1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

ইবাতম্বি সিং : বিজয়া দেব — শারদ ১৪২৮

বি জ য়া দে ব
ইবাতম্বি সিং



বাতম্বি সিং নামে মণিপুরি মেয়েটি চাকরি খুঁজতে খুঁজতে  কম্পিউটার শিক্ষকের চাকরি পেয়ে গেল। কিন্তু তার চাকরি হলো এক প্রত্যন্ত গ্রামে। ইলেকট্রিসিটি গেছে সদ্য সদ্য। তবে ইন্টারনেটের সংযোগসূত্রটি খুব দুর্বল। ক্লাশে পড়াতে গিয়ে খুব ঝামেলা। ছাত্রছাত্রীদের শিখতে খুব আগ্রহ কিন্তু এত বাধাবিপত্তির মাঝে শেখানো প্রায় কিছুই হয় না। ইবাতম্বির বাড়িও গ্রামে। তবে শহরের কাছাকাছি। শহরে গিয়েই তাকে ইস্কুলে আসার বাস ধরতে হয়।
    মণিপুরি পরিবার পিতৃতান্ত্রিক হলেও মেয়েরা কর্মপটু, ঘরে বসে থাকা বা শুধুই ঘরোয়া কাজ করা তাদের বিশেষত্ব নয়। বাইরের অনেক কাজ তারা নিজেরাই করে। ধানরোপন থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রিবাটা ভারি জিনিস নিয়ে যাওয়া ধান থেকে চাল চিঁড়ে মুড়ি তৈরি করা কাপড় বোনা ইত্যাদি কাজ তারা অবলীলায় করে। সাংস্কৃতিক দিকেও তারা পিছিয়ে নেই। মণিপুরি নৃত্য তো বিশ্বকবিকেও মুগ্ধ করেছিল। ইবাতম্বি নাচ জানে। মণিপুরি নৃত্যে পারঙ্গম সে। কথা হল এই গ্রামের ইস্কুলে তেমন সংস্কৃতির চর্চা নেই। সঙ্গীত শিক্ষকের পদে সে ইন্টারভিউ দিয়েছিল কিন্তু পায়নি।
    সেদিন ইস্কুল থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যা হয়ে গেল। পুরনো লজঝরে বাস। লোক উঠছে তো উঠছেই। এটাই নাকি লাস্ট বাস। অবশেষে বাসটি বাঁদিকে হেলে পড়ল এবং বাস ছাড়ল। বাসের ভেতর ভ্যাপসা গরম। কিছু রাস্তা খুব খারাপ। লাফাতে লাফাতে এক বুক মানুষ নিয়ে ঢিকির ঢিকির চলছে বাসটি।  তার পাশে যে লোকটি দাঁড়িয়ে আছে তার শরীর থেকে ভ্যাপসা ঘেমো গন্ধ তার নাকে এসে লাগছে। লোকটির বারবার চেপে আসছে তার দিকে। দুবার লোকটাকে সাবধান করল ইবাতম্বি। কিন্তু কে শোনে কার কথা! উল্টে চোখ রাঙাল লোকটি। 
-দেখছো না ক্যামন ভিড়? অত যদি ছুৎমার্গ, বাসে উঠো ক্যানে?
ইবাতম্বি কিছুক্ষণ পর অনুভব করল লোকটার হাত তার বাঁদিকের স্তনে চেপে বসেছে। হাতটাকে সরাতে গিয়েও সে কিছুতেই সরাতে পারছে না। বাসের ভেতর টিমটিমে হলুদ আলো। চারপাশ থেকে ভিড় এমনভাবে সেঁটে আছে যে ইচ্ছে করলেও ঐ লোকটাকে একটা জবরদস্ত শাস্তি দেওয়ার উপায় নেই। এইবার লোকটার হাতে সে ডানহাতটাকে কাটারির মত করে আড়াআড়ি মারল। একটা তীব্র যন্ত্রণার কাতরোক্তি করে লোকটা হাত সরিয়ে নিল। এবার শুরু হলো বাসের ভেতর গোলমাল। লোকটা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল সে নির্দোষ। আশপাশের লোকজন ইবাতম্বিকে গালাগাল দিচ্ছে। শুধু একটি মধ্যবয়স্ক লোক ইবাতম্বিকে সাপোর্ট করছিল। বলছিল - আমি তখন থেকে দেখছি আপনি ওর বুক চেপে ধরেছেন, কেন মশাই? কান্ডজ্ঞান নেই আপনার?
-কি বললেন? আমি ইচ্ছে করে করেছি? কোথায় দাঁড়িয়েছি দেখতে হবে তো? চারপাশে চারদিকে মানুষ, একেবারে চেপে ধরেছে। আর এত যদি শুচিবাঈ তো ট্যাক্সি করে গেলেই হয়। নিজেরই চরিত্রের ঠিক নেই, নাহলে রাতবিরেতে বাসে উঠেছে সব পুরুষমানুষের সঙ্গে। লজ্জার বালাই আছে এদের? 
ইবাতম্বি তো সাধারণ বাঙালি ঘরের মেয়ে নয়, সপাটে চড় মারল বেয়াদব লোকটার গালে। বাসটার চাকা গাড্ডায় পড়ে লাফিয়ে উঠল তখুনি আর আশ্চর্যজনকভাবে সবাই চুপ হয়ে গেল। আর লোকটা বলে উঠল - আচ্ছা এর বদলা নেব ঠিক। ঐ মাঝবয়েসি লোকটি যে ইবাতম্বির হয়ে কথা বলছিল সে এবার বলল - খুব ভালো হয়েছে, একদম ঠিক হয়েছে। যতসব দুষ্ট লোক, সুযোগের তক্কে তক্কে আছে। - কথা শেষ করার আগেই লোকটা হ্যা.. ই বলে চিৎকার করে উঠল। বলল-সবুর কর শালা, গাড়িটা থামুক, তোর থোঁতা মুখ আজ ভোঁতা করে দেব। - কথাটা শুনেই ইবাতম্বি সতর্ক হয়ে উঠল। 
    বাসটা একসময় গন্তব্যে পৌঁছল। লোকজন নেমে যাওয়ার পর ইবাতম্বি মাঝবয়েসিকে ও তার চড় খাওয়া লোকটিকে খুঁজছিল। কিন্তু লোকজনের ভেতর এদের খুঁজে পাচ্ছিল না। বাকি লোকজন তাকে কৌতূহলী চোখে দেখছিল। এখন চড় খাওয়া লোকটা মাঝবয়েসির পিছু ধাওয়া করছে কি না দেখাটা খুব জরুরি ছিল। কিন্তু রাস্তার মিটমিটে হলদেটে আলোয় তেমন কিছু স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছিল না। 
  পরদিন ইস্কুলে কম্পিউটার ক্লাশে কুটুস নামে একটি ছাত্র এসে বলল - ম্যাম, আপনার সাথে কথা ছিল। 
-কি কথা? 
-আজ বাড়ি ফিরবেন না ম্যাম, আপনার ওপর হামলা হবে। আপনি আমাদের বাড়ি চলুন, আজ থাকবেন। 
-কে বলল তোমাকে হামলা হবে? 
-বাবা। 
-তোমার বাবা কি করেন? 
-কাঠের কাজ। গতকাল বাবা বাসে ছিল। 
ইবাতম্বি হেসে বলে - তুই চিন্তা করিস না। ওসব আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। 
ইবাতম্বি ফিরছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। কিছু লোক তার পিছু নিয়েছে টের পেল ইবাতম্বি। মনে মনে হাসল। ছোটবেলা থেকে শরীরচর্চায় অভ্যস্ত সে। নৃত্যকলা যেমন সে রপ্ত করেছে তেমনি রপ্ত করেছে ক্যারাটে ও ভারোত্তোলন। পেছন ফিরে তাকিয়ে সে পিছু নেওয়া লোকগুলোকে দেখল। ওদের ঝুলন্ত লিঙ্গ ছাড়া আর কোনও অঙ্গ তার চোখে পড়ল না।


Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন