1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি স্মিতা বাগচী

কবি স্মিতা বাগচী

কবি স্মিতা বাগচী


বি স্মিতা বাগচী এর জন্ম ২০০২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বর্তমান  হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
বর্তমানে বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্স নিয়ে পাঠরতা । মূলত বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক কবিতা, প্রবন্ধ , 
ছোটো গল্প তার লেখনীর মূল বিষয় । তার লেখা প্রথম কবিতা— 'গতি' প্রকাশিত হয় 'প্রজ্ঞা' নামক স্কুল ম্যাগাজিনে । বেহালা বাদনে বিশেষ আগ্রহী । 'একাকী' ছদ্মনামে লিখেছেন বেশ কয়েকটি কবিতা ।



কবি স্মিতা বাগচী'র একগুচ্ছ কবিতা 


সংরাগ


তখন তুমি মেঘ করেছ
আমি তখন চাতক হয়ে ফিরি;
তখন তুমি ঝড় হয়েছ 
আমি তখন ভাঙি হওয়ার সিঁড়ি ।
তখন তুমি আকাশ জুড়ে ঝরালে বারিধারা , 
আমি তখন অচিন পাখি শুধুই দিশেহারা ।
তখন তুমি এসেছিলে শুভ্র ভোরের প্রাতে ,
তুমি তখন ভাঙ্গলে ঘুম জোছনা ভরা রাতে ।
তখন তুমি শুধায়েছিলে কোথায় মোর ব্যথা ? 
আমি তখন বলেছিলেম জাননা সে কথা ! 
তখন তুমি আপনমনে বলেছিলে আমায়, 
ভয়টা না হয় দূরেই থাকুক; ভরসা দেবো তোমায় ,
তখন তুমি স্নিহাভরে জ্বালিলে রিঝির আলো,
তুমি তখন বললে আমায় শুধু তোমায় বাসি ভালো ।
শুধুই তোমায় বাসি ভালো ।



স্রষ্টার প্রতি 


তুমি-আমি ছিলাম সৃষ্টির দুই তীরে 
কখন হলাম এক এই রেহা-নীড়ে,
তুমি শান্ত সমুদ্র-আমি অশান্ত স্রোতস্বিনী হয়ে প্রবাহিত তোমারই দিকে । 
আমি বেগমতি, গড়ে ছিলাম তোমারই অবয়ব সেই আকুল তীরে,
অজান্তে হলাম এক এই রেহা-নীড়ে।
আমি সেই ছিন্ন মূল এক শুষ্ক পত্র, যাকে তুমি দান করলে তোমার নবীনতা ।
আর তুমি সেই পূর্ণ প্রস্ফুটিত পুস্পিকারাজি ,
যার শোভা প্রীতি মান এ সংসারে ।
আবার হলাম এক এই রেহা-নীড়ে ।




একাকী 


আমি সত্যি একাকী এই অসীম জগতে,
আমি তো কাওকে সঙ্গে আনিনি কিংবা আমি কিছুই নিয়ে যাবো না ।
আমি যা পেয়েছি যা নিয়েছি সবই তো এই মাটি থেকে , 
তাই আবার একদিন লীন হবো এই মাটিতেই ..... ।
শোধ করে যাবো সব দেনা পাওনা,
পড়ে রবে কতগুলি অম্লান স্মৃতি;
নদী ধারার স্রোতের ন্যায় অশ্রুসিক্ত দু'টি আঁখি—
কিছুটা নিভৃত গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা,
যার মাঝে আমি শুধুই একাকী ।



দৃষ্টিপট


আমি সূর্যের মত দীপ্তিমান হতে চাই,
তবে আমায় সূর্যের মতো জ্বলতে হবে ।
আমি চাঁদের মতো সুন্দর হতে চাই,
তবে আমায় কলঙ্কভার বইতে হবে । 
আমি প্রকৃতির মতো সৌন্দর্য পেতে চাই,
তবে আমায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে হবে ।
আমি নদীর মত স্রোতস্বিনী হতে চাই,
তবে আমায় বন্যার মোকাবিলা করতে হবে । 
আমি জোছনার মত শুভ্র হতে চাই ,
তবে আমায় অমাবস্যা পেরোতে হবে।
আমি ফুলের মত পুলকিত হতে চাই ,
তবে আমায় ভ্রমরের বাধা এড়াতে হবে । 
আমি সাগরের মতো শান্ত হতে চাই, 
তবে আমায় অকূল দরিয়া পেরোতে হবে।
আমি সময় হতে চাই , 
তবে আমায় কালজয়ী হতে হবে।
      সর্বোপরি , 
আমি ভাগ্য হতে চাই , 
তবে আমার বিধিলিপি সমাপ্ত হবে ।



ভালোবাসা 


ভালোবাসা তুমি অন্ধ, তুমি বধির
কখনো তুমি চঞ্চল, কখনো স্থির;
ভালোবাসা – তুমি দুঃখের মাঝে একটু স্নেহের আশ্বাস ...
আবার, কখনো তুমি ছল-কপট রুপী এক সর্বনাশ ...
ভালোবাসা– তুমি এক মোহ, যা বিস্তার করো মায়া — 
আবার কখনো তুমি স্বার্থান্বেষী মনুষ্য দলের ছায়া ।
তোমারই অর্থ নাকি প্রেম কিংবা অনুরাগ, 
কিন্তু তুমি যে শিক্ষা-ধর্মের আড়ালে পাপের এক কালো দাগ । 
তবুও ভালোবাসা তুমি নিষ্প্রভ 
তুমি শান্ত নীড়, তাইতো তুমি অন্ধ; তাইতো তুমি বধির ।




বসন্তের ফুল


তখনও সুপ্ত ফুলটি কুড়ি অবস্থাতেই ছিল
কখন যেনো করলো দৃষ্টি আকর্ষণ–
বসন্তের ছোঁয়া লাগেনি গায়ে,
শুধুই বেড়ে ওঠার অদম্য ইচ্ছে
আন্দোলিত মনে;
কলোস্পত্রি কিংবা স্বর্ণলতা'র মতো নয় —
ধানের মতো উন্নত শিরে চেয়েছিল অবস্থান।
জল-মাটি-খাবার সবই তো ছিল !
কাটছিল দিন বেশ আনন্দেই।
কিন্তু বৈশাখীর ঝর এসে উড়িয়ে নিল মুহূর্তে,
বুনোঘাসের অন্তরালে রইলো পড়ে ছিন্ন পত্র;
শেষ জীবনচক্র হলো স্বপ্নভঙ্গ;
শুধুই ছড়িয়ে রইলো অন্তিমে,
বিমর্ষ পাপড়ির অবশিষ্টাংশ ,
ঘটেছে বসন্তের আগমন 
তবুওতো এখনও ফোটেনি ফুল !



নারী তুমি


নারী তুমি—
আগুন হয়ে জ্বলতে জানো ,
অঝোর ধারায় ঝরতে জানো;
জ্ঞান হয়ে বুঝতে জানো ,
অধীর হয়ে শুনতে পারো ।
নারী তুমি—
মুক্ত হয়ে উড়তে জানো,
বদ্ধ হয়েও থাকতে পারো;
ধৈর্য্য নিয়ে চলতে জানো,
পাখি হয়ে ছুটতে জানো ।
নারী তুমি—
মর্ডান হয়ে বাঁচতে জানো,
ঘোমটার আরে লজ্জা ঢাকো;
পাহাড় শিখায় চড়তে জানো,
অতল পাথর ডুবতে জানো।
নারী তুমি—
মাতৃ রূপে লালন জানো,
বিদ্বেষের মোড়ক টানো;
প্রেম হয়ে ভাসতে জানো,
হিংসা হয়ে আঘাত হানো।
আবার তুমি স্রষ্টা হয়ে,
নতুনকে গড়তে জানো;
প্রলয় রূপে তুমিই তো সেই,
সৃষ্টিকেই ধংস হানো ।



ফেরার বেলা 


হঠাৎ সেই একই চেনা রাস্তায়,
তুমি-আমি আবারও মুখোমুখি–
সেই একই বেশ; আগের মতই হাসিমুখ ।
সেই চেনা পুরনো ক্যারিয়ারহীন সাইকেল–
শুধু একটাই পার্থক্য–
মাঝে সাত বছরের ব্যবধান;
এখন আমি শ্রীমতী সাথে আমার ছোট্ট সন্তান ।
মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলে,
কেমন আছেন ম্যাডাম ? 
একটু মোটা হয়েছেন বোধ হয় !
সেই একই গাল ভরা হাসিতে উত্তর দিলাম— কি এবার দেখে হাতি মনে হচ্ছে তো স্যার ! 
আবারও দৃষ্টি হলো এক, চারটি চোখে—
মুহূর্তে দুজনেরই মনে একই ফ্ল্যাশব্যাক 
সেই স্কুটিতে প্রথম লং ড্রাইভ;
কিংবা গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে হতে হাত রেখে উষ্ণ চায়ের ছোঁয়া,
আরও যেটা মনে পড়ে সকালে মর্নিং ওয়াক এর অজুহাতে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকা, তোমার অফিস যাওয়ার পথে।
কিংবা দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষে বিমর্ষ মুখে বাড়ি ফেরা- সাক্ষী শুধুই ট্রেনেই হুইসেল ।
কিন্তু ভেবে আর হবে কি !
এখন ওগুলো শুধুই স্মৃতি–
কাল চক্রে আমাদের অবস্থান বিপরীত মেরুতে–
উপহার স্বরূপ কিছুটা সুন্দর সময় দাও তোমার এই কথাটাই বারবার মনে ভেসে ওঠে,
প্রশ্ন করেছিলাম– শুধু সুন্দর মুহূর্তেই কেনো ? 
সারাজীবনের স্থান কি পাবো না !
তুমি তখনও নির্বাক ছিলে, যেমন আজ আছো ।
যাহোক এগুলি আমারই ভ্রান্ত ধারনা মাত্র।
যা আছে শুধুই স্মৃতিতে ।
নতুন স্বপ্নের স্রোতে ভেসেছে অতীতের কথাগুলো ।
আজ ভাবনাগুলো না হয় ভিতরেই থাক–
বেশ দেরি হয়ে গেল অনেকটাই; ফিরতে হবে
এখন তবে আসি ।
সময়ের অজুহাতে নয় কাটুক এই ক্ষণ
মনে মনে বললাম সুস্থ থেকো,ভালো থেকো 
মনে তোমার জায়গা টা রয়েছে ঠিক আগের মতই ।
আচ্ছা , তবে সাবধানে যেও ...
আসছি...
মনে মনে ভাবলাম, সম্পর্কটা না হয় একে অপরের শুভ কামনাতেই বেঁচে থাক ! আবার দেখা হবে হয়তো কোনো একদিন ফেরার বেলা ।




Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন