেশে, তুমি আসবেনা জেনেও যখন কলোসিয়ামে অপেক্ষা করে তোমার বর্শাবিদ্ধ প্রেমিক, দুর্নিবার কালচক্রের বধ্যভূমিতে, নিয়তির রঙ্গশালায়, ওথেলো আর ওফেলিয়ার একাকার ক্রন্দনে দ্রবীভূত সম্পর্কটা হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক!


বৈশালীর রাজপথে যখন নেমে আসে সর্বসন্তাপহারী সন্ধ্যা, যামিনীমগ্ন এথেন্সে প‍্যান্থিয়নের দেওয়াল ভাসিয়ে বিরহের জ্বালায় যখন কেঁদে মরে চাঁদ, তোমাকে পাবোনা জেনেও যখন ত্রিকালদর্শীর মতো অবিচল থাকি আমি, কারণ, দ্বারকা'র রাজপথে পদদলিত কৃষ্ণচূড়ার মতো ক্ষতবিক্ষত আমাদের সম্পর্কটা যে ঐতিহাসিক...


বানভাসি ভেনিসে যখন হানা দেয় দুর্ধর্ষ সেলজুক সেনা, বৃষ্টির কলতানে যখন পূর্ণ হয়ে ওঠে গাঙ্গেয় নগরী, ফেলে আসা সময়ের আজানুলম্বিত আঙরাখায় তোমাকে না পাওয়ার আক্ষেপ ভুলে যখন নতুন উল্লাসে হয় নবান্নের উদযাপন, নবপল্লবের আঘ্রাণে নিষিক্ত ছিন্নমূল তুমি কি বোঝোনা যে সম্পর্কটা ঐতিহাসিক?


গঙ্গালের বণিক যখন পসরা সাজিয়ে পৌঁছোয় নীলনদের তীরে, তাম্রলিপ্তের বক্ষলগ্ন হয় গ্রিসীয় যাত্রী, হোয়াংহোর উপকূলভাসী প্লাবনে যখন নিমগ্ন হয় আরাবল্লীর পাদদেশ, গন্তব্য না জেনেও যখন স্তব্ধ হয়না বার্ণাবতের পথিকের পদচারণা, কনস্টান্টিনোপলের স্থবির ইমারতের নিশ্চলতায়, কলিঙ্গের পরিত‍্যক্তা রমণীর ধূসর শাঁখার অনিঃশেষ বৈধব্যজ্বালায়, সময়ের মন্তাজে - কালের কোলাজে গড়ে ওঠা সম্পর্কটা হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক।


ব্যাখ্যাতীত কারণে, মৃদু হেঁসে, তুমি আমায় অস্বীকার করেছ, ফিরিয়ে দিয়েছো প্রেমের অঙ্গীকারের আহ্বান, তারপর বহুযুগ অতিক্রান্ত - শ্রাবস্তীর সেই অভিযাত্রী আজ দামাস্কাসের পথে, হেমন্তের বিষণ্ণ বিকেলে চন্দ্রাহত তোমাকে পাবার আশায় আমি আজও অপেক্ষারত… কেন? নৈঃশব্দের ভীড়ে অমিশ্রিত সম্পর্কটা তো ঐতিহাসিক!


আমি নক্ষত্রের হাতছানি দেখা এক অজ্ঞ প্রেমিক, ধ্বস্ত-স্বদেশহীন-ছিন্নমূল, কুয়াশার রাতে ভ্রাম্যমাণ অনাগত নাবিকের জাহাজভাঙা মাস্তুলের মতো, দলছুট আনমনা পানকৌড়ি কিংবা পথহারা বেবাক শঙ্খচিলের মতো, শীতার্ত রাত্রির রাজপথের হাঘরে ভিক্ষুকের মতো - তবু বারংবার বারবার, আমি হয়েছি তোমার ভালবাসার পণবন্দি, চিহ্নহীন অভিমানের ঊর্ণজালে আবদ্ধ আমাদের সেই সম্পর্কটা যে ঐতিহাসিক...


গঙ্গাহৃদির খন্ডহরে, ব্রাত‍্য আর্যের সভ্যতায়, এথেনার পরিত্যক্ত মানমন্দিরে, আল্পসের নাভিমূল থেকে উদ্ভাসিত ঝর্ণায়, ইনকাদের নগর দুয়ারে, পাটলিপুত্রের রাজপথে, বৃষ্টিভেজা ক্লেদাক্ত জনপদে, তোমাকে খুঁজে চলেছি আমি, তোমার স্বরের ধনুষ্টংকার, বিঁধেছে আমায় - শব্দভেদী বাণের মতো; আমার প্রেম - আমার ভালোবাসা - আমার রক্ত, তোমাকে ভিজিয়েছে বারবার, দিয়েছে প্রেমিকার স্বীকৃতি; তুমি যে আমার ফিসফিসানো অতীত, তুমি যে আমার আকর্ণবিস্তৃত ইতিহাস‍ - সম্পর্কটাই যে ঐতিহাসিক!


যা আমার তা আমারই, ভাঙলে গড়ে নেবো, হারালে খুঁজে নেবো, বিনিময়ে প্রেমিকের স্বীকৃতি, ভালোবাসার অভিমানে-অধিকারে - শব্দের অন্বেষণে - সত্তার বলিদানে - তোমাকে পাবার কামনায় বারবার পুনর্জন্মের আকুতি? সেটুকুও কি পাবোনা? বাষ্পময় হাতে, অগ্নিদগ্ধ-অস্পৃশ‍্য আমায় দূরে ঠেলে দিতে গিয়ে শেষে তুমিও কি ভুলে গেছো যে - সম্পর্কটা ঐতিহাসিক?

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন